প্রচণ্ড গরম। বাতাস নেই বললেই চলে। এ গরমে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। যখন তখন সাপ গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। সকালে পোকা-মাকড় খেয়ে এক চোট ঘুমিয়ে নেয় শিয়াল। ঘুম থেকে জেগে ওঠে আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে বলল, যাই একটু ভালো মন্দ খেয়ে আসি।
নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটি গ্রামে এসে ঢোকে। ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। সাবধানে পা ফেলে হাঁটছিল। হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে দুষ্ট ছেলেদের চিৎকার চেঁচামেচি হইচই শুনতে পায়। সে একটি ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে আড়ি পেতে শোনে, এ গর্তের ভেতর শিয়াল আছে। আগুন জ্বেলে শুকনো মরিচ দে। দেখবি শিয়াল সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসবে।
অন্য একজন বলল, ও সত্যি বলছে। ছেলেগুলোর কথা শুনে শিয়াল মুচকি হাসে। ঐ গর্তে শিয়াল নেই এটা নিশ্চিত। সে দ্রুত এখান থেকে সরে পড়ে। হাঁটতে হাঁটতে একটি ছোট্ট বাড়ির সামনে এসে থামে। বাড়িতে কেউ নেই। দরজা জানালা সব বন্ধ। একটি মুরগি পেয়ারা গাছের ডালে আরাম করে ঘুমোচ্ছে। সে পেয়ারা গাছের নিচে এসে নিচু গলায় বলল, মুরগি ভাই মুরগি ভাই ও মুরগি ভাই। এই অসময়ে ঘুমাচ্ছো, ঘটনা কী?
মুরগির ঘুম ভাঙে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে শিয়ালকে দেখে চমকে ওঠে। মুরগি ঢোক গিলে বলল, শিয়াল মশাই আপনি হঠাৎ এখানে?
কেন আমার কি এখানে আসা নিষেধ? কি সুন্দর গ্রাম! এখন থেকে রোজ একবার আসবো।
শিয়ালের কথা শুনে মুরগি ভয় পায়। চারিদিক দেখে নেয়। কোথাও কেউ নেই। একেবারে সুনসান পরিবেশ। মালিকও বাড়ি নেই। শহরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছে।
শিয়াল বলল, প্রায় দিন পোকা-মাকড় আর সবজি খেতে হচ্ছে। আজ খুব মুরগি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে। একটু নিচে নামো কথা আছে।
শিয়ালের কথা শুনে মুরগির সারা শরীর কাঁপছে। তার ছয় মাসের জীবনে এ রকম বিপদে আর পড়েনি সে। কী করা যায়। এ মুহূর্তে মাথায় কোনো বুদ্ধিও আসছে না।
মুরগি বলল, তা তোমার আমাকেই খেতে হবে। এ গ্রামে আর কোনো মুরগি নেই?
হা হা হা। আছে আছে। তা মরার আগে তোমার শেষ ইচ্ছে কী?
তুমি আমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করবে?
অবশ্যই। বল তোমার শেষ ইচ্ছে কী?
আমি একজনকে খুব ভালোবাসি। সে হলো আমার ভাই। মরার আগে একবার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই।
শিয়াল মনে মনে ভাবে নিশ্চয় কোনো মোরগ মুরগির ভাই হবে। আজ ভাগ্য খুব ভালো একই সাথে মোরগ-মুরগি খাওয়া যাবে। শিয়াল বলল, কে তোমার ভাই?
সে এ বাড়ি পাহারা দেয়। মালিকের খুব প্রিয়। গ্রামে তার খুব না নাম-ডাক। দেখতেও নাদুস-নুদুস।
এখন সে কোথায় আছে? তাকে তাড়াতাড়ি ডাকো। ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে। খেয়ে দুষ্ট ছেলেদের এড়িয়ে ফিরে যেতে হবে।
মুরগি সাত-পাঁচ ভাবে। শরীরের কাঁপুনি থামছে না। এ সময় লালুকে তার খুব দরকার। অন্যদিন এ সময় লালু পেয়ারা গাছের নিচে গুটি মেরে শুয়ে থাকে। কিন্তু আজ কোথায় গেল? কোথায় গেল? কোথায় গেল? ও মনে পড়েছে। মেম্বার বাড়িতে জেয়াফত আছে। ওখানে গিয়েছে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শিয়াল বলল, কি ভাবছো?
না মানে …। মালিক বলেছিলেন তার মেয়ের জামাই আসলে আমাকে জবাই করবে। আমি মালিকের হক। ইচ্ছে করলে অনেক দূরে কোথাও চলে যেতে পারি। কিন্তু যাই না। মুরগি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
আরে মিয়া মৃত্যুর পর তোমাকে কে খাবে না খাবে সে চিন্তা তোমার না করলেও চলবে। এখন নামো তো। আজ শুক্রবার একটু ভালো খেতে ইচ্ছে করছে। আর কত পোকা-মাকড় খাওয়া যায়। দয়া করে নিচে নামো।
মুরগি চিৎকার করে ডাকে, লালু ভাই। লালু ভাই। ও লালু ভাই। কোথায় গেলে ভাই। এ সময় তোমাকে আমার খুব দরকার।
সে কি তোমার আপন ভাই ?
যে বিপদে আপদে পাশে থাকে সে আপন ভাই থেকেও বেশি।
তা অবশ্য ঠিক। শিয়াল মনে মনে চিন্তা করে লালু এলে লালুকেও খাওয়া যাবে। সে ব্যস্ত সমস্ত হয়ে পায়চারি করে।
এদিকে বেলা বাড়ছে। ধীরে ধীরে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে। তার আর সহ্য হচ্ছে না। হঠাৎ মুরগি চিৎকার করে ওঠে, ভাই আসছে ভাই।
ও তাই নাকি। শিয়াল একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। তারও অনেক পরে লালু আসে। শিয়াল দেখে বেশ মোটা তাজা একটা কুকুর। এক্ষুনি এখান থেকে পালাতে হবে। তা না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। সে দৌড় শুরু করে। মুরগি হাসতে হাসতে বলল, শিয়াল মশাই কোথাও যাও।
পেট খারাপ হয়ে গেছে। এই তোমার ভাই। ওরে বাপরে! মুরগি-কুকুর কখনও ভাই হয়? আর একদিন আসবো। শিয়াল চিৎকার করে বলল।
ব্যাটা ভয় পেয়েছে। কত্ত সাহস তোকে খেতে এসেছে। কুকুরও হাসতে হাসতে বলল।
মুরগি দেখে শিয়াল ক্ষেতের আঁকাবাঁকা পথ ধরে দৌড়াচ্ছে। দৌড়াতে দৌড়াতে নদীর পাড়ে উঠে হাঁপাতে থাকে। আর একটু সামনে এগুলে বন। বনের ভেতরে ঢুকে হারিয়ে যায় শিয়াল। মুরগি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। হাফ ছেড়ে বাঁচে।

Share.

মন্তব্য করুন