কাশ্মীর আর লাদাখ ঘুরে আসার পর আপনার মনে সুপ্ত বাসনা জাগতেই পারে ভারতের একেবারে দক্ষিণ প্রান্ত দেখে আসার। তিনটি কারণে তীব্র বাসনা জাগতে পারে ভারতের এই দক্ষিণ বিন্দু ভ্রমণের।
এক. এটি ভারতের শেষ বিন্দু বা মূল ভূখণ্ডের শেষ প্রান্ত।
দুই. এখানে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর আর ভারত মহাসাগরের মহামিলনে নীল জলরাশির এক রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চ থাকে সব সময়।
তিন. এখানে আছে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম চিন্তাবিদ এবং গুরু স্বামী বিবেকানন্দের নামাঙ্কিত ‘বিবেকানন্দ রক’।
এ রকম একটি জায়গার জলরাশিতে ডুবসাঁতার কাটার আনন্দে রোমাঞ্চিত হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করাটা কি ঠিক হবে?
যাত্রা পথে মনে মনে কিছুটা ভয়, শঙ্কা জাগতে পারে। একটানা এত লম্বা জার্নি হয়তো আমরা করি না তাই! কিন্তু তারপরও আমরা যাই। কারণ বাঙালীর পায়ের নীচে শর্ষে আছে। তাই হয়তো ভুত তাড়িয়ে বেড়ায় দেশ থেকে দেশান্তর ভ্রমণের।
ঢাকা থেকে তিন দিনের জার্নিতে ট্রেন কিংবা বাস যখন কন্যাকুমারীর শেষ পথে চলতে শুরু করবে তখন থেকেই সমুদ্র সমুদ্র একটা পুলক অনুভব পাওয়া যাবে চারপাশের প্রকৃতি দেখে। পথের দু’ধারে সারি সারি নারকেল গাছ, সামুদ্রিক বাতাসে যারা সারাক্ষণ নেচে বেড়াচ্ছে আপন মনে, মাতাল বাতাসে। উইন্ড মিলের বিশাল বিশাল পাখাগুলো জানিয়ে দেয় কাছেই মহাসমুদ্রের মহামিলন। হু হু বাতাসের তোড়ে শেষ পথটুকু বাস-ট্রেন যেন উড়ে উড়ে চলে!
উত্তাল নীল জলরাশি, মহাসমুদ্রের মহামিলন, কয়েক মানুষের চেয়েও উঁচু উঁচু ঢেউয়ের আছড়ে পড়া, সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা বিবেকানন্দ রক, নতুন গড়ে ওঠা বিশাল মূর্তি, মহাসাগরের মাঝে ঢেউয়ের দোলায় ভেসে চলা রঙিন বোট, মাছ ধরার ট্রলার, শত মানুষের ভিড়, ঝকঝকে আকাশে সাদা মেঘেদের উড়ে যাওয়া, চারপাশে সবুজের নাচন, উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো মাতাল বাতাস- সবকিছুই উপভোগ করা যায় এখানে।
কন্যাকুমারী তামিলনাড়ু রাজ্যের নাগোড়কৈল জেলার একটি ছোট্ট শহর। মহাসমুদ্রের তীর ঘেঁষে এখানে রয়েছে অনেক হোটেল, মোটেল, পর্যটনকেন্দ্র, বাসস্ট্যান্ড, ভীষণ নান্দনিক একটি রেলওয়ে স্টেশন। আর রয়েছে নানা ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাসের সম্ভার পুরো কন্যাকুমারীর উপকূল ঘিরে। মাছ, ডাব, নানা রকম সামুদ্রিক খাবারসহ, দেশি–বিদেশি পর্যটকদের জন্য সব রকমের খাবার আর বিনোদনের সব আয়োজন আছে এখানে। ৫০০ থেকে ১৫ হাজার রুপিতে প্রতিদিন থাকতে পারবেন যেকেউ।

কন্যাকুমারী যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে প্লেনে ভারতের দক্ষিণ প্রান্তের সর্বশেষ বিমানবন্দর ত্রিভুন্নাপুরামে উড়ে যাওয়া। যেখান থেকে কন্যাকুমারী পথের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এরপরের উপায় হলো কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী ট্রেন। সাপ্তাহিক দু’টি ট্রেন ছাড়ে কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত। সময় লাগে ৪২ থেকে ৪৫ ঘণ্টা। এ ছাড়া চেন্নাই হয়েও কম সময়ে ট্রেন আর বাসে করে যাওয়া যায় কন্যাকুমারী। ভ্রমণপিপাসুদের একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত ভারতের দক্ষিণের শেষ প্রান্ত কন্যাকুমারী থেকে।

Share.

মন্তব্য করুন