শাহনামা মহাকব্যের কথা তোমরা নিশ্চয় শুনেছো। তবে তো মহাকবি ফেরদৌসীর কথা শুনবেই। কেনো? কারণ শাহনামা যে লিখেছেন ফেরদৌসী! আমরা তাই তো বলি ফেরদৌসীর শাহনামা। ফেরদৌসীর শাহনামা গোটা বিশ্ব সাহিত্যে এক নামে পরিচিত। যে বা যিনি সাহিত্য করেন। হোক কম। হোক বেশি। হোক যুবক। হোক বয়সী। সবাই এক নামেই জানে, ফেরদৌসীর শাহনামার কথা।

বাংলা সাহিত্যেও এর নাম বিপুলভাবে পরিচিত এবং প্রচারিত। তবে মজার বিষয় আছে এখানে। মজাটি হলো বাংলা সাহিত্যে ফেরদৌসীর শাহনামার সাথে আরও একটি নাম জড়িয়ে আছে। কি নাম? হু বলছি। নামটি হলো মনিরউদ্দীন ইউসুফ। কেনো? আরে এখানেই তো ঘটনাটি! কারণ এই মনিরউদ্দীন ইউসুফই এ বিশাল শাহনামা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন। কি- শুনে অবাক লাগছে? লাগারই তো কথা। এতো বড় মহাকাব্য! কত বড়? ও হ্যাঁ, তাই তো, সে কথাই বলা হয়নি।

বলছি তবে। মনিরউদ্দীন ইউসুফ এর অনুবাদ ছেপেছে বাংলা একাডেমি। ছেপেছে ৬ খণ্ডে। একেকটি খণ্ড প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠা। তার মানে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। আবার পৃষ্ঠাগুলো সাধারণ বইয়ের সাইজ নয়। বইয়ের প্রায় দেড়গুণ বড়। অবাক করার মতো ঘটনা।

হবেই তো, ফেরদৌসী শাহনামা রচনা করেছেন ত্রিশ বছর জুড়ে। অর্থাৎ আড়াই যুগ। আর মনিরউদ্দীন ইউসুফ অনুবাদ করেছেন সতের বছরে। কী বিস্ময় জাগে। জাগারই কথা। সতেরো বছর একটি অনুবাদের কাজ! সত্যি বিস্ময়কর। এমন বিস্ময়কর কাজটি করে মনিরউদ্দীন ইউসুফ বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন!

তাঁর জন্ম ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯। মৃত্যু ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭। একই মাসে জন্ম মৃত্যু। এটিও অন্যরকম ঘটনা। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি একজন কবি। একজন ঔপন্যাসিক। নাট্যকার। ছড়াকার। জীবনী লেখক ও প্রবন্ধকার। তিনি আমাদের মহানবী সা.-কে নিয়ে লিখেছেন। বইটির নাম- ছোটদের রসুল চরিত। ইসলাম নিয়ে লিখেছেন- ছোটদের ইসলাম পরিচিতি। লিখেছেন- ‘হযরত আয়েশা রা.’, ‘হযরত ফাতেমা রা.’ নামে দু’টি বই। আরেকটি বইয়ের নাম- ‘রুমীর মসনবী’। একটির নাম- ‘মহাকবি ফেরদৌসী’। এভাবে তিনি লিখেছেন- ‘ইসলাম ও মুহাম্মদ সা.’, ‘আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি’, ‘বাংলা সাহিত্যে মুসলিম প্রভাব’, ‘আত্মপরিচয় : ঐতিহ্যের আলোকে’, ‘উর্দু সাহিত্যের ইতিহাস’, ‘ওর বয়েস এখন এগারো’, ‘চলো যাই ছড়ার দেশে’- এরকম আরও আরও বই। বাংলাদেশ নিয়ে লিখেছেন। মানুষ নিয়ে এবং মানবজাতি নিয়ে লিখেছেন। লিখেছেন স্মৃতিকথাও।

কি গুণী একজন মানুষ তিনি। কি অসাধারণ প্রতিভা তাঁর। আমাদের জন্য কত কিছুই না লিখেছেন। অথচ আমরা কিনা দিব্যি ভুলে থাকি এইসব মণীষীদের নাম। এদের বই পড়ি না। লেখা পড়ি না। এদের সম্পর্কে জানি না। জানার চেষ্টাও করি না। যদি মনিরউদ্দীন ইউসুফের মতো লেখকদের ভুলে থাকি আমরা তাহলে কীভাবে উন্নতি হবে আমাদের। কীভাবে আমরা জানবো আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য? কীভাবে জানবো নিজেদের সংস্কৃতি? আরও কথা হলো- আমরা এদের লেখা না পড়লে বড় হবার স্বপ্ন কোথায় পাবো? কী করে বড় হবো? কী করে সুন্দর মানুষ হবো! সুতরাং এমন লেখকদের লেখা পড়তে হবে আমাদের। পড়বো আমরা। জানবো অনেক কিছু। জীবন সম্পর্কে দেশ ও বিশ্ব সম্পর্কে জানবো। তবেই বড় মানুষ হতে পারবো আমরা। হতে পারবো সুনাগরিক।

Share.

মন্তব্য করুন