এসে গেছে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যার অফিসিয়াল নাম আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি। এবারের আসরটি ভারতে হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় আইসিসি বিশ^কাপ আসরটি সরিয়ে নেয় মধ্যপ্রাচ্যে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত হবে খেলাগুলো। ওমান এই প্রথম বড় কোন ক্রিকেট আসর আয়োজন করার সুযোগ পেয়েছে।
১৬ দলের টুর্নামেন্টটি দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বে খেলবে ৮টি দল। যাদের মধ্য থেকে সেরা চারটি দল যোগ দেবে দ্বিতীয় পর্বে। আর টুর্নামেন্টের ফরম্যাট ঠিক হওয়ার সময় আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ৮টি দল সরাসরি খেলবে দ্বিতীয় পর্বে। এই দেশগুলো হলো, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান। তাই তো বলা যায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দ্বিতীয় পর্বে। এ কারণে অনেকে প্রথম পর্বটিকে বাছাইপর্ব হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। ক্রিকেট বিশ্বের উল্লেখযোগ্য দেশগুলোর মাঝে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডও খেলবে প্রথম পর্বে। দ্বিতীয় পর্বে মোট ১২টি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। সেখান থেকে দুই গ্রুপের সেরা দুটি করে দল যাবে সেমিফাইনালে।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের আলোকে দলগুলোর অবস্থা নিয়ে তোমাদের ধারণা দেয়া চেষ্টা করবো।
ইংল্যান্ড

আইসিসির টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল ইংল্যান্ড। ওয়ানডে বিশ^কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। গত কয়েক বছর ধরেই বেশ শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে ইংলিশরা। ইয়ন মরগানের দলে আছে এক ঝাঁক পারফরমার। আইসিসির টি- টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ডেভিড মালান ইংলিশ ব্যাটিংলাইন আপের বড় ভরসা। টি-টোয়েন্টিতে তার ৪৭ গড় ও ১৪৩ স্ট্রাইক রেটই বলে দিচ্ছে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কতটা ধারাবাহিক পারফরমার। মরগান নিজেও হয়ে উঠতে পারেন বিধ্বংসী। আছেন জশ বাটলার ও জনি বেয়ারেস্টো। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বরে আছেন ইংল্যান্ডের লেগ স্পিনার আদিল রশিদ।
গত কিছুদিনে দলটির টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পারফরম্যান্সও বেশ ভালো। ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নরা তাই এবারও শিরোপা টার্গেটেই মাঠে নামবে। দুই বছরে দলটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

ভারত
টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের উদ্বোধনী আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত। দলটি সব বিভাগেই বেশ শক্তিশালী। অধিনায়ক বিরাট কোহলি দলটির সবচেয়ে বড় তারকা এবং সেরা পারফরমার। কোহলি ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে আছেন ৫ নম্বরে। এছাড়া রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুলরা যে কোন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। বোলিংয়ে জাসপ্রিত বুমরাহ এই মুহূর্তে বিশে^র সেরাদের একজন। তার সাথে আছেন মোহাম্মাদ শামি। অলরাউন্ডার হর্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা পারফর্ম করতে পারবেন ব্যাট বল দুই ভূমিকাতেই।
২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর কোন আইসিসির টুর্নামেন্ট জেতেনি দলটি। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজেও তারা হেরেছে শ্রীলঙ্কার সাথে। তবে তার আগে জিতেছে টানা ছয়টি সিরিজ।
পাকিস্তান

ভারত ও ইংল্যান্ডের পাশাপাশি এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে ফেবাটির ভাবা হচ্ছে পাকিস্তানকেও। টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের প্রথম আসরেই (২০০৭) ফাইনালে উঠেছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় আসরে ঘরে তুলেছে শিরোপা (২০০৯)। এবার আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর ব্যাটসম্যান বাবর আজম নেতৃত্ব দেবেন পাকিস্তানকে। আজম নিজে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মাদ রিজওয়ানও খেলছেন দুর্দান্ত। দলে আছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মাদ হাফিজ। তবে তা সত্ত্বেও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের ঘাটতি দলটিকে বিগ ম্যাচে ভোগাতে পারে। মোহাম্মাদ আমির বা ওয়াহাব রিয়াজের অভাব শাহিন আফ্রিদি বা হাসান আলী পূরণ করতে পারবেন কিনা সেটি বড় প্রশ্ন। মিডল অর্ডারে শোয়েব মালিকের অভাবও ভোগাতে পারে। তাই তরুণদের ওপরই ভরসা করতে হতে পারে ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নদের। স্পিন ডিপার্টমেন্টে ইমাদ ওয়াসিম ও শাদাব খান পাকিস্তানের তুরুপের তাস হতে পারেন।
গত এক দশকে পাকিস্তান টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত খেললেও চলতি বছর তারা সিরিজ হেরেছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে। তবে আগে পরে যেমনই খেলুক পাকিস্তানকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। যে কোন মুহূর্তে তারা যেমন জ¦লে উঠতে পারে, তেমনি হতাশও করতে পারে সমর্থকদের।

নিউজিল্যান্ড
টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর দল নিউজিল্যান্ড। ব্যাটে-বলে সব সময়ই ভারসাম্যপূর্ণ দলটি। কেইন উইলিয়ামসন, ডেভন কনওয়ে আর মার্টিন গাপটিল কিউদের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ। এর মধ্যে কনওয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সেরা ফর্মে রয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে তার অবস্থান ডেভিড মালান ও বাবর আজমের পরেই। বোলিংয়ে ট্রেন্ট বোল্ট, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদির সাথে আছেন ইশ সোধি। তারকার ভিড় কম থাকলেও নিউজিল্যান্ড সাফল্য পেতে পারে দলীয় পারফরম্যান্সে।
টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে দলটির সাফল্য খুব বেশি নেই। ২০০৭ ও ২০১৬ সালের আসরে সেমিফাইনালে উঠে হারতে হয়েছে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের কাছে। এবারও তারা যথারীতি প্রথম শিরোপার স্বাদ পাওয়ার আশায় খেলতে নামছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা
সব বড় আসরেই ফেবারিট হিসেবে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে প্রতিবারই খালি হাতে ফিরতে হয় তাদের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য ২০০৯ ও ২০১৪ সালের সেমিফাইনাল খেলা। সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলটি হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। চলতি বছর তার আগের তিনটি সিরিজে অবশ্য তারা হেরেছে পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের কাছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি স্পিনার তাবরাইজ শামসি আইসিসির টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর বোলার। ফর্মে আছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ডেভিড মিলার ও ওপেনার টেম্বা বাভুমা। তাদের সঙ্গ দেবেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। পেস ডিপার্টমেন্টে কাগিসো রাবাদা যে কোন সময় ম্যাচের মোড় ঘুুরিয়ে দিতে পারেন।

অস্ট্রেলিয়া
পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের শিরোপার স্বাদ পায়নি এখনো। একবার ফাইনালে উঠেছিল দলটি (২০১০)। এবারও তাদের নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা করছেন না ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। র‌্যাঙ্কিংয়েও দলটি পিছিয়ে। যদিও দলটিতে আছেন ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো বিশ্বমানের তারকা। পেস ডিপার্টমেন্টে মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স যে কোন দলের ব্যাটিংয়ে ধস নামানোর ক্ষমতা রাখেন। এত বড় বড় নাম থাকার পরও দলটি কেন ফেবারিটের তকমা পাচ্ছে না সেটি অদ্ভুত লাগতে পারে। তবে এসব তারকা জ¦লে উঠলে অস্ট্রেলিয়াও শিরোপার দাবিদার হয়ে উঠতে পারে। একটি টি-টোয়েন্টি শিরোপার জন্য অ্যারন ফিঞ্চের দলের ক্ষুধা রয়েছে অনেক বছর ধরেই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ
র‌্যাঙ্কিংয়ে ফেবারিটদের মধ্যে সবার শেষে অবস্থান করলেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সব সময়ই ফেবারিট। এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দলও তারা। একমাত্র দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই বার এই বিশ^কাপের শিরোপা জিতেছে (২০১২ ও ২০১৬)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা সারা বিশে^র টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে খেলে বেড়ায়। যার ফলে দলটি এই ফরম্যাটে বরাবরই ভালো করে আসছে।
ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, কাইরন পোলার্ড, এভিন লুইসদের দলটিকে তাই এবারও সমীহ করছে সবাই। দলটির বলতে গেলে সবাই বিগ হিটার। যারা এক দুই ওভারেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। দলটির বোলিং ডিপার্টমেন্টে বড় কোন তারকা না থাকলেও অন্তত তিনজন পেসার রয়েছেন যারা ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন। তবে স্পিন ডিপার্টমেন্টে দুর্বলতা রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

Share.

মন্তব্য করুন