আমাদের দেশের জাতীয় মাছ স্বীকৃত। মাছটি সামুদ্রিক। এরা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশ তথা বাঙালিদের কাছে ইলিশ মাছ খুব জনপ্রিয়। ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Tenualosa ilisha.
ইলিশ আমাদের দেশে অর্থনৈতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর মোহনার হাওর থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা হয়। এটি সামুদ্রিক মাছ হলেও এই মাছ বড় নদীতে ডিম ছাড়ে। ডিম ফুটলে ও বাচ্চা বড় হলে, মানে জাটকা ইলিশ সাগরে ফিরে যায়। আর সাগরে ফিরে যাবার পথেই জেলেরা এই মাছ ধরে। ইলিশে অনেক ছোট ছোট কাঁটা থাকে, তাই খুব সাবধানে খেতে হয়।
যদিও ইলিশ লবণাক্ত পানির মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, তবুও বেশির ভাগ সময়ই সে সাগরে থাকে কিন্তু বংশ বিস্তারের জন্য প্রায় ১ হাজার দুই শ’ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে ভারতীয় উপমহাদেশের নদীতে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশে নদীর সাধারণ দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার থেকে ১ শ’ কিলোমিটার। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা এবং মেঘনা নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর মাঝে পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো বলে বলা হয়।
এটি লোনা পানির মাছ। সাধারণত বড় নদী এবং মোহনায় সংযুক্ত খালে বর্ষাকালে পাওয়া যায়। এ সময় ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে সমুদ্র থেকে বড় নদী এবং মোহনায় সংযুক্ত খালে আসে। ইলিশ মাছ পুকুরে বা ডোবায় চাষ করা যায় না। জেলেরা মাছ ধরার নৌকা নিয়ে নদীতে যায় এবং জাল ফেলে মাছ ধরে। তারপর এই মাছ উপকূলবর্তী ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে বরফ দিয়ে দেশের দূরবর্তী স্থানে পাঠানো হয়। ভোলা জেলার তজুমুদ্দিনে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সর্বাধিক পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। ভোলা জেলা ইলিশের জন্য বিখ্যাত। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইলিশ পাওয়া যায় বরগুনা জেলায়। বাংলাদেশ ইলিশ মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
ইলিশ একটি চর্বিযুক্ত মাছ। আর ইলিশে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন, এই অ্যাসিড ইঁদুরের কোলেস্টেরল ও ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
ইলিশের নানারকম পদ রয়েছে। তার মধ্যে সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, কড়া ভাজা, দোপেঁয়াজা এবং ঝোল খুবই জনপ্রিয়। কচুর পাতা এবং ইলিশ মাছের কাঁটা, মাথা ইত্যাদির ঘণ্ট একটি বিশেষ রান্না। ডিমভর্তি ইলিশ মাছ এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে বিশেষ একরকম রান্না করা হয়, যা ভাতুরী বা ইলিশ মাছের পোলাও নামে পরিচিত। এটি বর্ষাকালের একটি বিশেষ রান্না। ইলিশ মাছ টুকরো করে লবণে জারিত করে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে সংরক্ষিত ইলিশকে নোনা ইলিশ বলে। এটা দিয়েও বিভিন্ন সুস্বাদু পদ রান্না করা হয়। ইলিশের ডিমও খুব জনপ্রিয় খাবার। এই মাছ রান্না করতে খুব অল্প তেল প্রয়োজন দরকার পড়ে। কারণ ইলিশ মাছে প্রচুর তেল থাকে

Share.

মন্তব্য করুন