মাইশা প্রকৃতিপ্রেমী মেয়ে। গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি, আকাশ-বাতাস এসব তাঁর ভীষণ প্রিয় ও আপনজন। সবুজ গাছ, পাখিদের কিচিরমিচির, হিমেল হাওয়া, আকাশের সাদা-কালো মেঘ ইত্যাদি তাকে খুবই আনন্দ দেয়।
সে তার বেশির ভাগ সময় প্রকৃতির সাথে বারান্দাতেই কাটিয়ে দেয়। পাখির কিচিরমিচির সুরে প্রতিদিন তাঁর ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে। আবার স্কুল থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে সেই বারান্দাতেই পুরো বিকেল পার করে দেয়।
মাইশা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে। বাবা সরকারি চাকুরিজীবি আর মা গৃহিনী। বাবা- মায়ের সব কথা শোনে সে। তাই বাবা-মাও তাঁর যাবতীয় আবদার মেনে নেন। তবে সে অপ্রয়োজনীয় আবদার করে না কখনও।

একদিন সকালে বারান্দায় দু’টো শালিক পাখি আসে। মাইশা ওদের সামনে যাওয়ার পরও ওরা উড়ে যায় না। সে দৌড়ে গিয়ে রান্না ঘর থেকে দু’টো আলাদা পাত্রে করে চাল ও পানি এনে শালিক পাখি দু’টোকে খেতে দেয়। ওরা চাল ও পানি খাওয়ার সময় মাইশা ওদের শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়। খাওয়া শেষ হলে শালিক দু’টো উড়ে চলে যায়। তারপর মাইশার একটু মন খারাপ হয়। মন খারাপ নিয়েই স্কুলে চলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে এসে বিকেলে বারান্দায় যাওয়ার কিছুক্ষন পরই ঐ শালিক দু’টো আবার আসে। সে আবারও চাল ও পানি খেতে দেয় ওদেরকে। মনের সুখে শরীরে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়। সন্ধ্যা গড়িয়ে এলে পাখি দু’টো নীড়ে ফিরে যায়।
প্রতিদিন এভাবেই মাইশা ও শালিক দু’টোর ভালোবাসার বন্ধুত্ব চলতে থাকে। তাঁর মনটাও খুব ভালো থাকে।

অনেকদিন পর এক ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর মাইশা বারান্দায় গিয়ে শালিক দু’টোর দেখা পায় না। হয়তো বিকেলে আসবে এমনটি ভেবে সে স্কুলে চলে যায়। কিন্তু স্কুল থেকে ফিরে এসেও ওদের দেখা পায় না। তারপর মাইশার খুব অভিমান হয়। অভিমান করে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় পরের দিন সকালে ওরা এলে ওদের সাথে দেখা করবে না। অভিমান করে রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালেও শালিক দু’টো আসে না। তখন মাইশার মন একেবারেই ভেঙে যায়। এরপর থেকে সে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করে না। পড়া লেখায় মন দেয় না। অন্যমনস্ক হয়ে চুপচাপ বসে থাকে। প্রতিদিন সকাল-বিকাল চাল ও পানির পাত্র নিয়ে শালিক দু’টোর অপেক্ষায় ঠিকই বসে থাকে। কিন্তু শালিক দু’টো আর আসে না। এভাবেই দীর্ঘ দিন কেটে যায়। মাইশা ওদেরকে কিছুতেই ভুলতে পারে না। যখনই মনে পরে তখন তাঁর মনটা একদমই খারাপ হয়ে যায়।

প্রায় তিন মাস পর এক ছুটির দিনে মাইশা খুব সকালে বারান্দায় গিয়ে দেখে সেই শালিক দু’টো মুখে খড়কুটো এনে এনে বারান্দার এক কোণে ঘর বানাচ্ছে। সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলো না। আনন্দে তাঁর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। মাইশা ওদের পেয়ে খুবই খুশি হয়। যেন তার ঈদের দিন আজ।

Share.

মন্তব্য করুন