বসন্ত এলে কেনো ফোটে এত ফুল! কেনো ফোটে ফুলের কুঁড়িরা! চারিদিকে ফুল আর ফুল! গাছে গাছে ফুল! ডালে ডালে ফুল! বনে বনে ফুল। নানা রঙ। নানা রূপের ফুল। ফুলের গন্ধে ছুটে আসে ভোমর। আসে ওলি। নানারকম পতঙ্গ ঘুরে বেড়ায় ফুলের জলসায়। আহা ভাবতেই আনন্দ জাগে। সুখ জাগে মনে। দেখলেই ভালো হয়ে যায় মনের গহীন। আসে প্রজাপতি। মধু নিতে আসে মৌমাছির দল।
বনের পাশ ঘেঁষে চললেই ভেসে আসে ফুলের সুবাস। সেই সুবাস নিতে নিতে পথ চলার মজাই আলাদা।

নতুন পাতার কথা মনে পড়ে! মনে পড়ে ডাল ভরে ওঠা পাতার সুন্দর! কি আনন্দের! কি উচ্ছলতার! কি প্রাণবন্ত! কচি কচি শরীর। কাঁচা কাঁচা সবুজ। নিষ্পাপ চেহারা। বাতাসে দোদুল দোলা। যখন দুলে ওঠে চোখ আটকে যায়। এতো সুন্দর দুলুনি পৃথিবীর কিসে থাকে! কোথায় থাকে!
ঠিক এ সুন্দরের কাছে আসে বসন্ত! আসে ফুলের আনন্দ নিয়ে। আসে নতুন পাতার ফাঁকে। কি বিস্ময় ফুলের সমাহার। ডালে ডালে ফুল। গাছে গাছে ফুল। বনে বনে ফুলের মেলা। বনানী হয়ে ওঠে ফুলরাজ্য।
বসন্ত মানে ফুলঋতু। বসন্ত মানে ফুলের আয়োজন।

কখন আসে বসন্ত? ওহো সে কথাই বলা হয়নি। ঠিক শীতের শেষে উড়ে আসে বসন্তের পাখি। শীত? ওফ্! বড় বেশি ঠাণ্ডা! বড় কষ্টের দিন! যদিও শীতও দরকারী। আবার শীত ঋতু কারো কারো প্রিয় ঋতুও বটে। মোটা ওমওয়ালা কাপড় জড়িয়ে শীত উদযাপন করেন কেউ কেউ। কেউ কেউ শীতে মজার পিঠা খেতে পছন্দ করেন। এটি হতেই পারে। হয়ও। কিন্তু শীত আমাদের প্রকৃতির পরিবর্তন করে দেয়। আমাদের চারপাশে সে পরিবর্তন দেখি আমরা। দেখি আমাদের গাছগাছালির সমস্ত পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়। গাছের ডালগুলো উদম হয়ে যায়। একদম খালি হয়ে ঝুলতে থাকে। গাছের চেহারাই বদলে যায়। বদলে যায় বনের ছবিও। সেই সাথে চারিদিক ধূসর হয়ে ওঠে। মনে হয় প্রকৃতির সব রঙ মুছে কেবল ধূসর রঙ থাকে। আকাশ ঘোলা হয়ে থাকে। কেমন যেনো বিষণœ বিষণœ রূপ! কেমন যেনো উদাস উদাস ভঙ্গি। এমন ধূসর দৃশ্যের ভেতর আনন্দ নিয়ে আসে ফুলঋতু বসন্ত!
বসন্ত জাগিয়ে তোলে নতুন পাতা। গাছে গাছে নতুন পাতা। ডালে ডালে নতুন পাতা। নতুন পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটে ফুলের মুখ। আহা ফুল! পৃথিবীর পবিত্রতম এক দৃশ্য! ফুলের মতো নিষ্পাপ মুখ আর কি আছে। এতো সুন্দর কি আছে। এতো মনোরম কি আছে। আর সৌরভ? তার তো তুলনাই নেই। ফুলের সৌরভের সাথে আর কিছু যায় না। কিছুই না। ফুল ভালোবাসে সকলেই। সবাই ফুল নিজের করে নিতে চায়। সবাই চায় ফুলের ঘ্রাণ। সবাই নিতে চায় ফুল। সাজিয়ে রাখার কাজও করেন প্রায় সকলেই।

হ্যাঁ ঠিক, ফাল্গুন চৈত্র এ দু’মাস হলো আমাদের বসন্ত। এ দু’মাস বসন্ত ঋতুর মাস। এ দু’মাস ফুলের ঋতুর মাস। শতরকম ফুলের সমাহারে জেগে ওঠে বনানী। বনের বুকের কাছে ফুল দুল তুল তুল। নড়ে নড়ে ওঠে বাতাসে। দুলে দুলে ওঠে হাওয়ার দোলায়। ঠিক এমনই আনন্দ আয়োজনে গান করে কোকিল। আহা কি মিষ্টি কণ্ঠ কোকিলের! আহা কি মধুর সুর এ কালো পাখিটার! যার কানে বাজে কোকিলের সুর সেই আনমনা হয়। সেই মন পাতে কোকিল কণ্ঠের দিকে। শোনে খুব করে। শুনতে শুনতে ভাবে- ইশ, এমন মধুর সুর যদি আমার হতো! যদি আমিও কোকিলকণ্ঠী হতে পারতাম। যদি পারতাম কোকিলের মতো উড়ে বেড়াতে। ঘুরে ঘুরে গান করতে এই নিঝুম ফুল বনে। কত কল্পনা করে মানুষ। কত কি ভাবে। কত কি হতে চায়। কিন্তু সব কি হওয়া যায়? না হওয়া যায় না। তবে কিছু বৈশিষ্ট্য নিতে পারে মানুষ। কোকিলের গান করার স্বভাব নেয়া যায়। ফুলের সৌরভের মতো সুবাসিত হওয়া যায়। কিংবা ফুলের মতো নিজেকে বিলিয়েও দেয়া যায়। এভাবে মানুষ হতে পারে প্রকৃতির কাছাকাছি। প্রকৃতির নিকটজন। হতে পারে প্রকৃতিরই অংশ।

বসন্ত আমাদের জানিয়ে দিয়ে যায় নতুন কিছু। বলে যায়, দেখো আমি প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলি। তোমরাও সাজিয়ে নাও নিজেদের। তোমরাও নতুন ফুলের মতো নতুন করে স্বপ্ন দেখো। নতুন করে ভাবনা করো। নতুন আনন্দে পথ চলো। নতুন করে জীবন জাগিয়ে তোলার মন্ত্র নাও। তবে জীবন হবে অন্যরকম! জীবন হবে সুখময়। জীবন হবে উৎসব মুখর।
বসন্ত যেমন ফুলের ঋতু। তেমনই আনন্দের ঋতু। আনন্দ শুধু ফুল পাতার জন্য নয়। আরও আরও কারণ আছে। কারণগুলো জটিল নয় কিছু। শীতের ধূসরতা কেটে যায়। আসে স্বচ্ছ পরিবেশ। ফোটে আকাশের নীল। ঠাণ্ডা উধাও হয়ে যায়। সহসা প্রকৃতি এসে যায়- না ঠাণ্ডা না গরমে। যাকে আমরা নাতিশীতোষ্ণ বলি। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া দুটি ঋতুতে থাকে বেশ। একটি শীত শেষ হলে- বসন্তে। আরেকটি শীতের আগে- হেমন্তে। বসন্ত ও হেমন্ত দু’টি ঋতুর যেমন শেষে মিল। তেমনি দু’ঋতুতে বাংলাদেশের আবহাওয়া থাকে অসাধারণ। শীত থাকে না। গরমও নয়। বসন্তে আরেকটি চমৎকার বিষয় ঘটে। সেটি হলো দক্ষিণের বাতাস। শীতের বাতাস থাকে উত্তরের। ঠিক বসন্ত এলেই শুরু হয় দক্ষিণের বাতাস। এ বাতাস গায়ে লাগলেই মন ভালো হয়ে ওঠে। ফুরফুরে হয়ে ওঠে মনের ভেতর। সুখ সুখ অনুভূতি জাগে সকলের। শীতের ভারী পোশাক ছেড়ে হাল্কা পোশাক ওঠে গায়ে। দিনগুলো বড় হয়ে ওঠে। রাত ছোট হতে থাকে। শুরু হয় নতুন বৃষ্টি। বৃষ্টিপানির তোড়ে স্রােত বয়ে চলে নদীর বুকে। নদীতে জমে থাকা পলি ধুয়ে যায় সহসা। নদীগুলো জেগে ওঠে ধীরে ধীরে। এভাবে নদী ফিরে পায় তার গতি।
এই তো আমাদের বসন্ত। এই তো আমাদের বসন্ত ঋতু। এই তো বসন্ত ঋতুর আনন্দ। এ আনন্দ অনুভব করুক মানুষ। অনুভব করুক সকলেই। অনুভব করলেই সহসা বলে উঠবে- এ সবই মহান রবের দান।

Share.

মন্তব্য করুন