শান্ত একটি গ্রহ। ছায়া-সুনিবিড় একটি গ্রহ। সবুজে ঠাসা একটি গ্রহ। নির্মল পানি ও ঠাণ্ডা বাতাসের একটি গ্রহ। যেকোনো আগন্তুক গ্রহটিতে গেলে তার বিস্ময়ের সীমা থাকবে না! কোনো কলহ নেই, কোনো দূষণ নেই, কোনো যুদ্ধ নেই। যেন অপার শান্তির অপূর্ব লীলাভূমি! কিন্তু কিছুটা গভীরে গেলেই তিনি হতবাক হয়ে যাবেন! বুঝতে পারবেন, পুরো গ্রহ জুড়েই বিরাজ করছে দগদগে ক্ষত। প্রতিটা মুহূর্ত ভীষণ আতংকে ছটফট করছে সবাই। সেই আতংক নিয়ে আলোচনারও সুযোগ নেই। কেউ সেটা প্রকাশের চিন্তা মাথায় আনামাত্রই তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। সে শাস্তি কোনো সাধারণ শাস্তি নয়। শাস্তি পেয়েছে যারা, তাদের আর্তনাদ আজও তাড়া করে বেড়ায় প্রিয়জনদের। কিন্তু কঠিন সাজার ভয়ে প্রিয়জনেরা প্রতিবাদ করে না। আসলে তারা প্রতিবাদ করার চিন্তাও করে না। কারণ তাদের চিন্তা বা কল্পনা প্রতি মুহূর্তে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাই পুরো গ্রহটাই পরিণত হয়েছে বোবা একটি গ্রহে!
এই গ্রহবাসীর কাছে আছে সেই প্রযুক্তি যার সাহায্যে সমুদ্রের কোনো অংশের ঢেউ পর্যন্ত কন্ট্রোল করা যায়। কিন্তু চিন্তাশক্তিকে কন্ট্রোল করার কোনো উপায় তাদের জানা নেই। আসলে চিন্তাশক্তিকে কন্ট্রোল করার মতো কঠিন কাজ আর নেই। মাঝেমাঝে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কারও মনে গারাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হলেও রেহাই পাওয়া যায় না। বোবা গ্রহে থেকে থেকে কেবল আর্তনাদের শব্দই শোনা যায়! শাস্তির ফলে কেউ আংশিক বা সম্পূর্ণ স্মৃতিশক্তি হারাচ্ছে। কারও কারও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্যারালাইসড বা অবশ হয়ে পড়ছে। আবার কারও কারও জীবনে এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগের আবির্ভাব ঘটছে। এমনকি শাস্তির কারণে ব্রেন ডেথ-এর ঘটনাও ঘটছে! এই শাস্তিগুলো দূর থেকে দেওয়া হয়। কিন্তু কাউকে টর্চার সেলে ধরে নিয়ে গেলে তার ওপর চলে অকল্পনীয় নির্যাতন। আর টর্চার সেলে যাওয়া মানেই শেষ পর্যন্ত মৃত্যু অনিবার্য!

এই গ্রহের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তি মহাবিজ্ঞানী রিশাদ। তিনি খুব গোপনে কিছু কাজ করে চলেছেন। গ্রহবাসীকে এই ভয়ংকর দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে রক্ষার উপায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন। তাই পরিকল্পনা করে ধীরে ধীরে অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর এই গোপন পরিকল্পনা ও কাজের খবর শুধুমাত্র একজনই জানে। তাঁর এবং তাঁর সহযোগীর চিন্তা-ভাবনা যেন মনিটরিং করা সম্ভব না হয়, সেজন্য তিনি একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। তারপরও খুব সাবধানে থাকতে হয়। ধরা পড়ে গেলে নির্ঘাত পরিণতি হবে ভয়াবহ! তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে দুজন কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।
আজ অবশ্য মহাবিজ্ঞানী তাঁর মেয়ে ননিতার আবদার পূরণে ব্যস্ত। ননিতা তার চোখের মণি। সে বাবার কাছে ‘ক্লাইটোনাম স্টোনের’ এক সেট গয়না চেয়েছে। সব বান্ধবী মিলে আগামীকাল তারা ‘টিকো’ উপগ্রহের ‘সেসেনা’ জলপ্রপাত দেখতে যাবে। তাছাড়া ননিতার রুমের শীতলীকরণ যন্ত্রের ‘চীলড ক্রিস্টাল’ শেষ হয়ে গেছে; তাই রুম ঠাণ্ডা হচ্ছে না। এসব জোগাড়ের জন্যই মহাবিজ্ঞানী রিশাদ যেগাযোগ যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন।
ইতিমধ্যে ‘মাজুরা’ প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার খনি থেকে ক্লাইটোনামের আকরিক উত্তোলন করা হয়েছে। সেখান থেকে বিশুদ্ধ ক্লাইটোনাম স্টোন সংগ্রহ করতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা। তাই পাশাপাশি চলছে গয়না ডিজাইনের কাজ এবং শীতলীকরণ যন্ত্রের চীলড ক্রিস্টাল সংগ্রহের কাজ।
মহাবিজ্ঞানী রিশাদকে দেওয়া হয়েছে এই গ্রহের সর্বক্ষমতার অধিকারী গারাদের সমতুল্য সুযোগ-সুবিধা! গারাদ নিজেও একজন বিজ্ঞানী। শুধু গারাদ একাই না, গারাদের পূর্বপুরুষরা সবাই বিজ্ঞানী। বর্তমানে মহাবিজ্ঞানী রিশাদ এবং বিজ্ঞানী গারাদ- এই দুজন ব্যক্তি ছাড়া তৃতীয় কেউ এই গ্রহে এতটা সুযোগ-সুবিধা ভাগ করেন না।
ননিতা তার বান্ধবীদের সঙ্গে গল্প করছে। টিকো উপগ্রহে গিয়ে তারা সেসেনা জলপ্রপাত তো দেখবেই, একই সঙ্গে অন্য অনেক স্থানও ঘুরে আসবে। কিন্তু এখন কেউই তাদের বাবা-মাকে সেসব কথা বলবে না। কারণ দর্শণীয় জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রোগ্রাস আগ্নেয়গিরি, তালাশা অভয়ারণ্য অথবা মালুচা নামের চোরাবালি প্রদেশসহ ভয়ংকর আরও কিছু স্থান। এসব জানলে কারও বাবা-মা ঘুরতেই যেতে দিতে রাজি হবেন না। বেড়ানো নির্ঘাত ক্যান্সেলড হয়ে যাবে। এই ব্যাপারগুলো নিয়েই বান্ধবীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে তার।
অন্যদিকে মহাবিজ্ঞানী রিশাদের স্ত্রী রূপচর্চায় ব্যস্ত। যোগব্যায়াম, ফেসিয়াল, স্পা- এগুলোতে তার আগ্রহ। তবে সংসারের প্রতিও তার মনোযোগের কমতি নই। রিশাদ যন গবেষণাগারে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন, সজন্য তিনি সাংসারিক বিষয়গুলো যতটা সম্ভব নিজেই সামলানোর চেষ্টা করেন। এত মহান একজনের সহধর্মিণী হয়েও তার মধ্যে অহংকারের ছিঁটেফোটা নেই। তাকে একজন মহান মানুষের যথার্থ সঙ্গীনি বলতে পারেন।
দুপুরের দিকে হঠাৎ যা ঘটল, তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। বিজ্ঞানী গারাদের অনুগত জি-ফোর্সের কমান্ডো যোদ্ধারা মহাবিজ্ঞানী রিশাদের বাসায় ঢুকে পড়ল। তারা মহাবিজ্ঞানী রিশাদ, তাঁর স্ত্রী এবং তাদের ছেলে-মেয়েকে জি-ফোর্সের হেডকোয়ার্টার জি-প্যালেসে নিয়ে যেতে এসেছে। কী কারণে তাদের এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে- তা জানতে চেয়েও কোনো উত্তর পেলেন না রিশাদ। জি-ফোর্সের সদস্যদের কাছে উত্তর পাওয়ার আশা করেও লাভ নই, কারণ তারা আসলে গারাদের নিয়ন্ত্রণাধীন যধ ছাড়া আর কিছুই না।
মহাবিজ্ঞানী রিশাদের ছেলে বাসায় নেই। ঠিক বাসায় নেই বললে পুরোটা বলা হবে না; আসলে এই গ্রহেই নেই। ঘুরে বেড়ানোর জন্য অন্য গ্রহে গেছে। রিশাদ তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে জি-ফোর্সের সামরিক যানে উঠলেন। তিনি বুঝতে পারছেন, তাঁদের ভাগ্যে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
সামরিক যানটি চলতে শুরু করেছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তা পৌঁছে যাবে জি-ফোর্সের সদর দপ্তর জি-প্যালেসে। মহাবিজ্ঞানী রিশাদ ডান হাত দিয়ে মেয়েকে আর বাম হাত দিয়ে স্ত্রীকে ধরে বসে আছেন। রিশাদ বুঝতে পারছেন, তাঁর মেয়েটা ভয়ে কাঁপছে। হঠাৎ এক অজানা আশংকায় তাঁর বুকও কেঁপে কেঁপে উঠল!

২.
সাত বছর পর।
এক হাজার দুই শ বারো তলায় নিজের অ্যাপার্টমেন্টের গোপন কক্ষে কমান্ডার প্যারো তার বাছাই করা দুই সহযোদ্ধাকে নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। কমান্ডার তার সামনে বসা তরুণ সহযোদ্ধা ক্রল এবং তরুণী সহযোদ্ধা সুরির উদ্দেশে বললেন, ‘এই গ্রহের মানুষগুলোর চারিত্রিক ও অন্যান্য গুণাবলী নিয়ে আমি অনেক স্টাডি করেছি। শুধুমাত্র তোমাদের দুজনকেই আমার কাজটির জন্য বিশ্বস্ত ও উপযুক্ত মনে হয়েছে। আসলে কাজটি আমার জন্য- এটি বলা ঠিক হ!ব না, কাজটি আমা!দর সবার জন্য। ম!ন রখ, তামরা সফল হও বা না হও, ইতিহা!সর পাতায় তামা!দর নাম স্বর্ণাক্ষ!র লখা থাক!ব। কিধথ বিশ্বাস ভঙ্গ কর!ল পরবর্তী প্রজন্ম তামা!দর ঘথণা কর!ব এবং অভিশাপ দ!ব। আশা করি, তামরা বিশ্বাস ভাঙ!ব না।’
সুরি দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিল, ‘তুমি আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পার। বিশ্বাসঘাতকতা আমার চরিত্রে নেই।’
ক্রল অধৈর্য হয়ে বলল, ‘কাজের কথা বলো, কমান্ডার।’ ক্রল কিছুটা বদমেজাজী ও একরোখা, কিন্তু আগে সে মোটেও এমন ছিল না। খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল ছেলেটা। জীবনের কোনো একটা ঘটনা তাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। তবে বলা যেতে পারে, বর্তমানের বদমেজাজী ও একরোখা ক্রলকে দলে নেওয়ার একটা বড় কারণ তার এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো তৈরি হয়েছে যে ঘটনার কারণে, সেই ঘটনার মূল হোতারাই কমান্ডার প্যারোর মিশনের লক্ষ্যবস্তু!
প্যারো বলতে শুরু করলেন, ‘আজ থেকে প্রায় ষোলো হাজার বছর আগে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির পৃথিবী নামক গ্রহে আমাদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করত। তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক দূর পৌঁছে গিয়েছিল। কোনো এক সময়, বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে সেসময়কার পৃথিবীর কয়েক শ খ্যাতিমান বিজ্ঞানীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে অর্ধেক ছিল পুরুষ আর অর্ধেক ছিল নারী। তাদের মৃত্যুদণ্ড নতুন কোনো উপায়ে নৃশংসভাবে কার্যকর করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় সেসময়ে পৃথিবী গ্রহের প্রধান বিজ্ঞানী গারাদকে যিনি আসলে আমাদের গ্রহের বিজ্ঞানী গারাদেরই পূর্বপুরুষ। পৃথিবীর বিজ্ঞানী গারাদ অভিযুক্ত বিজ্ঞানীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তৈরি করে একটি যন্ত্র। সেই যন্ত্রের মাধ্যমে অভিযুক্ত বিজ্ঞানীদের এক এক করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।’
সুরি বলল, ‘নিশ্চয়ই যন্ত্রটি খুবই বিকটদর্শন ছিল!’
‘না, যন্ত্রটির গঠন ছিল তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো! সেই যন্ত্রের দিকে একবার তাকালে, তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করত। তবে তার কাজ দেখলে মনে ভীতির সঞ্চার হতো! ওই যন্ত্রের মধ্যে কোনো ব্যক্তিকে বসিয়ে যখন চালু করা হতো, তখন ভয়াবহ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক শক্তি উৎপন্ন হতো এবং বিকট শব্দে ডিম্বাকৃতির যন্ত্রটি প্রচণ্ড গতিতে ঘুরত। নির্ধারিত সময় পর সেটি থামানো হলে তার মধ্যে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির শরীরের ভস্ম ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যেত না! সাজাপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীদের একে একে এই যন্ত্রের সাহায্যে ভস্মীভূত করা হলো। আসলে ভস্মের ব্যাপারটি ছিল পুরোই প্রতারণা। সবাইকে বিভ্রান্ত করার জন্য যন্ত্রটির মধ্যে অন্য কোনো উপায়ে ভস্মের আবির্ভাব ঘটানো হতো!’
কমান্ডার প্যারো কথাগুলো বলে সুরি ও ক্রলের দিকে তাকালেন। ক্রল বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আমরা কি ইতিহাসের ক্লাস করতে এসেছি? কাজের কথা বলো, কমান্ডার। দোহাই লাগে, কাজের কথা বলো। গারাদ আমার পুরো পরিবারকে ধ্বংস করেছে। ওকে আমি জ্যান্ত ধরে পুড়িয়ে মারব। ওই জানোয়ার আমার মাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে ঝলসিয়ে-পুড়িয়ে মেরেছে। ওই নরপিশাচ আমার বাবাকে প্রথমে উন্মাদ বানিয়েছে, তারপর শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট করে হত্যা করেছে। আমার ছোট্ট বোনটা যে একটা পিঁপড়া কামড়ালেও ব্যথায় কেঁদে উঠত, তার প্রতিটা কোষ আলাদা আলাদাভাবে মৃত করেছে! অথচ কী দোষ ছিল তাদের? শুধু একটাই কারণ, আমার বাবা জ্ঞানে-বিজ্ঞানে ছিলেন এ গ্রহের সেরা। তার তো ক্ষমতার কোনো লোভ ছিল না। শুধুমাত্র সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী সন্দেহে এই জঘন্য কাজগুলো করা হয়েছে। আমি ওই সময় বাবার তৈরি সুপার স্পেস মেশিনে করে অন্য গ্রহে বেড়াতে গিয়েছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছি। এই সুপার স্পেস মেশিনের কথা কেউ জানে না। আমি এটাতে চড়ে গারাদের কক্ষে চলে যাব, তারপর তাকে পুড়িয়ে মারব। শুধুমাত্র ওর কক্ষের ইউনিভার্সাল কো-অর্ডিনেটটা দরকার।’
প্যারো ক্রলকে বললেন, ‘শান্ত হও, ক্রল। উত্তেজিত হলে চলবে না। সুপার স্পেস মেশিনের কথা কেউ জানে না, এটা তোমার একদম ভুল একটি ধারণা। শুধুমাত্র তোমাদের দুজনকে আমি আমার আসল পরিচয়টা জানিয়ে দিচ্ছি। মহাবিজ্ঞানী রিশাদ আমার বস। তিনি আর আমিই গোপনে সুপার স্পেস মেশিন তৈরির কাজটা করেছিলাম। কাজেই সুপার স্পেস মেশিনের কথা আমিও জানি। গোপনে এই সুপার স্পেস মেশিন দিয়ে তুমি গারাদের কক্ষে যদি পৌঁছাতেও পার, তারপরও তাকে হত্যা করার আগে তোমাকে ধ্বংস করার মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা তার কক্ষে আছে। তাকে হত্যা করা এত সহজ নয়।’
ক্রল বজ্রমুষ্ঠি করে বলল, ‘উপায় বলো কমান্ডার, আমি সমস্যার কথা শুনতে চাই না।’
‘উপায় জানানোর জন্যই তো ইতিহাস বলছিলাম। একটু ধৈর্য ধরে শোনো, বলছি। সেই পৃথিবী গ্রহের আদি গারাদ যে যন্ত্রটিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার যন্ত্র বলেছিল, সেটি আসলে ছিল স্পেস মেশিন। তুমি একটু আগে যে সুপার স্পেস মেশিনটার কথা বললে, তারই প্রথম সংস্করণ! তোমার বাবা সেটাকে অত্যাধুনিক করেছেন ঠিকই, কিন্তু গারাদ সেটাকে উদ্ভাবন করেছে। সেই আদি গারাদ তার তৈরি স্পেস মেশিন দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধোঁকাটা দিল। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সব বিজ্ঞানীকে সে পাঠিয়ে দিল পৃথিবী থেকে ষোলো আলোকবর্ষ দূরের এই গ্রহতে। তারপর একদিন নিজেও চলে এল। এখানে জন্ম নিল গারাদের বংশধর। তার নামও রাখা হলো গারাদ। প্রকৃতপক্ষে, গারাদের বংশধরদের প্রত্যেকের নাম গারাদ। তারা নামের মধ্য দিয়ে চিরঞ্জীব থাকতে চেয়েছে। যাহোক, অন্যান্য বিজ্ঞানীদেরও সন্তান-সন্ততি জন্ম নেওয়ার ফলে গ্রহের লোকসংখ্যা বাড়তে থাকল। এক পর্যায়ে তৃতীয় গারাদ এক ফন্দি আঁটল। সে একটি আইসি তৈরি করল এবং এই গ্রহের প্রত্যেকের মাথার অক্সিপিটাল লোবে অস্ত্রোপচার করে বসিয়ে দিল। তখন এই গ্রহের লোকসংখ্যা ছিল খুবই কম। তারা দলবদ্ধভাবে এক জায়গায় বাস করত। তৃতীয় গারাদ সবার সঙ্গে কপটতা করে, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আইসি স্থাপনের প্রজেক্ট সফল করল। যে কয়েকজন সেসময় বিরোধিতা করল, তাদেরকে নিজের অনুগত লোকদের দিয়ে ধরে জোর করে স্পেস মেশিনে চাপিয়ে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিল। মাথায় আইসি বসানোর ফলে এই গ্রহের সবাই বলতে গেলে গারাদ এবং গারাদের বংশধরদের দাসে পরিণত হলো! তৃতীয় গারাদই পরবর্তীতে অত্যাধুনিক রোবট তৈরি করে জি-ফোর্স নামে সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলেছে। আর গারাদের বংশধররা যে যতটা পেরেছে জি-ফোর্সের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়েছে।’
সুরি মনোযোগ দিয়ে কমান্ডার প্যারোর কথা শুনলেও ক্রল বেশ অধৈর্য হয়ে উঠেছে। কমান্ডার প্যারো ক্রলের অধৈর্য হওয়ার ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে বলে চললেন, ‘তোমরা জানো যে, জি-ফোর্সের যান্ত্রিক সদস্যরা গ্রহের সবার ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। কেউ জন্ম নিলেই তারা সেখানে উপস্থিত হচ্ছে এবং নবজাতক শিশুর মাথায় অস্ত্রোপচার করে অক্সিপিটাল লোবে আইসি বসিয়ে দিচ্ছে। সেই আইসির এক শ আটাশ ডিজিটের নম্বরকেই বলা হচ্ছে আমাদের আইডেন্টিটি নম্বর। এই আইসির সঙ্গে আইপি ব্যাকবোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জি-ফোর্সের কন্ট্রোল সেন্টারের সংযোগ রয়েছে। আমরা যখন যা চিন্তা করি, তা নিউরন থেকে আবেশিত প্রক্রিয়ায় চলে যাচ্ছে আইসিতে এবং আইসি থেকে আইপি ব্যাকবোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে কন্ট্রোল সেন্টারে। তাই প্রতিটা মুহূর্তের জন্য আমরা পরাধীনতা ভোগ করছি। এমনকি কেউ যদি গারাদের বিরূদ্ধে বিন্দুমাত্র কিছু করার চিন্তাও করে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে আইসির মাধ্যমে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয় অথবা কিছু নিউরন পুড়িয়ে কোনো অঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেওয়া হয়। কী ভয়ংকর একটা পরিস্থিতিতে আমরা আছি, সেটা তো জানোই!’
সুরি প্রশ্ন করল, ‘আমাদেরকে অপারেশন সেন্টারে নিয়ে তুমি কী করেছ? এখন কি জি-ফোর্সের সদস্যরা সত্যিসত্যিই আমাদের চিন্তার জগতে ঢুকতে পারছে না?’
‘ওরা অবশ্যই এখন আর তোমাদের চিন্তার জগতে ঢুকতে পারছে না। সেটা না হলে তো আমি তোমাদের সঙ্গে এত কিছু আলোচনা করতাম না! আর তাছাড়া এটাতো বুঝতেই পারছ যে ওরা যদি টের পেতই, তাহলে আমরা এতক্ষণে আস্ত থাকতাম না! আসলে আমি তোমাদেরকে অপারেশন সেন্টারে নিয়ে তোমাদের মস্তিষ্কের আইসির সঙ্গে জি-ফোর্সের কন্ট্রোল রুমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি। তবে প্রথমে অ্যালার্ম জেনারেটিং ইউনিট অকার্যকর করে নিয়েছি যাতে জি-ফোর্স সংযোগ বিচ্ছিন্নতার সময় কোনো অ্যালার্ম না পায়। আমার আইসিটাও আমি নিজের হাতেই একইভাবে সংযোগহীন করেছি, যদিও ব্যাপারটি বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। ব্যাক-ফ্রন্ট মিররের সাহায্য নিতে হয়েছে।’
সুরি আবারো প্রশ্ন করল, ‘কিন্তু অ্যালার্ম জেনারেট না হলেও কোনো সংযোগ যদি হঠাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, সেটা কি তারা বুঝতে পারে না?’
‘তোমরা শুনে খুশি হবে যে, অ্যালার্ম জেনারেট না হলে তারা বুঝতে পারে না। আমাদের আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, ওরা আইসির সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের সংযোগ সংখ্যা অডিট করে না। ব্যাপারটাকে ওদের সিস্টেমের সিকিউরিটি হোল বলতে পার। এই সিকিউরিটি হোলের ব্যাপারটা এখন পর্যন্ত ওরা টেরও পায়নি। এটা আমার স্যার মহাবিজ্ঞানী রিশাদের ফাইন্ডিংস। তবুও যা করার, আমাদের তাড়াতাড়িই করতে হবে।’
কমান্ডার প্যারো আর সুরির কথামালা হজম করতে গিয়ে ক্রল একটু বেশিই অস্থির হয়ে উঠেছে। সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘আমি তো প্রথম থেকে সেটাই জানতে চাইছি কমান্ডার, আমাদের কী করতে হবে?’
কমান্ডার প্যারো ঠাণ্ডা মাথায় ক্রল এবং সুরিকে তাদের করণীয় সম্পর্কে ব্রিফ দিলেন।

৩.
সুপার স্পেস মেশিন থেকে প্যারো, ক্রল এবং সুরি নামল। সুপার স্পেস মেশিনটা চালানোর ব্যাপারে প্যারোকে সহযোগিতা করেছে ক্রল। তারা দেখতে পেল একটি বিশাল কক্ষের মধ্যে মেশিনটা চলে এসেছে। ক্রল ও সুরিকে তাদের কমান্ডার প্যারো আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে কক্ষটি বিজ্ঞানী গারাদের। কক্ষটি আসলে জি-ফোর্সের হেড অফিস জি-প্যালেসের কন্ট্রোল রুম। এই কক্ষে আসতে সুপার স্পেস মেশিনে যে ‘ইউনিভার্সাল কো-অর্ডিনেট’ ইনপুট করা দরকার, তা ‘ইউনিভার্সাল সুপার পাওয়ার অথরিটি’-র মাধ্যমে এনক্রিপ্ট করা। তাই এনক্রিপ্টেড কো-অর্ডিনেটটা জানা না থাকলে এই কক্ষে কেউ আসতে পারবে না।
বিজ্ঞানী গারাদের সঙ্গে এই কক্ষে কাজ করতেন ক্রলের বাবা মহাবিজ্ঞানী রিশাদ। মহাবিজ্ঞানী রিশাদই প্যারোকে এনক্রিপ্টেড কো-অর্ডিনেটটা জানিয়েছিলেন। কমান্ডার প্যারো মহাবিজ্ঞানী রিশাদের কাছ থেকে আরও জেনেছিলেন, কখন বিজ্ঞানী গারাদ এই কক্ষে থাকে না। যেমন: এখন এই কক্ষে বিজ্ঞানী গারাদ নেই। মহাবিজ্ঞানী রিশাদ প্যারোকে সমস্ত তথ্য দিতেন। তথ্য পাচারের ব্যাপারটি জি-ফোর্স যাতে না জানতে পারে, সেজন্য তিনি নিজের ও প্যারোর আইসিতে ‘ইনডিউসার’ সংযুক্ত করেছিলেন। ‘ইনডিউসার’ জি-ফোর্সের কাছে প্রকৃত তথ্যের বদলে রেকর্ড করা তথ্যই ‘রাউন্ড-রবিন ফ্যাশনে’ (এটি একটি আদি শিডিউলিং অ্যালগরিদম যা পৃথিবী গ্রহেও ব্যবহৃত হতো) পাঠাতে থাকত। পরে অবশ্য প্যারো মাথার আইসি থেকে ‘ইনডিউসার’ সরিয়ে ফেলেছেন। তারপর ব্যাক-ফ্রন্ট মিররের সাহায্যে তার মস্তিষ্কের আইসির সঙ্গে কন্ট্রোল রুমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
বিজ্ঞানী গারাদের কন্ট্রোল রুমটি খুব যে বেশি যন্ত্রপাতিতে ভরা, তা নয়। বরং সব যন্ত্রপাতি একত্র করলে বড়জোর কক্ষের দশ শতাংশ জায়গা দখল করবে। কয়েকটি টেবিলে যন্ত্রপাতিগুলো সাজানো। বিশাল কক্ষের একদিকে রয়েছে কাঁচের তৈরি ছোট্ট আরেকটা চেম্বার। সেই কাঁচের চেম্বারেই বসে বিজ্ঞানী গারাদ। তার বসার জন্য সেখানে একটি সাধারণ টেবিল ও একটি সাধারণ চেয়ার রয়েছে। টেবিলটার রঙ সবুজ আর চেয়ারটার রঙ নীল। টেবিলের ওপরের জিনিসগুলোও বিভিন্ন রঙের।
‘বোঝাই যাচ্ছে, গারাদ রঙিন মনের মানুষ!’ টেবিল-চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে হাসতে হাসতে কথাগুলো বলল ক্রল। ক্রলকে এই প্রথম হাসতে দেখল অন্য দুজন। ক্রলের রসিকতায় তারাও হেসে ফেলল। মিশনের লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি চলে এসে ছেলেটা মনে হয় মানসিকভাবে কিছুটা চাপমুক্ত হয়েছে।
কমান্ডার প্যারো, ক্রল এবং সুরিকে নিয়ে কাঁচের চেম্বারে প্রবেশ করলেন। প্যারো সবুজ রঙের টেবিলের ওপর রাখা কটকটে কমলা রঙের মাইক্রো কম্পিউটারের মতো একটি ছোট্ট যন্ত্র দেখিয়ে সুরিকে বললেন, ‘এই মাইক্রো মডিউলে আছে সেই কনফিগারেশন ফাইল যার কথা এখানে আসার আগেই তোমাদের বলেছি। শুনেছিলাম, এতে রয়েছে আথ্রাক্স অপারেটিং সিস্টেম। তুমি অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করেছ, তাই এ সম্পর্কে তুমিই ভালো বলতে পারবে। জি-সিস্টেমে ঢোকার ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড আমার কাছে আছে। পাসওয়ার্ডটি বিশাল বড়, তবে শুনেছি কখনো পরিবর্তন করা হয় না।’ কমান্ডার প্যারো সুরির দিকে একটি নোটপ্যাড টাইপের বস্তু এগিয়ে দিলেন। সেখানে একটি ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড লেখা।
সুরি ইউজারনেম আর পাসওয়ার্ড দিতেই জি-সিস্টেমে ঢুকে গেল! তার মানে পাসওয়ার্ডটি কাজ করেছে। সুরি একটু ঘাঁটাঘাঁটি করেই প্যারো আর ক্রলের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘যা ভেবেছিলাম, তা-ই!’
‘কী?’
‘তুমি ঠিকই বলেছ, কমান্ডার। এতে রয়েছে আথ্রাক্স অপারেটিং সিস্টেম ৯ দশমিক ৭। আমি আথ্রাক্স অপারেটিং সিস্টেমের কোনো ভার্সনেই আগে কখনো কাজ করিনি। …’
সুরির কথা শেষ হওয়ার আগেই কমান্ডার প্যারো বললেন, ‘তাহলে উপায়!’
‘উপায় একটা পেয়েছি। এখানে লিনাক্সের কমান্ডগুলো কাজ করছে। লিনাক্স হলো আদি অপারেটিং সিস্টেম; মনে হয় সেখান থেকেই এর উদ্ভব।’
কমান্ডার প্যারো কিছুটা স্বস্তি পেলেন।
সুরি যোগ করল, ‘আমি আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমগুলো সম্পর্কেও জানি। কিন্তু আথ্রাক্স অপারেটিং সিস্টেমের নাম শুনিনি। হতে পারে, এটা লিনাক্স থেকে বিজ্ঞানী গারাদ এবং মহাবিজ্ঞানী রিশাদ তৈরি করেছিলেন!’
ক্রল কেমন যেন চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে তার বাবা কাজ করতেন; তাই কোনো কল্পনা হয়তো তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। প্যারো সুরিকে তাড়াতাড়ি কাজ করার তাগাদা দিলেন, ‘দেরি না করে কনফিগারেশন ফাইলটা খুঁজে বের করো। মহাবিজ্ঞানী রিশাদ আমাকে বলেছিলন, সেটা ডিলিট করলেই যান্ত্রিক জি-ফোর্স বাহিনী অকার্যকর হয়ে পড়বে। সেগুলো তখন খেলনা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। বিজ্ঞানী গারাদের সব কাজ করে ওই রোবটগুলোই। সুতরাং সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া মানেই সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা। তারপর গারাদের বেডরুমের সিকিউরিটি সিস্টেমের কনফিগারেশন ফাইলটা খুঁজে বের করে সেটা ডিলিট করে দিতে হবে। সুরি, যত তাড়াতাড়ি পারো, আগে জি-ফোর্সের কনফিগারেশন ফাইলটা খুঁজে ডিলিট করে দাও।’
সুরি তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ক্রলকে এখনো অন্যমনস্ক লাগছে। কমান্ডার প্যারো চারদিক ভালোভাবে একবার দেখে নিলেন।
একটু পর সুরি হতাশভাবে বলল, ‘আমি তো ফাইন্ড কমান্ড চলালাম। সার্চিং কমপ্লিট হয়েছে। কিন্তু ওই নামের কনফিগারেশন ফাইল এখানে নেই! হয়তো গারাদ সেই ফাইলের নাম পরিবর্তন করেছে।’
হঠাৎ কক্ষের বিভিন্ন জায়গার ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকল। কমান্ডার প্যারো ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন. ‘ওহ্হো, এটা মনে হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া! আমার কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু আমি তো শুনেছিলাম, এই রুমের কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। মনোযোগ দিয়ে গবেষণা করার জন্য গারাদ জি-ফোর্সের কোনো সদস্যকেও এই রুমে ঢুকতে দেয় না। কারণ গারাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কোনো মানুষের পক্ষেই এখানে পৌঁছানো সম্ভব না।’
কমান্ডার প্যারো বা অন্য দুজন তখনও জানে না যে কক্ষটির দিকে ইতিমধ্যে জি-ফোর্সের একটি বিশেষ সশস্ত্র দল এগিয়ে আসছে। তারা অ্যালার্ম সেন্টার থেকে খবর পেয়েছে যে এই রুমে অপরিচিত কেউ প্রবেশ করেছে। গারাদ এই রুমের সিকিউরিটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করলেও মহাবিজ্ঞানী রিশাদকে হত্যার পর এখানে দুই স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। প্যারো এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
ক্রল বিশাল কন্ট্রোল রুমটির ছাদের মাঝ বরাবর আটকানো একটি লেজার টিউবের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল, ‘কমান্ডার, এটাই সেই কালপ্রিট!’
প্যারো লেজার টিউবটির দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের আর দেরি করা ঠিক হবে না। ধোঁয়াতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। এই কক্ষের দরজাও মনে হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়। জোর খাটিয়ে খোলা সম্ভব না। চলো, সুপার স্পেস মেশিনে গিয়ে উঠি।’
লেজার টিউবটা ধীরে ধীরে পুরো ঘরের প্রতিটা অংশে লেজার রশ্মি ফেলে স্ক্যান করছে। অপরিচিত কিছুতে পড়ামাত্রই রশ্মিটি অ্যালার্ম সেন্টারে অ্যালার্ম পাঠিয়ে দেয় এবং এই কক্ষের সিকিউরিটি সিস্টেম বা সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করে দেয়। প্যারো, ক্রল, সুরিজ্জএই তিনজ!নর য!কা!না এক বা একাধিক জ!নর শরী!র লজারটি হয়!তা প!ড়ছিল।
সুরির মাথা কাজ করছে না। বিভিন্ন ফোল্ডার ঘাঁটাঘাঁটি করেও সে কনফিগারেশন ফাইলটা খুঁজে পায়নি। ধোঁয়ায় তারও দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কক্ষের দরজায় গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। কমান্ডার প্যারো বুঝতে পারছেন, জি-ফোর্সের সদস্যরা আর অল্প সময়ের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করবে এবং তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ!
সুরি মনে মনে স্রষ্টাকে স্মরণ করতে লাগল আর কনফিগারেশন ফাইলটা যেন খুঁজে পায়, সেই প্রার্থনা করতে লাগল। সুরি যখন কোনো ক্ষেত্রে উপায়হীন হয়ে পড়ে, তখন মনে মনে স্রষ্টাকে প্রবলভাবে স্মরণ করতে থাকে। এতে ম্যাজিকের মতো কাজও হয়। আজও হলো! হঠাৎ সুরির মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এল। সুরি মনিটরে কিছু একটা টাইপ করে এন্টার চাপতেই কয়েক মুহূর্তেই যা ঘটল, তা অলৌকিকই বলা চলে!
কটকটে কমলা রঙের মাইক্রো কম্পিউটারের মতো দেখতে ছোট্ট যন্ত্রটির মনিটরে হাজার হাজার লাইন চোখের পলকে ওপর থেকে নিচে সরে সরে যাচ্ছে। যেন খুব দ্রুত অনেক কমান্ড এক্সিকিউট হচ্ছে।
হঠাৎ করে বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গমন বন্ধ হয়ে গেল। যেমনি আকস্মিকভাবে ধোঁয়া নির্গত হওয়া শুরু হয়েছিল, তেমনি আকস্মিকভাবেই তা আবার বন্ধ হয়ে গেল। এর কয়েক মুহূর্ত পরই বিশাল কন্ট্রোল রুমের স্বয়ংক্রিয় দরজাটি নিজে নিজেই খুলে গেল। কমান্ডার প্যারো, ক্রল এবং সুরি- তিনজনই ভয় পেয়ে গেল। এখন তো জি-ফোর্সের ভয়ংকর রোবটগুলো তাদের টুকরো টুকরো করে ফেলবে!
বেশ কয়েক মুহূর্ত পার হয়ে গেল। স্বয়ংক্রিয় দরজা দিয়ে কেউ প্রবেশ করল না। জি-ফোর্সের সদস্যদের গোলাগুলিও বন্ধ হয়ে গেছে। কমান্ডার প্যারো আর ক্রল স্বয়ংক্রিয় দরজার সামনে যেতেই অবাক হলো! দরজার বাইরে জি-ফোর্সের বিকটদর্শন ১০-১২ জন সশস্ত্র সদস্য মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে আছে।
সুরি দরজার কাছে এগিয়ে গেল। সে ক্রলের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ক্রলের বিস্ময় এখনো কাটেনি। বিস্ময় নিয়েই সে সুরির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি এগুলো কিভাবে করলে!’
সুরি ক্রলের দিকে তাকিয়ে রহস্যে ভরা মুচকি হাসি হাসল।

৪.
কমান্ডার প্যারো, ক্রল এবং সুরি সুপার স্পেস মেশিনে চেপে হাজির হলো বিজ্ঞানী গারাদের বেডরুমে। কিছুক্ষণ আগেও এই রুমে ছিল এই গ্রহের সবচেয়ে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু সুরি সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভেঙে দিয়েছে!
এই বেডরুমের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কনফিগারেশন ফাইল সুরি খুঁজে বের করার চেষ্টাও করেনি। কারণ তার মাথায় চলে এসেছিল সুপার একটি আইডিয়া। যেহেতু সে বুঝতে পেরেছিল যে আথ্রাক্স অপারেটিং সিস্টেমের মাদার অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স, সেহেতু তার মনে হলো আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন কনফিগারেশন ফাইল খোঁজার কী দরকার! একসঙ্গে সব রকম ফাইল, এমনকি রুট ডিরেক্টরি পর্যন্ত ডিলিট করার লিনাক্স-কমান্ড সে জানে, সেটাই তো প্রয়োগ করা যেতে পারে।
রুট ডিরেক্টরি, বাকি সব ডিরেক্টরি, সমস্ত ফাইল একসঙ্গে ফার্সফুলি ডিলিট করার জন্য লিনাক্সের এই কমান্ডটা দিয়েছিল:
rm-rf /
এখানে, ‘rm’ এর মাধ্যমে সিস্টেমকে ‘রিমুভ’ কমান্ডটি এক্সিকিউট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তারপরের অংশটিকে বলা হয় ‘অপশন’। ‘অপশন’ আলাদাভাবে চেনার জন্য ড্যাশ (-) চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। ‘অপশন’ নির্দেশ করে কিভাবে কমান্ডটি এক্সিকিউট হবে। তাই একে অনেকসময় ‘মোডিফায়ার’ও বলা হয়। ‘অপশন’ হিসেবে ‘-r’ থাকলে ডিরেক্টরির সমস্ত কনটেন্ট ‘recursively’ মুছে যায়। আর -f থাকলে সিস্টেম কোনো ফাইলকে ‘forcefully’ মুছে ফেলে, মুছে ফেলার আগে একবার জিজ্ঞেসও করে না; সিস্টেম অন্ধের মতো সব মুছে ফেলে। এক্ষেত্রে একসঙ্গে ‘-rf’ থাকায় ‘-r’ এবং ‘-f’, দুইটার ইফেক্টই পড়েছে!
সবশেষের অংশটি হলো ‘আর্গুমেন্ট’। এটি নির্দেশ করে কমান্ডটি কার ওপর চালানো হবে। এক্ষেত্রে ‘/’ চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। তার মানে কমান্ডটি রুট ডিরেক্টরির অন্তর্গত সব সাব-ডিরেক্টরি ও ফাইলের ওপর চালানো হয়েছে। আর রুট ডিরেক্টরির অধীনেই তো সবকিছু থাকে। তাই সুরি এই কমান্ড চালানোর সঙ্গে সঙ্গে সব কনফিগারেশন ফাইল চোখের পলকে ডিলিট হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে কটকটে কমলা রঙের মাইক্রো কম্পিউটারের মতো দেখতে ছোট্ট যন্ত্রটির নিয়ন্ত্রণাধীন সবকিছু বিকল হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানী গারাদের বেডরুমের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তখনই বিকল হয়ে পড়েছে!
কমান্ডার প্যারো, ক্রল এবং সুরি বিজ্ঞানী গারাদের বেডরুম দেখে হতবাক হয়ে গেল। বেডরুম যে এত বিশাল সাইজের এবং এতটা ব্যয়বহুল হতে পারে, তা গারাদের বেডরুম না দেখলে কল্পনা করাও মুশকিল! একটি মৃদু মিষ্টি সুর পুরো বেডরুমকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সুরটি কোথা থেকে ভেসে আসছে তা বলার উপায় নেই। রুমের মাঝে রয়েছে ক্লাইটোনাম স্টোন দিয়ে কারুকার্য করা একটি বিছানা। সেখানে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে বিজ্ঞানী গারাদ।
বিছানার এক পাশে কাছেই রাখা আছে গারাদের পারসোনাল স্পেস মেশিন। স্পেস মেশিনের পেছনে তাকালে দেখা যাচ্ছে বিশাল কাঁচের দেওয়াল দিয়ে আটকানো একটা অ্যাকুরিয়াম। অ্যাকুরিয়ামের ভেতরে পুরোই সমুদ্রের তলদেশের মতো পরিবেশ। অ্যাকুরিয়ামটি কত বড় তা বোঝার উপায় নেই। তবে সেখানে তাকিয়ে থাকলে রঙ-বেরঙের চেনা-অচেনা বিভিন্ন প্রজাতির মাছকে সাঁতার কাটতে দেখা যায়!
সুরি অবাক বিস্ময়ে অ্যাকুরিয়ামটির সামনে এগিয়ে গেল। খানিক পর সুরির পাশে এসে দাঁড়ালেন কমান্ডার প্যারো। বললেন, ‘গারাদের এই রুমটা শান্ত সাগরের তলদেশে।’
‘এটা সাগরের তলে?’ সুরি খুব অবাক হয়ে প্রশ্নটি করল। ‘তাহলে কাচের ওপাশে আমরা কী সত্যিকারের সাগরতল দেখছি?’
‘হ্যাঁ। ওটা শান্ত সাগরের তলার রহস্যময় জগৎ।’
‘ওয়াও, কী দারুণ!’
বিছানার অন্য পাশে রয়েছে একটি সুইমিং পুল। সেই সুইমিং পুলের মাঝে দেখা যাচ্ছে ফোয়ারা। ফোয়ারা থেকে বিরতিহীনভাবে পানি পড়ছে সুইমিং পুলে। সুইমিং পুলের ওপাশে তাকালে দেখা যাচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা একটি পার্ক। সেখানে রয়েছে পরিচিত-অপরিচিত অনেক গাছ। দুটো হরিণ আর একটা ময়ূরকেও ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। পার্কের শেষ কোথায়, তা বোঝা যাচ্ছে না।
কমান্ডার প্যারো সাঁতার কাটার জন্য সুইমিং পুলের দিকে হেঁটে গেলেন। ক্রল দাঁড়িয়ে আছে গারাদের বিছানার পাশে। বিছানায় ঘুমিয়ে আছে গারাদ। বাবা-মা আর বোন ননিতার স্মৃতি উঁকি দিচ্ছে ক্রলের মনে। যখনই তাদের নৃশংসভাবে মেরে ফেলার কথা ক্রলের মনে মাথাচারা দিয়ে উঠছে, তখনই গারাদকে মারার জন্য তার অস্থিরতা চূড়ান্ত হচ্ছে। তবুও সে নিজেকে প্রাণপণে দমন করে চলেছে। ঘুমিয়ে থাকা কোনো মানুষকে সে হত্যা করবে না। গারাদ ওঠামাত্রই তাকে হত্যা করবে। বাবা-মা আর বোনের স্মৃতি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে। হঠাৎ ঘুমন্ত গারাদ লাফিয়ে উঠল। তার ডান হাতের মুঠোতে ছোরা লুকানো ছিল। সে হয়তো ক্রলদের আসা টের পেয়ে হাতে ছোরা নিয়ে রেখেছে। গারাদ ছোরা নিয়ে ক্রলের গলা বরাবর আঘাত হানল। সেই আঘাত সামান্যর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। গারাদ ছোরাটা ছুড়ে ফেলে পেছনে হাত দিয়ে একটি অস্ত্র বের করে আনল। ক্রল সরে যাওয়ার আগেই গুলির শব্দে সাগরতলার বেডরুমটি প্রকম্পিত হলো!
সুরি তার আগ্নেয়াস্ত্রটি কোমরের খাপে ভরে ফেলল। গুলিবিদ্ধ গারাদ বিছানায় পড়ে আছে। তাকে হত্যার জন্য ক্রল দীর্ঘদিন ব্যাগের মধ্যে ‘টাট্টি পাথর’ এবং ‘নাজার গাছের কাঠ’ রেখে দিয়েছে। সেগুলো ব্যাগ থেকে বের করল সে।
গুলিবিদ্ধ গারাদ এখন আগুনে পুড়ছে আর যন্ত্রণায় ছটফট করছে। টাট্টি পাথরের দুটো টুকরায় ঘষা দিয়ে আগুন ধরিয়েছে ক্রল। সেই আগুন নাজার গাছের কাঠে ধরিয়ে ছুড়ে ফেলেছে গারাদের শরীরে। নাজার কাঠের আগুনের দহন তীব্রতা কয়েক শ গুণ বেশি! আগুন নিমিষেই গারাদের কাপড় থেকে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিছানায়। ক্রলের মনে হচ্ছে, তার বাবা-মা-ছোট বোন মৃত্যুর আগে বেঁচে থাকার জন্য না জানি কত আকুতি করেছিল! গারাদের কষ্টের মৃত্যু দেখে তার কষ্ট কিছুটা লঘু হচ্ছে। সুরি বা কমান্ডার প্যারো ক্রলকে বাধা দিচ্ছেন না। কারণ তাদের জীবনেও গারাদ ঘটিয়েছিল লোমহর্ষক ট্রাজেডি। পুরো গ্রহের মানুষ এই একটি মানুষের জন্য আতংক-উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছে!

৫.
ক্রল এবং সুরি শান্ত সাগরের তীরে বালুর ওপর বসে আছে। শান্ত সাগরের কাছে এলে অপরিসীম প্রশান্তি এসে ভর করে মনে। রাতের আকাশের কালো মেঘের ছায়ায় স্রোতের গর্জন আর বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজ মনে এক অন্য অনুভব তৈরি করে।
চারদিক জনমানবহীন। থেকে থেকে শান্ত সাগরের বুক চিরে জলরাশি কুণ্ডলী পাকিয়ে হাতির শুঁড়ের মতো আকৃতি নিয়ে অনেক ওপরে উঠে যায়; যেন আকাশ ছুঁতে চায়! আকাশের পাঁচটি উপগ্রহই আজ আলোকিত। কোনোটি বেশি, কোনোটি কিছুটা কম। সেই আলোতে শান্ত সাগর যেন এক অবাস্তব জগতের সমুদ্র! দিগন্তহীন শান্ত সাগরের দিকে তাকালে দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায় একটু পরপর শুঁড়ের মতো কুণ্ডলী পাকানো জলরাশি ওপরে উঠে যাচ্ছে। সাগরের এই উত্তালতার সামনে মনের বিক্ষিপ্ততা খুবই তুচ্ছ ও নগণ্য! তাই হাজারো অসুখী মানুষও এখানে আসলে হৃদয়ে শান্তি অনুভব করে। বিক্ষিপ্ত মন কিছুটা শান্ত হয়। তাইতো এর নাম শান্ত সাগর!
সুরিকে যত দেখছে, ক্রলের তত ভালো লাগছে। ভালোবাসার কথা কিভাবে বলতে হয় ক্রলের জানা নেই। মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি প্রবল তার আত্মবিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিমত্তা। ক্রল সুরিকে ভালোবেসে ফেলেছে।
শান্ত সাগরের দিকে তাকিয়ে সুরি ক্রলকে বলল, ‘তোমার কী দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগে? আকাশ, সমুদ্র নাকি পাহাড়?’
‘সামনের সমুদ্র, ওপরের আকাশ, দূরের ওই পাহাড়জ্জসবই তা আজ ভা!লা লাগ!ছ।’
ক্রলের ভাবের উত্তর শুনে সুরি মিটমিট করে হাসছে। ক্রল সরাসরি না তাকালেও ব্যাপারটা অনুভব করতে পারছে। সে সুরির হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বলল, ‘সুরি, এই হাত যদি সারা জীবনের জন্য আমি ধরতে চাই, তবে?’
সুরি হাসিমুখে বলল, ‘শুধু হাত দিলেই হবে? মন দিতে হবে না!’
সুরির কথা শুনে ক্রল কিছুটা লজ্জা পেল। সুরি বলল, ‘আমার মতো একটা ভীরু মেয়েকে সঙ্গী করলে, পরে সারা জীবন পস্তাতে হবে!’
‘তোমাকে না পেয়ে নিঃশেষ হওয়ার চেয়ে তোমাকে পেয়ে আমি পস্তাতে চাই, সুরি।’
বিজ্ঞানী গারাদের ত্রাসের জগৎ এখন শুধুই ইতিহাস! ত্রাসের জগতে আজ আনন্দের বন্যা। রাস্তায় নেমেছে লাখো মানুষের ঢল। তারা খুঁজছে তাদের বীর যোদ্ধাদের। বীর ক্রল এবং সুরি শান্ত সাগরের বালুকাবেলায় বসে মনের কথা বলছে। ওপরে পাঁচ উপগ্রহ, অসংখ্য তারায় সাজানো বর্ণাঢ্য রাতের আকাশ; নিচে ঢেউ আর জলস্তম্ভসজ্জিত শান্ত সাগর! আজ গ্রহটাকে কী অপূর্ব লাগছে! দূরে দাঁড়িয়ে শান্ত সাগরের দিকে তাকিয়ে আছেন কমান্ডার প্যারো। দুচোখে অশ্রু। তার প্রিয়তমাকে গারাদ নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেই প্রিয় মুখ বারবার ঝাপসা চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

Share.

মন্তব্য করুন