‘সাইকেলটা আমার চাই। ঠিক এই সাইকেলটা এখন আমাকে দিতে হবে।’ সিফাতের এমন জেদ তার মাকেও রাগিয়ে দিচ্ছে। কী আর করা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বড় ছেলে রিফাতকে রাজি করিয়ে সাইকেলটা কিছু সময়ের জন্য সিফাতকে দিলেন। রিফাতের বয়স সাত আর সিফাতের পাঁচ বছর। একজন অন্যজনকে অনেক ভালোবাসে। তবে রিফাতের সব কিছুতে সিফাত জেদ করে থাকে। রিফাতের প্লেটে খাবার খাওয়া, রিফাতের পড়ার টেবিল, চেয়ার-খাতা-কলম, এমনকি রিফাত যে জামা পরবে সেটাও সিফাত চেয়ে বসে এবং জেদ করে। তখন তাদের মা আমেনা বেগমকে বিশাল একটা ঝামেলা পোহাতে হয়। এই রকম জেদের কারণে রিফাতের কোমল মনটা ভাই সিফাতের প্রতি দিন দিন কঠোর হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বাবা ও মা উভয়ে খুবই চিন্তিত। এরই মধ্যে সিফাত ইদানীং অভিযোগ করতে শুরু করেছে যে, তার ভাইয়া তাকে আগের মতো ভালোবাসে না।
মা বললেন, ‘সত্যিই কি তোমার ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে না?’
‘হ্যাঁ, আগের মতো ভাইয়া আর আমাকে ভালোবাসে না।’
‘কেন? আগের মতো ভালোবাসে না? জানতে চাইলেন মা।’

‘জানি না!’ ছোট্ট করে জবাব দিলো সিফাত। মা বললেন, ‘শোনো, মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে তোমাকেও মানুষকে ভালোবাসতে হবে। জেদ করা যাবে না। যে জেদ করে তাকে তো মানুষ ভালোবাসে না। আর যাকে মানুষ ভালোবাসে না তাকে কিন্তু আল্লাহ তায়ালাও ভালোবাসেন না। আর যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন না সে তো আল্লার রহমত, বরকত, জান্নাত পাবে না। সে শুধু কষ্ট পাবে।’ এ কথা শুনে সিফাত খুব চিন্তায় পড়ে গেল। মা-ছেলের এই অবস্থা দেখে বললেন, ‘শোনো, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, “সাহল ইবনে সাদ সায়েদী (রা.) বর্ণনা করেছেন। এক লোক নবী (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলুন, যা করলে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসবেন এবং দুনিয়ার মানুষও আমাকে ভালোবাসবেন। তখন রাসূল (সা.) বললেন, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও তবে আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন। মানুষের কাছে যা রয়েছে তার প্রতি অনাসক্ত হয়ে যাও তবে মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে।” (ইবনে মাজাহ-৪০৯২ )

এই হাদিসের অর্থ হলো, যদি দুনিয়ার সম্পদ এবং নিত্য-নতুন জিনিসের প্রতি যদি তোমার মনে লোভ জাগে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে ভালোবাসবেন না। অন্য মানুষের হাতের সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি, এইসব দেখে যদি লোভ করো তবে মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে না। তোমার উচিত ভাইয়ার জিনিস পাওয়ার জন্য জেদ না করা। তবেই তোমার ভাইয়ার হৃদয়ে তোমার প্রতি ভালোবাসা জাগবে। আল্লাহও তোমাকে ভালোবাসবেন। আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসবো। এবার সিফাত উঠে গিয়ে রিফাতের হাত ধরে বললো, ‘স্যরি ভাইয়া, আমি আর কোনো দিন তোমার জিনিস নিয়ে জেদ করবো না।’ রিফাত ভাইকে বুকে জড়িয়ে অনেক আদর করলো। মায়ের দু’চোখে তখন এক ঝলক আনন্দ-অশ্রু।

Share.

মন্তব্য করুন