ফাবিহা। দুষ্টুমিষ্টি একটা মেয়ে। বয়স সবে চারে পড়েছে। আম্মু-আব্বুকে ভীষণ ভালোবাসে ও। তারও বেশি তার খালাম্মু রানীকে। কারণ রানীর কাছেই যে ফাবিহা বেশি সময় ধরে থাকে! গোসল করা, তেল মাখা, দু’ঘণ্টা ধরে খাওয়া, ঘুম যাওয়া- মোটামুটি ওর সবকিছুই রানীর হাতে। কারণ, তার আব্বুর পাশাপাশি আম্মুও যে চাকরি করে!
ভাইয়াকেও খুব ভালোবাসে। ভাইয়া শহরে একটা আবাসিকে থেকে লেখাপড়া করে। ছুটি হলে বাড়ি আসে অল্প কিছু দিনের জন্য।
ফাবিহা এখনো ইশকুলে ভর্তি হয়নি। সামনের বছরই তাকে ইশকুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হবে। আর তার জন্যও ফাবিহার প্রস্তুতির শেষ নেই। সে নিয়ম করে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মায়ের কাছে পড়ে। লেখে। ছবি আঁকে।
বাবা তার কাছে থাকে না। দূর শহরে চাকরি করে। তাই সে সেদিন কী করল, কী পড়ল, কী আঁকল- তা সবই ভিডিওকলে বাবাকে তার দেখানো চাই-ই চাই। ফোন করলেই আগে তাকেই কথা বলতে দিতে হবে। রিসিভ করতে দিতে হবে। না হলে কেঁদেকেটে একাকার।
ভাইয়াটা বড় বলে ওর অনেক কিছু দেখা হয়েছে। অনেক জায়গায় ঘোরাও হয়েছে। সেসব গল্প যখন ভাইয়া ওকে বলে, তখন ওর অভিমান দেখে কে! কেন তাকে সবার সাথে ওসব জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়নি, কেন সে এসব দেখতে পারেনি, এসব নিয়ে এন্তার প্রশ্নের ঝাঁপি।
অবশ্য ভাইয়ার কাছ থেকে শুনে শুনে ফাবিহার ওসবের অনেক কিছুই এখন মুখস্থ। সে এখন চিড়িয়াখানায় গেলে কী কী দেখবে, শিশুপার্কে গেলে কোন কোন রাইডে চড়বে, তার বিবরণ গড় গড় করে দিয়ে ফেলে অনায়াসেই।
এই তো সেদিন বাবা তাদের নিয়ে সুন্দরবন ঘুরে এলো। সেখানে যাবার আগে তার কত পরিকল্পনা! সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, হরিণ, বানর, কুমিরসহ কত কী দেখবে, তা নিয়ে তার ফিরিস্তির শেষ ছিল না।
ফাবিহা এখনো ট্রেনে চড়েনি বলে বাবা তাদের ট্রেনে করেই খুলনা নিয়ে গেল। মজার ব্যাপার হলো ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সেই ট্রেনের নামও সুন্দরবন এক্সপ্রেস। সাথে তার বাবা, মা, রানী খালাম্মু, ভাইয়া। কু-ঝিকঝিক ট্রেনে দুলতে কী যে মজা, তা এবারই টের পেল ফাবিহা। ট্রেনে চেপে দারুণ খুশি সবাই। আনন্দে-
ঝকঝকাঝক ট্রেন চলেছে
রাতদুপুরে ওই,
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে
ট্রেনের বাড়ি কই?
একটু জিরোয় ফের ছুটে যায়
মাঠ পেরুলেই বন
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝনঝনাঝন ঝন।…
শামসুর রাহমানের এই ছড়াটি ট্রেনের ভেতরে প্রায় পুরো সময় সেদিন আওড়ে গেল ফাবিহা। আর ফাঁকে ফাঁকে এটাসেটা খাওয়া।
তারপর বাসে করে রাতের বেলা সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরে মোস্তফা আঙ্কেলের বাসা। সেখানে মোস্তফা আঙ্কেলের মেয়ে মেহনাজের সাথে পরিচয় হলো তাদের। অবশ্য রাতের বেলা বলে তেমন করে ভাব হতে পারেনি। ফ্রেশ হয়ে ভরপেট নানা উপাদেয় খাবার খেয়ে রাত কাটানো। পরদিন সকালে কালীগঞ্জে সাব্বির আঙ্কেলের বাসা। সেখানে সকালের নাস্তায় গরম খিচুড়ি, ডিমভাজি আর আচারের দারুণ আইটেম। এরই মধ্যে সাব্বির আঙ্কেলের মিষ্টি দুই মেয়ে রোদসী আর রাইসার সাথে ভারি ভাব হয়ে গেল ফাবিহা আর ওর ভাইয়ার।
সাতক্ষীরা যেন মায়াময় একটা জেলা। পথে প্রান্তরে সবুজের ছড়াছড়ি। অফুরান ভালো লাগার অনেক উপাদান সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
যা হোক, বসে থাকতে তো আর তারা এখানে আসেনি। এসেছে বেড়াতে। সুন্দরবনে ঢুকতে হবে। আর তাই সাব্বির আঙ্কেল তার বন্ধু হাবিব আঙ্কেলের ইজিবাইক ঠিক করলেন শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ রিসোর্ট পয়েন্ট অবধি। সেখান থেকেই বোটে চেপে সুন্দরবন। এই যাত্রায় সঙ্গী হলো রোদসী আর রাইসা। পথে গিয়ে জুটল হিমাদ্রি আর সেলিম নামের আরো দুই আঙ্কেল।
মুন্সীগঞ্জ পৌঁছতে পৌঁছতে বাজল বেলা সাড়ে এগারোটা। এরপর সুন্দরবনে যাবার অনুমতি নিয়ে ট্রলারে চেপে বসল ফাবিহারা। ওই সময় এখানকার মালঞ্চ নদীটা জোয়ারের পানিতে ফুলেফেঁপে টইটম্বুর। মনে হচ্ছে যেন এই পানি নদীর পাড় ছাপিয়ে রাস্তায় কখন যেন হুড়মুড় করে উঠে আসবে।
ইঞ্জিন গর্জন করে ফাবিহাদের ট্রলার ছেড়ে দিলো। নদীর এ পার থেকে সুন্দরবন অঞ্চলের দূরত্ব খুব বেশি নয়, মোটামুটি ১৫ মিনিটেই সুন্দরবনের কিনার ঘেঁষে চলতে শুরু করল তাদের ট্রলার। সুন্দরবনের গাছপালার জীবন বড়ই বিচিত্র। এখানকার গাছগুলোর গোড়া ছাপিয়ে মাজা অবধি পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও দিব্যি বেঁচে থাকে বছরের পর বছর। এজন্যই বুঝি একে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বলে। মায়াময় সবুজের হাতছানি চারপাশে।
কেউড়া, হেতাল, গোলপাতা, গেওয়া, কাঁকড়া, গরানসহ নানা রকম গাছগাছালিতে ঠাসা সুন্দরবন।
জোয়ারের ঘোলা পানি আর গাছগাছালির অপরূপ সৌন্দর্য সবাইকে দারুণভাবে আপ্লুত করে ফেলেছে। সত্যি বলতে, ফাবিহার এই প্রথম ট্রলার বা নৌকা চড়া। এজন্য ওর আনন্দ অন্যরকম। মুগ্ধ হয়ে চারপাশে দেখছে আর দেখছে। তবে মুখে তেমন কথা নেই। কেন? কে জানে!
ট্রলার এক সময় নদীর ছোট খাড়িতে ঢুকে পড়ল। খাড়ির দু’পাশের গাছের মাথা প্রায় ছুঁইছুঁই। এক জায়গায় থেমে কিছু ছবি তোলা হলো। অবশ্য ট্রলারে ওঠার পর থেকেই কারো না কারো হাতের মোবাইলের ক্যামেরার চোখ জ্বলে উঠেছে ক্ষণে ক্ষণে। এর মধ্যেই অবশ্য ভাটা শুরু হয়ে গেছে। মানে উজিয়ে ওঠা পানি তখন নামতে শুরু করে দিয়েছে।
ট্রলারের মাঝি বেশিক্ষণ সেখানে থাকতে রাজি হলেন না। এর প্রথম কারণ হিসেবে জানা গেল, যেখানে তারা রয়েছে, সেখানে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়বে। ফলে ট্রলার থিকথিকে কাদায় আটকে যাবে। তখন এখান থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। পরের জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর তা হবে আত্মঘাতের শামিল।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, এরকমভাবে পানি কমে গেলে আশপাশে যদি বাঘ থাকে, তাহলে ঘোরাপথে না গিয়ে সে খাড়ি ধরে আড়াআড়ি পার হতে চাইবে। আর সে সময় যদি তার চোখে কেউ পড়ে যায়, তাহলে নৌকায় হামলে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা।
সুতরাং বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নয়। তাড়াতাড়ি সরো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হয়ে এলো তারা।
যাওয়ার সময় যেসব গাছের গলা অবধি পানিতে নিমজ্জিত ছিল, ফেরার সময় তার অনেকটাই নেই। নিমজ্জিত অঞ্চল তখন ডাঙায় পরিণত হয়েছে। আর সেখানে চোখা-চোখা কালো কালো অসংখ্য শ্বাসমূল দেখা গেল। যা যাবার সময় চোখে পড়েনি।
মনের ভেতর ভয় ভয় ভাব গেঁথে থাকলেও মনের অন্য একটা চোখ কিন্তু ঠিকই খুঁজে চলছিল সুন্দরবনের অহঙ্কার রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে। যদি তার দেখা পাওয়া যেত! চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দি থাকা বাঘ তো ফাবিহা ছাড়া সবার কতই দেখা হয়েছে, কিন্তু সত্যিকারের বনের প্রাণী, বনে তাদের বিচরণ কেমন, তা দেখার গোপন ইচ্ছে কিন্তু সকলেরই থাকে। ফাবিহা তো এসব বোঝে না, ও কিন্তু সুন্দরবনে বাঘ, হরিণ, বানর, কুমির- এসব দেখতে এসেছে। কিন্তু বনের বড়মিয়া মানে সেই বাঘের টিকিটাও দেখা গেল না এ যাত্রায়। আর তাই সেলিম আঙ্কেল জিজ্ঞেস করলেন, সুন্দরবন দেখা হয়েছে তোমার? ফাবিহার স্পষ্ট উত্তর, সুন্দরবন কই দেখলাম, পানি আর গাছই তো দেখলাম শুধু!
আসলে বুড়িগোয়ালিনী নদী হয়ে কলাগাছিয়ায় যেতে পারলে বাঘ ছাড়া হরিণ আর বানরের অবাধ চলাফেরা দেখা যেত। কিন্তু জোয়ার-ভাটার যে রসায়ন, তার ফেরে পড়ে অন্যদিকে সময়ের কারণে সেদিকে যাওয়াটা আর হয়ে উঠল না। যাওয়াটা জোয়ারে হলেও ফেরার সময় উজানে অনেক সময় লেগে যাবে। তাতে ফিরে আসতে আসতে রাত নেমে আসবে। আর সেটাও নিরাপদ নয়। তাদের মুন্সীগঞ্জ পৌঁছা যদি সকাল আটটার মধ্যে হতো, তাহলে সেটা অনায়াসে সম্ভব হতো।
যাক, যা হয়নি, তা নিয়ে কথা নয়।
ফাবিহার ‘পানি আর গাছ ছাড়া কিছুই তো দেখলাম না’- কথা কয়টি সাব্বির আঙ্কেলের মর্মে আঘাত করল যেন। আসলে ছোটদের কাছে তো কোনো লুকোচুরি নেই। ওরা যা দেখবে, যা বুঝবে তাই বলবে। সেলিম রায়হান সেটা জোরালোভাবে কোট করলেন। ফলে সাব্বির আঙ্কেল তখন ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। সম্ভাব্য নানা জায়গায় ফোন দিতে লাগলেন। উদ্দেশ্য- আশপাশের কোনো রিসোর্ট বা পিকনিক স্পটে হরিণ-বানর আছে কিনা সেটা জানা। বেশ কটা ফোন করে একটা জায়গায় খোঁজ মিলল। সেখানে হরিণ, বানর, পাতি শিয়াল আর নানা রকম পাখি আছে। ব্যাস, সাব্বির আঙ্কেলের মুখটা যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এবার কিছুটা হলেও মুখ রক্ষা হবে বোধ হয়। ফেরার পথে সামান্য একটু ভেতরে পড়বে রঘুনাথপুর নামক জায়গার সেই পিকনিক স্পট। নো প্রবলেম। যেতে হবে সেখানেই।
তার আগে এখানকার আকাশলীনা রিসোর্টে একটু ঘোরাঘুরি করে যেতে হবে। টিকিট কেটে ঢুকতে হয় সেখানে। তবে পিকনিক স্পট হিসেবে দারুণ এই জায়গাটা। ছিমছাম। চোখজুড়ানো। মনের মতো। সুন্দরবনে থাকা প্রতিটা গাছই এখানে রয়েছে। আর রয়েছে প্রতিটা গাছেরই পরিচিতিমূলক নামফলক। বেশ কয়েক ফিট উপরে কাঠ, কোথাও বাঁশের পাটাতন টাইপ রেলিংসমেত ট্রেইল দেয়া। এটা মালঞ্চ নদীরই অংশ। জোয়ার এলে এখানে পানি আসে হুড়মুড় করে। ভাটায় নেমে যায় সাপের গতিতে। ফাবিহারা যখন সেখানে গেল, তখন ভাটার টানে প্রায় সব পানিই নেমে গেছে। অল্প অল্প পানি কুলকুল করে নিচের দিকে গড়িয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে তখনো। সবখানে থিকথিকে কাদায় মাখামাখি। সেখানে কিছু সময় থেকে ছবি তোলা হলো। ফাবিহারা সেখানে এদিক-সেদিক বেশ দৌড়াদৌড়ি করল।
এরপর আকাশলীনা থেকে বেরিয়ে হিমাদ্রি এবং সেলিম আঙ্কেল বিদায় নিলেন। তারা আর কালীগঞ্জের দিকে যাবেন না। কারণ, তাদের বাড়ি এদিকেই। ফাবিহার কাছে তারা দু’জন ভালো আঙ্কেল।
এরপর আকাশলীনার সামনে থেকেই রঘুনাথপুরের উদ্দেশে ছুটে চলা। সেখানেও টিকিট সিস্টেম। টিকিট নিয়েই প্রবেশ করতে হয়। সেখানকার এরিয়াটাও বিশাল। নির্মাণ কাজ চলছে তখনো। চিড়িয়াখানার আদলে গড়ার চেষ্টা। তবে পাওয়া গেল কাক্সিক্ষত হরিণ আর বানরের দেখা। আর এতে বাচ্চারা কী যে খুশি হলো, বলে বুঝাবার নয়। আর সত্যি বলতে এটুকুতেই যেন মিলল সত্যিকারের ছোট্ট মনের স্বস্তি। সেখানকার পাঠ চুকিয়ে সাব্বির আঙ্কেলের বাসার উদ্দেশে রওনা দিল সবাই। কারণ, ফাবিহার আন্টি রান্না করে পথ চেয়ে বসে আছেন। অবশ্য খিদের ছুঁচোটা সবার পেটেই ডন দিতে শুরু করেছে তখন। এর আগে দেখা আর ঘোরার আনন্দে তেমন করে কেউই ব্যাপারটা টের পায়নি। মাঝে খাওয়া বলতে কেবল চিপস, আইসক্রিম আর চকোলেট।
হইহই করে সারাটা দিন কেটে গেলেও বাসায় পৌঁছে সবাই ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত।
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। সুতরাং তখন খাওয়া ছাড়া আর কোনো কথা নয়। খেয়েদেয়ে বিছানায় সটান। রাতে তুমুল আড্ডা। বিশেষ করে ফাবিহা, সিফাত, রোদসী আর রাইসা চারজনে বসে গেল ছবি আঁকতে। যেন আর্ট কম্পিটিশন। সে এক দেখার মতো বিষয় বটে! যে যার মতো ছবি আঁকল। সাব্বির আঙ্কেল সবাইকে ফার্স্ট ঘোষণা করলেন।
তারপর অনেক রাত অবধি গল্প। ফাবিহার আব্বু আর রোদসীর আব্বু পরস্পর বন্ধু। লেখক বন্ধু। তাই তাদের গল্পের সঙ্গে কারোর গল্প মিলল না। তারপর রাত গভীর হলে এক সময় সবাই ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল।
পরদিন সকালে সাব্বির আঙ্কেল আর ফাবিহার আব্বু মোটরবাইকে বেরিয়ে পড়লেন কালীগঞ্জ শহর ঘুরে দেখতে। ইছামতী নদীর ওপারে ভারতের সীমানা- বেশ লাগল। যেতে যেতে অগণিত মাছের ঘের। দেখে দেখে লেখকের মন ভরে গেল। ফেরার সময় বললেন, এখানটায় আবার আসতে হবে। এত অল্প সময়ে ফাবিহার আব্বুর সত্যিই মন ভরল না।
তাড়াতাড়ি ফিরতেই হলো বাসায়। কারণ, আজ দুপুরেই যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, কবি আজাদ আঙ্কেলের বাসায় নিমন্ত্রণ। না গেলে মানুষটা খুবই মন খারাপ করবেন। ফোন করে বারবার খোঁজ নিচ্ছেন আর জলদি যেতে তাগিদ দিচ্ছেন। অগত্যা রওনা দিতে হলো কালীগঞ্জ থেকে বেশটা দূরে দেবহাটার শাঁখরা বাজারের পাশে কবিনিবাস পান্থনীড়ের উদ্দেশে।
ফাবিহারা আবার আজই ঝিনাইদহের উদ্দেশে পাড়ি জমাবে। বিকেল চারটায় সাতক্ষীরার তুফানের মোড় থেকে ঝিনাইদহগামী বাসে সিট বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছে। ওই বাস মিস করলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। সুতরাং তেমন সময়ও হাতে নেই। এত কম সময় নিয়ে আসার জন্য সবাই কমবেশি আফসোস করলেন।
আসলে গোটা সাতক্ষীরাই সবুজের চাদরে মোড়ানো। নদী, খাল, খাড়ি বেয়ে কুলকুল করে বয়ে চলেছে কখনো জোয়ার কখনো ভাটার ঘোলা পানি।
আজাদ আঙ্কেলের বাসায় পৌঁছতে প্রায় বারোটা বেজে গেল। ফাবিহার লেখক আব্বুকে পেয়ে আজাদ আঙ্কেল খুব খুশি হলেন। প্রখর রৌদ্রতাপে পথ পাড়ি দিয়ে এলেও পান্থনীড়ে পৌঁছে সবার মন ভালো হয়ে গেল। ঠাণ্ডা-ছায়াসুনিবিড় একটা বাড়ি আজাদ আঙ্কেলের। নানা রকম গাছপালা আর বাঁশঝাড়ে ঘেরা বাড়িটি। অবশ্য সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন লেখক জোবায়ের আর সাদ্দাম আঙ্কেল।
নাকে-মুখে খাওয়া যাকে বলে। সেখানেও বিশাল আয়োজন। কোনোরকমে খেয়েদেয়ে এখনই চলে যেতে হচ্ছে বলে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো ফাবিহার আব্বু। কেবল কয়েকটা ফটো তোলার পর আবার গাড়িতে চেপে বসা। উদ্দেশ্য সাতক্ষীরা শহর। সাব্বির আঙ্কেল তো ফাবিহাদের সঙ্গেই ছিলেন। সেখানে অপেক্ষা করছেন মোস্তফা আঙ্কেল। এর মধ্যেই বাস কাউন্টার থেকে কয়েকবার ফোন। আমরা কতদূর আছি, সেটা জানতেই সেই ফোন। কারণ সময়ের গাড়ি, সময়ে ছাড়তে হবে তাদের। ঠিক চারটা ছুঁইছুঁই। তখন তারা গিয়ে পৌঁছল সাতক্ষীরা তুফান মোড়। তারপর সেখানে থাকা সাব্বির আঙ্কেল, মোস্তফা আঙ্কেল আর সাদ্দাম আঙ্কেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠল তারা। একটু পর গাড়ি ছেড়েও দিল।
মাত্র দু’দিন। কিন্তু মনের কোণে অনেক কিছু জমা হয়ে রইল।

Share.

মন্তব্য করুন