আমাদের এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষে ভেতর একটি সুন্দর মন আছে। কিন্তু সবাই মনটাকে সুন্দর রাখেন না। কথায় কাজে চিন্তায় এবং ভানায় অনেক সময় আমরা মনটাকে ভালো রাখতে পারি না। অথচ এই জগতে ভালো কোনো কাজ করার জন্য সুন্দর মন খুব দরকার। মন যদি সুন্দর না হয় তো কাজও সুন্দর হবে না। আর যদি কাজ সুন্দর না হয় তবে জীবনের আর কোনো সুন্দর থাকে না। এইভাবে জীবনের সুন্দর না থাকলে কী হয়? এর উত্তর হলো জীবনের সুন্দর না থাকলে জীবন কখনও সফল বা আনন্দময় হতে পারে না। কেউ তখন তাকে পছন্দ করে না। বরং ঘৃণা বা অবহেলার চোখেই দেখে।

সবার মন তো আছে। কিন্তু সবার মন কখনও একরকম নয়। একজনের মন একরকম। আরেকজনের আরেকরকম। একজন আরেকজন থেকে আলাদা। মানুষ যেমন একজন থেকে আরেকজন আলাদা। মানুষের মনও তমনই আলাদা আলাদা। মনের ভেতর কত কি কল্পনা-জল্পনা এবং স্বপ্ন জাগে, তার কোনো হিসাব নেই। কখনও কখনও মনটি পাখি হয়ে উড়ে যেতে চায় দূরের কোনো নীলিমায়। যেখানে কোনো মানুষের চিহ্ন নেই। অথবা যেখানে পৌঁছাতে পারবে না কোনো মানুষের উড়োজাহাজ বা বিমান। মন কখনো কখনো মেঘ হয়ে ঝরাতে চায় শীতল বৃষ্টি। যে বৃষ্টি মাটিকে ভিজিয়ে ফসল ফলাবে। আবার কখনও হতে চায় ভোরের বাতাস যা খুব মায়ার পরশ বুলিয়ে যায়। আবার কখনও চাঁদ হয়ে আকাশে ভেসে থাকতে চায়। এভাবে মন কতভাবে মনের কথা বলতে থাকে! বলতে থাকে। মনের কথার কোনো শেষ নেই। কোনোদিন শেষ হবেও না জানি। কারণ মন প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবনা কল্পনা আর স্বপ্ন নিয়ে হাজির হয়।

এক্ষেত্রে মনের সৌখিনতাও একটি অনিন্দ্য সুন্দর বিষয়। মনের সৌখিনতা কিন্তু সবার মধ্যে থাকে না। সবাই বোঝেও না মনের সৌখিনতা কি জিনিস। কিন্তু যার মনে সৌখিনতা থাকে সে অন্য সবার চেয়ে একটু আলাদা হয়। তার চলন-বলন এবং পছন্দ-অপছন্দ সবই অন্যরকম হয়। সবাই তাকে আলাদা ভাবেই চেনে। কারণ তার কাজকর্ম, আচার-ব্যবহার, সাজগোজ সবকিছুতেই থাকে ভিন্নতার ছাপ। সবাই যেমন করে চলে সে তেমন করে চলে না। সবাই যেমন করে বলে সে সেভাবে বলে না। মনের সৌখিনতা মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাসও হতে পারে আবার পরিবর্তিত অভ্যাসও হতে পারে। ধরা যাক, কেউ সৌখিন মনের কোনো মানুষের বাড়িতে গেলেন। দেখলেন তার বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকার পথে সারি সারি ফুল গাছ লাগানো এবং তাতে হরেক রঙের ফুল ফুটে আছে। তিনি দেখে খুব মুগ্ধ হলেন। মনে মনে ভাবলেন আমার বাড়ির গেটে ঢোকার পথেও তো আমি এমন ফুল গাছ লাগাতে পারি। তাতে আমার বাড়ির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে। এরপর সে ঐ ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকলো। দেখলো ঘরদোর একদম সাজানো-গোছানো। হরেক রঙের ফুলের টব ঘরের ভিতরেও সুন্দর করে সাজানো। তাছাড়া সুন্দর সুন্দর খাট, আরাম দায়ক সোফা, একটু অন্যরকম চেয়ার, দেখার মতো সড়সড় টেবিল সবকিছুতেই ব্যক্তির সৌখিনতার ছাপ স্পষ্ট। তখন লোকটি ভাবলো আমিও আমার বাড়িতে আমার পছন্দের টেবিল-চেয়ার আর সোফা দিয়ে সাজাবো। এভাবে অন্যের সৌখিনতা দেখে মানুষের মনে সৌখিনতা আসতে পারে। আর সে সৌখিনতার মধ্য দিয়ে একজন মানুষ নিজের পছন্দকে উন্নত করতে পারে।

মনের এসব সৌখিনতা মানুষের মাঝে ফুলের মতো সৌরভ ছড়ায়। জীবনের প্রতিটি দিকে এ সুন্দর আনন্দ জোগায় এবং আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলার আয়োজন করে। আমরা সৌখিনতার বিষয়টি আরো ভালো করে লক্ষ করি যখন কারো বাড়িতে যাই। হয়তো বেড়াতে যাই। অথবা কোনো প্রয়োজনে যাই। স্বভাবতই আমরা যখন একটি অসুন্দর বা অগোছালো ঘর দেখি তখন মনে একটা ভিন্ন ধারণা জন্ম নেয়। ভাবি, এই লোকটি বা এই বাড়ির লোকগুলি কেমন যেনো অগোছালো। নিজেদের অসুন্দর করে রাখে। এলোমেলো থাকে সব। নিজেদের একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে না। আবার যখন একটি সুন্দর গোছালো ঘর দেখি তখন আমাদের মনে এক ধরণের আনন্দের ফুল ফোটে। আমরা ভাবি তখন- সত্যি এই বাসার লোকগুলো সুন্দর মনের মানুষ। কী সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছে সব। আমরা ফুলের সুবাসে যেমন মুগ্ধ হই তেমনি মানুষের মনের সৌখিনতাও আমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর এই মুগ্ধতা আশপাশের লোকদের ওপর প্রভাব ফেলে। পাশের লোকেরা শিখতে পারে কীভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে থাকা যায়।

এমন সুন্দর ও সৌখিন মনের মানুষকে সবাই পছন্দ করে। সবাই তাকে আপন মানুষ বা কাছের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে। সৌখিনতার ছোঁয়া মানুষকে তৃপ্তি দেয়। তাই সৌখিন মনের মানুষ মানেই ভিন্ন মানুষ। বা একজন আলাদা বৈশিষ্টের মানুষ। মনের সৌখিনতা সুন্দর মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট। আমরা যদি সুন্দর মনের অধিকারী হতে পারি তাহলে মনের সৌখিনতা আমাদেরকে ভিন্নভাবে পরিচিত করবে। মনের সৌখিনতা ছড়াবে ফুলের সুবাস, যা পৌঁছে যাবে সকলের হৃদয়ে হৃদয়ে। সকলেই মুগ্ধ হবে আমাদের সুন্দর মনের আনন্দে! সুতরাং আমাদের উচিৎ সবাই মিলে মনটিকে সুন্দর রাখা। আর মনের সৌখিনতার চর্চা করা।

Share.

মন্তব্য করুন