কোরবানি শব্দটার সাথে আমরা খুব পরিচিত। ছোট বড় সবাই কিছুটা বুঝি- কোরবানি বলতে কি বোঝায়! আমরা এক সময় ছোট ছিলাম। আমাদের ছোটবেলায় আমরা ঈদের আনন্দ করেছি। ঈদের জন্য অপেক্ষা করেছি। অপেক্ষা করতে করতে মনে হতো আহা কত যে দূর ঈদের দিন। নিজেরা নিজেরা বলতাম ঈদ কেনো আসে না। কেনো দিনগুলো তাড়াতাড়ি যায় না। ইস যদি দ্রুত দিনগুলো চলে যেতো। আর ঈদের দিনটি হতো অনেক লম্বা। অনেক বড়। এবং সহজে যেতো না। তবে কত না আনন্দ হতো। কত না মজা হতো!
কিন্তু তা কি আর হয়? হয় না মোটেই। দিন দিনের নিয়মে যায়। ঈদও আসে ঈদের নিয়মে। ফাঁকে আমরা শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা করতাম।
কিন্তু এখন আর তেমন করে অপেক্ষা করি না। তেমন করে ঈদের জন্য ব্যাকুল হই না। ভাবি আসুক ঈদ ঈদের সময়ে। আসুক ধীরে ধীরে। কারণ? কারণ তো আছেই। ছোটবেলায় ঈদের যতো কেনাকাটা যতো খরচ সবই তো বাবা মায়ের। আমরা তো শুধু নিতাম। পেতাম। আর আনন্দ করতাম। এখন কি আর বাবা মাকে বলতে পারি খরচের কথা! বরং নিজেরা এখন বাবা মা হয়ে গেছি। এখন আমাদের সন্তানগণ আমাদের ওপর নির্ভর করে। আমাদের কাছে আশা করে। আমাদের আয়োজনে তারা আয়োজিত।

আমাদের বাবা মাকেও আমাদেরই দেখতে হয়। তাই দেখি। এতে আছে ভীষণ আনন্দ! বাবা-মার জন্য খরচ করতে পারা খুব খুশির বিষয়। একই সাথে সন্তানের জন্য খরচ করাও মজার। আমরা তা-ই করি। করছি।
এখন যারা ছোট তারাও ঠিক ঈদের জন্য অপেক্ষা করে। নতুন জামাটি যত্ন করে রেখে দেয়। লুকিয়ে রাখে। যাতে বন্ধুরা দেখে না যায় ঈদের আগে। যেনো ঈদের দিনই দেখে। আহা কি আনন্দ! কি মজার বিষয়!
রোজার ঈদের অপেক্ষাটা ছিলো বেশি। কারণ এক মাস রোজার পরে ঈদ আসে। দীর্ঘ একমাসে প্রতিদিন হিসাব চলে একাধিকবার। কবে যেনো ঈদ? কয় তারিখে ঈদ? আর কতদিন বাকি ঈদের? এসব হিসাব নিকাশ করতে করতে ত্রিশ দিন যায়। তারপর মহা আনন্দের বার্তা নিয়ে আকাশে দেখা দেয় নতুন চাঁদ। চিকন চাঁদটি যেনো আকাশের মুচকি হাসি। যেনো বলে ওঠে- এই যে আমি ঈদের নোটিশ। কাল সকালে ঈদ!
কোরবানি ঈদের চাঁদ কিন্তু নতুন থাকে না। পুরনো চাঁদ। বেশ বড়। প্রায় গোলগাল। রাতভর চাঁদ আলো বিলায়। সারারাত শেষে চাঁদ ডোবে। ঠিক সকাল হলেই শুরু হয় কোরবানি ঈদ।

কোরবানি ঈদের আনন্দও অন্যরকম। গরু কেনার বিষয় থাকে। গরুটিকে খাওয়া দাওয়া করাতে হয়। আদর সোহাগ দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখতে হয়। কখনো কখনো পাহারাও দিতে হয়। ঈদের দিন ঈদের নামাজ শেষে শুরু হয় গরু জবাই কাহিনি। আহা এ দৃশ্য অন্যরকম। মহান আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে জবাই করা হয় গরু। কেউ খাসি। কেউ ভেড়া। কেউবা দুম্বা। উটও কোরবানি হয়। আবার কেউ মোষও দিয়ে থাকে।
এখানে সেখানে। পথে পথে। বাসার সামনে। বাড়ির সম্মুখে কোরবানির পশুটি জবাই করা হয়। এ জবাই দেয়া হয় মহান আল্লাহর নামে। এবং আল্লাহর জন্যই করা হয় কোরবানি। যদি কেউ শুধু খাওয়ার জন্য কোরবানি করে। অথবা লোক দেখানো কোরবানি হয় তবে তা আল্লাহর কাছে মূল্যহীন হয়ে যাবে।
দুঃখের বিষয় অনেকে এ ব্যাপারটি বোঝে না। অথবা বোঝার চেষ্টা করে না। ফলে নামের জন্য কোরবানি করে। মানুষকে দেখানোর জন্য কোরবানি করে। কেউ আবার কত বড় গরু কিনলো তা প্রচার করে। কত বেশি টাকা দিয়ে কিনলো তাও প্রচার করায়। কেউ কেউ প্রতিযোগিতাও করে থাকে। কার থেকে কে বড় গরু দিলো। কার থেকে কে বেশি দাম দিয়ে কিনলো। এসবে সওয়াব তো হয়ই না বরং গুনাহ্ হয়ে যায়।

অনেকে আছেন যারা যাকাতও লোক দেখানোর জন্য দিয়ে থাকেন। কেউ আবার যাকাত দেন না। কিন্তু কোরবানির মস্ত গরুটি কিনেন। গরুর গলায় মালা। শিং এ মালা। চোটে মালা। কখনো কখনো এসব মালার সাথে গায়ে রঙ মেখে আকর্ষণীয় করে। তারপর পাড়ায় মহল্লায় অথবা এলাকায় ঘোরাই। সবাই জিজ্ঞেস করে কে কিনেছে গো এত বড় গরু।
গরুর রশি ধরা লোকগুলো মহা আনন্দের সাথে জবাব দেন ওমুক নেতার। কিংবা ওমুক ভাইয়ের। কত টাকা? কৌতূহলের সাথে জিজ্ঞেস করে। টাকার অঙ্ক শুনে অবাক হয় লোকেরা। বলতে থাকে বাহ্ ওমুক নেতা অনেক দিলদরিয়া। তিনি এত টাকা খরচ করে কোরবানি দেন।
অথচ গরুটি জবাই দিয়ে কেটে কুটে বিশাল ফ্রিজে ঢোকান। আর সারা বছর খেতে থাকেন মাংস। এমন কোরবানি কারো কাম্য হতে পারে না। কোরবানি হবে শুধুমাত্র কেবলমাত্র মহান রবের উদ্দেশ্যে।

আমরা আমাদের ছোটবেলায় কোরবানি আল্লাহর জন্য হতে দেখেছি। বড় গরু ও বেশি দামের প্রতিযোগিতা তেমন ছিলো না। এখন যারা ছোট তাদের বুঝতে হবে জানতে হবে যে কোরবানি শুধু আল্লাহর জন্য হতে হবে। কোনো লোক দেখানো বা নামের জন্য নয়!
বড় হয়ে যখন কোরবানি দেবে তখন এটি মনে রাখতে হবে। এখন বাবা মাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। যদি বাবা মার তেমন লোক দেখানো কিছু থাকে। তবে তাঁদেরকে বলতে হবে সম্মানের সাথে। নরম ভাষায়। সুন্দর কথায়। যেনো কঠিন কথায় বাবা মা কষ্ট না পান।
মজার বিষয় হলো কোরবানির আনন্দ লুকিয়ে আছে নিয়তের ভেতর। অর্থাৎ কে কোন নিয়তে কোরবানি করে তার ওপর। যিনি আল্লাহর জন্য কোরবানির নিয়ত করেন প্রকৃত আনন্দ হলো তার!

Share.

মন্তব্য করুন