ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, খুশির বার্তা। ঈদ মানেই খুশিতে মন আনচান করা। আমাদের দেশে ঈদ মানেই খুশির মহোৎসব। ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও আজ তা ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব। বাংলাদেশি সংস্কৃতির অচ্ছেদ্য অঙ্গ। ঈদ আজ বিশ^ সংস্কৃতিরও অনিবার্য অনুষঙ্গ। পৃথিবীতে অনেক ধর্ম রয়েছে। রয়েছে স্ব স্ব ধর্মের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান। কিন্তু কোনো ধর্মের ধর্মীয় আচারই বিশ^ সংস্কৃতিকে এভাবে নাড়া দিতে পারেনি। বিস্মিত হয়ে দেখি- ইসলাম পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্ম নয়। আবার তার অনুসারীর সংখ্যাও সর্বাধিক নয়। মহানবী সা.-এর নবুয়ত প্রাপ্তি থেকে হিসেব করলে জন্ম ও বয়সের দিক দিয়েও প্রাচীনতম ধর্ম ইসলাম নয়।

বয়সের কারণে হিন্দু ধর্মকে সনাতন বলা হয়। তাদেরও রয়েছে অসংখ্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান। বলা হয়- বারো মাসে তেরো পার্বণ। তাদের আছে অনেক বড় বড় ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু তা জাতি, দেশ বা ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সার্বজনীন সংস্কৃতি তথা বিশ^ সংস্কৃতির অংশ হতে পারেনি। একইভাবে খ্রিষ্টধর্ম পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্ম। জনসংখ্যায় এখন পর্যন্ত তারাই সর্বাধিক। তাদের রয়েছে ধর্মীয় মহোৎসব। নির্দ্বিধায় এটি তাদের ধর্মীয় সম্পদ। ধর্মীয় আবেগের জায়গায় তার অবস্থান অতি উচ্চে। কিন্তু তা বিশ^ সংস্কৃতির সম্পদ হতে পারেনি এখনও। এমনি আরো অনেক ধর্মীয় আচারের উল্লেখ করতে পারব। যা ধর্মোৎসব হিসেবে শ্রদ্ধার হলেও সামগ্রিক সংস্কৃতির অংশ হতে পারেনি এখনও। অথচ অনুসারী বিবেচনায় কম, অপেক্ষাকৃত নবীন, শক্তি ও সম্পদে দুর্বল হয়েও ইসলাম ধর্ম তার আচরি উৎসবগুলোকে জনমুখী করতে সক্ষম হয়েছে। এ সকল উৎসব মুসলমানদের নিজস্ব সম্পদ এবং বিশ^ সংস্কৃতির কল্যাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যন্ত প্রান্তে মুসলমানদের অধিবাস থাকায় ঈদ আনন্দের সম্প্রসারণ সহজতর হয়েছে। আনন্দকে সার্বজনীন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পৃথিবীর এমন দেশ বা অঞ্চল পাওয়া যাবে না যেখানে মুসলমানদের অস্তিত্ব নেই। অন্য অর্থে এ কারণেই ঈদ আনন্দ পালিত ও উদযাপিত হয় পৃথিবীর সকল দেশে, প্রতিটি প্রান্তে। তাই ঈদ আজ শুধু মুসলমানের সংস্কৃতি নয়। এটি বিশ^ সংস্কৃতিরও অংশ।

ঈদ সংস্কৃতি বিশ^ সংস্কৃতি হওয়ার বড় প্রেরণা হলো- এর কল্যাণকামিতা। মানবকল্যাণের ঐতিহাসিক ধর্ম ইসলামের সার্বক্ষণিক প্রেক্ষণ- তার প্রতিটি আচরণই হবে মানবকল্যাণে নিবেদিত। ঈদ অনুষ্ঠানেও এর ব্যত্যয় হয়নি। ঈদ পৃথিবীর একমাত্র অনুষ্ঠান যা উদযাপিত হয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে একীভূত করে। ঈদের আনন্দ মুসলিমের একার ভোগ্য বিষয় নয়। এ আনন্দ পৃথিবীর সকলের। এ আনন্দের মালিকানা কেবলই মুসলমানদের নয়। বরং এর মালিকানা বিশ্ব মানবেরও। সেজন্যই মুসলিমরা ঈদের দিন প্রত্যুষে বা তার আগেই অসামর্থ্যদের অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। আপন খাবারে অভাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। জবাইকৃত প্রাণীর মাংসের একটি বড় অংশ অসহায়দের জন্য বরাদ্দ করেই কেবল তারা ভক্ষণ করে থাকে। মানবকল্যাণের এ নির্মল বিবেচনা পৃথিবীতে মেলা ভার। সেজন্যই ঈদ বিশ^ সংস্কৃতির অনিবার্য অংশ।

এর বাইরেও রয়েছে ঈদ সংস্কৃতির নিষ্কলুষতা। ঈদ আনন্দের প্রতিটি পর্যায়কে যাবতীয় কলুষতা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। ঈদের প্রস্তুতি, সিয়াম সাধনা, নামাজ, আলিঙ্গন-করমর্দন, পারস্পরিক কুশল ও বার্তা বিনিময় থেকে শুরু করে সকল কার্যক্রমই যাবতীয় অনিষ্টতা বা কলুষতা থেকে মুক্ত। অন্যায়, অনাচার, সমাজ ক্ষতিকর, অকল্যাণের সাথে দূরতম সম্পর্ক আছে এমন যেকোনো কর্মসূচিকে ঈদ নিরুৎসাহিত ও নিষিদ্ধ করেছে। ফলে তা হয়েছে পূর্ণমাত্রায় মানবকল্যাণে উৎসর্গিত। প্রকৃতপক্ষে ঈদ হলো- সমাজবান্ধব বিশ্ব উৎসব। তাই ঈদ আজ বিশ^ সংস্কৃতির পূর্ণতার অংশ।

ঈদ উৎসব বিশ^ব্যাপী মুসলিমরা একযোগে পালন করে থাকে। উৎসবের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মুসলিমরা পালন করে ঠিকই। তবে এর আনন্দ-বিনোদন, সামাজিকতা উপভোগ করে সমাজের সবাই। মুসলিমদের কোনো উৎসব বা পার্বণই একা একা আনন্দের জন্য নয়। সমাজের সকলকে নিয়েই এর আনন্দ। ঈদের এ আনন্দ বিশ^কে জয় করতে সমর্থ হয়েছে। ঈদ সভ্যতা আজ সংস্কৃতির রূপ পরিগ্রহ করেছে।
বিশ্বব্যাপী একসাথে একই তারিখে ঈদ উদযাপিত হলেও স্থান ও কালভেদে এর কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। বুনিয়াদ ঠিক রেখে নানাবিধ সামাজিক ভিন্নতায় দেশে দেশে ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। ঈদ মুসলিম সমাজে নতুনের আবহ সৃষ্টি করে। খুশির জোয়ার বইয়ে দেয়।
‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’
এই গান তখন হয়ে যায় সবার মুখে মুখে। মোবাইলের রিং টোন, খুদেবার্তা, পত্রবার্তার অনিবার্য অংশ।
ঈদ উদযাপনের ধর্মীয় রীতি; রোজাব্রত পালন, সামর্থ্য সাপেক্ষে অর্থ ব্যয়, নামাজ পড়া, পারস্পরিক শুভকামনা ইত্যাদি সর্বত্র একই রকমের হলেও এর সামাজিক উদযাপন রীতিতে রয়েছে বৈচিত্র্য।

বাংলাদেশ

আমাদের দেশের ঈদচিত্র ও চরিত্র সবারই চেনা। নতুন পোশাক, উন্নত ও রকমারি রান্না, অভাবীদের মাঝে খাবার বিতরণ ইত্যাদি। ঈদের দিন সকালে মিষ্টিমুখ করার রীতি সুবিদিত। দরিদ্ররা যাতে সেমাই চিনি কিনতে পারে সে জন্য ধনীরা আগেভাগেই তাদের সাধ্যমতো অর্থ সাহায্য করে। এটিই ঈদের রীতি।
অবশ্য পোশাকের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে পাঞ্জাবির প্রচলন সর্বাধিক। যত পোশাক থাক ঈদের নামাজের জন্য সবার পাঞ্জাবি চাই-ই চাই। ঈদে নতুন পোশাক এটিও ইসলামি সংস্কৃতি। হজরত আলি রা. একবার সন্তানদের ঈদের পোশাক দিতে পারেননি বলে ঈদের দিন সকালে কাজ করে কিছু উপার্জন করে তা দিয়ে হাসান-হোসাইনের জন্য নতুন জামার ব্যবস্থা করেছিলেন বলে বর্ণনা রয়েছে।
ঈদের নামাজের পর কোলাকুলির দৃশ্য ঈদগাহে এক অনন্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। মানুষে মানুষে এত মিল পাওয়া যাবে আর কোথায়? সম্প্রীতির এ বন্ধন বাংলাদেশের সর্বত্র। নামাজ শেষে বালকদের রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাঘুরি, এটা-সেটা কিনে খাওয়া, সবাইকে সালাম দেওয়া, সেলামি নেওয়া, সারাদিন হৈ-হুল্লোড়ে কাটানো সমাজপ্রীতির আবেশকে করে শান্তিময়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে ঈদের আনন্দে শামিল হয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মের লোকজন। বাংলাদেশে ঈদের সংস্কৃতি ভালোবাসার, সম্প্রীতির, ঔদার্যের।

মিসর

সুয়েজ খালের দেশ মিসর আরব রাষ্ট্রসমূহের অন্তর্গত। অতি মাত্রায় সংস্কৃতি সচেতন এ দেশটি বলতে গেলে গোটা আরব সমাজের সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থে-বিত্তে-সামর্থ্যে যাই হোক সামাজিকতায় তারা অনন্য। এখনও ঈদের দিন মিসরের রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায়- বালক-বালিকার দল। যাদের মাথায় থাকে খাবারের ডালা। তারা বাড়ি বাড়ি যায়। খাবার বিলায়। ছেলে-মেয়ের দল একসাথে হাঁটে। মুরব্বিদের সালাম জানায়। শহরের রাস্তা কিংবা গ্রামের মেঠোপথের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। ঈদের দিন সকাল থেকেই চলে মিসরের ঘরে ঘরে ঈদ আয়োজন। হালুয়া তৈরির মহড়া। মিসরের জাতীয় খাবারের আয়োজনের পাশাপাশি খাদ্য পরিবেশনায় থাকে মাছের আধিক্য। ফাতা নামের বিশেষ খাবার ও কাহক নামের বিস্কিট মিসরের ঈদ আড্ডাকে করে জম্পেশ।
পিরামিডের দেশ মিসরের সাথে বাংলাদেশের ঈদ আয়োজনের মিল অনেক বেশি। মিসর-বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিকতার পথচলাও প্রায় কাছাকাছি।

সৌদি আরব

আতিথেয়তার কিংবদন্তি, কাবাঘরের ধারণকারী সৌদি আরব মুসলিম আবেগের কেন্দ্রবিন্দু। গোটা দেশের ঈদের চিত্র এক রকম নয়। বিশেষত হজ্জকালীন কুরবানির ঈদে মক্কা-মদিনায় তাদের হৈ-হুল্লোড় অত্যল্প। হজের চাপ থাকায় ঈদের নামাজ হয় মসজিদে। ফজরের জামাতের অল্প পরে। নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানি করতে হয়। যাতে এত বড় আয়োজনেও পরিচ্ছন্নতার ব্যাঘাত না ঘটে। তবে তাদের ঈদুল ফিতরের আনন্দ বড়ই উপভোগ্য। গ্রামাঞ্চলে ঈদের রান্না হয় বাড়ির সামনে। আর যাকে পায় তাকেই দু’লোকমা খাইয়ে দেয়। সবাই সবারটা খায়। এ খাওয়ার অনুভূতিটাও যেন স্বর্গীয়। বিকেলে আয়োজন হয় খেলাধুলা কিংবা আনন্দ ম্যাচের। শিশুদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় গ্রামীণ রাইডের। এদেশে শতভাগ মুসলিম হওয়ায় অন্য জাতি-ধর্মের অংশ গ্রহণের সুযোগ এখানে থাকে না।

ইরাক

প্রাচীন শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাদপীঠ ইরাক। সকল ধর্মীয় উৎসবেই ইরাক সদা সজাগ। তবে ঈদ আয়োজনে ইরাকের বাহারি সাজ সবার দৃষ্টি কাড়ে। ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের প্রতি ধনীদের আনুকূল্য থাকে অতি মাত্রায়। তারা খুব কাছাকাছি হয়। আনন্দগুলো ভাগাভাগি করে নেয়। মুসলিমদের নান্দনিক সামাজিকতা সত্যিই ঈর্ষণীয়। তবে ঈদ রেসিপিতে খেজুরের প্রভাব খুব বেশি লক্ষণীয়। খেজুরের হালুয়া, বিস্কিট, পাটালি, সন্দেশসহ রকমারি আয়োজন।

তুরস্ক

সংস্কৃতি সচেতন মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্ক খ্যাতিমান। ইউরোপ ও এশিয়ার দ্বৈত সংস্কৃতি লালন করে এ দেশটি। তাদের পরোপকারিতা, পরার্থপরতা, কোমলতা দেখলে মনে হবে- এ মুসলিম সংস্কৃতির পাদপীঠ। তাদের ঈদ আয়োজনেও রয়েছে ঔদার্যের প্রতিফলন। তারা ঈদ করে সবাইকে নিয়ে। কাউকে ছেড়ে নয়। ঈদ আনন্দের পূর্ণতায় তুরস্ক অনবদ্য। তুরস্কের কোনো পরিবারই একা একা ঈদের খাবার খায় না। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে একসাথে খায় খুব মজা করে। হোক তা অল্প। প্রকৃতই ঈদের এ অনবদ্য আয়োজন সামাজিকতার অনন্য নিদর্শন। টার্কিশ ডিলাইট, বাকলাভা, এপ্রিকট, উন্নত চালের পোলাও থাকে তাদের ঈদের খাদ্য তালিকার শীর্ষে।

চীন

প্রাচীন পরাশক্তিসমূহের অন্যতম চীন। শিক্ষা-দীক্ষায় চীনের খ্যাতি বিশ^বিদিত। চীন দেশে গিয়ে হলেও শিক্ষা গ্রহণের ইঙ্গিত রয়েছে মনীষীগণের বক্তব্যে। বর্তমান বিশ্ববাজারেও চীনের অপরিহার্যতা বারবার প্রমাণিত। অযুত-নিযুত মুসলমানের বসবাস এই দেশে। মুসলিমরা এখানে সংখ্যালঘু হওয়ায় তাদের ঈদ সংস্কৃতি একটু আলাদা। ঘটা করে রাষ্ট্রীয় পোষকতায় ঈদ আয়োজনের সম্ভাবনা এখানে থাকে না। নিজ উদ্যোগে ঈদের নামাজ শেষে তারা পূর্ব-পুরুষদের স্মৃতিচারণ করে। বিভিন্ন বিপ্লবে শহীদদের জন্য মাগফিরাত কামনা করে। ইসলামের ঐতিহ্যিক আলোচনায় কিছু সময় ব্যয় করে। এরপর শুরু হয় খাদ্য বিতরণ। ঈদে চায়নাদের খাদ্য বিতরণ এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করে। আর তাদের ঈদ পোশাক-প্রিন্টের কাপড়ের লম্বা ফতোয়া। কদাচিৎ এর উপরে পাতলা কটি।

ইন্ডিয়া

বিশাল আয়তনের সমূহ সংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় দেশ ইন্ডিয়া। হিন্দুপ্রধান দেশ হলেও মুসলিম সংখ্যা এখানে অনেক। রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও কাদা ছোড়াছুড়ি থাকলেও তা ঈদ আনন্দকে ম্লান করতে পারে না। মুসলিমদের ঔদার্য দেশের সকলকে ঈদ আনন্দে একীভূত করে। চাঁদরাতে পাড়ায়-মহল্লায় বালকদের হৈ-হুল্লোড় ও আতশবাজির প্রবণতা লক্ষ করা যায়। ঈদ সামাজিকতা ইন্ডিয়ার হিন্দু মুসলিমকে এক কাতারে নিয়ে আসে। প্রাচীন ভেদ তারা ভুলে যায়। তাদের মাঝে সম্প্রীতির নব চেতনা উদ্রেক করে। ঈদ সংস্কৃতি ইন্ডিয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নব দিগন্ত উন্মোচনে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
ঈদ মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব। মুসলিম দেশসমূহের জাতীয় উৎসব। বিশে^র সকল প্রান্তেই ধর্মীয় আচরণে ঈদের পার্থক্য না থাকলেও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে। যা ঈদের সার্বজনীনতার প্রতি ইঙ্গিতার্হ। ঈদের খুশি কেবলই আমার নয়। এ খুশিতে প্লাবিত হোক বিশে^র সবাই। এ খুশির প্লাবনে ভেসে যাক তাবৎ অন্যায়, অনাচার আর কদর্য। ঈদ সংস্কৃতি হোক বিশ^ মমতাবন্ধনের প্রথম সূত্রপাত। বিশে^র সকল প্রান্তের সব মানুষকে ঈদের কল্যাণময় শুভেচ্ছা।

আমেরিকা

আমেরিকা বর্তমান বিশে^র সুপার পাওয়ার। শক্তিধর ও বিত্তবান দেশসমূহের ঈদ সংস্কৃতি প্রায় একই ধরনের। যেমন- ইংল্যান্ড, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে মুসলিমরা ঈদ পালন করে নিজস্ব আয়োজনে। ঘরোয়া পরিবেশে। তারা নামাজ পড়ে মসজিদে বা কমপ্লেক্সে। কদাচ খোলা মাঠে। এসব দেশে মুসলিমরা নিজেদের মাঝে উপহার বিনিময়, অর্থ বিতরণ, কোলাকুলির দৃশ্য ও পারস্পরিক হৃদ্যতা আমেরিকানদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। ইসলামের এ ঔদার্য তাদেরকে মুগ্ধ করে। ঈদ সংস্কৃতির মানবিকতা তাদেরকে ইসলামের প্রতি দুর্বলতর করে। ঈদ সংস্কৃতি এভাবেই বিশ^ সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়।

মালয়েশিয়া

ভূ-রাজনৈতিক কারণেই বিশ^ মানচিত্রে মালয়েশিয়ার অবস্থান অত্যন্ত সুসংহত। অর্থনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষার উচ্চতা প্রত্যাশী এ দেশে ঈদ উদযাপন হয় মহাসমারোহে। দেশটি দীর্ঘ ইতিহাসে কলোনিভুক্ত না থাকায় তাদের ঈদ সংস্কৃতি স্বকীয়তা ও ঔদার্যে ভরা। এদিন মুসলিমরা অর্থ ব্যয় ও বিতরণ করে দু’হাত খুলে। তাদের খুশিতে শামিল করে সবাইকে। রাস্তা-ঘাটে যানবাহন কম থাকলেও বালক-বালিকাদের কলকাকলিতে ভরপুর থাকে। সবাইকে তারা সালাম জানায়। তাদের চেহারায় থাকে খুশির আল্পনা। ঈদ মালয়ীদের সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধে ফেলে এক সুতোয়। সব বাড়িতে দেশীয় খাবারের পাশাপাশি থাকে চকোলেটের ব্যবস্থা।

Share.

মন্তব্য করুন