আবদুল হাই শিকদার। তিনি একজন কবি। একজন শিশুসাহিত্যিক। একজন গবেষক। একজন ঔপন্যাসিক। একজন বক্তা। একজন নজরুল গবেষক এবং আরও আরও গুণের অধিকারী। সাংবাদিকতার সাথে আছে তার যোগ। সাংবাদিক নেতাও একজন। সর্বশেষ শিক্ষকতায় জড়িয়েছেন নিজেকে। তিনি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একজন মুখর ব্যক্তি। মন খুলে কথা বলেন। কথা বলেন উচ্চ কণ্ঠে। দৃঢ়তার সাথে। বিশ্বাস থেকে। বলেন ভীষণ সাহসের সাথে।
না আমাদের সমাজ এমন মুখরা ব্যক্তিদের খুব পছন্দ করে না। সমাজের অন্যায় নিয়ে কথা বললে তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায় অনেকেই। অবিচার নিয়ে কথা বললে শত্রুর অভাব হয় না। অসঙ্গতি নিয়ে বললে তার সমালোচনা হবেই। অসুন্দরের বিরুদ্ধে বললে সহ্য করে না অসুন্দর চর্চাকারীরা। কবি আবদুল হাই শিকদার অনেকবার অনেকভাবে বাধার মুখে পড়েছেন। পড়েছেন অন্যায়কারীদের কবলে। তবুও তার জোর গলা ছোট হয়নি। সত্য বলা থামেনি। এখনও বলেন। আরও বলবেন ভবিষ্যতে।
বড়দের জন্য তার লেখা প্রচুর। কবিতা, উপন্যাস, ভ্রমণ, গবেষণা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে রচনা আছে তাঁর। অনবরত লিখে চলেছেন তিনি। তাঁর লেখায় আছে বিষয় বৈচিত্র্য। রচনায় আছে আধুনিকতা। সময়োপযোগী তিনি। একইসাথে যুগোপযোগীও। বলেন চাঁচাছোলা। লেখেনও তেমন করে। এটি বড়দের বেলায়। আর ছোটদের?
হ্যাঁ একটিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ছোটদের অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের জন্য তার রচনার বহর কিন্তু কম দীর্ঘ নয়। বেশ বড় বলতে হবে। বলতে হবে তিনি যেমন বড়দের লেখক, তেমনই ছোটদেরও।
কি লেখেন ছোটদের নিয়ে? হ্যাঁ তাই তো! কি লেখেন তবে? লেখেন ছড়া। লেখেন কিশোর কবিতা। লেখেন কিশোর উপন্যাস এবং লেখেন রহস্য উপন্যাস। এভাবে লেখেন গল্প, ভ্রমণ কাহিনী ও রূপকথা।
ছোটদের অর্থাৎ শিশু কিশোরদের জন্য সব লেখক লিখতে পারেন না কিন্তু। প্রশ্ন হতে পারে পারেন না কেনো?
পারেন না কারণ ছোটদের জন্য লেখা অনেক বড় কাজ। কঠিনও বেশ। কারণ ছোটদের জন্য লিখতে হলে বড়দের প্রবেশ করতে হয় ছোটবেলায়। কিন্তু বড় হয়ে ছোটদের ভুবনে প্রবেশ করা ভীষণ কঠিন। কঠিন কাজটি করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই তো সকল লেখক ছোটদের জন্য লিখতে পারেন না। আবার অনেকে লিখতে চেষ্টা করেন। লেখেনও। কিন্তু ছোটদের লেখাটি ছোটদের হয় না। হয়ে যায় বড়দের উপযোগী।
কবি আবদুল হাই শিকদার অনায়াসে ছোটদের জন্য লেখেন। অনবরত লেখেন। লেখেন চমৎকার সব শব্দ উপমা আর চিত্রকল্প দিয়ে।
তাঁর কয়টি ছড়ার বইয়ের নাম জেনে নেয়া যাক। বোঝা যাবে কেমন মজা করে লেখেন তিনি। বইয়ের নাম থেকে অনেক কিছু অনুভব করা যায়। তার ছড়া বইয়ের নাম- গান পাখিদের দিন, ইউলিয়ারা পথ হারালো, সময় ছিলো দুপুর, রোজ ফুটি লাল কুঠি ইত্যাদি। আহা কী সুন্দর সুন্দর নাম। কী মজার নাম। বইয়ের নাম যেমন মিষ্টি। তেমন মিষ্টি তার ছড়া, কিশোর কবিতা।
এবার কয়টি কিশোর উপন্যাসের নাম করা যাক। যেমন- দাদীর বনের গাছ বিরিক্ষি, পাখিবন্ধু অনিক উদ্যান, ফুল পরীর সব মনে আছে, বাগ বাহাদুর, টম একাত্তর, এডভেঞ্চার কচিখালি ইত্যাদি। কী মনে হয়? মনে হয় ঠিক ঠিক। সত্যি মজার সব নাম। মজার সব লেখা। শিশু-কিশোরদের স্বপ্নের জগৎ লিখেছেন তিনি।
আবদুল হাই শিকদার জন্মেছেন ১৯৫৭ সালে। ১ জানুয়ারি আসেন পৃথিবীর বাতাসে। কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী থানায়। গ্রামের নাম- দক্ষিণ সাট গোপালপুর। দুধ কুমার নদীর তীরে তার বাড়িটি। আহা কি চমৎকার এক নাম- দুধ কুমার। এ নদীটির নাম শুনলে আনন্দ জেগে ওঠে মনে। মনে হয় জলের ঢেউ বুঝি দুধ হয়ে আছড়ে পড়ে কূলে। তাই বুঝি নাম হলো দুধ কুমার।
দুধ কুমার নদীর কবি আবদুল হাই শিকদার। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে একটি সুপরিচিত নাম। সাহিত্যাঙ্গনে সবাই জানেন নামটি। জানেন দেশের শিক্ষিত নাগরিক সমাজ। জীবনকে আনন্দময় করার এক অদ্ভুত প্রাণশক্তিতে ভরা এ কবি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী। তিনি এগিয়ে যাবেন। রচনা করবেন আরও আরও মজার সব বই। এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

Share.

মন্তব্য করুন