পেছন ফিরে তাকালেই নিজকে স্পষ্ট দেখতে পাই। আয়নাতে চেহারাটি নেই আগের মতো। তারুণ্য বলতেই পাঠকদের আগ্রহ, রোমান্স। লেখকরা রোমান্সের উপলব্ধি সাজান রচিত গল্প উপন্যাসের আড়ালে। মনস্ক পাঠকদের জন্য আমার উপহার, তিনটি তাজা উপন্যাস: ‘হরিণাক্ষি’, ‘পুড়িব একাকী’, ‘কালজানির ঢেউ’। ওখানেই পাওয়া যাবে ভালোবাসার, তারুণ্যের উপাখ্যান। এ বছরের টাটকা উপহার: ‘ভালোবাসি, আজও কালও’।
ভালোবাসার টানে তবু কিছু বলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পথটিতে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে, পথের পাশে যেখানে কিংশুক, কৃষ্ণচূড়া সজ্জিত বনবীথি, চিরচেনা আর্টস বিল্ডিং, আমাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। আমতলা, জামতলা, বকুলতলা, মধুর রেস্তোরাঁ, লাইব্রেরি, লম্বা লম্বা টানা বারান্দা। কলকাকলি মুখরিত সুন্দর সিঁড়ি, অধ্যাপকদের বিশ্রামঘর, পুকুর ঘাটে বিশ্রাম, আর ফুলে ফুলে সুশোভিত পথ।

বারান্দায় রিকশা থেকে নামলাম আমি, সজ্জিত পোশাক, লাইব্রেরিতে ঢোকার জন্য প্রস্তুত।
আবু জোহা নূর মোহাম্মদ কোট টাই পরা লাইব্রেরিয়ান, সহাস্য মুখে বললেন, এত সকালে লাইব্রেরিতে?
বললাম: বিশ্ববিদ্যালয়ের আকর্ষণ তো লাইব্রেরি।
সাহিত্যরসিক উনি। বললেন, জানি জানি, সব জানি। কি বলতে চাইলেন আল্লাহ্ই মালুম।
প্রথমেই পড়তে শুরু করি খবরের কাগজগুলো। ততক্ষণে স্লিপ দিয়েছি বইগুলোর জন্য।
আসার সাথে সাথে বইয়ের পাতায় ডুব।
‘আহা, কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’।

মধুর চা’র দোকানে। চা পানে তেমন উৎসাহ নেই। সিনিয়রদের সাথে নানা আলাপ, সাহিত্য থেকে রাজনীতি, দেশ থেকে বিদেশ। ইব্রাহিম তাহা, সাত্তার ভাই, এ আর ইউসুফ, আমিরুজ্জামান, আখতার আহাদ। এরা সকাল থেকেই মধুর রেস্তোরাঁ আলো করে বসে থাকেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কত না কথা বন্দী স্মৃতির কোটরে।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পূব দিকের দোতলার বারো নম্বর কামরার আড্ডা। আবু সাঈদ জহুরুল হক সহৃদয় কবি, কাব্য পাঠক ও সংস্কৃতিবান অগ্রজের চারকোনা তক্তপোষের চারপাশে আমরা চারজন: হাসনাত আবদুল হাই (ওর বড় নামটা ছোট করায় আমার অবদান আছে), মুজিবুর রহমান, যার চুল কম থাকায় টাকু নামেই সবাই চেনে, মনসুর আহমেদ (গল্প লেখক) আর রাশিদুল হাসান বীরু। আমাদের প্রধান আকর্ষণ: সাহিত্য। তার সাথে কখনো চিনাবাদাম, চা, নানা ধরনের শৈল্পিক ও শোভন চর্চা, আর কখনো দল বেঁধে খাবার ঘরে গিয়ে খাওয়া। শিল্প ও সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি কখনো আবু সাঈদ জহুরুল হক, কখনো আবু হেনা মুস্তাফা কামাল, কখনো আনোয়ার উদ্দিন খান ও আমি। মাসভর চলত সাহিত্য সঙ্গীত সভা। জহুরুল হক, আবু হেনা, মুজিব, মনসুর, আনোয়ারউদ্দিন, বিদায় না নিয়েই চলে গেছে এই পৃথিবী ছেড়ে।

আমাদের দল ছাত্রছাত্রীদের টানত বেশি, কারণ সঙ্গীতশিল্পীরা যেমন, ফেরদৌসী, আঞ্জুমান আরা, সৈয়দ আবদুল হাদী, খন্দকার নুরুল আলম, নজমুল হুদা, আনোয়ারউদ্দিন খান, আমাদের দলে। সংস্কৃতি সংসদ ভালো ভালো ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন। জহির রায়হান, এনায়েতুল্লাহ খান, তারা ছিলেন সভাপতি। তাদের নাট্যানুষ্ঠানগুলো ছিল প্রাণবন্ত। আমাদের ছেলেমেয়েরাও নির্দ্বিধায় সেই নাটকে অংশ নিতো। কার্জন হলের বড় হলটি নাট্য নিবেদনে ছিল মুখর। সংস্কৃতি সংসদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ড্রামা সার্কেল এই সময়ই আত্মপ্রকাশ করে। আনিস চৌধুরীর ‘মানচিত্র’ ও মুনির চৌধুরীর ‘কেউ কিসসু বলতে পারে না’ হৃদয়গ্রাহী। সতীর্থ জুলেখা হক মানচিত্রে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে। মওদুদ আহমদ, জহরত আরা, সৈয়দা রওশন, বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে। প্রথম অভিনয় কার্জন হলে তুলসি লাহিড়ির ‘ছেঁড়াতার’। অভিনয়ে মূল চরিত্রে তুলসি লাহিড়ি, লায়লা সামাদ, পিতা আব্বাসউদ্দীন, কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন, চাচা আবদুল করিম ও আমি। আমার চরিত্রটি নির্বাক ঢুলির অভিনয়, সাইফুদ্দিনের সহযোগী। কার্জন হলে আরো কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন ভাই, চাচা ও আমি।

কার্জন হলটি বর্তমানে নাট্যচর্চার জন্য পরিত্যক্ত। পাশ দিয়ে গেলে নাটকের সংলাপগুলো অতীতে ফিরিয়ে নেয়। বন্ধু ইকবাল আনসারি খান, মকসুদুস সালেহীন, বজলুল করিম, শাহ আলী হোসেন বেঁচে নেই। বেঁচে আছে দীন মোহাম্মদ খান, মুনিরা খান, মুস্তাফা মনোয়ার। ঢাকার নাট্য অঙ্গনের পথিকৃৎ ড্রামা সার্কেলও আর নেই। এদের সবচেয়ে সুন্দর পরিবেশনা ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’। সৈয়দা রওশনের অভিনয় মনে রাখার মতো, তেমনি হাসান ইমামও। আমরা প্রথম দিককার নাট্য অভিনেতা। সলিমুল্লাহ হলে ‘দ্বীপান্তর’ নাটকে অভিনয় করেছি। প্রথম পুরস্কার মওদুদ আহমদই পেয়েছিল, আমি পেলাম স্বয়ং নাট্যকার তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য ও স্বীকৃতি। কাগমারী কনফারেন্সে যাওয়ার পথে তাকে তারাচরণের গাওয়া গানটি গেয়ে শুনাই: ‘না মিটিল সাধ সখি, না মিটিল আশা’। গানটি সলিমুল্লাহ হলে যখন গাই, তারাচরণের কবিয়াল চরিত্রটি যেন মূর্ত হয়ে ওঠে। শেষ দৃশ্যে যখন আমাকে বধ করা হয় তখন ‘মা’ বলে যে আর্তনাদ করে উঠি তাতে আমার মা লুৎফুন্নেসা শ্রোতাদের মধ্যেই বসেছিলেন। তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এখানেই আমার সার্থকতা। সৈয়দা রওশন আমার নায়িকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক ক্লাস উপরের ছাত্রী। তার ছোট বোন সৈয়দা জাহানারা লাইজু ভালো নৃত্য শিল্পী।
মনে পড়ছে নুরুল আলমের কথা। সে হয়ত বন বিভাগের বড় কর্মকর্তা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর আর দেখা হয়নি। তার একটি ট্রাউজার ছিল, কালো রঙের উর্স্টেড। ঠাণ্ডা পড়লেই অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে সে প্যান্টটি বের করত। সারা বছর তার ঐ কালো প্যান্টটি আমাদের দৃষ্টির সামনেই থাকত। দুষ্টুমি করে বলতাম: ‘আলমের প্যান্টটি নামিয়েছে রে’! চার বছর ধরে এই প্যান্টটি প্রত্যক্ষ করেছি।

ছাত্রনেতা রফিকুল্লাহ চৌধুরী ইতিহাসের ছাত্র। তার নোটগুলো আমার কাছে। সিএসপি হওয়ার পর কক্সবাজারে প্রথম পোস্টিং। সেখানকার সবেধন নীলমণি সমুদ্রের ধারে রেস্ট হাউজটি এখন আর নেই। যেখানে বিরাট পার্টি আমার ও আসমার অনারে। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রধান কর্মকর্তা হয়েছিলেন। তার মেয়ে এখন স্পিকার। তার বন্ধু মোহাম্মদ মহসীন ফরেন সার্ভিসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ পান।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের টেনিস কোর্টে প্রধানমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হেলিকপ্টারে অবতরণ একটি স্মরণীয় ঘটনা। হলের ইলেকশনে যে ক’জন বাগ্মীর কথা মনে পড়ে তারা হলেন: আবুল মাল আবদুল মুহীত, এ টি এম শামসুল হক, মিজানুর রহমান শেলী, নুরুদ্দীন আল মাসুদ। খাওয়া দাওয়া খুবই সাধারণ। মাসে একদিন ফিস্ট হতো। সেইদিন ভালো খাওয়া জুটত। একটি বাটিতে মাছের টুকরো অথবা গোশতের হাড্ডি সাথে বালতি ভরা তরল ডাল। এই ছিল সাধারণ খাওয়া। ছাত্ররা পেট না ভরায় সামনের একটি ডালভাতের দোকানে (সেলিমের দোকান) গিয়ে আবার খেতে বসত। অভুক্ত বন্ধুদের এ অবস্থা দেখে খুব মায়া হতো। আমরাও বাড়িতে খুব একটা বড়লোকির মধ্যে ছিলাম তা নয়, খুবই সাধারণ। তবু এদের তুলনায় রাজকীয়। বন্ধুরা আমাদের বাড়িতে ‘আমাদের সাহিত্যের আসরে’ গান গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ভালো চা নাশতা পেত।

বড় বড় শিমুলের গাছগুলো, কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো কোথায় উধাও হলো। আমাদের চেনা বিশ্ববিদ্যালয় পেছনে ফেলে অন্য একটি বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বছরে। সেই পুকুর নেই, নেই আমতলা, নেই মধুর রেস্তোরাঁ। না, দিনগুলো আর সোনার খাঁচায় বেঁধে রাখা গেল না। এই পথেই যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেতারা মিছিল করেছেন, এই ক্যাম্পাসেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিগুলো যে বন্দী।
বিকেল বেলা উদাস মনে আমতলায় বসে কবিতা পড়তাম, কার উদ্দেশ্যে তা শুধু আমার জানা। পড়াশোনায় মন বসত না, কার জন্য তা শুধু আমিই জানি, মওদুদ এসে বলত, লাইব্রেরিতে ঢুকবি না?
আমি বলতাম, আজ আমগাছের তলায়, বকুল তলায় বসে থাকব। তুই যা।
মওদুদ পড়াশোনায় অমনোযোগী। কিন্তু মনোযোগ দিলেই সবাইকে ডিঙ্গিয়ে, এতই তার মনোযোগ। আমি উল্টো। সারাক্ষণ শুধু বই নিয়েই আছি, পড়ার বই নয়, অন্য বই।

আনোয়ারউদ্দিন খান, মিষ্টি গলার শিল্পী আর অর্থনীতির ছাত্র। বন্ধুত্ব হয়ে গেল সাথে সাথে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্ধকার প্রকোষ্ঠে হারমোনিয়াম পাতা আর তবলাও একজোড়া। যখন আমি গাইতাম সে তবলায়, আর আনোয়ার গাইলে আমি তবলায়। কি যে সুন্দর সুন্দর গান তা বলার নয়:
‘পথে যেতে দেখি আমি যারে
কপালে টিপের যাদু কপোলে ফাগুন
কুন্তলে অমানিশা, হৃদয়ে ফাগুন
আমি মনের মানুষ বলি তারে’
আমাদের সময়ের বেস্ট স্পোর্টসম্যান: কাজী আবদুল আলিম। বেস্ট অল রাউন্ডার: আসাফুদ্দৌলাহ্। তার কৃতিত্ব, সাঁতারে, সঙ্গীতে, বক্তৃতায়, লেখায় ও মেধায়। যাকে বলে চৌকস। সিভিল সার্ভিসে সফলতমদের মধ্যে শীর্ষে: তওফিক ইমাম, মোকাম্মেল হক, আনিসুজ্জামান খান, রাশিদুল হাসান, হাসনাত আবদুল হাই, শামসুল হক খান, হেদায়েতুল হক, এ টি এম শামসুল হক। অনেকের নাম ভুলে গেছি। এরা ছিলেন বলেই দেশটি সফলতার পথে এগিয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনার সেহাবউদ্দিন সবার মধ্যে অগ্রণী। কারণ তিনি প্রথম রাষ্ট্রদূত যিনি বাংলাদেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার লেখা আত্মজীবনী একটি অপূর্ব গ্রন্থ। সেহাবউদ্দিন আমার সহপাঠী। ঠিক তেমনি এ টি এম শামসুল হকের আত্মজীবনীতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের চিত্রটি সফলভাবে উপস্থাপিত। তওফিক ইমাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলগুলো অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে লিপিবদ্ধ করেছেন। কবি শামসুর রাহমান, হায়দার আকবর খান রনো, হাসনাত আবদুল হাই, মোরশেদ চৌধুরী ও ড. আনিসুজ্জামান তাদের আত্মজীবনীতে পঞ্চাশ ও ষাট দশকের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন উপভোগ্য করে তুলে ধরেছেন। আমিও চেষ্টা করেছি লিখতে ‘জীবন নদীর উজানে’ গ্রন্থে, যতটুকু সম্ভব।

মধুদা সবাইকে ভালোবাসতেন। আমাদের ছাত্রদের ছিল নানা দল। আমি ছিলাম শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি, আর এনায়েতুল্লাহ খান, কখনো জহির রায়হান সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি। অর্থাৎ ডান ও বামের দ্বন্দ্ব। মধুদার কাছে সব সমান। আমরা আমতলায় দারুণ বক্তৃতা করতাম। মারামারিও হতো, তবে আস্তিন গোটান পর্যন্তই, দু’চারটে চেয়ার মধুদার দোকান থেকেই নিয়ে এসে ঠাস ঠাস শব্দ করে ভাঙা হতো। ব্যস, মারামারি শেষ। মন কষাকষির অবসান। দু’পক্ষই আবার সেই মধুর দোকানে এসে চা-শিঙ্গাড়া ধ্বংস করা।

অধ্যাপকদের মধ্যে কারও ‘ইনপুট’ মনে রাখার মতো নয়, যেন যন্ত্রচালিত মেশিন। প্রথম দশ মিনিট রোলকল (সময়ক্ষেপ) দ্বিতীয় দশ মিনিট তোমরা কেমন আছ, শেষের তিরিশ মিনিট ইতিহাস চর্চা, বেশির ভাগ নোট থেকে, যার কিছুই মনে রাখার মতো নয়। এর মধ্যে যত্ন নিয়ে ক্লাসে আসতেন মোহর আলী, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। প্রথম জন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত, দ্বিতীয় জন আলবদরের হাতে নিহত। ইতিহাসের প্রধান ড. হালিম বড় পণ্ডিত ছিলেন, তার বক্তৃতায় ছিল না তার প্রতিফলন। তেমনি প্রফেসর আবু সাঈদ, এম এ খায়ের, সন্তোষকুমার ভট্টাচার্য্য। এরা যেমন ছিলেন অমায়িক, তেমনি অতি সাধারণ। ড. আহমদ হাসান দানী প্রতিটি লেকচার তৈরি করে আসতেন। একটাই অসুবিধা, তা হলো ছাত্রছাত্রীরা তার প্রতি কতখানি মনোযোগী তা যাচাই করতেন না। একদিন মুনির চৌধুরীর ক্লাসে গিয়ে বসলাম। কি অপূর্ব বাচন ভঙ্গি, ইংরেজি বাংলায় দক্ষতা, যেন একটি অপরূপ স্বর্গীয় পরিবেশে প্রবেশ করেছি। এমনটিই ছিল ইংরেজি অধ্যাপক আবু হেনার ক্লাস।

পরিচয় শতজনের সাথে, বলা উচিত, সহস্রের সাথে। অনেকের কথা বলা হয়নি। যেমন : জাকিউদ্দিন আহমেদ, ব্যবসায়ী, কাজী আনোয়ারুল মেহেদী (জলপাইগুড়ির জমিদার নন্দন পুত্র), গাজী সাহাবউদ্দিন আহমেদ (সচিত্র সন্ধানী সম্পাদক), গ্রুপ ক্যাপ্টেন আশরাফ, অ্যাডভোকেট সৈয়দ আবদুর রহিম, কবি রেজাউল করিম ভূঁইয়া, মাহবুবুর রহমান খান (বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, প্রয়াত), ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান, ড. আবদুল মমিন চৌধুরী, ড. মহসীন, ড. মোকাদ্দেস, ড. এনামুল হক, মীর বেলায়েত হোসেন, নুরুদ্দিন আল মাসুদ, মোহাম্মদ রেয়াসাতউল্লাহ, আসফ খান, হাজার খানেক রোটারিয়ান বন্ধু, বাংলাদেশের প্রতি গ্রামে অন্তত একশত গ্রামীণ কবি ও শিল্পী।
স্মৃতির বারান্দায় বসে। সেখানে ফুটে আছে সুগন্ধবাহী শুভ্র জু্ইঁ, আর তার সাথে অর্ধ শতাব্দীর ‘হিরামন মঞ্জিল’। এই বারান্দায় আগত শত বিদগ্ধ জনের স্পর্শ। তাদের হাসি, চকিত কথা, গান, আবৃত্তি যেন এখনো চোখ বন্ধ করলেই শুনতে পাই। বাড়িটি, বারান্দাটি পরিত্যক্ত, শত বছরের এই সুরভিত বাসস্থান হয়ত অচিরেই ধসে পড়বে, জায়গা করে দেবে বিশাল অট্টালিকার জন্য ফ্ল্যাট, যেখানে ‘কেঁদেও পাবে না তাকে বর্ষার অজস্র জলধারে’। হ্যাঁ, ওইখানে ওই একচিলতে বারান্দায় অনেক ইতিহাস বন্দী।
‘জীবন নদীর উজানে’ গ্রন্থে আমার কালের কথা বর্ণিত। পড়লে ভালো লাগবে।

Share.

মন্তব্য করুন