আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে গেছেন কয়েকজন মুসলিম নভোচারী। তাদের কেউ নভোচারী আবার কেউ গেছেন ভ্রমণকারী বা পর্যটক হিসেবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের নভোচারী হাজ্জা আল মানসুরি তাদের একজন। এছাড়া গেছেন মালয়েশিয়ার শেখ মুজাফ্ফর আল মাসরি, ইরানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার আনুশেহ আনসারি এবং কাজাকিস্তানের তিনজন। তারা হলেন আইদিন আমবাটব, তালগাত মুসাবায়েভ ও অপর একজন। বুঝা যাচ্ছে মুসলমানরা পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না মহাকাশ অভিযান থেকে। এ লেখায় তাদের কথাই বলবো।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের নভোচারী হাজ্জা আল মানসুরি ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর কাজাখিস্তানের বাইকনুর কসমোড্রোম থেকে ‘সুয়ুজ এমএস-১৫ এর মাধ্যমে মহাকাশে যাত্রা করেন। তিনি কিছু অসাধ্য সাধন করেন। যেমন মহাকাশ থেকে কাবা শরীফের ছবি তোলা। মানসুরি ফিরে আসেন ৩ অক্টোবর।

হাজ্জা আল-মানসুরি মহাকাশ স্টেশন থেকে কাবা শরিফসহ পবিত্র মক্কা নগরীর সুন্দর ছবি তুলেছেন। কয়েকটি ছবি নিজের ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে শেয়ার করেছেন হাজ্জা। পৃথিবীর ৩৫০ কিলোমিটার ওপর থেকে ছবি তুলেছেন তিনি। মহাকাশ থেকে পবিত্র কাবার দিকে তাকিয়ে ছবি তোলার পাশাপাশি আনন্দে আপ্লুত হাজ্জা ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন- ‘মুসলমানদের হৃদয়ে বসবাসকারী স্থান’। তিনি মহাকাশ থেকে আরব উপদ্বীপেরও একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। আরব আমিরাতের এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাতে হাজ্জার ভূয়সী প্রশংসা করেছে দেশটি।

মালয়েশিয়ার শেখ মুজাফ্ফর আল মাসরি বিন শেখ মুস্তাফাও মহাকাশ স্টেশনে গেছেন। তিনি একজন অর্থোপেডিক সার্জন ও দেশটির প্রথম মহাকাশচারী। ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর তিনি সয়ুজ টিএমএ-১১ মিশনে মহাকাশে পাড়ি দেন। তিনি সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করেছেন। রোজার কয়েকটি দিন পড়েছিল তার উক্ত স্টেশনে থাকার সময়ে। তিনি রোজা রাখারও চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি বলেন, সেখানে প্রতি ৪৫ মিনিটে একবার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হতো বলে নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ কঠিন ছিল। তিনি ১১ দিন মহাকাশে কাটান। ১১ হাজার মালয়েশীয় নাগরিকের সাথে প্রতিযোগিতা করে তিনি মনোনীত হন। নিজের অভিজ্ঞতাকে দারুণ বলে বর্ণনা করেন এই ডাক্তার।

ইরানি-আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার আনুশেহ আনসারি মহাকাশ স্টেশন সফর করে আসা আরেকজন মুসলিম। নিজের অর্থে মহাকাশে যাওয়া চতুর্থ স্পেস ট্যুরিস্ট এবং প্রথম সেলফ ফান্ডেড নারী মহাকাশ পর্যটক তিনি। ৪০তম জন্মদিন পালনের পর পরই তিনি সেখানে যান, ২০০৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। তিনি ইরানেরও প্রথম মহাকাশচারী। তার মিশনের নাম সয়ুজ টিএমএ-৮ ও ৯।
মহাকাশে গেছেন কাজাকিস্তানের তিনজন। তারা হলেন আইদিন আমবাটব, তালগাত মুসাবায়েভ ও অপর একজন। আইদিন যান সয়ুজ টিএমএ-১৮এম, সয়ুজ টিএমএ-১৬এম মিশনে। দুই মিশনে মোট ৯০ দিন ছিলেন মহাকাশে। তিনি মহাকাশবিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করেছেন, কাজাখ বিমানবাহিনীর একজন মেজর জেনারেল ছিলেন। প্রথম মিশনে স্বল্প সময় ছিলেন। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় মিশনে তিনি ভাগ্যক্রমে স্থান করে নেন। কণ্ঠশিল্পী সারাহ ব্রাইটম্যানের যাওয়ার কথা ছিল, তিনি নাম প্রত্যাহার করে নিলে তার পরিবর্তে জাপানের সাতোসি তাকামাতসুর নাম নির্ধারিত ছিল। তিনিও নাম প্রত্যাহার করলে আইদিন মনোনীত হন। তিনি মহাকাশে যাওয়া তৃতীয় কাজাখ। তিনি ১০ দিন মহাকাশ কেন্দ্রে ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসেন।
কাজাকিস্তানের আরেকজন মহাকাশচারী তালগাত মুসাবায়েভ। সোভিযেত স্টেশন মীর এ তিনি দু’বার ও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একবার গেছেন। তিনি আইএসএস ইপি-১ মিশনের কমান্ডার ছিলেন। ২০০১ সালের ৬ মে তিনি মহাকাশে পাড়ি দেন এবং প্রায় ৮ দিন সেখানে ছিলেন। তার এই মিশনে করেই মহাকাশের প্রথম পেইং স্পেস ট্যুরিস্ট হিসেবে পরিচিত ডেনিস টিটো মহাকাশে যান। তৃতীয় কাজাখ নভোচারীর বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

Share.

মন্তব্য করুন