কবি কে? এটি একটি মজার জিজ্ঞাসা বটে। উত্তরটিও সহজ। যিনি কবিতা লেখেন তিনিই কবি। তাই তো! যিনি কবিতা লেখেন তিনিই তো কবি হবেন। এ আর তেমন কি প্রশ্ন! কিন্তু না প্রশ্নটি ঠিক ঠিক জাগে। তা হলো- কবিতা লিখলেই কি কবি হওয়া যায়? হ্যাঁ সত্যি তো! কবিতা লিখলেই তো কবি হয়ে যায় না। হুম এর যথাযথ জবাব দরকার! প্রশ্নটি আরও উঁচিয়ে বলা যায়- যে কেউ কবিতা লিখলেই কবি হয়ে যায় না। যদি তাই হতো তবে তো আমাদের দেশে হাজার হাজার কবি থাকতো। অথচ কবি তো হাজার হাজার নেই। কিন্তু কবিতা লেখে এমন লোক তো হাজার হাজার আছে! আমরা দেখি ফেসবুকে কত কত কবি। কত কত কবিতা। ছবি দিয়ে লিখে দেয় কবিতার মতো কিছু। মজার বিষয় এখানেই যে কবিতা লিখলেই সে তো কবিতা হয়ে যায় না। কবিতা যদি কবিতা না হয় তবে সে লেখার লেখককে কবি বলবো কেনো! কেনো তাকে কবি বলে ডাকা হবে! কিন্তু মজার বিষয় হলো- কবিতা যিনিই লেখেন কেউ না কেউ তাকে কবি বলে। কবিতা হোক বা না হোক।
কিন্তু যারা কবি সমাজ তাদের চিনে যায়। কবি হিসেবে তাদের পরিচয় জেনে যায়। মেনেও নেয় সকলে।
কেউ কেউ পরিচিত হয়ে যান সারাদেশে। এমনই পরিচিত একজন কবি আল মুজাহিদী। সারাদেশে ছড়ানো তার নাম। তিনি সাহসী কবি হিসেবে খ্যাতিমান। একজন মুক্তিযোদ্ধা কবি। একজন রাজনৈতিক সচেতন কবি। একজন বিচরণশীল কবি।
আমাদের সমাজে কবিদের প্রতি একটি সম্মান আছে মানুষের। আছে শ্রদ্ধাবোধ। আগ্রহও আছে। কবি হেঁটে গেলে বলে- ওই যে হেঁটে যাচ্ছে কবি। কোথাও বসলে বলে- কবি বসে আছেন। কোনো অনুষ্ঠানে থাকলে বলে- একজন কবি আছেন অনুষ্ঠানে। এভাবে কবিদের প্রতি একটি বাড়তি মনোযোগ থাকে সবার। এসব আনন্দের সাথে খুব পরিচিত কবি আল মুজাহিদী।
একজন কবির একটি নিজস্ব রূপ আছে। চলন বলন আছে। আছে নিজের মতো চলার শক্তি। বলার ঢংও আছে। কবির অভিরুচির সাথে অন্যের অভিরুচির মিল থাকে না। পোশাকে-আশাকে কবি হন একদমই আলাদা
এ বিষয়টিতে কবি আল মুজাহিদী বরাবরই অন্যরকম। পছন্দ করেই পোশাক পরেন তিনি। পরেন পাজামা পাঞ্জাবি। কিন্তু গতানুগতিক কোনো পাঞ্জাবি নয়। নির্বাচিত পাঞ্জাবি। সে নির্বাচন তারই। খাওয়া দাওয়ার বিষয়েও তিনি রুচিশীল। উচিত কথা বলায় সাহসী।
তিনি বিশ্বাসী কবি। একইসাথে বুকে রাখেন বাংলাদেশ। দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অগাধ। দেশের মানুষের প্রতিও আছে দরদ। মানুষের দুঃখ কষ্ট আর অভাব দেখে মন কাঁদে তাঁর। তিনি তাই মানুষের পক্ষে কথা বলেন উচ্চকণ্ঠে!
এখন তিনি অসুস্থ বেশ। একা চলাফেরা করা কষ্টকর। করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ ছাড়াও আরও কিছু অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। এর মধ্যেও লিখছেন কিছু কিছু। বিশেষ করে পড়ছেন বেশ। বই পাঠ করেন যেমন তেমনই সংগ্রহও করেন। বই সংগ্রহ তাঁর একটি বড় শখের কাজ। ছাত্রজীবনে ছাত্ররাজনীতির সাথে ছিলেন। ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা। একসময় লেখাপড়া শেষ করে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। ইত্তেফাকের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন তিনি। ছিলেন একাধারে চল্লিশ বছর। দীর্ঘ এ চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন তিনি।
তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল। বর্তমানে বসবাস ঢাকার উত্তরায়।
তিনি বড়দের জন্য লিখেছেন। লিখেছেন ছোটদের জন্যও। শিশুসাহিত্য ভাণ্ডার আছে তাঁর। ছোটদের জন্য লেখেন- ছড়া, কিশোর কবিতা, কিশোর উপন্যাস ইত্যাদি।
শিশু-কিশোরদের কয়টি বইয়ের নাম উল্লেখ করা যায়। যেমন ছড়ার কয়টি বই- সূর্যের পতাকা লাল, তালপাতার সেপাই, স্টেশনে হুইসেল, হালুম হুলুম ইত্যাদি।
একটি কিশোর কবিতা বইয়ের নাম- এই ছেলেটা।
রুপোলি রোদ্দুর এবং মাটির পুতুল এ দুটি কিশোর উপন্যাস। তো ছড়া, কিশোর কবিতা এবং কিশোর উপন্যাস মিলে বইসংখ্যা প্রায় চল্লিশটি।
তাঁর জন্ম ১৯৪০ সালে। ১ জানুয়ারি তাঁর জন্মদিন।

Share.

মন্তব্য করুন