ঈদ হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ও খুশির দিনও এই ঈদের দিন। এক বছরে দু’টি ঈদ আসে আমাদের কাছে। একটি ঈদ আসে রোজার শেষে। পুরো একমাস রোজা রাখার পর আসে এই ঈদ। এই ঈদের নাম রোজার ঈদ। এই ঈদটি অনেক দিন পরে আসে বলে এ ঈদে আনন্দও বেশি হয়। আর দ্বিতীয় ঈদ হলো কোরবানি ঈদ। রোজার ঈদের দুই মাস দশ দিন পর এই ঈদ এসে যায়। এ সময়ই হজও পালন করা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর কাবা শরিফকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ মুসলমান একত্রিত হন এই কাবার চারিদিকে। হজ এবং উমরাহ পালন করে আগত মুসলমানেরা। সারা দুনিয়া থেকে এখানে মুসলমানরা সমবেত হয়।
কোরবানি শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কোরবানি বলতে কী বোঝায়? কোরবানি অর্থ ত্যাগ। ইংরেজিতে বলে সেক্রিফাইস! এখন তোমরা যারা ছোট তাদের জন্য বলছি- আমাদের ছোটবেলায় আমরা ঈদের আনন্দ করেছি অনেক অনেক। খুব মজার আর আনন্দের ছিলো আমাদের ছোটবেলা। তোমাদের মতো তখন কোনো মোবাইল ছিলো না। ভিডিও গেমও ছিলো না একদমই। ফলে ঈদের দিনের আনন্দ ছিলো আমাদের কাছে একেবারেই অন্যরকম আনন্দ! তাই ঈদের জন্য কত যে অপেক্ষা করতাম আমরা। অপেক্ষা করতে করতে মনে হতো হায় কত দূর ঈদের দিন। নিজেরা নিজেরা বলতাম ঈদ কেন আসে না। কেন দিনগুলো তাড়াতাড়ি চলে যায় না। আহা যদি তাড়াতাড়িই দিনগুলো চলে যেতো। আর ঈদের দিনটি যদি আরও আরও অনেক বড় হতো। অনেক অনেক বড়। তবে কতই না আনন্দ হতো। তবে কতই না মজা হতো সারাদিন! এমনই কতরকম ভাবনা ভাবতাম আমরা। যার জন্য খুব মজাও হতো আমাদের।
কিন্তু ভাবনার মতো কি আর সব ঠিক ঠিক হয়? নাকি হতে পারে কখনও! কি করে হবে ভাবনার মতো কিছু। দিন তো দিনের নিয়মেই আসে। এসে আবার চলেও যায়। কারো জন্য সে একটুও অপেক্ষা করে না। ঈদও আসে ঈদের নিয়মে বছর ঘুরে। তবুও আমরা সবাই অপেক্ষা করি ঈদের, কখন আসবে ঈদ।
তোমরা কি অপেক্ষা করো ঈদের দিনের? আমি জানি ঠিক ঠিক অপেক্ষা করো তোমরাও। অপেক্ষায় থাকো কখন আসবে ঈদ! কখন ঈদের আনন্দে মেতে উঠবে বন্ধুদের নিয়ে! এমনই মজার ভাবনায় চোখে ঘুম আসে না যখন ঈদের রাতে। তখন একটু পরপরই মনে হয় এই বুঝি সকাল হয়ে গেলো! এই বুঝি কোথাও মোরগ ডেকে উঠলো- কুক্ কুরুকু…। তারপরই মুয়াজ্জিন ফজরের আজান শুরু করে দেবে- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার! আর তখন পায় কে! তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে যেতাম আমরা।
নতুন জামাটি যত্ন করে বালিশের নিচে রেখে দেয়ার কথা আমরা ভুলি না। বিছানা থেকে উঠেই একবার নতুন জামা চেক করে নেয়ার সে কি মজা। এখনও মনে পড়ে- নতুন জামা লুকিয়ে রাখতাম যাতে করে বন্ধুরা দেখে না যায় ঈদের আগে। যেনো শুধু ঈদের দিনই দেখে। নইলে যদি একই রকম জামা কিনে ফেলে! তাহলে তো একদম খারাপ খবর! কারণ কমন হয়ে গেলে আলাদা নতুন জামার মজা থাকবে কি করে! এসব বড়ই মজার কাহিনী।
রোজার ঈদের অপেক্ষাটা খুব বেশি করতে হতো আমাদের ছোটবেলায়। কারণ রোজার ঈদ আসে একমাস রোজা পালন করার পর। একমাসে প্রতিদিনই হিসাব চলে কবে আসবে ঈদ? আর কত দিন আছে ঈদের? এসব হিসাব নিকাশ করতে করতে ত্রিশটি দিন পার হয়ে যায়। তারপর মহা আনন্দ সঙ্গে নিয়ে আকাশে ওঠে চিকন একটি নতুন চাঁদ। চিকন চাঁদটি যেনো আকাশের মুচকি হাসির মতো। উঠেই ঘোষণা দেয় কাল সকালে কিন্তু ঈদ!
কোরবানি ঈদের চাঁদ কিন্তু নতুন থাকে না। কারণ চাঁদের দশ তারিখের দিন কোরবানি ঈদ পালন করা হয়। যে কারণে রোজার ঈদের মতো কোরবানির চাঁদ নতুন না হয়ে পুরনো হয়ে যায়। এই পুরনো চাঁদটি বেশ বড় হয়ে ওঠে আকাশের বুকে। গোলগাল প্রায় পূর্ণিমা চাঁদের কাছাকাছি। সারারাত না হলেও রাতের বেশির ভাগ সময় ধরে চাঁদ থাকে আকাশে। ঠিক সকাল হলেই শুরু হয় কোরবানি ঈদের আয়োজন। অবশ্য তার আগেই কোরবানির গরু খাশি অথবা ভেড়া কিনে আনা হয়। তাই কোরবানি ঈদের আনন্দও অন্যরকম। গরু কেনার বিষয়টি অনেক অনেক মজার! গরু কিনে এনে বাসায় বাড়িতে অথবা মাঠে রাখা হয়! গরুটিকে খাওয়াতে হয় নিয়ম করে। আদর সোহাগ দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখতে হয়। কখনো কখনো পাহারাও দিতে হয়। ঈদের দিন ঈদের নামাজ শেষে শুরু হয় গরু জবাই। একে একে গরুগুলো জবাই করা হয়! আহা এ দৃশ্য অন্যরকম ত্যাগ ও মহিমায় জড়ানো! মহান আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে জবাই করা হয় গরু। কেউ খাসি কোরবানি করে। কেউ ভেড়া কোরবানি দেয়। কেউবা দুম্বা। উটও কোরবানি দেন কেউ কেউ। আবার কেউ মোষও কোরবানি দিয়ে থাকে।
যে যার বাড়ির সম্মুখে কোরবানির পশুটি জবাই করার ব্যবস্থা করে। আসলে এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে- আর তা হলো দিতে হবে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর নামে। এবং আল্লাহর জন্যই দিতে হয় কোরবানি। যদি কেউ শুধু খাওয়ার জন্য কোরবানি করে। অথবা লোকদেখানো কোরবানি দেয়! তবে তা আল্লাহর কাছে একদমই গ্রহণযোগ্য হবে না।
অনেকে আছেন কোরবানির জন্য মস্ত গরুটি কিনে নেন শুধু গোশত খাওয়ার জন্য। আবার লোকদেখানোর জন্য গরুর গলায় মালা পরান। শিং দুটিও মালায় মুড়িয়ে দেন। কখনো কখনো এসব মালার সাথে গায়ে রঙ মেখে আকর্ষণীয় করে গরুটি। তারপর পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লা মহল্লায় অথবা এলাকায় ঘুরিয়ে দেখায় সবাইকে। এসব কিন্তু মোটেই ভালো নয় কোরবানির জন্য।
তোমরা তোমাদের কোরবানি দেবে শুধু মহান আল্লাহর জন্য। বাবা মাকে বলবে তারা যেনো আল্লাহর জন্য কোরবানি করে। নইলে আল্লাহ তায়ালা এমন কোরবানি গ্রহণ করবেন না। নিয়ত ঠিক করে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন যিনি তিনিই হয়ে যান মহান আল্লাহর কাছে প্রিয়। আমরা সবাই যেনো মহান আল্লাহর প্রিয় হতে পারি তেমন করেই করতে হবে কোরবানি।

Share.

মন্তব্য করুন