আপনার কিশোরকাল কেমন ছিল?
আমার কিশোরকাল কেটেছে গ্রামে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। শৈশব চট্টগ্রাম শহরে। কিশোরকালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ দেখেছি, দুর্ভিক্ষের দুর্ভোগ অল্পসল্প হলেও অনুভব করেছি। তবে আমার বয়সী বন্ধুদের নিয়ে ঘোরাফেরায় দিন কেটে যেত।

কৈশোরে কি কি স্বপ্ন দেখতেন?
কৈশোরে আমি শুধু বইয়ের স্বপ্ন দেখতাম। আমার নানা আমাকে বই জোগাড় করে দিতেন। প্রতিবেশি এক চাচার বইয়ের সংগ্রহ আমাকে আরো বইয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিতো। পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নের সময় থেকে পাঠ্যবই ক্রয়ের পাশাপাশি আমি কিছু গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বইও সংগ্রহ করে নিতাম।

কোনো দুরন্তপনার গল্প মনে পড়ে কি?
নিজে কোনো দুরন্তপনায় লিপ্ত ছিলাম না। তবে দুরন্ত বন্ধুদের দুষ্টুমি উপভোগ করতাম। কখনো কখনো তা নিয়ে গল্প বানাতাম।

কৈশোরে দেখা স্বপ্ন জীবনে কতখানি পূরণ করতে পেরেছেন?
কৈশোরের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি বেশ। কেননা দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর বই সংগ্রহ করেছি। এটি স্বপ্ন থেকেই সম্ভব হয়েছে।

শারীরিক আঘাত এবং নিপীড়ন কিশোর বিকাশের ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতিকর?
নিপীড়ন একজন কিশোরের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর। তবে শারীরিক আঘাত নয়। নিপীড়ন নয়। কিশোরকে নানাভাবে বুঝিয়ে সুপথে পরিচালিত করতে হবে।

কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিতা-মাতার কর্তব্য কি হতে পারে?
পিতা-মাতার কর্তব্য কিশোরের চরিত্র বিকাশে ভূমিকা রাখা। তারা অবশ্যই শাসন করবেন। এর মাঝে শাস্তির ভয়ও দেখাবেন। কিন্তু অতিরিক্ত মারধর করবেন না। আদর ও শাসন দুটোই চালাতে হবে।

আপনার সময়ের কৈশোর আর এখনকার সময়ের কিশোরদের কৈশোর জীবনের পার্থক্য কেমন দেখছেন?
আমাদের সময়ের চেয়ে বর্তমানে কিশোররা একটু বেশি ছাড় পেয়ে যায় বলে মনে হয়। সেজন্য অনেককে পরবর্তীকালে নষ্ট হয়ে যেতে দেখা যায়।

কিশোরদের স্মার্টফোন ব্যবহার কতটা উপযোগী এবং সুশিক্ষার জন্য এটা কতটা নেতিবাচক?
যুগপোযোগী যন্ত্রপাতির ব্যবহার কিশোরকাল থেকে শুরু হতে পারে। তবে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। পারিবারিক পরিস্থিতি থেকে তা প্রযোজ্য হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কেমন হওয়া উচিত?
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হওয়া উচিৎ সহজ সরল। যুগপোযোগী। যাতে ভাষা, শিল্প, বিজ্ঞান, সংগীত যারযার সুবিধামত প্রদান করতে হবে। কোন কিছু জোর করে চাপানো উচিত নয়। জোরের শিক্ষা কখনো ভালো হয় না।

ভালো মানুষ হতে হলে কিশোরদের কি করতে হবে?
যথাযথভাবে লেখাপড়া, স্বাস্থ্য ও চরিত্র গঠনের মাধ্যমে একজন কিশোর বড় হয়ে উঠবে। সে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলে। তবে এটা একদিনে হয় না। অনেক সময় দরকার হয়। সময় দিতে হয়। সুশিক্ষাও লাগে। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, যা পরে অভিভাবকদের চোখে পড়ে যায়।

বড়দের সাথে কিশোরদের আচরণ কেমন হওয়া দরকার?
বড়রা যেহেতু বড়। বয়সে শিক্ষা দীক্ষায় এবং অভিজ্ঞতায়। সেহেতু বড়দের প্রতি ছোটদের শ্রদ্ধাশীল আচরণই কাম্য।

পিতা-মাতার কাছ থেকে কোন কিছু বায়না করে না পেলে, কিশোরদের একগুঁয়েমি করা কি ঠিক?
মোটেই না। একগুঁয়েমি অবশ্যই ভালো নয়। পিতামাতার সাথে হলে আরও খারাপ। প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাহিদাও ভালো নয়। বর্তমানে এত কিছুর আমদানী হয়েছে যে পিতামাতার পক্ষে তাদের সন্তানদের সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। দু’পক্ষেরই বোঝাপড়ার ব্যাপার রয়েছে। পিতামাতা যতটা সম্ভব দেবে। সন্তানকে তার ওপর খুশি থাকতে হবে।

কিশোররা কেমন স্বপ্ন দেখবে?
কিশোররা কোনো একটা আদর্শকে অবলম্বন করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। আমি নিজে পুস্তক প্রকাশক-বিক্রেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। পরে লেখক, অধ্যাপক হয়েছি।

নাগরিক সচেতন হয়ে গড়ে উঠতে আমাদের কিশোরদের মননে কি শিক্ষা প্রয়োজন?
আদর যত্ন করে পিতামাতা বা অভিভাবকরা কিশোরদের মনন গঠনের ব্যবস্থা করবেন তবেই সচেতন নাগরিক হওয়া সম্ভব। আদর্শ শিক্ষাও কাজ করে এক্ষেত্রে।

আবার কৈশোরে ফিরে যেতে পারলে কি হতে চাইতেন?
আমি যা চাই তাই হতে পারতাম। পিতামাতা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের শিক্ষা, শাসন ও আদর আমাকে যা করেছে, তার বেশি কিছু করা সম্ভব হতো না।

Share.

মন্তব্য করুন