রোজার আরবী নাম হলো- সাওম বা সিয়াম। সাওম শব্দের অর্থ কি জানো? সাওম মানে হলো বিরত থাকা। কী থেকে বিরত থাকা? এক কথায় পানাহার থেকে বিরত থাকা। রোজার সময় দিনের বেলা যেহেতু সবধরনের খাওয়াদাওয়া, পান করা এবং মিথ্যা ও অসুন্দর থেকে একজন রোজাদার বিরত থাকে তাই তাকে সাওম বলে। এখানে একটি সত্য কথা বলি- আমাদের সমাজে রোজাদার যারা তারা শুধু খাওয়াদাওয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু মিথ্যা কথা বলা, অন্যকে ধোঁকা দেয়া অথবা অসুন্দর কাজ থেকে বিরত থাকেন না। এতে কী হয়? এতে হয় রোজাদারের রোজাটি পরিপূর্ণ হয় না। অনেক সময় রোজাই হয় না।
রোজার জন্য মনকে যেমন সুন্দর করতে হয়, পরিচ্ছন্ন করতে হয় তেমনই সমস্ত অসুন্দর কাজ থেকে দূরে থাকতে হয়। তাহলে এখানে মনে রাখতে হবে- শুধু উপবাস কিন্তু রোজা নয়!
রোজা রেখে গীবত করা থেকেও দূরে থাকতে হবে। ও হ্যাঁ গীবত কী? কাকে গীবত বলে? গীবত হলো অন্যের দোষ তার অবর্তমানে বলে বেড়ানো। যদিও দোষটি সত্য। অর্থাৎ যে দোষটি বলা হলো সে দোষটি লোকটির মধ্যে আছে। এমন দোষও লোকটির অনুপস্থিতিতে বলা। অবশ্য গীবতের একটি সহজ সংজ্ঞা আছে। সংজ্ঞাটি হলো একজনের অনুপস্থিতিতে তার বিষয়ে এমন কথা বলা যে কথাটি শুনলে লোকটি কষ্ট পাবে।
রোজার জন্য আরেকটি ক্ষতিকর বিষয় হলো চোগলখুরী করা। চোগলখুরী হলো- দুজন লোকের মধ্যে ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয়া। দুজনকে দুজনের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা। এসব থেকে বিরত থাকতে হবে রোজাদারকে। তবেই রোজা হবে সুন্দর।

বাংলা বা ইংরেজি বছরে যেমন বারোটা মাস। আরবী বছরেও সেই বারোটিই মাস। এই বারোটি আরবী মাসের একটির নাম হলো মাহে রমজান। অর্থাৎ রমজান মাস। এ মাসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমাদের এই পৃথিবীবাসীর জন্য! এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে এ মাসটি কেনো এতো গুরুত্বপূর্ণ? গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো- এ মাসে মহাগ্রন্থ আল কুরআন আমাদের জন্য প্রথম নাজিল হয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ স এর উপর কুরআন শরীফের পাঁচটি আয়াত নিয়ে হযরত জিব্রাইল আ. আসেন। হেরা পর্বতের গুহায় প্রথম অবতীর্ণ হয় পবিত্র কুরআনের ওই পাঁচটি আয়াত। এই ঘটনাটি ঘটেছিলো রমজান মাসেই। এ জন্য এ মাসটি ভীষণ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ!
আরও একটি কারণে এ মাসটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ! তা হলো, এ মাসের সবকটি দিন মুমিন মুসলমানগণকে রোজা রাখতে হয়। ৩০ দিন না হয় ২৯ দিন রোজা রাখতে হয় সকল মুমিন ব্যক্তিকে। ৩০ বা ২৯ দিন হয় চাঁদের হিসাবের কারণে। যদি রমজান মাসে চাঁদ ওঠে ৩০ দিন পর তবে রোজাও রাখতে হবে ৩০টি। আর যদি ২৯ দিন পর ওঠে তো রোজাও ২৯টি হবে। হিসাবটি মজারই বটে।
এখন আমাদের জানতে হবে- রোজা কেন রাখতেই হবে। ইসলামে যেসকল বিষয় করতেই হবে, না করলে চলেই না, এমন বিষয়কে বলা হয় ফরজ। ফরজ মানে হলো অবশ্যই পালনীয়। অর্থাৎ পালন করতেই হবে। না করার কোনোরকম সুযোগ অথবা ছাড় নেই। এমন বিষয়গুলো হলো ফরজ। মহান আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের সবকটি দিন রোজা রাখার বিষয়ে ফরজ করেছেন। বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রমজান মাসে রোজা ফরজ করা হয়েছে’।

তাহলে রমজান মাসে রোজা রাখার কথা বলেছেন কে? তোমরা হয়তো বলবে- আরে এটি একটি প্রশ্ন হলো! রোজা রাখার কথা বলেছেন তো বিশ্ব জগতের মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। তিনিই তো আমাদের সবাইকে রোজা রাখার আদেশ দিয়েছেন। হ্যাঁ এটিই সত্য কথা, তিনিই রোজা রাখার জন্য দিয়েছেন আদেশ বা নির্দেশ। আর যখন মহান আল্লাহ তায়ালা কোনো বিষয়ে আদেশ দেন সে আদেশ অবশ্যি অবশ্যি পালন করতে হবে। এখানে কোনোরকম সুযোগ নেই অমান্য করার। একইসাথে কম বেশি করারও কারো কোনো সুযোগ বা সাধ্য নেই।
তাহলে আমরা জানলাম রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা। আমরা তাই রোজা রেখে তাঁর হুকুম পালন করে থাকি। তাঁর হুকুম পালন করলে কি লাভ হবে? লাভ হবে অনেক অনেক বড়। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা তাঁর পছন্দের বান্দা হতে পারি। আর তাঁর পছন্দের বান্দা হলেই আমরা হবো তাঁর প্রিয়। তিনি বলেছেন, তিনি তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে পুরস্কার দেবেন জান্নাত।
মজার বিষয় হলো রোজার পুরস্কারও হবে জান্নাত। আবার তিনি খুব সুন্দর করে বলেছেন- রোজাদার অর্থাৎ যিনি রোজা রাখবেন তার পুরস্কার মহান আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে দেবেন। আরেকটি হাদীসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- রোজা আমার জন্য রাখা হয়। আর আমি নিজেই এর প্রতিদান’। ইশ! কি বিস্ময়কর পুরস্কার! আল্লাহ তায়ালা নিজেই হলেন সেই পুরস্কার। অর্থাৎ যে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য রোজা রাখবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য হয়ে যাবেন।
রোজার আরও আরও ভালো দিক আছে। আরও ভালো ফল আছে। রোজা রাখলে শরীর খুব ভালো থাকে, সুস্থ থাকে। পেটে গ্যাস হয় অনেকের। রোজা গ্যাস দূর করে দেয়। পেট খারাপ থাকলে তার জন্য রোজা খুব উপকারী। বদহজমের জন্যও রোজা দারুণ কাজ করে।
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ডায়াবেটিসের জন্যও রোজা ঔষধের কাজ করে।
কেউ যখন রোজা রাখে সারাদিন না খাওয়ার কারণে মুখে গন্ধ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে রোজাদারের মুখের এই গন্ধ মেশকে আম্বর বা পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পারফিউমের চেয়েও প্রিয় হবে।
রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দ আছে। একটি ইফতারের সময়। আরেকটি পরকালে জান্নাত লাভ।
সুতরাং রোজা রাখতে হবে আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য। এবং আল্লাহর ভালোবাসা লাভের জন্য। এখানেই আছে রোজা রাখার আনন্দ। এখানেই আছে রোজা রাখার সুখ।

Share.

মন্তব্য করুন