একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাবো। নীল আকাশে সবুজ ঘাসে খুশিতে হারাবো। পুলকিত। আনন্দ। নতুনত্ব। স্বাপ্নিক। পর্ব যাহোক সবই আসে আলোকিত অবয়বে। চলে যাওয়া সময় যেতে যেতে বলে যায় না বলা কথামালা। কখনও সখনও মনে হয় সত্যি যদি আকাশ হওয়া যেত। উড়ন্ত বেলুন হয়ে মেঘ ছোঁয়া হতো। টুকরো টুকরো মেঘের অংশ হওয়া যেতো। সমুদ্রের বেলাভূমিতে রক্তিম আভা হওয়া হতো। পাহাড়ের চূড়ায় রংধনু হয়ে প্রকৃতির রঙ মাখা যেতো। ইশ, কি আনন্দই না হতো।

শব্দটি যখন নতুন তখনই তা আনন্দের। মনকে জাগিয়ে আন্দোলিত করার অভিপ্রায়। প্রতিটি নতুনত্ব¡ রঙকে রাঙিয়ে তোলে। আলাদা এক আবহ তৈরি হয়। প্রকৃতির কোলে যেমনটি নানা আয়োজনের মেলা বসে। নতুনত্ব নিয়ে আসে। মনের ভেতরের পৃথিবীতে আলোড়ন জাগাতে। কল্পনাকে অনিন্দ্য সৌন্দর্যে ভরাতে। তেমনি নতুন পথ তৈরির আয়োজনও যোগ হয় দিনলিপিতে। দিনগুলো নতুনরূপ ধারণ করে। স্বপ্নগুলো শক্তি ফিরে পায়। ভাবনাদের মেলায় হাসির রেখায় আলোকিত হয় জীবন। সূর্যের আলোর রশ্মি দেখতে অপেক্ষারা অপেক্ষায় মেতে ওঠে।
সাফল্য শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে আগামীর স্বপ্ন। গতকাল যেমনই হোক আগামীকাল হবে সুন্দর। এই প্রত্যাশা। আকাক্সক্ষ। মনোবাগান সাজানো। প্রতিটি প্রাণ সাহসের স্বপ্ন আঁকে। প্রাণ তাতে ঢেলে দেয় স্বপ্নকে। স্বপ্ন নিয়ে যায় বাস্তবতায়। বাস্তবতা শেখায় জীবনকে। যেমনি নতুন পোশাক, পাখি, ফুল, ফল আনন্দ আঁকে জীবনে। তেমনি জীবন সাজাতে আগামীর সৌন্দর্যে নিজেকে ভরাতে প্রয়োজন পরিকল্পনা। উদ্দেশ্য। এভাবেই প্রতিটি নতুন সাফল্যে জড়িয়ে থাকে নতুন আনন্দের ধারা। নতুন শব্দটি জীবনের প্রতিটি ভাঁজে নতুন হয়ে উঠে বারবার।

পুরনো। শব্দটা পুরনো তবুও কিন্তু নতুন। সৃষ্টির আরম্ভ থেকে যা কিছুই দৃশ্যমান তা সবই পুরনো। মজার বিষয় এখানেই। সবই পুরনো হয়েও প্রতিটি ভোর সবকিছুকে নতুন করে তোলে। আকাশ পুরনো। তবুও কি স্নিগ্ধতায় মনকে ভরিয়ে দেয় নতুন করে। নদীর উচ্ছ্বাস এর মতো প্রতিদিনই পুরনো আবার প্রতিদিনই নতুন। সৃষ্টির রহস্যই আমাদেরকে আগামীর আনন্দবার্তা দিচ্ছে। কে চায় না জীবনের আনন্দ। ভুলকে শোধরে নিতে। নতুন করে জীবন সাজাতে। সবাই চায়। চায় রঙ মাখাতে। চায় সুখী হতে। নতুন শব্দের সাথে মানুষের আজন্ম প্রেম। হোক তা পোশাক বা খাবারের কোনো আইটেম। প্রতিনিয়ত মানুষের মন নতুন কিছুর খোঁজ করে। বর্তমান সময়টা এমন যখন আনন্দ নিতে মানুষ ছুটে যাচ্ছে প্রকৃতির বুকে। একাধিকবার দেখেও পুরনো হচ্ছে না। কি এক আকর্ষণে বারবার ছুটে যেতে আয়োজন চলছে বছরের শুরুতেই। কে কি দেখবে। কেউ বা হিমেল বাতাসের স্পর্শে শান্তির ঘুমের দেশের ছবি আঁকে। আবার কেউ বা নতুন কী কী কিনবে তার লিস্ট করতে ব্যস্ত সময় পার করে।

নতুন বছর আসে নতুন বয়সকে সাথে নিয়ে। বয়স কি কখনও নতুন হয়? আমিতো তাই বলবো বয়সও নতুন হয়ে আসে। প্রতিটি মানুষের অপেক্ষা থাকে জন্মদিন উদযাপনের। তা বছরের শুরুতে হোক বা মাঝামাঝি। এক ধরনের আবেগ ও ভালোবাসার মিশেল তৈরি হয় নতুন বছর ঘিরে। আরো যুক্ত হয় নতুন ক্লাসের আনন্দ। নতুন বই। নতুন শিক্ষক। নতুন রুম। বন্ধুরাও সব নতুন হয়ে ওঠে। নতুন নতুন ভাবনারা আপন মনে খেলা করে সবার হৃদয়জুড়ে। একজন মানুষের জীবনে প্রতিটি দিনই নতুন। প্রতিটি সকাল-সন্ধ্যা নতুন। নতুন প্রতিটি মুহূর্তের আনন্দও। অন্ধকারেরও যেমনি থাকে নতুনত্ব তেমনি দুঃখগুলোও নতুন হয়ে সুখকে সঙ্গ দিতে হাজির হয়। ঘুমানোর জন্য অন্ধকারও নতুন হয়ে নিজেকে গভীরতায় ঢাকে। সেই থেকেই আবার নতুনের আরম্ভ। ভোরের মিটিমিটি আলোর খেলাও নতুন হয়ে আসে পৃথিবীকে রাঙাতে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাসে সন্ধ্যের লালিমা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।

এভাবেই পাওয়া-না পাওয়া, হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেলো আরো একটি বছর। ২০২১। চলে গেল বছরের সবকিছুকে আলিঙ্গন করে। নিয়ে গেল অনেক কিছুই। যেমনটি নদীর ঢেউ বারবার নতুন করে ফিরে ফিরে আসে নতুন অবয়বে। তেমনি নতুন করে পৃথিবী পেলো স্বপ্ন পূরণের আরো একটি নতুন বছর। ২০২২। নতুন অবয়ব। নতুন আনন্দের বার্তা। নতুন কুঁড়ির কল্লোল। ফিরে দেখা পুরনো বছর ঘিরেই ছিল করোনার ভয়াবহতা। ছিল অনিশ্চয়তা। ছিল মোবাইল বন্দিজীবন। সহপাঠীদের সংস্পর্শহীন স্কুলপাঠ। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হতাশাময় দিনলিপি। জীবন-জীবিকার তরে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টময় চলার চিত্র। এসবই ঘিরে ছিল ২০২১।

তিনটি বিষয় খুব মূল্যবান। সময়, বন্দুকের ছোড়া গুলি, মানুষের বলা কথা। যা একবার বের হলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। তাই চলে যাওয়া সময়ের হিসাব করা জরুরি। কতটা পরিকল্পনার কাছাকাছি হতে পেরেছি। কতটা ভুল ছিল। সময়কে মেনে চলায় অগ্রগামী হয়েছি কেমন। কারণ সময় কারোরই আপন নয়। সে থামবে না কখনও। অপেক্ষাও করবে না। শুধু বয়ে চলবে। জীবন সাজাতে-রাঙাতে কতটা সময়কে মূল্যায়ন করেছি। দায়িত্বপালনে কতটা দৃঢ় থেকেছি। কেমন ভালোবেসেছি কাজের ক্ষেত্র। এসবই পরিপূর্ণ মূল্যায়নের সময় এখনই। আন্তরিকভাবে সক্রিয় হতে না পারলে সত্যিই কি সম্ভব নতুন স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। নতুন যে সময় আসছে তার সঠিক ব্যবহারই পারে নতুন জীবনকে নতুনের তরে গ্রহণ করতে। সম্ভব নতুন পৃথিবীকে আলোকিত করতে। সময়ের সিঁড়িই পারে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে। পরিকল্পনাহীন জীবন কখনও নতুন হয়ে ওঠে না। জীবনের দৌড়ে পিছিয়ে পড়া কোনো মানুষ পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে পারে না। পরিবর্তনের জন্য সাহসের দৃঢ়তা প্রয়োজন। পরিবর্তনই মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হবার তাগিদ এনে দেয়। তারাই পারে যারা নিজেদের তৈরি করে শ্রেষ্ঠ করে। কারণ তখনই পৃথিবীকে ডাকা যায় শ্রেষ্ঠত্বের দিকে।

পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা খুব সহজ নয়। চারিদিকে প্রতিকূল পরিস্থিতি। তারাই টিকে আছে যারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। মেনে চলছে নামহীন শত লড়াই। প্রতিযোগিতায় সবসময়ই জেতা যায় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে সবাই অংশগ্রহণও করতে পারে না। কিন্তু প্রয়োজন টিকে থাকার। নিজেকে সঠিক মানদণ্ডে মাপার। টিকে থাকার আনন্দই একদিন সাফল্যের ঘরে পৌঁছে দেয়। কারণ সময়ই জীবন। জীবনের সব শাখা সময়কে ঘিরেই আবর্তিত। যারাই পেছন থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন ভাবনায় সাজাবে নতুন বছর। তারাই পারবে সুন্দরের সঙ্গী হতে। পারবে জেতার উচ্ছ্বাস হতে। পারবে ২০২২ এর বুকে নিজের নাম লিখাতে। এ জয় হবে সময়ের। হবে আলোকিত পৃথিবীর। পরিবারের। সমাজের। কারণ এ সবই বেঁচে থাকার আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ।

কাজ যেমনই হোক তাই প্রয়োজনের। বেঁচে থাকার রসদ। স্কুলের যে বাচ্চাটি পিছিয়ে পড়েছে। পাশের বাসার যে পরিবারটি অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তারাও মানুষ। তাদেরও আনন্দে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তারাও স্বপ্ন আঁকে। নতুন পোশাকের আনন্দ নিতে চায়। নতুন নতুন খাবারের বাসনা তাদের অন্তরকেও বিচলিত করে। ফেলে আসা বছর থেকে নতুন পরিকল্পনায় যারা অগ্রগামী তাদের কথাই বলবো। বলতে চাই সময়ের দৌড়ে সাফল্যের কাছে যাদের অবস্থান তাদের দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে একটু হলেও বেশি। গরিব বন্ধুটির দিকে টিফিনের টাকা দিয়ে সাহায্য করার সুয়োগ নেয়া। অনেক অনেক পোশাকের মধ্যে কিছু পোশাক দিয়ে ভালোবাসার হাত বাড়ানো। প্রতিবেশীর কষ্টের একটু হলেও ভাগ নেয়া। তবেই পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার আনন্দ যোগ হবে আগামীর নতুন সময়ের নতুন পথে।

ভূমিষ্ঠ হয়েই যেমনটি সম্পর্কের বন্ধনে জড়িয়ে নিতে হয় নিজেকে। তেমনি জীবনকে সাজাতে প্রয়োজন ধৈর্য ও সত্যের সখ্যতা। বলা হয় মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। একজন প্রকৃত মানুষ হতে হলে স্বপ্ন থাকা চাই। সেই স্বপ্ন বড় হওয়া চাই। স্বপ্নই যদি ছোট হয় মানুষ বড় হবে কেমন করে। তাই তো ধৈর্যশীল মানুষ পারে জীবনের খেলার মাঠে টিকে থাকতে। আর সত্য ধারণ করে মানুষ তার বুকের গভীরতায় পারে সাহসের সাথে এগিয়ে যেতে পাহাড়-পর্বত পার হয়ে। যা সত্য তাই সুন্দর। কবিরা তাদের কবিতায় প্রেম-ভালোবাসার চিত্র এঁকেছেন। বলেছেন আজকের কথা। এখনকার কথা। স্বপ্ন দেখতে হবে। বড় করে কল্পনায় আঁকতে হবে পৃথিবী। কারণ আগামীকাল বলতে কিছু ভাবতে নেই। আজকের দিনই গত হয়ে যাবে। পুরনো হবে নতুন বছরটিও। কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আজও। তাই আজ মানে এখনই জেগে উঠতে হবে। প্রাণের তরে গাইতে হবে নতুন গান। নতুন পথের খোঁজে মিলবে নতুন পথ। জীবনের নতুন আনন্দ শুরু হোক নতুন করে। সম্প্রীতি-ভালোবাসার সম্পর্ক এগিয়ে ধরুক নতুনত্বের ডালা। আলোকময় জীবনের অঙ্গীকার হোক নতুন বছরের। নতুন সময়ের। নতুন আশার। নতুন জয়োগানের।

Share.

মন্তব্য করুন