আমরা জানি যে জন্মগতভাবেই স্বাধীনতা সকল দেশের সকল মানুষের অত্যন্ত প্রিয় একটি বিষয়। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি বিষয়ও। স্বাধীনতা ছাড়া কোনো মানুষ কখনো তার মনের মতো বিচরণ করার সুযোগ কোথায়ও পায় না। মনমতো কোনো কাজের পরিকল্পনা নেয়ার কোনো সুযোগও থাকে না কারো। সব মানুষের ভীষণ ভালোবাসার বিষয় হলো স্বাধীনতা। তাই স্বাধীনতার জন্য কঠিন যুদ্ধ করে মানুষ। অসম্ভব সংগ্রাম করে করে অর্জন করে স্বাধীনতা। রক্ত দিয়ে জয় করে স্বাধীনতার মুক্ত এবং সুনির্মল আকাশ। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে করতে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং জীবনও দিয়ে দেয় মানুষ। যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। নিজেকে বিলিয়ে শহীদ হয়েছে। কত যে অশ্রু, ঘাম আর রক্ত দিয়েছে। কেউ হাত-পা দিয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে। কেউ চোখ-কান দিয়ে বধির এবং অন্ধত্ব বরণ করেছে। কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে গেছে চিরদিনের জন্য। এভাবে জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে রক্ষা করে স্বাধীনতার মর্যাদা। এখন কথা হলো, নিজেদের স্বাধীনতা এভাবে কেনো রক্ষা করে মানুষ? কারণ তার পরবর্তী জেনারেশন অর্থাৎ তার ছেলেমেয়ে এবং সন্তানাদি যেনো নিরাপদে এবং সুখে শান্তিতে থাকতে পারে। একটি স্বাধীন দেশে স্বাধীন পরিবেশে যেনো তার সন্তানগণ বেড়ে ওঠে স্বাধীনভাবে। মনের দিক থেকে যেনো তারা উদার হতে পারে অনেক। ভাবনার দিক থেকে হতে পারে উন্নত চিন্তা এবং চেতনার আদর্শ মানুষ। একটি দেশের শিশুকিশোর এবং যুবক যারা তাদের সবার সামনে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ থাকে। আর যারা বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা তাদের থাকে নিরাপদ জীবনের আশা। সব মিলিয়ে দেশের সকল নাগরিক নিজেদের মতো করে বড় হবার এবং নিজের জীবন গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা পোষণ করে নিজের বুকে। বুকের এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাওয়ার পথ নিরাপদ হয় স্বাধীনতার মাধ্যমে।

সবাই চায় সে যেনো স্বাধীনভাবে নিজের কাজকর্ম করার অধিকার পায়। ছাত্র-ছাত্রীরা আপন আনন্দে লেখাপড়া করার অধিকার যেনো পেতে পারে। অভিভাবক যারা তারা চান তাদের সন্তানেরা নিরাপদ স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যাক। আসা-যাওয়ার পথ যেনো নিরাপদ থাকে। কেউ তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তারা সুন্দর জীবন গঠনের জন্য যেভাবে লেখাপড়া করতে চায় করবে। চরিত্র গঠনের জন্য তারা আদর্শবান মানুষগুলোর সঙ্গে একসাথে পথ চলবে। ধর্মীয় বিষয়ে তাদের থাকবে স্বাধীনতা। তারা ধর্মের গভীর জ্ঞান অর্জন করবে। নিজেরা ধর্ম মানবে এবং যারা মানতে আগ্রহী তাদেরকে ধর্মের সৌন্দর্য সম্পর্কে জানানোর পরিবেশ পাবে। এসব কাজে কেউ বাধা দেবে না অথবা কেউ কারো বাধা হয়ে উঠবে না। সবাই সবার মঙ্গল কামনা করবে। সবাই সবার ভালো হোক তাই আশা করবে। অন্যের ক্ষতি হোক এমন কিছু করার ইচ্ছে থাকবে না। যদি কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায় বা অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে তো তার বিচার হবে। আর বিচার হবে তাড়াতাড়ি। দেরি বা অকারণ অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য কেউ দাঁড়াবে না। এমনই স্বাধীনতা চায় সব মানুষেরা। মানুষের এ চাওয়া-পাওয়া সব সময়ের। সব মানুষের একান্ত মনের।

স্বাধীনতা শুধু কাগজে কলমে থাকলে চলে না। চলবেও না এটিই সত্য। কাগজে কলমে নয় বাস্তবেও থাকবে স্বাধীনতা। কাজের ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা থাকতে হবে। স্বাধীনতা থাকতে হবে দেশের জন্য। দেশের সকল মানুষের জন্য। সেটা হোক আদালতের বিষয়-আশয়। হোক না ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো অনুষঙ্গ। হোক স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব জায়গার জন্য একই কথা প্রযোজ্য। স্বাধীনতা সুনাগরিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে কাজ করে। আদর্শ নাগরিক তৈরিতে কাজ করে। আধুনিক নাগরিক তৈরিতে কাজ করে। সবচেয়ে বড় কথা স্বাধীনতা ইনসাফ বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এটাই সবার আশা। ন্যায়বিচার ছাড়া স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না মোটেই।

আমাদের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আরও গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে একটি দেশ স্বাধীন হওয়া সত্যি কঠিন। এ কঠিন বিষয়টি ঘটেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিষয়ে। আমাদের বাংলাদেশ সবুজ শ্যামলে ভরপুর একটি দেশ। গাছগাছালি আর পাখপাখালির সমারোহে সুন্দর একটি দেশ। এখানে পাখির গানে রাতের শেষে ভোর আসে। সকাল হাসে উজ্জ্বল নরম রোদের। সন্ধ্যা নামে তাও পাখির গানে। রাতে তারার হাসি ঝলমল করে সারারাত।
রাতভর ডাহুক ডাকে। জোনাকির হাসি থাকে অন্ধকারের বিশালতার গায়ে। চাঁদের আলো ছড়ানো চারিদিকে প্রকৃতি অনন্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের মানুষগুলো খুব সাধারণ মানুষ। খুব অল্পতেই খুশি হয় মানুষগুলো। আবার তারা খুব পরিশ্রমী। দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষেরাও আনন্দ করে। খুশি থাকে সবসময়। এ মানুষগুলো স্বাধীনতার সুখ পেতে চায়। তারা পেতে চায় স্বাধীনতার সুযোগ।

তাদের স্বপ্ন যেনো স্বপ্নের মতো টিকে থাকে। যেনো স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপ লাভ করতে পারে। একজন চাকরিজীবী যেনো তার অধিকার নিয়ে চাকরি করতে পারে। ঠিক ঠিক যেনো সব কাজ হয়ে ওঠে নিয়ম অনুযায়ী। রাস্তাঘাট বাজার প্রতিষ্ঠান সব যেনো নিরাপদ থাকে। কোথাও দেশকে পর মনে না হয়। তেমন পরিবেশ হলেই মূলত বলতে হবে দেশটি স্বাধীন।

আরও একটি বড় বিষয় হলো নাগরিক অধিকার যেনো ভালোভাবে রক্ষা পায়। দেশের নাগরিক হিসেবে সবার থাকবে কিছু বিশেষ বিশেষ অধিকার। যে অধিকারগুলো সকল নাগরিক সমানভাবে প্রয়োগ করতে পারে। যেমন সকলের অর্থাৎ সকল নাগরিকের যথাযথ ভোটের অধিকার। সকলের ভাতের অধিকার বা খাওয়ার অধিকার। চিকিৎসা এবং সুন্দর ও সুস্বাস্থ্যের অধিকার। থাকার বা বসত করার মতো বাসস্থানের অধিকার। মুক্ত এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার। এসব অধিকার সব মানুষের, সকল নাগরিকের থাকতেই হবে। তাহলেই কেবল স্বাধীনতা পূর্ণতা পাবে। পূর্ণ হবে স্বাধীনতার সাধ ও স্বপ্ন। এমন স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতা মানুষকে মানুষ হতে সাহায্য করে। যে স্বাধীনতা নাগরিকদের সুনাগরিক হতে সুযোগ করে দেয় সে স্বাধীনতা সকলের কাম্য। এমন স্বাধীনতাই সকল নাগরিকের খুব প্রিয়। তাই বিশ্বের সকল মানুষ ভালোবাসে মহান স্বাধীনতাকে। আর সকল মানুষের প্রিয় তাই স্বাধীনতা!

Share.

মন্তব্য করুন