কয়েকটা হাঁচি ও কাশি দিতেই আম্মু ভয়ার্ত চোখে তাকালো মুনিয়ার দিকে। চারদিকে কোভিড-১৯ এর ভয়। আম্মুর চাউনি দেখে ঘাবড়ে গেলো মুনিয়া। তিনি দৌড়ে গিয়ে থার্মোমিটার এনে তাপমাত্রা মেপে দেখেন ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আতঙ্কিত আম্মু মুনিয়াকে ঘরে নিয়ে গেলেন। মুনিয়ার আব্বুকে ফোন করে অফিস থেকে নিয়ে এলেন। আব্বু ফোনে পরিচিত এক ডাক্তারের সাথে কথা বলছেন আর বারবার মুনিয়ার দিকে তাকাচ্ছেন। ফোনটা রেখে আব্বু বললেন, ‘মামণি! তুমি রেডি হয়ে নাও আমরা হসপিটাল যাবো।’ মুনিয়া একটু বিরক্তির সাথেই বললো, ‘আমার কিছুই হয়নি অযথা তোমরা টেনশন করছো।’ বাবা বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছেন।

তা দেখে মুনিয়া কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে এলো। সবার মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভ্স, সবাই পিপিই পরে তারপর হসপিটালে এসেছে। ডাক্তার একটা প্রেসক্রিপশন দিলেন এবং কোভিড-১৯ এর জন্য স্যাম্পল দিয়ে যেতে বললেন। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থেকে নিয়মিত মেডিসিন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দিলেন। এক ঘরে একা সারাক্ষণ বসে থাকতে হয়। দরজা বন্ধ করে রাখে খাবারের সময় কেবল দরজা খোলে খাবার দেয় তারপর আবার দরজা বন্ধ। দরজার বাইরে থেকে অল্প স্বল্প কথা হয় সবার সাথে। আম্মু কেবল কান্না করেন। তাই তিনি দরজার সামনে কম আসেন। মুনিয়ার জন্য সবাই দোয়া করছে।

মুনিয়ার খবর আব্বুর অফিসে জানালে, অফিস থেকে জানানো হলো যে মুনিয়ার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তিনি যেন অফিসে না যান। জীবনটা যেন বন্দি হয়ে গেলো চার দেয়ালের মাঝে। মুনিয়ার খুব খারাপ লাগছে। তিন দিন পর রিপোর্ট এলো কোভিড-১৯ নেগেটিভ। আব্বু রিপোর্ট নিয়ে বাসায় এসে মুনিয়ার ঘরে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। রিপোর্টটি যেন সাক্ষাৎ প্রশান্তির বাহন। আম্মু তো খুশির চোটে কেঁদেই ফেললেন। মুনিয়া একটু অভিমানী গলায় বললো, ‘আমি বলছিলাম না আমার কিছু হয়নি, তোমরা তো আমাকে তিন দিন বন্দি করে রাখলে। আমার কষ্ট হয়নি?’ আম্মু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘কষ্ট কি তোমার একার হয়েছে, আমাদের হয়নি?’ বাবা এবার বললেন, ‘শোনো! সন্দেহমুক্ত হওয়াটা ছিলো জরুরি সন্দেহযুক্ত বিষয় সবসময় বর্জনীয়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর একটি হাদিস বলি- “হাসান বিন আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) থেকে একটি বিষয় মুখস্থ করে নিয়েছি যে, সন্দেহযুক্ত বিষয় বাদ দিয়ে সন্দেহমুক্ত বিষয় গ্রহণ কর। সত্যতাই প্রশান্তির বাহন আর সন্দেহ মিথ্যাচারের উৎস।” (তিরমিজি-২৪৪২)।

আব্বু আরো বললেন, ‘আজ আমরা সন্দেহমুক্ত হয়েছি। এই রিপোর্ট আমাদের সত্যতা এনে দিয়েছে, সেই সাথে এনে দিয়েছে এই পরিবারের প্রশান্তি। আমরা আজ বুঝতে পারলাম সন্দেহমুক্ত থাকার গুরুত্ব। কোনো বিষয়ে সন্দেহ থাকলে সেই বিষয়ে সন্দেহমুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকলে সেই সুযোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সন্দেহমুক্ত হতে হবে। উল্লিখিত হাদিসের আমল হলো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদেরকে সন্দেহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে এতে করে প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব হয়।’

Share.

মন্তব্য করুন