ভালো ছাত্র হতে হলে স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি প্রখর হতে হয়। সারাদিন-রাত পড়েও পরীক্ষার খাতায় লিখতে না পাড়ার কারণ, পড়া মনে থাকে না। এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। আর এতে ফেল করে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ছে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী। তাই সমৃদ্ধ জীবনের জন্য, ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য স্মৃতিশক্তি বা স্মরণশক্তি বাড়ানো জরুরি।
স্মরণশক্তি বা স্মৃতিশক্তি বা Memory Power সকলের একরকম হয় না। অনেক ছাত্র আছে যারা সহজে অনেক পড়া মনে রাখতে পারে। আবার অনেকে অল্প সময়ে সব ভুলে যায়। ভুল করা বা ভুলে যাওয়া মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। কথায় আছে, ঞড় বৎৎ রং যঁসধহ অর্থাৎ মানুষ মাত্রই ভুল করে। কিন্তু সব সময় যদি ভুলো মনের দোহাই দেয় তাহলে কিন্তু বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আবার নানা ক্ষেত্রে হতে হয় অপদস্থ। আর এই বিড়ম্বনা ও অপদস্থের হাত থেকে রেহাই পেতে মনে রাখার কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করা যেতে পরে। যেমন :
১. ঘুম থেকে উঠতে দেরি হচ্ছে, মোবাইল বা ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখ। একবারের অ্যালার্মে কাজ না হলে রিপিট অ্যালার্ম ব্যবহার কর।
২. স্কুল কিংবা কোচিংয়ে যেতে প্রায়ই দেরি হচ্ছে, এক্ষেত্রে তোমার ব্যবহৃত মোবাইল বা ঘড়ির সময় পনেরো মিনিট এগিয়ে রাখ। আর এই সময় এগিয়ে রাখার ব্যাপারটা ভুলে যাও। তাহলে দেখবে নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছে যাবে গন্তব্যে।
৩. কোন পড়া মুখস্থ করার আগে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নাও। মুখস্থ করার পর তা না দেখে লিখবে। লেখার পর কী কী ভুল হলো তা মিলাবে। ভুলগুলো আবার পড়বে। ভালো করে শেখা হয়ে গেলে আবার না দেখে লিখবে। এতে দেখবে ভুলের পরিমাণ অনেক কমে যাবে এবং পড়াটা স্মৃতিতে অনেক দিন থাকবে।
৪. একটা প্রশ্ন শেখা হয়ে গেলে কিছুক্ষণ সময় বিরতি দিবে বা পানি খাবে বা পাঁচ মিনিট বারান্দায় বা ছাদে বা বাগানে হেঁটে আসবে। এরপর নব উদ্যমে আবার নতুন আরেটি প্রশ্ন পূর্বের ন্যায় শেখা শুরু করবে। এভাবে প্রতিটি বিষয় প্রতিটি প্রশ্ন শিখলে ভুলে যাওয়ার হার কমবে।
৫. পড়ার সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আসলে পড়া মনে থাকবে না।
৬. মানসিক চাপ, ক্ষোভ, হতাশা মাথায় রেখে পড়তে বসলে পড়া হবে না। সময় নষ্ট হবে পড়া মুখস্থ হবে না।
৭. মানবদেহের মাঝে লুকিয়ে আছে মানব মন। মন ভালো থাকলে, মাথা ঠাণ্ডা থাকলে সহজেই পড়া মুখস্থ হয়ে যাবে।
৮. মনে রাখবে দেহ পরিচালনা করে মস্তিষ্ক। দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গই মস্তিষ্কের ওপর নির্ভরশীল। মস্তিষ্ক সুস্থ থাকলে শরীর ও মন সুস্থ থাকবে। পুষ্টিকর খাবার মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তির কোষগুলোকে সুস্থ রাখে।
৯. প্রতিদিন সুষম খাবার খেতে চেষ্টা করবে। খাওয়ার পর ফল খেতে পরো। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়া ভালো। এতে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে।
১০. মনে রাখবে শিক্ষা জীবনে ঘুম খুব জরুরি। নিয়মিত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাবে। এতে মাথা ও মন সতেজ থাকে।
১১. দেহের চাহিদা ও পরিশ্রম অনুযায়ী খাবার তালিকা করো। নিয়মমত সময়মত প্রতিবেলা সতেজ সজীব খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
১২. নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা দেহের পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও সুস্থ রাখে। মস্তিষ্ক বা মাথা সুস্থ থাকলে পড়াশুনায় মনোযোগ আসবে।
১৩. বিশেষ কোন দিনের কথা মনে রাখতে চাইলে মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখলে মোবাইল নিজেই সেই দিনটার কথা মনে করিয়ে দেবে।
১৪. মোবাইলে নাম ও নম্বর সেভ করার সঙ্গে সঙ্গে পরিচিতজনদের জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকীর দিনগুলো সেভ করে রাখ। মোবাইল নাড়তে-চাড়তে এই বিশেষ দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাবে।
১৫. কোনো জরুরি অ্যাসাইনমেন্ট থাকলে নোটবুকে তারিখ, সময়, স্থান লিখে রাখ। কী কী নিতে হবে তা আগে থেকেই গুছিয়ে রাখ। প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরও নোটবুকে লিখে রাখ। মনে রাখার কৌশল বা টিপসগুলো মেনে চল, দেখবে ভুলো মন ঠিক হয়ে যাবে।

Share.

মন্তব্য করুন