পৃথিবীতে অনেক ধরনের গুহা রয়েছে। তার মাঝে বরফ গুহা একটি। আলাস্কা রাজধানী জুনাউর ১২ মাইল দূরে অবস্থিত মেন্ডেনহল বরফ গুহা। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মেন্ডেনহল বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাশ্চর্যের বরফ গুহার মধ্যে অন্যতম। ১৫০০ বর্গমাইল জুনাউ বরফ ক্ষেত্রের ৩৮টি হিমবাহের মধ্যে ১৩ মাইল লম্বা মেন্ডেনহল হিমবাহ একটি। এটি টঙ্গাস জাতীয় বন এর অংশ।
আগে এই হিমবাহের দু’টি নাম ছিলো। সিতানতাগু এর অর্থ শহরের পিছনের হিমবাহ, আর আক ওটাকাসটি এর অর্থ ছোট হ্রদের পিছনের হিমবাহ। ১৩ মাইল দীর্ঘ মেন্ডেনহল গুহাটি উপত্যকায় চলে অবশেষে মেন্ডেনহল হ্রদে এসে শেষ হয়। এই হিমবাহটি ৩,০০০ বছরের পুরনো। তবে মেন্ডেনহল হিমবাহ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
এখানে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রকৃতির দ্বারা তৈরি স্ফটিক স্বচ্ছ বরফের অসাধারণ শৈল্পিক আকার দেখা যায়। এই গুহা দেখতে দেখতে একটি কথা মনে হতে পারে- রূপকথার তুষার প্রাসাদ। বরফের গুহাগুলোর একটি নীল জাদুর জগৎ রয়েছে।

এই হিমবাহে আছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় নীল রঙের বরফের গুহা। এই বরফের ভিতরে বাতাস নেই বললেই চলে। আর এই বরফ নীল ছাড়া অন্য সব রঙ শুষে নেয়। এর ফলে এই গুহাটি অসাধারণ উজ্জ্বল নীল রঙের হয়ে থাকে। এই গুহা সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র স্থান, যেখানে প্রাকৃতিক নীলের অনেকগুলো ছায়া দেখা যায়। হিমবাহের পশ্চিম দিকে এই গুহার প্রবেশপথ।
সাধারণত হিমবাহের মধ্য দিয়ে চলমান পানির প্রবাহ হিমবাহের পৃষ্ঠে প্রথমে একটি গর্ত তৈরি করে এবং পানির প্রবাহ যতই সামনে এগিয়ে যেতে থাকে এই গর্ত আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং এক সময় দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়ে একটি গুহার আকার ধারণ করে।
এটিই বেশির ভাগ বরফের গুহা গঠনের পিছনে গল্প। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত বরফ গলিয়ে নতুন নতুন গুহার সৃষ্টি করে, আবার সময়ের সাথে সাথে এই সব গুহা ধ্বসেও পড়ে।

বরফগলা পানির প্রবাহ যদি হিমবাহের ভেতরে সর্বদা চলতে থাকে, তবে হিমবাহ আস্তে আস্তে নিচের দিকে চলতে থাকে। সেই সাথে বরফ গুহাগুলো বছরে বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিস্তৃত বা পরিবর্তিত হতে পারে বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। হয়তো শীতে যে গুহা খুব ভালো ছিলো বসন্তে সেই গুহা অদৃশ্য হয়ে গেলো।
১৯৫৮ সাল থেকে মেন্ডেনহল হিমবাহ প্রায় দুই মাইল হ্রাস পেয়েছে, যেখানে ১৫০০ সাল থেকে মাত্র ০.৫ মাইল হ্রাস পেয়েছিল। হিমবাহের মুখ এবং তার আশপাশের এলাকাগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।
গ্রিন হাউজ ইফেক্টের কারণে, বরফের গুহা দ্রবীভূত হয়ে যায়। সুতরাং যারা নিরাপদ পথ জানে না তাদের জন্য এখানে ভ্রমণ বিপজ্জনক হতে পারে। এত কিছুর পরেও প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শক এই গুহা দেখতে আসেন। এই গুহাটির মনোলোভা সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ রয়েছে বিভিন্নভাবে। হেলিকপ্টারে চড়ে উপর থেকে দেখা যায় পুরো এলাকাটি। আবার নৌকায় চড়ে লেকে ঘুরে বেড়ানো যায়। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ক্যামেরায় বন্দি করা যায়। চ্যালেঞ্জিং এই হাইকিং পথটি যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি ছবি তোলার জন্য পারফেক্ট।

তবে বরফের গুহাগুলোর পথ খুব কঠিন এবং যদি কেউ অভিজ্ঞ হাইকার না হয় বা সাথে কোনও অভিজ্ঞ গাইড না থাকে তবে এই গুহায় প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়। মেন্ডেনহল বরফ গুহা পরিদর্শন করার সময় নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তবে এটা মনে রাখা জরুরি যে, একটি হিমবাহের পরিবেশ সর্বদা পরিবর্তিত হতে থাকে।
যদি ঠাণ্ডা-পানি সহ্য করার ক্ষমতা থাকে সেই সাথে প্যাডলিং দক্ষতা থাকে, তবে গুহাগুলো পরিদর্শনে সুবিধা হবে একই সাথে রোমাঞ্চকর। তবে অবশ্যই আবহাওয়া পরিবর্তনের উপর লক্ষ রাখতে হবে। তবে এখানে যাওয়ার জন্য শীতকাল সব থেকে উত্তম যখন বরফ পুরু থাকে।

Share.

মন্তব্য করুন