কিভাবে মজা করে কথা বলতে হয়? কিভাবে কথা বললে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় সহজে? এ কথা বোধ হয় জানতে চায় সকলেই। সবার ইচ্ছে, তার কথাটি যেনো সবাই আগ্রহ করে শোনে। যেনো মনোযোগ দেয় তার কথার প্রতি। তার কথাকেই গুরুত্ব দিক সবাই। এমন ভাবনা অনেকের মনেই জ্বলজ্বল করছে।
এ কথা সত্যি- কথা দিয়ে বশ করা যায় অনেক কিছু। কথার কারণে সহজ হয়ে যায় অনেক কাজ। এবং কথার কারণেই ব্যক্তির গুরুত্ব বাড়ে এবং কমে যায়।
কথার ভেতর প্রকাশ পায় ব্যক্তিটি কোন মাপের! প্রকাশ পায় ব্যক্তির বিশ্বাস। প্রকাশ পায় চরিত্র। এবং প্রকাশ পায় মর্যাদাও।
একজন লোকের সম্মান কত উঁচুতে এটি বোঝা যায় তার কথায়। কতটা সাহসী তাও বোঝা যায়। বোঝা যায় লোকটির বুকে স্বপ্ন আছে কি নেই। এবং বোঝা যায় লোকটি মনের দিক দিয়ে কতটা পরিষ্কার !
এখন প্রশ্ন হলো বোঝা যায় কিভাবে?

জবাব খুব কঠিন নয়! অবশ্য খুব সহজ এমনও নয়! বুঝলে সহজ। না বুঝলে কঠিন। কিন্তু আমরা কঠিনের পথে যাবো না। যেতে চাই না। চাই না, কারণ আমরা সহজের সাথে পথ চলতে চাই। সহজ করে নিতে চাই সব।
এখন বোঝা যায় কিভাবে সে কথাই বলি। প্রথমত, বোঝা যায় ব্যক্তির কথার বিষয় দিয়ে। কোন বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী লোকটি। যে যা বিশ্বাস করে এবং ভাবে। তা-ই বলতে চায় মানুষ। নিজের চিন্তাটিই প্রকাশ করতে চায়। নিজের ভাবনাটির কথা জানাতে চায় অন্যকে। সুতরাং একজন মানুষের ভাবনা চিন্তার বিষয় জানা গেলে লোকটির বিশ্বাস অনুমান করা যায় খুব সহজে।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, সে ভাবনা প্রকাশের জন্য কী ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন তিনি। কোন মাপের শব্দ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন।
তৃতীয় দিক হলো, বাক্যের ব্যবহার। কেমন বাক্য বলেন। কেমন বাক্য ব্যবহার করে কথা বলার চেষ্টা করেন। বাক্যের ওজন কতটা। কতটা সৌন্দর্য থাকে বাক্যের ভেতর।

চতুর্থ হলো, কণ্ঠস্বরের ওঠানামা। স্বরের উত্থান পতন এবং মাঝামাঝি টোন শুনলেও বোঝা যায় মানুষের ব্যক্তিত্ব। প্রভাব এবং আত্মবিশ্বাসের সীমা। কথার স্বরে দৃঢ়তা আছে কি নেই! তাও বোঝা যায় সহজে।
পঞ্চম দিক হলো, বলার ভঙ্গি। কোন ভঙ্গিতে কথা বলেন লোকটি। যখন বলেন তার হাত চোখ ও মুখের ব্যবহার কেমন করেন তিনি। কেমন করে উচ্চারণ করেন শব্দগুলো। কেমন করে শব্দের সাথে জোড়া দেন শব্দাবলি।
ষষ্ঠ হলো, বর্ণনার গতি কেমন। দ্রুত নাকি ধীরে! নাকি মধ্যম! ঠিক বর্ণনার এ গতিই বলে দেবে লোকটি অস্থির নাকি দৃঢ়চেতা। নাকি মধ্যম প্রকৃতির।
এখন আমরা বলবো আসলে সব দিক ঠিক রেখে কিভাবে কথা বলবো আমরা। কথা বলার মজাটিই বা কোথায়?
সাধারণত বয়সে কম যারা- ধরুন শিশু-কিশোর। এরা সব কথা খুব দ্রুত বলতে চায়। প্রকাশ করতে চায় তাড়াতাড়ি। এদের চলার গতির সাথে বলার একটি মিল থাকে। যেমন পথ চলে তাড়াহুড়োর মাধ্যমে। তেমনি কথায়ও থাকে তাড়াহুড়োর গতি। কিন্তু বয়স বাড়তে বাড়তে কথা বলার গতি বদল হতে থাকে। তবে সবার ক্ষেত্রে এ সত্য সত্য হয় না। অনেক যুবক এবং মধ্যবয়সী এমনকি বৃদ্ধও দ্রুত কথা বলেন। এমন দ্রুত যে সব শব্দ বোঝাও যায় না। কেনো হয় এমন? হয় কারণ- এ মানুষগুলো বয়সের সাথে সাথে আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন না। আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে অনেকেই মনের কথাটি পরিষ্কার করে বলতে ব্যর্থ হন।
তবে জরুরি কথা হলো- ছোটবেলা থেকেই গুছিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। শিখতে হবে আকর্ষণীয় কথা বলার পদ্ধতি। না শিখলে এবং চেষ্টা না থাকলে সুন্দর করে কথা বলা যায় না। ছোটবেলায় কেউ চেষ্টা যদি না করে থাকেন তবে যে বয়সে আছেন সেখান থেকেই চেষ্টা শুরু করবেন। কেননা শেখার কোনো বয়স নেই। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা আমাদের মহানবীর সুন্নত।

এখন কথা হলো কিভাবে মজা করে গুছিয়ে আকর্ষণীয় কথা বলা সম্ভব?
আকর্ষণীয় কথার প্রথম নিয়ম হলো- প্রতিটি শব্দ ধীরে ধীরে বলতে হবে। তাড়হুড়ো করে বলা যাবে না। অথবা এক শব্দ পরিষ্কার না বলে আরেক শব্দ নয়। একটি বাক্য শেষ করে তারপর আরেক বাক্য বলতে হবে।
দ্বিতীয় নিয়ম- প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট বলতে হবে। প্রতিটি বাক্যও বলতে হবে স্পষ্ট করে। ফলে শ্রোতা সহজে বুঝতে সক্ষম হবে বক্তব্যটি।
আকর্ষণীয় করে কথা বলার তৃতীয় দিকটি হলো- শব্দ উচ্চারণ অবশ্যই শুদ্ধ হওয়া চাই। শুদ্ধতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অশুদ্ধ উচ্চারণে যত গুরুত্বপূর্ণ কথা হোক, শ্রোতার কাছে তার গুরুত্ব তেমন হবে না মোটেই। কথা শুদ্ধতার জন্য বর্ণমালার উচ্চারণ শুদ্ধ হওয়া জরুরি।
চতুর্থ দিক হলো- প্রতিটি বাক্য পরিপূর্ণ হতে হবে। আবার একটি বাক্য বলে প্রয়োজন অনুযায়ী থামতে হবে খানিক। সেই থামাটিও অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় যেনো না হয়!
পঞ্চম হলো- বাক্য বড় করা যাবে না। ছোট ছোট বাক্যে বলতে হবে। যতটা প্রয়োজন ততটাই বলতে হবে। বেশি নয়। কমও নয়। যেটুকু বললে শ্রোতা পরিপূর্ণ বুঝবে সেটুকুই কেবল বলতে হবে।

ষষ্ঠ হলো- কথার গুরুত্ব অনুযায়ী কণ্ঠের ওঠানামা জরুরি। কোথায় স্বর উঁচু হবে। কোথায় নিচু। কোথায় মধ্যম বোঝা দরকার। একই সাথে স্বরের দৃঢ়তা কোথায় কতটা প্রয়োজন জানা চাই। মানতে তো হবেই।
সপ্তম দিক হলো- কথার সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী মুচকি হাসি দেয়া দরকার। আবার গাম্ভীর্যতাও জরুরি। অবশ্য কোথায় হাসি কোথায় গাম্ভীর্য এবং কোথায় করুণ স্বর বুঝতে হবে এটি।
অষ্টম হলো- অশোভন ও অপ্রয়োজনীয় শব্দ বাক্য ত্যাগ করতে হবে। অশ্লীল ও নির্লজ্জ বাক্য অবশ্যই পরিহার করা দরকার। কারো প্রতি ঘৃণা প্রকাশ না করা। বিদ্বেষমূলক শব্দ বাদ দেয়া এবং শত্রুতামূলক শব্দ ও বাক্য উচ্চারণ না করা জরুরি।
নবম হলো- পরিবেশ অনুযায়ী কথা বলা চাই। যেমন পরিবেশ তেমন করে কথা হবে। এক্ষেত্রে জায়গা বা অবস্থান দেখাও জরুরি।

দশম হলো- কথার ধরন অনুযায়ী মুখ চোখ ও চেহারার প্রকাশ হতে হবে। হাত নাড়াবে কি নাড়াবে না। আঙুল তুলবে কি তুলবে না। তুললে কতটা তুলবে বুঝতে হবে এটিও।
এগারোতম- যার সাথে কথা হবে সে ব্যক্তির মর্যাদাও মাথায় রাখতে হবে। ব্যক্তির মর্যাদা যেমন তেমন শব্দ ও বাক্য চয়ন করতে হবে। আবার যিনি বলবেন তার মর্যাদাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়! বক্তা তার সম্মান ও মর্যাদা অনুযায়ী শব্দ বলবেন।
বারোতম এবং শেষটি হলো- কথা দিয়ে ভাবটাকে মালা গেঁথে দিতে হবে। অসংলগ্ন অথবা এলোমেলো কথা নয়। কথা হবে সুনির্দিষ্ট। সুন্দর। সাজানো। গোছানো।

যারা মানুষকে ভালো কাজের কথা বলবে তাদের কথায় অবশ্যই চমৎকারিত্ব থাকবে। বিশ্বাস থাকবে। দৃঢ়তা থাকবে। থাকবে অসাধারণ স্বপ্নের চিত্র। যার বিশ্বাস যতটা গভীর হবে তার উচ্চারণ ততটাই প্রগাঢ় হবে। বিশ্বাসের প্রতি ভালোবাসা ততটাই হবে আন্তরিক। ততটাই প্রকাশ পাবে মুগ্ধতা।
এছাড়া বাচনভঙ্গি এবং সাবলীলতা প্রশংসনীয় সব সময়। সব চেয়ে ভালো হয় সব বিষয়ে নিজের মতো করে কথা বলা। নিজের মতো শব্দ প্রয়োগ করা। নিজের মতো উপস্থাপনা করা। সাহসের সাথে বিনয়ী হওয়া। এবং যা বলবে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলা।
সুন্দর করে কথা বলা একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এ গুণটি অর্জন করতে হয়। আয়ত্ত করতে হয়। আয়ত্ত করার জন্য প্রয়োজন অনুশীলন। এর আগে প্রথমেই দরকার হলো- একটি দৃঢ সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্তটি হলো- আমি শুদ্ধ ও সুন্দর ভাষায় কথা বলাবো। এর অন্যথা হবে না। করবো না এর ব্যতিক্রম। সিদ্ধান্তের সাথে যোগ করতে হবে অনুশীলন। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ। মনে রাখতে হবে- সুন্দর এবং মজা করে কথা বলার বিষয়টি অভ্যাসে পরিণত করে নিতে হবে। তবেই আকর্ষণীয় কথা বলা সম্ভব।

Share.

মন্তব্য করুন