হরিণের পিছু পিছু

ইশকুল-কোচিং-প্রাইভেট…। রুটিনে বাঁধা একঘেয়ে দিনগুলোর মাঝে দারুণ একটা ব্যাপার হয়- দীর্ঘ ছুটির দিনগুলো শুরু হলে। বছরে দুইটা দীর্ঘ ছুটি পাই আমরা। একটা রমজানে, অন্যটা গ্রীষ্মকালে। যদিও এত লম্বা ছুটি শেষদিকে আর ভালো লাগে না আমাদের। কেবলই ইশকুলে যেতে ইচ্ছে করে। সব বন্ধুদের মিস করতে থাকি। ইশকুল খুললে কার সঙ্গে কী কী করবো তার প্ল্যান চলতে থাকে প্রতিদিনই। মাত্র আঠারো দিনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি তাতেই হাঁপিয়ে উঠি! অথচ এই ছুটির জন্যই এতদিন কেমন মুখিয়ে ছিলাম। তবে ছুটির দিনগুলো একদম যে খারাপ কাটে, তা কিন্তু নয়। জসিম, রাকিব আর ওই শওকত না থাকলে কিচ্ছু হতো না। সব মাটি হয়ে যেত। আগে যখন রাকিবের সঙ্গে অতটা ভাব ছিলো না এবং জসিমও যখন আমাদের বাড়িতে আসতো না তখন ফাঁক পেলেই পুতুল, ছি-কুত-কুত নইলে কইট্ট্যা খেলতে হতো বোনদের সঙ্গে। মেয়েদের খেলা সব। রাকিবরা আছে বলে ফুটবল আর ডাংগুলিটা খেলা হয়। না থাকলে বোনদের আধিপত্যের কাছে ম্যান্দামারা হয়ে থাকতে হতো! ভাবতেই খারাপ লাগে। বন্ধুদের কথা মনে করে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিই। আর মাঝে মাঝেই ক্লাস থ্রি’তে পড়ে আসা একটা ইংরেজি কবিতার দু’য়েক শব্দ চেঞ্জ করে আবৃত্তি করে আপ্লুত হই।
‘থ্যংক ইউ গড ফর দ্য লাইট
থ্যংক ইউ ফর দ্য ডে এন্ড নাইট।’
…থ্যংক ইউ গড ফর মাই ফ্রেন্ডস!
শেষের ‘ফর মাই ফ্রেন্ডস’ অংশটুকু বানিয়ে বানিয়ে বলি।
গ্রীষ্মকালীন ছুটির আর মাত্র চারদিন বাকি আছে। তারপরই আবার ইশকুল খুলবে। আজ একদম সকাল সকাল আমাদের বাড়ির পাহাড়ের নিচে এসে জসিম ডাকলো। আমি তখন সবে পড়তে বসেছি। আমরা পাঁচ ভাইবোন যখন পড়তে বসি তখন সবাই মিলে খুবই আওয়াজ করে পড়ি। ভাইয়ার ভাষায়- মাছ বাজার মিলানো। কিন্তু আমাদের এমনই অভ্যাস দাঁড়িয়ে গেছে- আমরা মাছ বাজার না মিলিয়ে পড়তেই পারি না! অবশ্য আস্তে পড়লেই বড় ঘর থেকে কেউ না কেউ ডাকবে- ‘এরে অমুকের কী হইছে, পড়ার আওয়াজ পাই না কেন?’ তখন সেই অমুককে আবার বলতে হয়- ‘কই, পড়তেছি তো!’
‘কেমনে পড়ো? মুখে ঠুই লাগাইছো?’
ঠুই হলো সেই জিনিশ- যা গরুর মুখে লাগানো হয়, যেন গরু কারো ক্ষেতের ফসলে মুখ দিতে না পারে। আমাদের কারো মুখে যখন ঠুই লাগানোর কথা বলে তিরস্কার করা হয়, তখন যাকে বলা হয় সে একটু মুখ কালো করে থাকলেও বাকিরা মিটমিট করে হাসতে থাকে।
কখন বড় ঘর থেকে কে আবার পড়ার ব্যাপারে ডাক দিয়ে বসেন তার ঠিক নেই। এজন্য সবাইই মনোযোগ দিয়ে আওয়াজ করে পড়তে থাকি। সেই আওয়াজের কারণে বাইরে থেকে কেউ কাউকে ডাকলেও আমরা ঠিকমতো শুনতে পারি না। শোনার জন্য সবাইকে থামাতে হয়। ‘এই থাম থাম, বাইরে কে যেন ডাকতেছে!’ তখন আমরা সবাই থামি।
জসিম ডাকছে পাহাড়ের নিচ থেকে। মাছ বাজার জমিয়ে পড়ার সময় আমাদের পক্ষে সেই ডাক শুনতে পারার কোনো কারণ নেই। রাস্তা থেকে ভাইয়া জসিমের ডাকের সাড়া দিচ্ছেন- ‘হেই কে ওইখানে? কে ডাকে মানিকরে?’
‘ভাইয়া আমি। মানিক ঘরে আছে?’
‘তা আমিটা কে, নাম নাই?’
‘আমি জসিম।’
‘মানিক পড়তে বসছে।’ ভাইয়ার গলা গম্ভীর, থমথমে। এখন পড়া রেখে জসিমের কাছে যাওয়া একদমই উচিত হবে না, ধমক খেতে হবে। কিন্তু একটু পরই পাহাড় বেয়ে জসিম বাড়িতে এসে পড়লো। ওর সঙ্গে শওকতও আছে। শওকত আমাদের বাড়িতে আজ প্রথম আসলো। দু’জনই জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে উঁকি দিচ্ছে। শওকতের চেহারা হাসি হাসি। একটু ফিসফিসে গলায় সে বললো, ‘হেই মানিক!’
‘মানিক্কা অহনও পড়ে।’ জসিম বললো।
ভাইয়া উঠানে দাঁড়িয়ে আছে কিনা, এখনই পড়া রেখে বাইরে গেলে ধমক খেতে হবে কিনা- এইসব ভাবছি আর চোখে চোখে ওদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করছি। ওদিকে দাদু ঘর থেকে বাইরে নেমেছেন। শওকতকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘কিরে তুই কোন বাড়ির ছেলে রে? নাম কী তোর?’
‘শওকত।’
‘কোন বাড়ি?’
‘রাকিবের কাজিন আমি।’
‘রাকিবের কী!’
‘কাজিন।’
‘কী কয় ও?’ দাদু কাজিন শব্দটি বোঝেন নাই। ঘর থেকে আমরা চার ভাইবোনই হি-হি করে হেসে উঠলাম।
‘দাদু, শওকত হইলো রাকিবের চাচাতো ভাই।’ বললো জসিম।
‘কার পোলা?’
‘আশরাফুল ইসলাম। আমার আব্বুর নাম।’ শওকত তার শহুরে বাবুবাবু ভাবটা ধরে রেখে বললো।
‘চিটাং থিকা আইছে তোর বাপ?’
‘না।’
‘যা, ঘরে গিয়া ব’। এই মানিক, তোর বন্ধুরা আইছে দ্যাখ।’
দাদুর ডাক আমাকে ঘর হতে বেরোতে সাহায্য করলো। বাইরে আসতেই জসিম আমাকে টেনে একপাশে নিয়ে গেলো। বললো, ‘চল, আমরা এক জায়গায় যাই আজ।’
‘কই যাবি?’
‘হরিণ ধরমু।’
‘মানে!’
‘মানে কিছু না। দোকালার বাপরা আজকা ঠ্যাডা শুক্কুরের টিলায় নাকি হরিণ শিকারে যাইবো। দোকালা কইলো আমারে। আমারে জিগাইছে যামু কিনা। আমি বলছি- তোরে আর শওকতরে নিলে যামু। আর রাকিব তো বাড়িত নাই আইজকা। নইরে অরেও সঙ্গে নেয়া যাইতো।’
‘শওকতের যাওয়া ঠিক হইবো?’
‘কেন ঠিক হবে না! আমি কি বাচ্চা ছেলে? তোমরা সব বোঝো, আর আমি কিচ্ছু বুঝি না, না? হরিণে যদি আমারে খেয়ে ফেলে খেয়ে ফেলুক। আমি যাবো। আমাকে নিয়ো তোমার ভাবা লাগবে না।’
‘হা হা হা। আমরা হাসলাম।’
‘হরিণরা মানুষ খায় না রে, গাধা!’ বললো জসিম।
আমরা দু’জনেই আবার হাসলাম। শওকতের ব্যাপার আলাদা। সবাই যে বিষয় নিয়ে হেসে গড়াগড়ি খাবে, সে বিষয়ে সে পুরোপুরিভাবে নির্বিকার থাকতে পারে, খুব সিরিয়াস মুডে।
ওদের দু’জনকে দাঁড়াতে বলে আমি মাকে গিয়ে বলে আসলাম- ‘মা, দোকালার সঙ্গে হরিণ দৌড়াইতে যাবো?’
‘আবার হরিণ দৌড়াবার শখ হইছে? যা। দুপুরের আগে আগে ঘরে আসবি।’

দুই পাহাড়ের মাঝে ধানক্ষেত। কাচাপাকা ধান। পুরো ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে দূরে তাকালে অপার্থিব এক সৌন্দর্যে হৃদয়-মন আন্দোলিত হয়ে ওঠে। বাতাসে ঢেউ ওঠে ধানক্ষেতে। যেখানে যেখানে ধান পেকেছে সেখানকার রঙ সোনালি, আর কাচা ধানের ক্ষেতগুলো গাঢ় সবুজ। আবার কাচাপাকার মিশেল আছে যেখানে সেখানকার রঙ একটু আলাদা। কবি জসীমউদ্দীনের ভাষায়- ‘কোথাও হলুদ আবছা হলুদ কোথাও হলুদ না।’
স্থানে স্থানে ধানগাছ কাদার সাথে মাখামাখি হয়ে আছে। বড় বড় গর্ত আর গর্ত ভরা ঘোলা পানি। রাতের বেলা পাহাড়ি শূকরেরা এসব গর্ত করেছে। শূকরের কাছ থেকে ধানক্ষেত বাঁচাবার জন্য রাতে অবশ্য পাহারা দিতে হয়। পাহারার জন্য ক্ষেতের মাঝে বা পাহাড়ের পাশে উঁচু বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি করা হয় টঙ। সেসব টঙে চাষিরা রাত কাটান। টঙ উঁচু করে বানাতে হয়, কারণ- রাতের বেলা বুনো শূকর, চিতাবাঘ এবং অপরাপর হিং¯্র প্রাণীর হামলা থেকে নিরাপদ থাকতে এটা দরকার। সবসময় সঙ্গে রাখতে হয় ধারালো দা, কোচ, বল্লম; কেউ কেউ- বিশেষ করে চাকমা-ত্রিপুরা উপজাতীয় চাষীরা- বন্দুকও রাখেন। তবু বুনো শূকরের আক্রমণের খবর পাওয়া যায় মাঝে মাঝে।
শীতের রাতে মশারি, কাঁথা-কম্বল, শুকনো খাবার আর পানির পাত্র রাখা হয় টঙে। রাতে শূকর তাড়াবার জন্য থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। বিশেষ কায়দায় মোটা বাঁশ দিয়ে বানানো এক ধরণের শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র। আর ছয় বা আট ব্যাটারির তীব্র আলোর টর্চ। টঙে ক্ষেত পাহারায় একা থাকা যায় না। সঙ্গে আরও কেউ থাকতে হয়। যাদের ফসলি জমি দীর্ঘ, তারা ক্ষেত পাহারার জন্য একাধিক টঙ তৈরি করে রাতচুক্তি কামলা খাটান।
অচেনা বুনো প্রাণীদের ডাক-গর্জন শুনে চাষীদের ঘুম ভেঙে যায় কখনও কখনও। তখন চতুর্দিকে টর্চ মারতে হয়। একযোগে বিভিন্ন প্রান্তের টঙ থেকে চাষীরা টর্চ মারতে থাকেন এবং আওয়াজ করতে থাকেন। ক্ষেতের বিভিন্ন জায়গায় বসানো মোটা মৃত্রিঙ্গা বাঁশের শব্দযন্ত্রগুলো রশি টেনে বাজাতে হয় তখন। মধ্যরাতে ঘুম ভাঙার পর এসব করতে করতেই কেউ কেউ বাঁশের তৈরি হুক্কায় টান বসান, ধোঁয়া ছাড়েন আর গলা খাকারি দিয়ে অন্য টঙের চাষীদের কাছে নিজেদের উপস্থিতি ঘোষণা করেন। উঁচু আওয়াজে পাল্টা গলা খাকারি দেন অন্য টঙের চাষীরাও। এতে ভয়ডর একটু কমে আসে।
কনকনে শীতের রাতে গানের মুড আসে না অবশ্য কারোরই। তবে যুবকদের কেউ কেউ বাড়িতে বসে বাঁশি বাজান সন্ধ্যারাতে। পাহাড়ি নির্জন প্রান্তরে বাঁশির সেই রিনরিনে সুর বাতাসের স্তরে স্তরে পাক খেতে খেতে বহুদূর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরকমভাবে বাজার থেকে ফেরার পথে বা অন্য কোনো দূরের জায়গা থেকে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেলে কেউ কেউ খুব উঁচু আওয়াজে গান ধরেন, কেউ বা বাঁশি বাজান। এতে নিজের ভেতর সাহস সঞ্চার হয় কিছুটা, একাকীত্ববোধ কমে আসে।
আমাদের এলাকায় ভালোরকম বাঁশি বাজাতে পারেন দু’জনমাত্র লোক। তাদের একজন এই দোকালা। আমাদের বন্ধু ও। আজকে ওর আমন্ত্রণেই হরিণ শিকারে আসলাম আমরা। আমাদের মহান শিল্পী এস এম সুলতানের পেশীবহুল সুদর্শন ভাস্কর্যের মতোই ঈর্ষণীয় দীর্ঘদেহ আমাদের এই বন্ধুটির। বয়স আমাদের চেয়ে দু’চার বছর বেশি। ঠিকমতো পড়াশোনা করলে তার থাকার কথা ছিলো কলেজটলেজে। কিন্তু সে ফেল করে করে আমাদের সঙ্গেই থেকে গেছে। শিকারে বা বাঁশি বাজানোতেই আগ্রহ বেশি তার। তরুণ শিকারীর মজবুত মাংশপেশী আর অযতেœ বেড়ে যাওয়া আঁকাবাকা চুলে খুবই মানিয়েছে ওকে। আমাদের আযম স্যার বলেন- ওয়াইল্ড বিউটি! ইউরোপীয় শিল্পী মিকেলাঞ্জেলোর ভাস্কর্যের সঙ্গে মিলের কথাও তিনিই একদিন ক্লাসে বলেছিলেন। ফর্সা মুখের পটভূমিকায় দোকালার বড় বড় চোখগুলো ভীষণ সুন্দর, আগ্রহ আর ঔৎসুক্যে ভরা। না চাকমা, আর না বাঙালি। ওকে খাঁটি পাহাড়ি বলাই সঙ্গততর। আমরা অবশ্য সবাই-ই নিজেদের পাহাড়ি বলে আনন্দিত হই। দোকালার সঙ্গে শওকতের একটা মিল যেন কোথাও আছে। যদিও শওকত একটু চিকনা, আর দোকালা স্বাস্থ্যবান। শওকতই একদিন ওকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘কিরে, তুই কি জিমটিম করিস নাকি?’
দোকালা বুঝতে পারে না। ও আমাদের দিকে তাকায়। আমরা গ্রামের ছেলে, জিম বলে যে একটা কিছু আছে- তা আমাদেরও জানা নেই। শওকত তখন নিজেই বলে, ‘আরে, জিম হচ্ছে জিমনেশিয়াম। বাংলায় বলে ব্যায়ামাগার, শহরে এসব আছে। দোকালা জিম না করেও কত ভালো বডি বানিয়েছে দ্যাখ মানিক! তুই খাস কি রে দোকালা?’
দোকালা এবার হাসে। জসিম বলে, ‘ও বইন্যার মাংশ খাইয়া এইরকম শরীর বানাইছে, হিহিহি…।’
পাহাড়ে বইন্যা বলা হয় শূকরকে। মুসলমানরা শূকর খায় না, হারাম। কিন্তু উপজাতিদের প্রায় সবাইই শূকরের মাংশ খায়। শুধু শূকর নয়; হরিণ, নির্বিষ সাপ এবং আরও অনেককিছুই ওরা শিকার করে খায়। বুনো পাখি, ফলমূল, শাকসব্জি আর মাশরুম তো আছেই। মাশরুম জিনিশটাকে আমরা বলি ব্যাঙের ছাতা। এসব আমরা খাই না। দোকালারা খায়। এই বহুবিচিত্র খাবার, কঠোর পরিশ্রম আর শিকারি স্বভাবের কারণেও ওদের মাংশপেশি মজবুত হয়ে থাকতে পারে।
আমরা যে শূকরের মাংশ খাই না, তা দোকালারা ভালো করেই জানে। এজন্য আমাদের খুব ঘনিষ্ট বন্ধু হলেও সে কখনোই আমাদের শূকর শিকারে যেতে বলেনি। এবার বলেছে- কারণ ঠ্যাডা শুক্কুরের গহীন অরন্যবেষ্টিত পাহাড়ে আজ ওরা জাল-বন্দুক এবং শিকারের জন্য অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে শিকারে যাচ্ছে। এই জনমানবহীন বিশাল পাহাড়টা আমাদের বাড়ির পাশেই। ওখান থেকে প্রায় প্রায়ই আমরা হরিণের ডাক শুনতে পাই।
দুই পাহাড়ের মাঝখানের যে ঢালু জায়গা আছে- আমরা তাকে লোঙ্গা বা কুচি বলি। এরকম একটা কুচিতে মোটা পাটের দড়ি দিয়ে তৈরি জাল পাতা হয়েছে। কাঁটা-লতাপাতা আর গাছপালার ঘন জঙ্গলের ভেতরে প্রায় পাঁচ হাত প্রস্থ এবং প্রায় একশো হাত লম্বা জাল পাতার ব্যবস্থা করা সোজা কিছু নয়। দোকালারা জালটা পাতার কাজ শেষ করে তার দুই প্রান্তে গাছের ডালপালা দিয়ে ঝোঁপ তৈরি করেছে। ওই দুই ঝোঁপে দু’জন বন্দুকধারী থাকবে এবং দু’জনের সাথে দু’জন সহযোগী থাকবে। সহযোগীদের কাজ হলো গুলি খেয়ে আহত হওয়া শিকারকে বর্শা দিয়ে গেঁথে ফেলে ছুরি দিয়ে জবাই করা। বন্দুকধারী দু’জনই দোকালার দুই চাচা, কৃষ্ণধন আর মানবেন্দ্র। কৃষ্ণ’র সহযোগী একজন মাঝবয়েসী লোক আর মানবেন্দ্রর সহযোগী রাখা হয়েছে দোকালাকে। দোকালা আমাদের তিনজনকে- ওর বাবা মোডাই চাকমার সঙ্গে পাহাড়ের অপর দিকে যেতে বললো। আমরা সেদিকেই গেলাম। সামনে সামনে হাঁটছে মোডাই চাকমা। তিনি আমাদেরকে চাকমা এবং ভাঙা ভাঙা বাংলায় যা বললেন, তা মোটামুটি এরকম- তোমরা আমার কাছাকাছি থাকবা। অন্য কোনোদিকে যাবা না। পুরো পাহাড়ের শুধু ওই জাল পাতা জায়গাটা বাদে আর সব দিকেই আমাদের লোকজন আছে। ওরা শিকারে অভিজ্ঞ। তোমরা যেহেতু ছোটো- শিকারের নিয়মকানুন তোমরা জানো না। দোকালা তোমাদের বয়েসি হলেও- ও শিকারে ভালোই দক্ষ হয়ে উঠেছে। তোমাদেরও দক্ষতা আসবে, সময় লাগবে যদিও। এখন আমরা পাহাড়ে উঠবো। তোমাদের কাজ হবে ত্রিশহাত দূরত্বে থেকে পাহাড়ের উপরের দিকে ওঠা, আর হৈ হৈ করা। আর তুমি- তোমার নাম কী?’
‘শওকত।’
‘তুমি ওইদিকে, ওই যে উনার সঙ্গে যাও। উনার কাছাকাছি থাকবা। একসাথে বেশি লোক থাকলে চলে না।’
তারপর সেই লোকটাকে ডেকে চাকমা ভাষায় নির্দেশনা দিয়ে শওকতকে সাথে দিয়ে দিলো। শওকত আর ওই লোকটা চলে যেতেই আমরা মোডাই চাকমার কাছাকাছি পরস্পর থেকে ত্রিশহাতের মতো দূরত্ব বজায় রেখে পাহাড়ে উঠতে থাকলাম। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে খাড়া পাহাড় বেয়ে ওঠা খুবই কষ্টকর। ধারালো ভারী একটি দা আছে মোডাই চাকমার হাতে। আমিও আসার সময় দা নিয়ে এসেছি। শুধু জসিমের হাতে আছে একটা গাছের লাঠি। ওদিকে সেই লোকটা- যার সঙ্গে শওকত গেলো- তিনি নিজের হাতে একটা লাঠি নিয়ে দা’টা দিয়ে দিলো শওকতের হাতে। চাকমাদের সবার হাতেই একইরকম দা। ওগুলোকে বলা হয় তাক্কল।
পাহাড়ের তিন দিক ঘিরে সবাই হৈ হৈ করে পাহাড়ের উপরের দিকে উঠছি। কাঁটা লতাপাতা আর ঘন জঙ্গল ঠেলে পাহাড়ে ওঠা খুবই কষ্টের কাজ। ওদিকে শওকতের হৈ হৈ শুনতে পাচ্ছি। ওর গলা আলাদা, শহুরে ছেলেদের মতো। শিকারের মতো ব্যাপারে এসে ওর চিকন গলায় অনভ্যস্ত গলার হৈ হৈ শুনলে হাসি পায়। আমি ডাক দিলাম, ‘কিরে শওকত।’
জসিম আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে হেসে উঠলো। শওকত সমানে হৈ হৈ করছে আর পাহাড়ের উপরের দিকে উঠছে। শিকারে আসার অভিজ্ঞতা তার ভেতরে অন্যরকম পুলক সৃষ্টি করেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কৈশোরের কৌতূহল ও আবেগ। দা দিয়ে কাঁটা-লতাপাতা আর জঙ্গল কেটে পথ করে উপরে উঠতে উঠতে হা-পা কেটে গেছে কয়েক জায়গায়। পাহাড়ের উপরে উঠেই তার চোখ পড়লো একটা ভয় পাওয়া প্রাণীর উপর। মুহূর্তের জন্য সেও একটু ভয় পেলো। তারপরই মনে হলো এটা হরিণ শাবক! আর হরিণই তো আজকের শিকারের উদ্দেশ্য। সৌভাগ্য যে হরিণটা তার সামনেই পড়েছে। সুতরাং এটাকে পিছু ধাওয়া করে জালে ফেলতে হবে। দূরে দূরে শিকারীদের হৈ হৈ শোনা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই এখনও কারো চোখের সামনে শিকার পড়ে নাই। হরিণটাকে যে করেই হোক ধাওয়া করে জালের দিকে নিয়ে যেতে হবে। শওকত হরিণটার দিকে এক-দু’পা এগোতেই তাকে অবাক করে দিয়ে হরিণছানাটা ছুটলো সোজা দক্ষিণ দিকে। শওকতও ছুটলো পিছু পিছু। কোথায় হরিণ আর কোথায় শওকত! শওকত জোর কদমে দৌড়াচ্ছে হরিণের পিছু পিছু। কিন্তু পাজি হরিণটা কিছুদূর গিয়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে আর পেছনের দিকে ভীত-সন্ত্রস্ত চোখে তাকাচ্ছে। শওকতের শ^াস-প্রশ^াস দ্রুত হচ্ছে। সে বুনো গাছের শুকনো পাতার ওপর দিয়ে রুদ্ধশ^াসে ছুটছে। কাঁটা লতায় পা আঁটকে একবার হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। পা কেটে রক্ত বেরোলো, কিন্তু শওকতের থামা নেই। সে ছুটছে হরিণের পিছু পিছু। এভাবে কয়েকটা পাহাড় পেরিয়ে গেলো। এতক্ষণ হরিণটা দৌড়ে কিছুদূর গিয়েই দাঁড়াতো, দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত চোখে কান খাড়া করে পেছনের দিকে তাকাতো। সম্ভবত পেছনে কোথাও মা হরিণটাও আছে সেজন্যই দাঁড়াচ্ছে, অথবা শত্রু তখনও পিছু ধাওয়া করছে কিনা, তাই বোঝার চেষ্ট করছে হরিণশাবকটা। কিন্তু এখন আর সেরকম না। হরিণটাকে আর কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কোনদিকে গেলো হরিণটা? শওকত আরও দ্রুত দৌড়াতে লাগলো। যেন হরিণটাকে সে একাই ধরে ফেলবে! কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলো না। তার দম ফুরিয়ে এসেছে।
শহরে থাকতে তার স্কাউটিং লিডার একটা জিনিশ শিখিয়েছিলো- সেটা হলো, এমনভাবে দৌড়াতে হবে যেন দম ফুরিয়ে না যায়। এটা দৌড়ানোর পক্ষে খুবই ফলদায়ক। এরকম করে অনেকবার দৌড়ে জিতেছে শওকত। এছাড়া সে তো গাছ-বিল্ডিং এসবও বাইতে পারে। সব সত্ত্বেও আজ যে তা কাজে লাগলো না। কিন্তু কমও তো দৌড়ায়নি সে। দাঁড়িয়ে একটু জিরাতে যাবে- ঠিক তখনই তার মনে হলো, আরে, কারও তো আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। সে কি এখন পেছনে সেই ঠ্যাডা শুক্কুরের টিলায় ফিরে যাবে, নাকি হরিণটাকে খুঁজে বের করবে! হরিণটা খুবই বাচ্চা। এবার যদি ওটাকে দেখা যায়, তাহলে কৌশলে জব্দ করতে হবে। কিন্তু পিছু ধাওয়া করে হরিণ ধরা কি কখনোই সম্ভব? সেও তো আসলে ধরতে চায়ওনি, চেয়েছে ধাওয়া করে জালের দিকে নিয়ে যেতে। কিন্তু পাজিটা দৌড়ে এসেছে এদিকে। এখন আর ধাওয়া করলে চলবে না। কৌশলে জব্দ করতে হবে। তার আগে খুঁজে পেতে হবে। পাওয়া গেলে চুপি চুপি ওটার কাছাকাছি যেতে হবে। মুশকিল হলো, হরিণ বড় সতর্ক প্রাণী। শিকারীর উপস্থিতি টের পেলেই আবার উধাও হয়ে যাবে। টের সে পাবেই, কারণ পাতার উপর পা ফেললে মর্মর আওয়াজ হয়। এই মর্মর যেন একটু কম হয় সেজন্য সে ধীরে ধীরে সতর্ক পা ফেলে চতুর্দিকে খুঁজতে লাগলো হরিণটাকে। শিকারটা হারানোয় ওর ভেতরটা ধুকপুক করছে। হরিণটারও কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা। শোয়া বা দাঁড়ানো অবস্থায় দেখা গেলে কাছে যাওয়া যাবে না। ধীরে ধীরে কাছাকাছি যেতে হবে। প্রয়োজনে একটু দূর থেকেই হাতের দা’টা মেরে দিতে হবে ওর পায়ে। পা ভেঙে বা কেটে গেলে আর দৌড়াতে পারবে না।
এতক্ষণ বন ছিলো সমান। উঁচু গাছের তলার শুকনো পাতার ওপর দিয়ে দৌড়ানোর উপযোগী। তাছাড়া শীতকাল হলেও বনের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ভালোই আসছিলো। বনের ভেতর যখন প্রথম ঢুকছিলো তখন ঠা-াটা ভালোই লাগছিলো। রাতের শিশিরে ভেজা গাছ-লতাপাতার পানি তখনও শুকায়নি। গায়ে লাগলে তাতেও শীত করতো। কিন্তু এতক্ষণ ধরে দৌড়ানোর ফলে কোথায় চলে গেছে শীত! এখন একে তো ঘামাচ্ছে, তার ওপর দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁফ ধরে গেছে। রাতের শিশিরে শুকনো পাতাগুলো ভিজলেও এতক্ষণে তা আবার শুকিয়ে গেছে। পুরোপুরি মচমচে না হলেও জোরে পা ফেললে মর্মর ধ্বনি ওঠে। সব মিলেই এখন আর দৌড়ানো যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় ঝামেলাটা হয়েছে পাহাড়টা হঠাৎ গভীর ঢালুতে নেমে গেছে। উপরের মতো অতো আলো নেই নিচে। বরং অনেকটা থমথমে আর অন্ধকার ধরনের। শীতকালটাই এরকম। বন যত গভীর আর ঘন হয় ততই গাছপালায় একটা ঝিমধরা থমথমে ভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিচের দিকে তাকাতেই একটা ভয় ভয় অবস্থা যেন শওকতকে নিরুৎসাহিত করছে অভিযান অব্যাহত রাখতে। গাছে গাছে অদ্ভুত সব পাখিদের ডাকাডাকি, ওড়াউড়ি। কোনোটা হলুদ, কোনোটা সবুজ, কোনোটা ছাইরঙা আবার কোনোটা বড়, ছোট, মাঝারি, লেজ ঝোলা; কারো বা মাথায় ঝুঁটি। বিচিত্রসব ডাকাডাকি ওদের। কিন্তু শওকতের এখন ওসব দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। শিকারের নেশায় তার ¯œায়ু উত্তেজিত। তবে পাহাড়ের নিচের দিকে তাকিয়েই সে হতোদ্যম হলো। তার এখন এরকমও সন্দেহ হচ্ছে- হরিণটা কি এতদূর এসেছে নাকি পেছনেই কোথাও লুকিয়ে আছে। ওর ভাবনায় ছেদ পড়লো একটা আকস্মিক ঘটনায়। সামনের লতাপাতার উপর দিয়ে খচখচ আওয়াজ করে কী যেন একটা দৌড়ে পাহাড়ের নিচের দিকে নেমে গেলো। এটা এতক্ষণ শওকতের আশেপাশেই ছিলো কোথাও। গায়ে অনেকটা মাছের মতো- তবে মাছের চেয়ে অনেক বড় বড় আঁশ। লম্বা লেজ। দীর্ঘ চোয়াল। অনেকটা কুমিরের মতো দেখতে। বনরুই কি? হতে পারে। বাড়িতে গিয়ে বড় চাচাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। বাড়ির কথা মনে হতেই তার মনে হলো- আরে, ওদিকে যে জাল পাতা হয়েছে তার কী খবর? জসিম-মানিক-দোকালারা কি কোনো শিকার ধরতে পারলো? নাহ, আর এদিকে নয়। এবার দ্রুত ফিরতে হবে ঠ্যাডা শুক্কুরের টিলায়। শওকত আরেকবার তাকালো পাহাড়ের গভীর ঢালের অন্ধকারটার দিকে। কিরে, ওদিকে কিছু কি একটা নড়ছে? কী ওটা? খুব ভয়ে ভয়ে সতর্কতার সঙ্গে পাতার ওপর পা ফেলে ফেলে একটু নিচের দিকে নামলো সে। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, দেখা যাচ্ছে না। শুধু গাছপালাগুলো নড়ছে ওখানকার। শওকত চুপ করে তাকিয়ে থাকলো ওদিকে, খুব সতর্কতার সঙ্গে। জায়গাটা ভুতুড়ে কিসিমের। গা ছমছম করছে ওর। কী হচ্ছে ওখানে? হিং¯্র প্রাণী হওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। নিজেকে আরও কিছুটা আড়াল করে ওদিকে তাকিয়ে আছে শওকত। হঠাৎ ওরে মনে হলো কেউ যেন চাপা আওয়াজে কথা বলছে ওদিকে। এই গভীর জঙ্গলে চাপা আওয়াজে কারা কথা বলতে পারে? কেনইবা গলা ছেড়ে স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে না? ব্যাপারটা রহস্যের, ভয়েরও। কিছু বোঝার চেষ্টা করলো সে। নাহ, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। শুধু ঝোঁপঝাড়ের নড়াচড়া আর খুবই চাপা আওয়াজের অস্পষ্ট কথাবার্তা। শওকতের ব্যাপারটা ভালো ঠেকলো না। পেছনে ফিরে আসার পথও কম নয়। এতদূরের জঙ্গলে বিপদজনক কিছু ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে লোকগুলো যদি গোপনীয় কিছু করে থাকে ওখানে তাহলে ওর উপস্থিতি বুঝতে পারলে ভালোভাবে নেবে না নিশ্চয়। আচ্ছা, এটা কি হতে পারে যে হরিণটাকে ওরা ধরে ফেলেছে? নাহ, হরিণ ধরলেও এতো চাপা আওয়াজে কথা বলতে হবে কেন? শওকতের চিন্তায় ব্যাপারটা ক্রমেই জট পাকিয়ে যাচ্ছে। আরও পাঁচ-দশ কদম নিচে নামতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু ঢালটা খাড়া আর কাঁটা লতাপাতায় ভরা। ঘন জঙ্গল আর ঝোঁপঝাড়ের কারণে তো অন্ধকারই হয়ে আছে। ভয়ঙ্কর কোনো সাপখোপ থাকা খুবই স্বাভাবিক। শওকত সিদ্ধান্ত নিলো বাড়িতে ফিরে যাবে। এখানে আর দেরি করবে না। উঠে দাঁড়ালো সে। তখনই ওর কানে কয়েকটি ভাঙা ভাঙা শব্দ আসলো, স্পষ্ট। তারপর আবার চুপচাপ। শওকতও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। আবার সেই শব্দ, ছাপা আওয়াজে হলেও স্পষ্ট শুনলো শওকত। লোকগুলো ইংরেজিতে কথা বলছে! কী করছে ওরা এখানে? এই জঙ্গলে ইংরেজি কথা বলা লোকেরা করছেটা কী? কোনো হিশেবই মিলছে না। তবে এবার সে এটা নিশ্চিত হলো- যেহেতু ফিসফাস আওয়াজে কথা বলছে, আর বিদেশী লোক- সেহেতু ভালো কিছু মোটেই করছে না। আর ওরা তাকে দেখতে পারলেও ছেড়ে দেবে না, যেহেতু লুকিয়ে কিছু করছে ওরা। শওকত আগের মতোই চুপে চুপে পা ফেলে একদম উপরে উঠে আসলো। বাড়ি ফিরতে হবে তাকে। আর ব্যাপারটা নিয়েও ভাবতে হবে নিরিবিলি। তারপর শেয়ার করতে হবে রাকিবের সঙ্গে। ওর হয়তো কোনো ধারণা থাকতে পারে এসব বিষয়ে। পাহাড়ের রাজনীতি আর ভিতর পার্টির খবর সে ভালোই জানে। মাঝে মাঝে এসব আলাপ সে শওকতের সঙ্গেও করে।
পাহাড়ের উপরে উঠে আসার পরও সে ফিসফাস কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে। তবে আগের মতো স্পষ্ট নয়। লোক যে বেশ কয়েকজন আছে ওখানে- তা বলাই বাহুল্য। শওকত একটু দ্রুত পা ফেলে হাঁটছে, যে পথে হরিণের পিছু ধাওয়া করে এতদূর এসে পড়ছিলো- ঠিক সেই পথে পথেই যেতে হবে। পাহাড়ের ঘন বনের এতটা গভীরে সে কোনোদিনই আসে নাই। সে দ্রুত পা ফেলে হাঁটছে আর পেছনে তাকাচ্ছে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে পেছনে পেছনে কিছু একটা আসছে। এই এক্ষুণি ধরে ফেলবে ওকে। দ্রুত পা ফেলতে ফেলতে নিঃশ^াস ঘন হয়ে আসছে ওর। হঠাৎ ওর খেয়াল হলো পাশের মাটির ঢিবিটার কাছে কাদামাটির শ্যাওলা ধরা চকচকে কিছু একটা জিনিশ। এই জঙ্গলে কোত্থেকে এলো এরকম জিনিশ? শওকত জিনিশটা হাতে নিয়ে আবার হাঁটা ধরলো। একটু পরপরই সে পেছনের দিকে তাকাচ্ছে আর হাঁটার গতি বাড়াচ্ছে। এরকম সময় গাছের লতাপাতা ঠেলে এক লোক সামনে এসে দাঁড়ালো। সে অনেকটা অবাক ভঙ্গিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর একটু স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় গেছিলা ওদিকে?’
শওকত কী বলবে কিছুই ভেবে পেলো না। ওর মনে হলো লোকটা তার গায়ের চাদরের কিছু একটা লুকাচ্ছে। একদমই ঢাকা বোঝা যাচ্ছে না জিনিশটা কী। সেও চেহারায় একটু স্বাভাবিক ভাব টেনে বললো, ‘আমরা হরিণ শিকারে আসছিলাম ঠ্যাডা শুক্কুরের টিলায়। ওদিক থেকে ঞরিণের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে এ পর্যন্ত আসলাম।’ [চলবে]

Share.

মন্তব্য করুন