তিনি একজন কবি। বেশ উঁচু মানের কবি। তার কবিতা তখন অনেকের মুখে মুখে। নাম তোফায়েল। অনেক বাধা পেরিয়ে একসময় মুসলমান হয়ে গেলেন তিনি। গ্রহণ করলেন সুমহান ইসলামের বাণী। ইসলাম গ্রহণের পর ভীষণ সাহস জেগে উঠলো তার ভেতর। তিনি বললেন- হে আল্লাহর নবী! আমি আমার গোত্রের নেতা। আমার গোত্রের লোকেরা আমার কথা খুব মানে। আমি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে চাই। রাসুল সা. সম্মতি জানালেন।
কবি তোফায়েল দ্রুত মক্কা ছেড়ে রওনা হলেন। লক্ষ্য হলো কত তাড়াতাড়ি পৌঁছা যায় তার গোত্রের নিকট। তার মনে প্রচণ্ড আবেগ। থেকে থেকে উথলে উঠছে আবেগের জোয়ার। ইসলামের মহান বাণী পৌঁছানোর তীব্র বাসনা তার মনে। মরুভূমি পাহাড় পর্বত পেরিয়ে একসময় পৌঁছে গেলেন নিজের এলাকায়। তিনি পৌঁছাতেই কাছে এলেন তারই বৃদ্ধ বাবা। তার বাবা মূর্তি পূজা করতেন তখন। তোফায়েল বাবাকে ইসলামের কথা বলবেন। বলবেন তো কীভাবে বলবেন! তিনি একটি কঠিন কৌশল অবলম্বন করলেন। কৌশলটি কাজেও লাগলো বেশ! তিনি বললেন- বাবা আপনি আমার কাছে আসবেন না। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বললেন- কেনো বাবা? কী হয়েছে তোমার?
জবাবে তোফায়েল বললেন- আমি ইসলাম গ্রহণ করে মুহাম্মদ সা. এর অনুসারী হয়ে গেছি।
পিতা বললেন- বাবা, চিন্তা করো না। তোমার ধর্মই আমার ধর্ম। তুমি যে ধর্মের অনুসরী হয়েছো আমিও সে ধর্মের অনুসরণ করবো।
ভীষণ খুশি হয়ে গেলেন তোফায়েল। বললেন- ঠিক আছে বাবা, তাহলে আপনি গোসল করে পবিত্র কাপড় পরিধান করে আসুন। আমি যা শিখেছি তা-ই শেখাবো আপনাকে।
একথা শুনে পিতা গোসল করলেন। পবিত্র পোশাক পরে এলেন। তোফায়েল তাকে পড়ালেন যা তিনি শিখে এলেন মহানবীর কাছ থেকে। খুশি মনে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিলেন তোফায়েলের বাবা।
এরপর তোফায়েল বাড়িতে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখেই তার স্ত্রী খুব আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এলেন তার দিকে। এখানেও তিনি সেই কৌশলটি প্রয়োগ করলেন। স্ত্রীকে বললেন- আমার কাছে এসো না। তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই!
স্ত্রী বললেন- কেনো? কী হয়েছে? আমার কী অপরাধ?
আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। মুহাম্মদ সা.-এর অনুসারী হয়েছি। ইসলামই তোমার আমার মাঝে একটি দেয়াল তুলে দিয়েছে।
স্ত্রী সাথে সাথে জবাব দিলেন- আপনার ধর্মই আমার ধর্ম।
মনে মনে খুব খুশি হয়ে যান কবি তোফায়েল। তিনি বললেন- তাহলে গোসল করে পবিত্র হয়ে আসো।
তোফায়েলের কাছ থেকে গিয়ে সে চিন্তায় পড়ে গেলো। একইসাথে ভয়ও পাচ্ছে। এজন্য যে মূর্তি পূজা ছেড়ে দিলে যদি দেবতারা রাগ করে! যদি তার সন্তানদের ক্ষতি করে! এ কথা ভেবে সে স্বামীর কাছে ফিরে এলো। বললো- আমার বাবা মা সবকিছু আপনার জন্য নিবেদিত। আপনি কি আপনার সন্তানদের ব্যাপারে যুশশারা দেবতার আশঙ্কা করেন না?
যুশশারা ছিলো তাদের বড় দেবতা। এই যুশশারার পুজা করতো তারা। এখন যদি যুশশারার পুজা ছেড়ে দেয় তো সে তাদের সন্তানদের ক্ষতি করতে পারে, এমনই ভয় পাচ্ছিলো তোফায়েলের স্তী।
তোফায়েল বললেন- যুশশারা কোনো ক্ষতি করবে না এবং করতে পারবে না। সে তো একটি পাথরের মূর্তি। তার কি ক্ষমতা আছে কারো ক্ষতি করার। আমি তোমাকে সে নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
তোফায়েলের দৃঢ় জবাব শুনে তার স্ত্রী গোসল করতে চলে গেলেন। গোসল সেরে এলেন। তোফায়েল তাকে পাঠ করালেন- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। মুসলমান হয়ে গেলেন তোফায়েলের স্ত্রী। মনে বেশ আনন্দ তার।
এরপর তোফায়েল তার গোত্রের লোকজনের ঘরে ঘরে গিয়ে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। পথে পথে যার সাথে দেখা হয় তাকেই দাওয়াত দেন। সভা-সমিতিতে, আসরে এবং বিভিন্ন জমায়েতে দাওয়াত দিতে থাকলেন। কিন্তু তারা মূর্তি পূজা ছাড়তে কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। অনেক বোঝানোর পরও তাদের পরিবর্তন হলো না। ফলে রাগান্বিত হয়ে তোফায়েল মক্কায় চলে এলেন মহানবী সা.-এর কাছে। রাসুল সা.-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন- হে আল্লাহর রাসুল, আমার গোত্র অবাধ্যতা করেছে। ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে তারা। তারা কিছুতেই মূর্তি পূজা ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করতে রাজি নয়। আপনি তাদের জন্য বদদোয়া করুন। একথা শুনে রাসুল সা.-এর চেহারার রঙ বদলে গেলো। তিনি দোয়া করার জন্য দু’হাত তুললেন মহান আল্লাহর দরবারে।
তোফায়েল মনে মনে বললেন- দাউস গোত্র ধ্বংস হয়ে যাবে এবার।
কিন্তু মানবতার নবী যিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতের সাগর হয়ে এলেন। কিভাবে বদদোয়া করবেন তিনি! তিনি হাত তুলে বললেন- ‘হে আল্লাহ, আপনি দাউস গোত্রকে হেদায়েত দান করুন। হে আল্লাহ, দাউস গোত্রকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।’
এরপর তিনি তোফায়েলের দিকে ফিরে বললেন- তোফায়েল এবার তুমি তোমার গোত্রের লোকদের কাছে যাও। তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দাও। আর তাদের সাথে নরম ব্যবহার করো।
ফিরে গেলেন তোফায়েল। মহা আগ্রহের সাথে আবার দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন। এবার তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পেলেন। ইসলাম গ্রহণ করতে লাগলো তার গোত্রের লোকেরা। ধীরে ধীরে গোত্রের সকলেই ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে গেলো।

Share.

মন্তব্য করুন