পেঁয়াজ গাছে ধরে- চমকে ওঠার মতো কথা নয় কি? তবে ছবি দেখলে সংশয় কেটে যাবে। সব দেখাই আবার সত্য নয়। রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়বে নিশ্চয়ই :
‘নারদ কহিলা হাসি, সেই সত্য যা রচিবে তুমি- ঘটে যা তা সব সত্য নহে’- হা হা হা! নাহ, আর বিভ্রম নয়। ব্যাপারটা ঘটলো ইস্তাম্বুলের ‘তোপকাপি’ মিউজিয়ামে। এটি ছিল রাজপ্রাসাদ। এখন জাদুঘর। পুরোনো দিনের রাজা-বাদশাহ বা সুলতানদের ভোগ-বিলাসের প্রামাণ্য ইতিহাস। এসব ইতিহাসবিদ, স্থপতি কিংবা পুরাতত্ত্ববিদদের কাছে দারুণ সমাদৃতির বিষয়। আমি গিয়েছি অন্য কাজে। এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে আমার প্রিয় রাসূল সা.-এর ব্যবহৃত কিছু জিনিস; এটা তুর্কিদের দাবি। বিশ্বাস করা না করা ব্যক্তিগত বিষয়।
প্রাসাদের ভোগবিলাসের প্রামাণ্য ইতিহাসের পথ বেয়েই যেতে হয়েছে এই হারেমে, মিউজিয়ামের খুবই পবিত্র এই অংশে। এখানে যা কিছু আছে বা দেখেছি তা নিয়ে আলাদাভাবে লেখার ইচ্ছে রইলো। আমি গাছে ধরা পেঁয়াজে ফিরে যাচ্ছি। প্রাসাদ মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান জাদুঘরের দিকে যেতে দেখা হলো তানভীরের সঙ্গে। চা খেতে চাইলাম। বিশাল কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে ভালো চায়ের সন্ধানে দেড় কিলোমিটারের মতো রাস্তায় পা বাড়াতে গেলাম। কমপ্লেক্সের গেটের সামনে এই পেঁয়াজ নজরে এলো।
পেঁয়াজ শুকনো কড়াইতে ভাজা হচ্ছে। আবার ঠকঠকে শব্দও হচ্ছে। পা থমকে গেল। তানভীর বললো, এটা এক ধরনের বাদাম, বেশ সুস্বাদু। সাইনবোর্ডে লেখা আছে- kestane. কিছুটা পেস্তার অনুপ্রাস। ইরানে ফান্দুক নামে যে বাদামটি পাওয়া যায় তার ইংরেজি হলো Hazelnut. কেস্তানে যেন তারই বৃহৎ প্রজাতি তবে কেস্তানের ইংরেজি Chestnut.
পেঁয়াজের মতো গরম গরম কেস্তানের খোসা আমার কাছে পেস্তার খোসার মতোই মনে হয়েছে। সাইজটা ডুমুরের মতো। কষ্ট করে খোসা ছাড়িয়ে মুখে দিলাম। অপূর্ব স্বাদ। গুগলের কাছ থেকে জানলাম কেস্তানে গাছে ধরে। এক ধরনের লোমশ ফল। পক্বতা এলে ফলটা গাছেই ফেটে যায়। পেড়ে নিয়ে রোমশ আবরণ ছাড়ালে বেরিয়ে আসে এই খয়েরি পেঁয়াজ। শক্ত খোসাসহ শিম বিচির মতো ভাজার পর গরম গরম থাকতেই খোসাটা ছাড়িয়ে নেয়া সহজ। সাদা রঙের এই বাদামের ব্যবহার বিচিত্র। আমরা খেতে খেতে হাঁটলাম কিংবা হাঁটতে হাঁটতে খেলাম। আয়া সোফিয়া আর বল্টু-মস্ক পাশে রেখে গরম চায়ের উষ্ণ আদর নিলাম। খোলা আঙিনায় গাছের নিচে চা খাওয়ার শৈল্পিক আমেজে ক’জন ভিজতে জানে। যারা জানে তাদের পক্ষে ‘করুণা অপার’।

Share.

মন্তব্য করুন