সারা পৃথিবী জুড়ে মহামারি। পৃথিবীর মানুষগুলো কি বিস্ময়ে দেখছে! দেখছে একটি অদৃশ্য ছোট ভাইরাসের কাছে কি অসহায় মানুষ! আহা মানুষ! কত কি বানিয়েছে নিজেদের সুখের জন্য। আনন্দে বেঁচে থাকার জন্য। সকল বিজ্ঞান ফেল হয়ে গেলো একটি ভাইরাসের কাছে। মানুষের কি করুণ মৃত্যু দেখছে মানুষ। কি অসহায় বিদায় মানুষের! এসব দেখে স্তদ্ধ মানুষ।
কি গুমোট মহামারির দিনগুলো। কি গম্ভীর – মনমরা। চোখে মুখে হতাশা। উৎসাহ নেই। স্বপ্ন নেই। আনন্দ নেই। যখন তখন লকডাউন। বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ। কোথাও ঘোরা নিষেধ।
দেখাও যায় না এমন অতি ক্ষুদ্র অস্তিত্ব আমাদের রীতিমত কাবু করে দিয়েছে। অথচ, সুস্থ সময়ে আমরা মন ভরে ঘুরেছি। ফিরেছি। আড্ডা দিয়েছি। এমনকি মন খারাপ বিকেলগুলোও সুন্দর করে উদযাপন করতাম!
কারণে, অকারণে কিংবা অতি কারণে যখন আমাদের মনটা ভারি হয়ে যেত, কিছু বোঝা নামিয়ে নিতে আমরা মাঝেমাঝে হাঁটতে বেরিয়ে যেতাম। দূরে না, হয়তো কাছে পিঠে কোথাও। হাতের মুঠোয় করে সাথে নিতাম কাছের একটা মানুষকে। টুকটাক গল্প করতাম। অল্প অল্প হাঁটতাম। কারোর কোলের বাচ্চাটা হয়তো খুব মিষ্টি! দুই বোন বা বান্ধবি হয়তো রঙ মিলিয়ে জামা গায়ে দিয়েছে। পেয়ারাওয়ালার সাথে ঝাল মুড়িওয়ালা কি কারণে যেন বিতিকিচ্ছিরি ধরনের ঝগড়া করছে! নিউজপেপার পেতে ওজন মাপার মেশিন নিয়ে রাস্তার পাশে কারেন্টের খাম্বার ধারে বসা বাচ্চা ছেলেটা সাবধানে টাকা গুনছে। ডানে বামে তাকিয়ে আমরা এই সেই দেখতাম। হয়তো হাসতাম কিংবা কিছু একটা দেখে একটু মন কেমন করে উঠতো। ফাঁকে ফাঁকে আমি আর আমার সাথের মানুষ মিলে আকাশ পাতাল গল্প করতাম। সামনে কোন ফুচকার গাড়ি পেলে টুপ করে বসে যেতাম। খাওয়া শেষে মামার টাকা কে দিবে এই নিয়ে অল্প বিস্তর খুনশুটি হত! এভাবে সন্ধ্যা গড়ালে যখন বাসায় ফিরতাম, মনের অজান্তেই দেখতাম বেশ হালকা লাগছে!
এমন বিকেলগুলো দাম দিয়ে কেনা যায় না! এমন বিকেলগুলো অমূল্য হয়! এমন বিকেলগুলো আনন্দে ভরে ওঠে। আনন্দ থেকেই ফুরফুরে হয় জীবন। জীবন ফুরফুরে হলে স্বপ্ন জেগে ওঠে। আর স্বপ্ন আমাদের বড় করে তোলে।
আমরা জানি সবকিছু মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমেই হয়। আল্লাহ যা করেন তাই ই হয়! এ বিশ্বাস রাখতে হবে আমাদের। সেই সাথে আমাদের ভাবতে হবে- মানুষকে মানুষ হয়ে ওঠার। মানুষ যদি মানুষ না হয় তবে এমন দুরবস্থা কাটবে না কখনো। অথবা নতুন নতুন বিপদ আসতে থাকবে। তাই আমাদেরকে সত্যিকার মানুষ হতে হবে।
ভালো কাজ করতে হবে। ভালো আচরণ করতে। ভালো ব্যবহার করতে হবে। ভালো কাজের পরিকল্পনা নিতে হবে। সমাজে ভালো কাজ ছড়িয়ে দিতে হবে। নিরাপদ পৃথিবীর জন্য ভালো কাজের বিকল্প নেই। সুখ ও শান্তি মানুষের কাজের ওপর নির্ভর করে।
মনের ভেতর কত আশার কথা জাগে। কত সুন্দর সময়ের ছবি দেখি। হয়তো দেখবো আরও এমন করে। জানি না কবে আবার এমন বিকেলের সাক্ষী হতে পারবো। প্রাণ ভরে প্রার্থনা করি আমাদের জীবনে আসুক নতুন ভোর। নতুন দিন। নতুন জীবনের গান। আমরা আশা করি আমাদের সব আগের মতো কিংবা আগের চেয়েও ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।

Share.

মন্তব্য করুন