রোবট। নামটা নিলেই একটা কৌতূহল জেগে ওঠে মানুষের মনে। সেই অতীতকাল থেকে আজ পর্যন্ত এই যন্ত্রটি সম্পর্কে ছোট বড় সবার মনেই বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ফলে রোবট সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানার আগ্রহ বেড়ে যায় সবার মাঝে। যুগে যুগে দেশে দেশে মানুষ তাই তার প্রয়োজনে রোবট তৈরি করেছে। কারণ, রোবটও মানুষের মতো কাজ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে বরং মানুষের চেয়ে দ্রুত কাজ করতে পারে রোবট। উল্লেখ্য, রোবট শব্দটির উৎপত্তি চেক শব্দ ‘রোবোটা’ থেকে, যার অর্থ ফোরসড লেবার বা মানুষের দাসত্ব কিংবা একঘেয়েমি খাটুনি বা পরিশ্রম করতে পারে এমন যন্ত্র। রোবট হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, যা মানুষ যেভাবে কাজ করে ঠিক সেই ভাবেই কাজ করতে পারে অথবা এর কাজের ধরন দেখে মনে হবে এর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে।

রোবটের বহুমাত্রিক সংজ্ঞা দেয়া সম্ভব। তবে সহজ ভাষায় বলা যায়, যে যন্ত্র নিজে নিজে মানুষের কাজে সাহায্য করে এবং নানাবিধ কাজে মানুষের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই রোবট। কোনো রোবট নিচের ধর্মগুলোর সব বা অংশবিশেষ প্রদর্শন করে। প্রাকৃতিক নয়, কৃত্রিম পরিবেশ অনুভব করার ক্ষমতা আছে। পরিবেশের বস্তু নিয়ে কাজ করতে পারে। কিছুটা বুদ্ধিমত্তা আছে, যার সাহায্যে পরিবেশ বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রোগ্রামযোগ্য। ঘুরতে পারে ও স্থানান্তর করতে পারে। দক্ষভাবে সুনিয়ন্ত্রিত চলন প্রদর্শন করতে পারে। স্বেচ্ছায় কাজ করছে, এরকম আভাস দিতে পারে। উল্লেখ্য, প্রথম রোবট আবিষ্কার করেন কধৎবষ ণ্টধঢ়বশ (কারেল কাপেক) ১৯২১ সালে। এরপর ১৯৫৪ সালে পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল ও প্রোগ্রামেবল রোবট আবিষ্কার করেন জর্জ ডেভল।

তিনি এর নাম দেন ইউনিমেট (টহরসধঃব)। ১৯৬১ সালে এটি জেনারেল মোটরস নামের একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। ইউনিমেটের কাজ ছিল লোহা লক্কর ওঠা-নামা করানো এবং ভারী ভারী সব বস্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া। স্বয়ংক্রিয় রোবট আবিষ্কারের মাধ্যমে আধুনিক রোবটের যাত্রা শুরু হয় ইউনিমেটের হাত ধরেই। এরপর ১৯৬৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আবিষ্কার করেন মেকি রোবট। যেটি ছিলো সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় স্বায়ত্তশাসিত, কৃত্রিম বুদ্ধিভিত্তিক রোবট। কোনো টেবিলে বাধা পেলে কিভাবে সেই বাধাকে অতিক্রম করা যায় এবং রুমের চারপাশ দেখার মাধ্যমে বাধা বিপত্তিগুলো দেখে চলার মত সক্ষম করে গড়ে তোলা হয় এই রোবটকে। তাই কালের বিবর্তনে বিশে^র উন্নত দেশগুলো নিজেদের প্রয়োজনেই নিত্যনতুন রোবট তৈরি করছে। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে এই যন্ত্রের উন্নয়নের জন্য। ফলে রোবট তৈরিতে মানুষ সফলও হচ্ছে। তাই উন্নত বিশে^র দেশগুলোতে মানুষের জায়গা দখল করে এখন কাজ করছে রোবট। একটি জরিপে দেখা গেছে জাপান, জার্মানি, সুইডেন, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াতে রোবট তৈরির আগ্রহ বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। যদিও ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজকর্মে মানুষের পরিবর্তে ব্যবহারের জন্য রোবটের উদ্ভাবন শুরু হলেও বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজেই ব্যবহার শুরু হয়েছে রোবটের।

সত্যি কথা বলতে কী! রোবট বিপ্লবের এমন সময়ে আমরা বাস করছি, যেখানে রোবটকে বানানোর চেষ্টা চলছে পুরোপুরি মানবিক করার কাজে। বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন একটা রোবট কয়েকজন মানুষের কাজ একাই করতে পারে। যেমন, মিনিটের মধ্যে হাজার হাজার টাকা গুনে দিচ্ছে মানুষের হাতে। রোবট ঝটপট কাজ শেষ করে দিচ্ছে বলে মানুষও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এভাবেই উন্নত দেশগুলোতে রোবট ঢুকে পড়ছে হোটেল, গ্যাস স্টেশন, ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ, বিমানবন্দর ও রেলস্টেশনগুলোতে। উল্লেখ্য, রোবটদের বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে ভারী যন্ত্রপাতি তৈরির কাজে। তাছাড়া কাঠের কাজ, মালপত্র ওঠানো নামানো, মানুষের দেহে ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে রোবট কর্মী হিসেবে কাজ করছে। ইদানীং রোবটকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ধরনের চোখ, গণনা বা হিসাব করার যন্ত্র আর সেন্সর যা দিয়ে তারা নিজেরাই দেখে শুনে কাজ চালিয়ে নিতে পারে। বিস্ময়কর হলেও সত্য রোবটের চেহারা এখন অবিকল মানুষের মতো করে তৈরি করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন, মানুষ যেমন প্রকৃতির কারণে গতি পায়, এই নীতিতে এখন রোবটও চলতে পারবে। এমনকি অনেক খেলাধুলা বা প্রতিযোগিতায় রোবটদের আধিপত্য বাড়ছে। বিশেষ করে বুদ্ধিভিত্তিক অনেক প্রতিযোগিতায় রোবটের পারফরম্যান্স মানুষের চেয়ে অনেক এগিয়ে। যেমন দাবা কিংবা কুইজ প্রতিযোগিতায় রোবট ইতোমধ্যেই শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। এখন অন্যান্য ক্রীড়া ক্ষেত্রেও দখল নিতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন রোবট বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, যেভাবে মানুষ আকৃতির রোবট বাজারে আসতে শুরু করেছে, তাতে করে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে মানুষের হাতের বেশির ভাগ কাজ চলে যাবে রোবটের হাতে। এমন সময়ও আসতে পারে যখন শ্রমিক হিসেবে আর মানুষকে প্রয়োজনই পড়বে না কলকারখানাতে। তাই আগামী দিনের রোবট আমাদের আগামী দিনের জীবনযাত্রায় কেমন প্রভাব ফেলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Share.

মন্তব্য করুন