আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলো এ বছর। জাতি হিসেবে এটা আমাদের অবশ্যই মাইলফলক। আর এটা দল-মত নির্বিশেষে সবার অর্জন। একটা মজার ঘটনা দিয়ে শুরু করি। আমি ঢাকা থেকে কলকাতার একটি দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ ও সংবাদভাষ্য নিবন্ধ পাঠাই। তাই মাঝে মাঝে কলকাতার টিভি চ্যানেল দেখতে হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর সকালে ডিডি বাংলা চ্যানেলে চলছিল বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি লাইভ প্যারেড অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের প্যারেডের মাঝে গাওয়া হলো দুটো গান। দ্বিতীয় গানটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি গান। শুরুর কথা কয়টি হলো ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি, সাথী মোদের ফুল পরি।’ নড়ে চড়ে বসলাম। কি ব্যাপার! পুরোটা গান হলো, শিশুরাই গাইলো বড়রাও সাথে ছিল। অনুষ্ঠান শেষ হলো। গানটার কথাগুলো শিক্ষণীয়। এমন একটা স্বপ্নের দেশ ‘আমাদের স্বপ্নপুরি’ যেখানে কেউ মিথ্যে কথা বলে না, পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা করে আর সবাই সুন্দর করে দেশটা গড়তে চায়। এই কথাগুলোই গানটির প্রাণ এবং তারাও এরকম একটি দেশ হতে চায় বলেই হয়তো গানটিকে বেছে নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জাতীয় অনুষ্ঠানের জন্য। এটা বাংলাদেশের ছোটদের একটি সিনেমার গান। সেই সিনেমার নাম ‘ছুটির ঘণ্টা’। গানটি লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান, শিল্পী আবিদা সুলতানা, সুরকার সত্য সাহা।

পাকিস্তান আমল থেকেই ঢাকা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্র। ঢাকায় পূর্ণাঙ্গ সিনেমা তৈরি হতে শুরু করে ১৯৫৬ সালে। প্রথম ছবির নাম ‘মুখ ও মুখোশ’। পরিচালনা করেন আবদুল জব্বার খান। এটি ছিল একটি ডাকাতের কাহিনী, ফলে শিশুদেরও ছবিটি আকর্ষণ করে। আরো পরে শুধু ছোটদের জন্যই কিছু সিনেমা হয়েছে, আবার বড়দের সিনেমাতেও শিশু চরিত্র মূল চরিত্র হওয়ায় সেগুলোও শিশুরা পছন্দ করেছে। ‘ছুটির ঘণ্টা’ তেমনই একটি ছবি।
শিশু মনের উপযোগী চলচ্চিত্রকেই সাধারণভাবে আমরা শিশুতোষ চলচ্চিত্র বলে বুঝে থাকি। সিনেমার বিষয় ভাগকে বলে জেনার। যেমন সামাজিক, সায়েন্স ফিকশন, হরর বা ভৌতিক, অ্যাকশন বা মারদাঙ্গা, ঐতিহাসিক কাহিনীভিত্তিক, ফোক বা লোককাহিনীভিত্তিক, রূপকথাভিত্তিক, সঙ্গীতভিত্তিক ইত্যাদি। শিশুতোষও একটি জেনার বা ধরন। শিশুতোষ চলচ্চিত্র দেখে আমরা শিশুদের মনোজগৎ, তাদের চারপাশ, তাদের সমস্যা, বোধ, বিশ্বাস ও বোঝাপড়া সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকি। ‘মুখ ও মুখোশ’ এর মাধ্যমে এ দেশে সবাক চলচ্চিত্রের সূচনা হলো ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৮ সালে গঠিত হয়েছিল ‘পাকিস্তান শিশু চলচ্চিত্র সমিতি’। এই সমিতি ১৯৫৮ সালে বিভিন্ন দূতাবাসের সহায়তায় ঢাকার ‘নাজ’ সিনেমা হলে সপ্তাহব্যাপী শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। মাসিক ‘সিনেমা’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ফজলুল হক তার স্ত্রী ঔপন্যাসিক রাবেয়া খাতুনের লেখা কাহিনী নিয়ে ‘প্রেসিডেন্ট’ নামের একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সেন্সর বোর্ডের আপত্তির কারণে নাম পরিবর্তন করে চলচ্চিত্রটি ‘সান অব পাকিস্তান’ নামে ১৯৬৬ সালে মুক্তিলাভ করে। এটিই এ দেশে নির্মিত প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র। ১৯৭০ সালে নির্মিত হয় ‘বাবলু’। শিশু চরিত্রের কারণে ছবিটি শিশুতোষ কাতারে পড়ে। বিস্তারিত পরে আলোচনা করছি।

২.
শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিহাস চলচ্চিত্র আবিষ্কারের ইতিহাসের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট। ১৮৯৫ সালে ফ্রান্সের লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় ‘সিনেমাটোগ্রাফে লুমেরে’ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। সে থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু। তাদের নির্মিত এবং প্রদর্শিত বেশ ক’টি ছোট ছোট চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘বেবিস ব্রেকফাস্ট’ (১৮৯৫) এবং ‘ওয়াটারিং ইন দ্য গার্ডেন’ (১৮৯৫) চলচ্চিত্র দুটিকে শিশুতোষ চলচ্চিত্রের আওতায় ধরা যায়। এরপর চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য কিড’ (১৯২০) চলচ্চিত্রটিও শিশুরা আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেছে। শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে ওয়াল্ট ডিজনির অবদানও অনেক। তিনি এক পর্যায়ে শিশুতোষ চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। ১৯২৮ সালে ডিজনি তার বিখ্যাত চরিত্র ‘মিকি মাউস’ সৃষ্টি করেন, যা সারা বিশ্বের শিশুদের আকর্ষণ করে। সাম্প্রতিক কালে হ্যারি পটারের কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র শিশুদের কাছে গ্রহণীয় হয়। ‘বেবিজ ডে আউট’ ছোট একটি বাচ্চার কাহিনী, যা দেখে রক্ত হিম হয়ে আসে দর্শকদের। ‘টম অ্যান্ড জেরি’ হলিউডের মেট্রো গোল্ডউইন মেয়ার স্টুডিওর তৈরি ও বর্তমানে হ্যানা বারবারা স্টুডিওতে তৈরি জনপ্রিয় কার্টুন। এতে টম একটি বিড়াল এবং জেরি একটি ছোট ইঁদুর, যাদের নানা রকম দুষ্টুমি এই কার্টুনের প্রতিপাদ্য, শিশুদের খুবই পছন্দের। এই ধারাবাহিকের প্রতিষ্ঠাতা হলেন উইলিয়াম হ্যানা ও জোসেফ বারবারা। যাকে বলা হয় কার্টুন, তা অ্যানিমেশন সিনেমা। অ্যানিমেশন (অহরসধঃরড়হ) বা সজীবতা হচ্ছে স্থির চিত্রের একটি ক্রম, যেগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লক্ষ্য করলে জীবন্ত ও সচল বলে মনে হয়। লাটিন ভাষার শব্দ ধহরসধ (আত্মা/ংড়ঁষ), এর ক্রিয়াবাচক শব্দ হলো অহরসধঃব। এর অর্থ আত্মা দান করা, বা প্রাণ দান করা। অর্থাৎ একটি জড় বস্তুতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা। অ্যানিমেশনে জড়/স্থির চিত্রকে গতিশীল করে ‘প্রাণ দেয়া’ হয় বলেই একে অ্যানিমেশন বলা হয়। এখন কার্টুন ছবি না দেখে শিশুদের চলেই না। এগুলোও শিশুতোষ চলচ্চিত্র, তবে অ্যানিমেশন গোত্রের।

৩.
যা বলছিলাম। শিশুতোষ চলচ্চিত্র হতে পারে শিশু-কিশোর মন ও তাদের স্বপ্নের উপযোগী গল্প, কাহিনী ও ভাবনার মতো করে। শিশু অভিনেতা-অভিনেত্রী কিংবা পরিণত বয়স্ক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমেও শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মিত হতে পারে। কোন চলচ্চিত্রে কেবল শিশুরা অভিনয় করলেই তা যেমন শিশুতোষ চলচ্চিত্র হয় না- তেমনি বয়স্ক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনীত চলচ্চিত্রও হয়ে উঠতে পারে অনবদ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র। উন্নত দেশগুলোতে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের ইতিবাচক প্রবণতা আছে। বাংলাদেশের শিশুরাও সেসব চলচ্চিত্র বা অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র সাদরে গ্রহণ করছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন চলচ্চিত্র তৈরি তেমন একটা হয় না। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ২০১৯ পর্যন্ত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। কিন্তু শিশুতোষ চলচ্চিত্রের সংখ্যা হাতেগোনা। আগে চলচ্চিত্রগুলোতে শিশু চরিত্রের উপস্থিতি চোখে পড়তো, সেটাও এখন কমে এসেছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে দ্রুত চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হলেও সেখানে পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রবণতা দেখা যায় না। ১৯৭৮ সালে পরিচালক সুভাষ দত্ত একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন ‘ডুমুরের ফুল’ নামে। কিছু বিতর্ক সত্ত্বেও ‘ডুমুরের ফুল’-ই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র। একই বছরে ‘অশিক্ষিত’ চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এটি পরিচালনা করেছেন আজিজুর রহমান। ‘ডানপিটে ছেলে’ খান আতাউর রহমান পরিচালিত ১৯৮০ সালের শিশুতোষ চলচ্চিত্র। ১৯৮০ সালে বাদল রহমান ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। অন্যদিকে, আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘ছুটির ঘণ্টা ’(১৯৮০) চলচ্চিত্রকেও শিশুতোষ চলচ্চিত্র বলা হয়ে থাকে, যার কথা আগেই বলেছি। ১৯৮২ সালে শিশু একাডেমির প্রযোজনায় ‘গল্প দাদুর গল্প কথা’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকি। ‘পুরস্কার’ ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন সি. বি. জামান। ‘রামের সুমতি’ শহিদুল আমিন পরিচালিত ১৯৮৫ সালের চলচ্চিত্র। ‘দীপু নাম্বার টু’ ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। তার নির্মিত আরো দুটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘দূরত্ব’ (২০০৪) ও ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ (২০১১)। ২০০২ সালে তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন ‘মাটির ময়না’। যদিও এটিকে পুরোপুরি শিশুতোষ মুভি হয়তো বলবেন না অনেকেই। ২০০৯ সালে নির্মাণ করা হয় দেশের প্রথম শিশুতোষ ডিজিটাল চলচ্চিত্র ‘দূরবীন’। এটি পরিচালনা করেন জাফর ফিরোজ। ‘বৈষম্য’ ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। পরিচালনা করেছেন জার্মানপ্রবাসী নির্মাতা অ্যাডাম দৌলা।
বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে ও শিশুতোষ চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে শিশু একাডেমি’ এ যাবতকাল পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য মিলিয়ে বিশটির মতো শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা কাজে লাগিয়ে নিরীক্ষামূলক শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণেও অনেকে আগ্রহী হয়েছেন। তবে এত কিছু সত্ত্বেও আমাদের দেশে জেনার হিসেবে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণের বিষয়টি যতখানি হওয়ার ছিল ততখানি হয়নি।
বাংলাদেশে অ্যানিমেটেড শিশুতোষ শো নব্বই দশকের প্রথম দিকে টিভিতে প্রদর্শিত ‘মীনা’। এটি মূলত ইউনিসেফের সহায়তায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রচারণামূলক নাটিকা। কিন্তু শিশুমহলে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা গেছে। এরপর ‘মন্টু মিয়া অভিযান’ নামে অ্যানিমেশন একটি মুভি প্রচার হয় একুশে টিভিতে। এর তিনটি পর্ব নির্মাণ হয়েছিলো। মুস্তাফা মনোয়ার অ্যানিমেশন ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, একটি টিভি চ্যানেল কাজও করেছে, তবে ধারাটি প্রচার পায়নি, খুববেশি জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেনি।
হয়তো সংখ্যায় খুব বেশি নয়, তবুও যে ক’টিই শিশুতোষ ছবি তৈরি হয়েছে সেগুলোই আমাদের শৈশবকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের সিনেমা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগোতে পারেনি। কথা সত্যি। তবে এর কারণ অনেক। বৃহৎ পরিসরের চলচ্চিত্র যখন দর্শক হারাতে শুরু করে সেই একই সাথে শিশুতোষ চলচ্চিত্রও দর্শক হারাতে শুরু করবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু হলিউডের তৈরি কোন শিশুতোষ মুভি যেমন হালের, ‘কুংফু পান্ডা’, ‘ট্রলস’, ‘জংগল বুক’, ‘বিউটি অ্যান্ড দ্যা বিষ্ট’, ‘সিনডেরেলা’, ‘পিটারস ড্রাগন’, ‘হ্যারি পটার’ বা ‘বস বেবি’, ‘বেবিস ডে আউট’- এসব ছবি আধুনিক ডিজিটাল মুভি থিয়েটারে যখন দেখানো হয়, সেখানে কিন্তু শিশুসহ সকল বয়সের দর্শক ঠিকই যায়। তবে সাধারণ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না পেলে সাধারণের হয়ে ওঠে না এটাও সত্য।

৪.
এবারে কয়েকটি শিশুতোষ চলচ্চিত্রের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে লেখা শেষ করবো।

বাবলু : বাংলাদেশের নামকরা পরিচালক এহতেশামের ছোট ভাই মুস্তাফিজ নির্মিত একটি ছবি। এটি বাবলু নামে একটি শিশুর কাহিনী। মুস্তাফিজ ‘মুন্না আউর বিজলী’ নামে ১৯৭০ সালে একটি উর্দু ছবি নির্মাণ করেন। এটি বাংলা ডাবিং হয় ‘বিজলী ও বাবলু’ নামে। উর্দু ছবির মুন্নাই বাংলা ছবির বাবলু। ছবিটি সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়। ১৯৭০ সালের ১৭ জুলাই ছবিটি মুক্তি পায়। অভিনয়ে ছিলেন আজিম, জাভেদ রহিম, শাবানা, বেবী হেলেন (সুচরিতা), রাজ, নারায়ণ চক্রবর্তী প্রমুখ। এই ছবিতে বালক বাবলু চরিত্রে সুচরিতা অভিনয় করেন বেবী হেলেন নামে। পরে অভিনয় দক্ষতার গুণে তিনি নায়িকা হয়ে নাম করেন। বাবলুর উর্দু ভার্সন ‘মুন্না আউর বিজলী’ও পশ্চিম পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা পায়। শিশু বাবলু চরিত্রের কারণে শিশু মনে ছবিটি দাগ কাটে। এটি হয়ে দাঁড়ায় ঢাকার শিশুতোষ চলচ্চিত্রের সূচনালগ্নের একটি ছবি।

ছুটির ঘণ্টা : ছবিটি পরিচালনা করেছেন আজিজুর রহমান। ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন স্কুলের বাথরুমে সবার অজান্তে তালাবদ্ধ হয়ে আটকে পড়ে একটি ১২ বছর বয়সের ছাত্র। তালাবদ্ধ বাথরুমে ১১ দিনের ছুটি শেষ হওয়ার প্রতীক্ষার মধ্য দিয়ে হৃদয়বিদারক নানা ঘটনা ও মুক্তির কল্পনায় ১০ দিন অমানবিক কষ্ট সহ্য করার পর কিভাবে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এমনই করুণ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছে সুমন ও অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, সুজাতা, খান আতা, শওকত আকবর এবং এটিএম শামসুজ্জামান। ছবির সুরকার সত্য সাহা। চিত্র গ্রাহক সাধন রায়, সম্পাদনা নুরুন্নবী। পরিবেশক স্বরলিপি বাণীচিত্র। ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরি’ ছাড়াও ছবিটির আরো একটি জনপ্রিয় গান হচ্ছে ‘একদিন ছুটি হবে’।

অশিক্ষিত : ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। পরিচালনা করেছেন আজিজুর রহমান এবং কাহিনী লিখেছেন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সত্য সাহা। এতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন রাজ্জাক, অঞ্জনা রহমান, সুমন, রোজী সামাদ, এটিএম শামসুজ্জামান প্রমুখ। ছবিটি বাণিজ্যিক সফলতার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়ায়। এর সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন সত্য সাহা। গানের কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। এ চলচ্চিত্রের সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত’ এবং শাম্মি আখতার ও খন্দকার ফারুক আহমেদের কণ্ঠে ‘ঢাকা শহর আইসা আমার’ গান দুটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। রাজ্জাক রহমত চরিত্রে একজন অশিক্ষিত মানুষের শিক্ষিত হওয়ার যে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা তা যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তাকে সহায়তা করে সুমন শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ছবির পরিবেশক স্বরলিপি ফিল্মস। এর চিত্রগ্রহণে ছিলেন আবু হেনা বাবলু ও সম্পাদনায় নুরুন্নবী।

আমার বন্ধু রাশেদ : ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। প্রযোজনা করেছে মমন চলচ্চিত্র ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চৌধুরী জাওয়াতা আফনান, অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, হুমায়রা হিমু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আরমান পারভেজ মুরাদ, এ ছাড়াও শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত কাওসার আবেদীন। ১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পে। ছবিটির সুরকার ইমন সাহা, চিত্রগ্রহণে এল অপু রোজারিও ও সম্পাদনায় রতন পাল।

এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী : ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অনুদানে নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। জার্মান লেখক এরিখ কাস্টনার রচিত ‘এমিল অ্যান্ড দি ডিটেক্টিভ’ (১৯২৯) নামক কিশোর উপন্যাসের আলোকে এটি নির্মিত। চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেছেন বাদল রহমান। তিনি এর সম্পাদনাও করেছেন। অভিনয়ে ছিলেন গোলাম মোস্তফা, সারা জাকের, এটিএম শামসুজ্জামান, শর্মিলী আহম্মেদ, মাস্টার পার্থ, শিপলু, টিপটিপ প্রমুখ। চিত্র গ্রহণে আনোয়ার হোসেন। ছবিতে দেখা রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে খুলনার ছেলে এমিল ঢাকায় পুরস্কার নিতে আসে। ট্রেনে তার সঙ্গে থাকা ৫০০ টাকা হারিয়ে ফেলে। যে করে হোক টাকা উদ্ধার করবেই। সন্দেহ হয় হ্যাট পরা একজনকে। তার পিছু নেয় এমিল। এরপর শুরু হয় তার অভিযান। অভিযানে তার সঙ্গী হয় ঢাকার একদল বিচ্ছু পিচ্চি ও তাদেরই একজনের মামা। গোয়েন্দাভিত্তিক এই ছবিটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ৫টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে।

ডানপিটে ছেলে : এটি গুণী পরিচালক খান আতাউর রহমান পরিচালিত ১৯৮০ সালের শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এর সুরকার ও চিত্রগ্রাহকও খান আতা। ছবিটি ডানপিটে এক কিশোরের দুষ্টুমি ও নানা অঘটন নিয়ে আবর্তিত হয়। কাহিনীকার মকবুলা মনজুর। ডানপিটে ছেলের চরিত্রে অভিনয় করে মাস্টার শাকিল। চলচ্চিত্রটি ১৯৮০ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং ১৯৮১ সালে জার্মানিতে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ১৯৮১ সালে প্রদত্ত ষষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে খান আতাউর রহমান শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার এবং মাস্টার শাকিল শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন। সঙ্গীত পরিচালনা ও গীত রচনা করেছেন খান আতাউর রহমান। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুমানা ইসলাম। তার গাওয়া ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ’ গানটি অসাধারণ জনপ্রিয়তা পায়। গানটি লিখেছেন খান আতা। ছবিটি সম্পাদনায় ছিলেন মুজিবুর বহমান দুলু।

ডুমুরের ফুল : সুভাষ দত্ত প্রযোজিত ও পরিচালিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। চিত্রনাট্যও তারই করা। সাহিত্যিক আশরাফ সিদ্দিকীর ‘গলির ধারের ছেলেটি’ নামক গল্প অবলম্বনে নির্মিত। এতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা, ইলিয়াস কাঞ্চন, শাকিল, সৈয়দ হাসান ইমাম, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি ১৯৭৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ তিনটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী- শাকিল, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক- নুরুন্নবী, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক- মহিউদ্দিন ফারুক। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আজাদ রহমান এবং গীত রচনা করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পরিবেশনায় ছিল শতাব্দী ফিল্মস।

পুরস্কার : ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। সৈয়দ শামসুল হকের কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্যে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন সি. বি. জামান। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুমন, শাকিল, বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি ১৯৮৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ পাঁচটি পুরস্কার অর্জন করে। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ‘গোয়া চলচ্চিত্র উৎসব’, ‘দিল্লী আন্তর্জাতিক উৎসব’ ও রাশিয়ার ‘তাশখন্দ চলচ্চিত্র উৎসব’-এ প্রদর্শন করা হয়। চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সত্য সাহা। প্রযোজনা করেছেন রমলা সাহা। গীত রচনা করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। চিত্র গ্রাহক আনোয়ার হোসেন ও সম্পাদনা আতিকুর রহমান মল্লিক। পরিবেশক স্বরলিপি ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটারস।

বৈষম্য : ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। পরিচালনা করেছেন জার্মানপ্রবাসী নির্মাতা অ্যাডাম দৌলা। কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপও লিখেছেন তিনি। মোহাম্মদ হোসেন জেমির প্রযোজনায় ছায়াছবিটি পরিবেশনা করেছে কীর্তনখোলা প্রোডাকশন হাউজ। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবীর হোসেন অঙ্কন, অ্যাডাম দৌলা, মিতা চৌধুরী প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী ও শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী- আবীর হোসেন অঙ্কন, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক- মোহাম্মদ হোসেন জেমী। ছায়াছবিটি বাংলাদেশে মুক্তি পায় ২০১৪ সালের ২১ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে। ভারতের মুম্বাইয়ে আনন্দ চিত্র মন্দির প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হয় ছবিটি। ছায়াছবিটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন অ্যাডাম দৌলা ও কেভিন ম্যাকলয়েড। গীত রচনা করেছেন এ আর রহমান বাবলু ও কিম্বল অভি। সম্পাদনা করেছেন অ্যাডাম ও আশরাফুল আলম।

মাটির ময়না: ২০০২ সালের যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এটি রচনা এবং পরিচালনা করেছেন তারেক মাসুদ। তারেকের গল্প অবলম্বনে যৌথভাবে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তারেক এবং তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। সম্পাদনাও করেছেন ক্যাথরিন। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুরুল ইসলাম বাবলু, রাসেল ফরাজী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, শোয়েব ইসলাম এবং লামিসা আর রিমঝিম। বিতর্কিত হয়ে পড়ায় বাংলাদেশে চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ কাহিনীতে যা বলা হয়েছিল তা অতিরঞ্জিত বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর চলচ্চিত্রটির ভিসিডি এবং ডিভিডি সংস্করণ মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এটি ২০০২ সালে ৭৫তম একাডেমি পুরস্কার আয়োজনে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে বাংলাদেশের নিবেদিত প্রথম চলচ্চিত্র। এটি এতসব পুরস্কার আর সাফল্য অর্জন করলেও ঠিক পূর্ণাঙ্গ শিশুতোষ চলচ্চিত্র এটিকে বলা যাবে না। এটি প্রযোজনা করেছে এমকেটু। সুরকার মৌসুমী ভৌমিক ও চিত্র গ্রহণে সুধীর পালসানে।

দীপু নাম্বার টু : দীপু নাম্বার টু ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এটি মনন চলচ্চিত্র নিবেদিত রাষ্ট্রীয় অনুদানে নির্মিত। মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অরুণ। বিভিন্ন চরিত্রে ছিলেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, আবুল খায়ের, গোলাম মুস্তাফা, শুভাশীষ। শিশুতোষ সিনেমার মধ্যে এটি খুবই জনপ্রিয়। দীপুর বাবা সরকারি চাকরিজীবী। তাই বদলির কারণে প্রতি বছর দীপুকে বদলাতে হয় স্কুল, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত পরিবেশ। তারেক দীপুর সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া বাধাতে চেষ্টা করে ও একদিন দীপুর গায়ে হাত তোলে। কিন্তু দীপু এ ব্যাপারে কারও কাছে অভিযোগ করে না। ঘটনাচক্রে একপর্যায়ে দীপু ও তারেকের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। দু’জন শেষে মূর্তি পাচারকারী চক্রকে ধরতে অভিযানে নামে। ক্লাসে আরেকজন দীপু থাকায় তার নাম হয়েছিল দীপু নম্বার টু।

দূরত্ব : ২০০৪-এর একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এটি পরিচালনা করেন মোরশেদুল ইসলাম, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম-এর ব্যানারে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়। চলচ্চিত্রটির প্রধান কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরীদি, সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদ, হাকিম ফেরদৌস, আখতার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, শহিদুল আলম সাচ্চু ও তানিয়া। ছবিটি ২০০৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এগারো বছরের একমাত্র ছেলে পুতুলকে বাবা-মা কেউই ঠিকমতো সময় দিতে পারে না। বাসার কাজের বুয়াই ওর দেখাশোনা করে। এক সকালে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই বানরের খেলা দেখতে বেরিয়ে আসে। সেখানে আরকেটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়, ছেলেটা রেলস্টেশনে থাকে তার একমাত্র বোনকে নিয়ে। ওদের মধ্যে দারুণ সখ্য গড়ে ওঠে। ওরা ট্রেনে করে ময়মনসিংহ যায়। ওদিকে একমাত্র ছেলেকে না পেয়ে বাবা-মা দিশাহারা হয়ে যায়। এক হুজুরকে ডাকে। সেই হুজুর পুতুলের জামাকাপড়ের গন্ধ শুঁকে বলে কোথায় আছে। এভাবেই টানটান উত্তেজনায় ছবির গল্প এগিয়ে যায়।

রামের সুমতি : শহিদুল আমিন পরিচালিত ১৯৮৫ সালের শিশুতোষ চলচ্চিত্র। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে চিত্রনাট্যও লিখেছেন শহিদুল আমিন। জাভেদ ফিল্মস এর ব্যানারে এটি প্রযোজনা করেছেন বেগম আমেনা আহমেদ। চিত্রগ্রহণে মোহাম্মদ সাঈদ খান, সম্পাদনা করেছেন লুৎফর রহমান। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জয়, তার বউদির ভূমিকায় ববিতা এবং তার দাদা শ্যামের চরিত্রে প্রবীর মিত্র। অন্যান্য ভূমিকায় সুচন্দা, রওশন জামিল, নার্গিস, সাদেক বাচ্চু, সাইফুদ্দিন, আশীষ কুমার লোহ প্রমুখ। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য জয় শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী ও ববিতা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন মনসুর আহমেদ। গীত রচনা করেছেন মাসুদ করিম। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, শামীমা ইয়াসমিন দীবা ও বেবি নওরিন।

দূরবীন : একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। ২০০৯ সালে তৈরি করা দেশের প্রথম শিশুতোষ ডিজিটাল চলচ্চিত্র এটি। এই ছবিটির জন্য পরিচালক জাফর ফিরোজ মুম্বাই ফিল্ম একাডেমি থেকে আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরিতে সেরা পরিচালক হিসাবে পুরস্কার অর্জন করেছেন। ছবিটির প্রযোজনায় অনুপম সাংস্কৃতিক সংসদ। পরিবেশনায় বাংলাদেশ ডিজিটাল ফিল্ম সোসাইটি। লাবিব ছবির প্রধান চরিত্র, অভিনয় করেছে আবু সায়াদ তামিম। লাবিবের মা নেই। বাবা বড় ব্যবসায়ী। সবসময় সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ছেলেকে দেয়ার মতো তার তেমন সময় নেই। লাবিব মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে লাবিবের বাবার ভুল ভাঙে। দূরবীনে দু’টি গান রয়েছে অসাধারণ। ‘মা’ শিরোনামে গানটি লিখেছেন পরিচালক নিজেই। সুর করেছেন আমিরুল মোমেনীন মানিক। ‘শিশু’ শিরোনামে গানটি লিখেছেন আবু তাহের বেলাল। সুর করেছেন গোলাম মাওলা। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন কাজী আখতারুজ্জামান, মাহবুব মুকুল, ফারুক খান, আবদুল্লাহিল কাফি, ফেরদৌস কামাল প্রমুখ। ছবিটির ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি হীরা আজাদ, সম্পাদনায় সামসুল আলম, মিউজিক করেছেন পারভেজ জুয়েল, প্লেব্যাকে আমিরুল মোমেনীন মানিক, টুম্পা দাস ও আবদুল্লাহ বিন ফায়েজ।
এগুলো হলো বাংলাদেশের শিশুতোষ চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। শিশুচরিত্র প্রধান আরো কিছু চলচ্চিত্র আছে যেগুলোও শিশুমনে কমবেশি দোলা দিয়েছে। আগামীতে শিশুতোষ চলচ্চিত্র বিকশিত হোক এটা সবারই কামনা।

Share.

মন্তব্য করুন