ক্রিমিনাল!
খুব সুন্দর জ্যোৎস্না হয়েছে আজ। ঘুম আসছে না। জানালার পাশে বসে লকডাউনের আগে লেখা ডায়েরিগুলোর পাতা উলটাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ে গেল আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটা অসাধারণ বিষয়ের উপর।
সেদিন কলেজ থেকে আসার সময় একটা বই কিনেছি। বইটার নাম: ‘অতিন্দ্রীয় ক্ষমতা’, লেখক: অনিক সেন। আমি আসলে এই ধরনের সাইকিক বইয়ের খুব ভক্ত। এই বিষয়ে এই পর্যন্ত অনেক বই পড়েছি। কিন্তু এই বইটার লেখাগুলো একটু অন্য ধরনের। লেখকের নামটাও অপরিচিত। বইয়ের শেষ দিকে আবার লিখেও দিয়েছে, মেয়েদের ইএসপি ক্ষমতা সাধারণত বেশি হয়। কেউ ইএসপি টেস্ট করাতে চাইলে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন…। ইএসপি হল এক্সট্রা সেনসরি পারসেপশন। এই ক্ষমতাটা যাদের থাকে তারা অনেক কিছুই আগে থেকে বলতে পারে, বুঝতে পারে। পড়া শেষ করে নোভাকে লেখাটা পড়তে দিলাম।
সে বলল, ‘যাবি নাকি টেস্ট করাতে? বেশি তো দূরে না। ঠিকানাটা তো বান্দরবানেই দেখছি।’
আমি বললাম, ‘চল, আমরা পাঁচজন মিলে যাই। আমি, তুই, সুস্মিতা, ঙৈমেথুই আর মাউসুমা।
‘কিন্তু…।’
‘কিন্তু কী?’
‘এটা যদি কোন ফাঁদ হয়? আমাদের দেশ থেকে তো এখনও নারী, শিশু পাচার বন্ধ হয়নি। এখানে তো দেখছি মেয়েদের কথা স্পেশালভাবেই লিখেছে। আমার তো মনে হচ্ছে, যারা ওখানে যায়, ওদেরকে বেঁধে রেখে বাইরের দেশে পাচার করে দেয়।’
‘হতে পারে! তবে, এরকম হলে মন্দ হয় না! আমরা গিয়ে এদের এমন সাইজ করব যে…।’
এমন সময় সুস্মিতা রুমে ঢুকলো। সব শুনে সে বিরক্তি সহকারে বলল, ‘উফ..! সারাদিন শুধু গোয়েন্দাগিরির বই পড়তে পড়তে তোদের এই অবস্থা! সবকিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখিস। তোরা কী ভয় পাচ্ছিস নাকি? আমরা তো সংখ্যায় কম নই। যদি এরকম কিছু হয়, তাহলে তো দারুণ অ্যাডভেঞ্চার হবে। আমরাই ওদের সাইজ করব! তা ছাড়া সাথে তো মোবাইল থাকছেই। প্রয়োজন হলে পুলিশকে জানাবো। এবার বল, কখন যাবি? দাঁড়া, মাউসুমা আর ঙৈমেথুইকে বলে দেখি।’

আমরা পাঁচজন রুমমেট এবং বেস্ট ফ্রেন্ড। বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের ১১শ শ্রেণীতে পড়ি। বালাঘাটায় সিয়াংবোচি অ্যাপার্টমেন্টের থার্ড ফ্লোরে থাকি। কলেজে সবাই আমাদের দুষ্ট-মিষ্টি বন্ধুত্ব সম্পর্কে জানে।

ওরা রুমে ঢুকলো। ঙৈমেথুই বলল, ওহ..! কতদিন পরে একটু বেড়ানো হবে। সারাদিন শুধু কলেজ, পড়াশোনা আর বাসায় থাকতে থাকতে পুরো একঘেয়ে হয়ে গেছি। তোরা না করিস না। কাল তো শুক্রবার। চল, কালকেই যাই।
নোভা বলল, ঠিকাছে তাহলে, আজ রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে নে। যাই নিস না কেন, চাকু আর মরিচের গুঁড়ো অবশ্যই নিবি। কোন সময় লাগবে বলা যায় না।’
আমরা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালাম। সুস্মিতা এমনভাবে মাথা নাড়ল যার অর্থ, এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যায় না, সবকিছুতেই শুধু সন্দেহ।

পরদিন আমরা সকাল পৌনে ৮ টার দিকে বের হলাম। হেঁটে হেঁটে স্টেশনের দিকে যাচ্ছি।
মাউসুমা বলল, আচ্ছা, আমরা তো কোনরকম খোঁজখবর নেয়া ছাড়াই যাচ্ছি। ঠিকানা যদি ফলস্ হয়?’
ঙৈমেথুই বলল, হলে হবে। অনেকদিনই তো বেড়ানো হচ্ছে না। ঐ লেখকটাকে না পেলে সোজা সাঙ্গু নদী ধরে ঝুমিয়াতে চলে যাব।
কথা বলতে বলতে একটা সিএনজি পেয়ে গেলাম। চারপাশের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছি। সুস্মিতা আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা মাহ্জাবিন, এইসব ইএসপি-টিএসপি কারো থাকে নাকি?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই থাকে। প্রকৃতি প্রদত্ত এই ক্ষমতা নিয়েই সব মানুষ পৃথিবীতে এসেছে। চর্চার মাধ্যমে এই ক্ষমতাটা বাড়ানো যায়। অনেকের আবার জন্মগতভাবে অতিন্দ্রীয় শক্তিটা খুব প্রবল হয়। আমার একজন আন্টি ছিলেন, যার অসম্ভব ভালো ইএসপি ছিল। একবার উনি আমাদের বাসায় এসেছিলেন, কিছুক্ষণ গল্প করার পর উনি হঠাৎ করে বললেন যে, ‘বাবুন পুকুরে ডুবে যাচ্ছে। ওর কাছে কেউ নেই!’ বলতে বলতে ছুটতে লাগলেন। আমরা তো পুরো অবাক। সেই দিন বিকেলেই জানতে পারলাম যে, বাবুন পুকুরে ডুবে মারা গেছে। ছেলের শোকে পরে উনিও স্ট্রোক করে মারা যান।’
নোভা বলল, ‘ইশ..! কেউ ছিল না বাসায়?’
আমি বললাম, ‘আঙ্কেল ছিলেন। কিন্তু উনি তখন বাইরে মালির সাথে কথা বলছিলেন। বাবুনও ঘুমাচ্ছিল। কখন যে উঠে হামাগুড়ি দিতে দিতে পুকুরের কাছে চলে গেল কেউ টের পায়নি। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে আন্টি সেটা সাথে সাথে বুঝে গেলেন কিভাবে?’
কথা বলতে বলতে আমরা পৌঁছে গেলাম। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ভালোভাবে চারিদিকে তাকালাম। পাশাপাশি কয়েকটা বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে। এলাকাটা খুব নির্জন ধরনের। ঠিকানাটা মিলিয়ে নিয়ে রত্না কমপ্লেক্স ভবনের দিকে এগিয়ে গেলাম। নিচতলায় সুপারমার্কেট। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মাউসুমা বলল, ‘কিরে, নিচতলায় তো লোকজনের সমাগম। উপরে এত চুপচাপ কেন?’
নোভা বলল, ‘মনে হয় আমার কথাটাই সত্যি। এই লেখকটা নিশ্চয় ক্রিমিনাল। ফ্ল্যাট না নিয়ে পুরো ফ্লোরটাই মনে হয় ভাড়া নিয়েছে। তাই এত চুপচাপ।’
ঙৈমেথুই বল, ‘আমারও কেমন যেন নার্ভাস লাগছে রে! চল, ফিরে গিয়ে ঝুমিয়াতেই চলে যাই।’
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। সুস্মিতা যদিও কিছু বলছে না, ওর মুখটা আমসির মতো হয়ে আছে। ঊ৩ ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজালাম। বেশ কয়েকবার বাজানোর পর একজন কালো পোশাক পরা লোক দরজা খুুলে দিলো। একসাথে এতজনকে দেখে মানুষটা একটু অবাক হয়েছে। সুস্মিতা বলল, ‘মি. অনিক সেন আছেন? আমরা ইএসপি টেস্ট করাতে এসেছি।’
শিকার ধরা পড়ার পর মানুষ যেভাবে হাসে, লোকটিও আমাদের দিকে সেইভাবে হাসি দিল। বলল, ‘এসো, আমরা তো তোমাদের জন্যই অপেক্ষা করছি!’

ভেতরে ঢোকামাত্রই অনেক বড় একটা রুম। দেয়ালে কয়েকটা পেইন্টিং টাঙানো আছে। বসার জন্য কয়েকটা সোফা। সেখানে আমাদের বয়সী একটা ছেলে বসে আছে। আমরাও বসলাম। চারিদিকটা কেমন যেন খুব নির্জন।
ঙৈমেথুই ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কোথা থেকে এসেছেন?’
ছেলেটি বলল, রোয়াংছড়ি থেকে এসেছি। আমার দিদি এই ধরনের সাইকিক বিষয়ে খুব আগ্রহী। আপনারা কোথা থেকে এসেছে?
বান্দরবান থেকে। আপনি কিসে পড়ছেন?
ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে। আপনারা?
সেইম ইয়ার! তোমার নাম কি?
মং হ্লা মারমা। তোমাদের?
আমি ঙৈমেথুই মারমা। আর ওরা আমার ফ্রেন্ড, মাহ্জাবিন, সুস্মিতা, নোভা, মাউসুমা।
কথা বলতে বলতে খেয়ালই করিনি কখন যে সেই কালো পোশাক পরা লোকটা আমাদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সাথে ১৯-২০ বছর বয়সী একটা মেয়ে। নিশ্চয় মং হ্লা’র দিদি। উনি কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে আছেন।
কালো পোশাক পরা লোকটা আমাদের নির্দেশ দিল, তোমরা এসো!
মং হ্লা তার দিদিকে নিয়ে চলে গেল। আমরাও ভেতরে এলাম। সেখানে একটা গোল টেবিলকে ঘিরে ৬টা চেয়ার। একটাতে বসে আছেন কালো আলখাল্লা পরা মধ্যবয়সী একজন লোক। আমাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল, আমি অনিক সেন, বসো!
আমরা বসলাম। ঘরটিতে তেমন আলো নেই। মি. সেন আমাদের দিকে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমাদের সবার নাম-ধাম জিজ্ঞেস করার পর উনি হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, মাহ্জাবিন, তোমার জন্ম কখন?
আমি থতমত খেয়ে উত্তর দিলাম, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৩।
মি. সেন আমার দিকে তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমার হঠাৎ করে ঘুম পেতে লাগল। কেন জানি মনে হল উনি আমাকে হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেন? সুস্মিতারা সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মি. সেনকে বুঝতে দিলাম না যে আমিও হিপনোটাইজ করতে পারি। ইচ্ছে করেই ঘুমিয়ে পড়ার ভান করলাম। শুনতে পেলাম যে উনি অন্যদের বলছেন, এখানে কয়েকটা খাম আছে। তার ভেতরে কিছু ছবি আছে। কয়েকটা সার্কেল বা স্টার, চতুর্ভুজ, রেখা এই ধরনের। না দেখে তোমাদের বলতে হবে যে কোন খামে কী ছবি আছে।
মাউসুমা বলল, না দেখে কি করে বলব?
উনি বললেন, এটা না দেখেই বলতে হবে।
ওরা সবাই অনুমান করে অনেক কিছু বলল। মি. সেন হাসতে হাসতে বললেন, না, তোমাদের কারো ইএসপি নেই। তবে তোমাদের এই ফ্রেন্ডটাকে আমার একটু পরীক্ষা করতে হবে। তোমরা একটু বাইরের রুমে গিয়ে বসো।
নোভা যেতে চাচ্ছিল না। কালো পোশাক পরা লোকটা ওকে জোর করে নিয়ে গেল। মি. সেন এবার আমার দিকে ফিরে বললেন, আমার দরকার তোমার মতো একজন ১৬ বছর বয়সী একটা মেয়ে, যার খুব ভালো ইএসপি আছে। নাউ, মাই গার্ল, ওপেন ইউর আইজ..
আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বললাম, কেন? ১৬ বছর বয়সী ইএসপি গার্ল নিয়ে আপনি কী করবেন?
উনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না যে উনি আমাকে হিপনোটাইজ করতে পারেননি। এবার আমার পালা। উনার চোখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। আস্তে আস্তে উনার চোখের মণি স্থির হয়ে গেল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে?
উনি বললেন, আমি সমীর হোসেন।
আপনি কী করেন?
নারী ও শিশু পাচার করাই আমার কাজ।
কিছুক্ষণ আগে আপনার কাছে একটা মেয়ে এসেছিল। উনাকে আপনি কী করেছেন?
ওকে হিপনোটাইজ করে বলেছি যে আজ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর ও যেন আমার কাছে চলে আসে। বেশ কয়েকদিন হয়েছে কাউকে পাচার করিনি। ওস্তাদ খুব রেগে আছেন। ঐ মেয়েটাকে আজ রাতেই পাচার করে দিতে হবে।
আপনারা কি এই ধরনের বই ছাপিয়েই সবাইকে প্রলুব্ধ করেন? এই পর্যন্ত কতজনকে পাচার করেছেন?
হ্যাঁ, এই পর্যন্ত তিনজন মেয়ে ও সাতজন শিশুকে পাচার করেছি।
আপনাদের গ্যাংটা কোথায়?
মি. সেন ঠিকানাটা বললেন। আমি ওনার সামনে তুড়ি বাজাতেই ওনি ঝাঁকুনি দিয়ে সোজা হয়ে বসে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তারপর হিংস্রভাবে কাকে যেন নির্দেশ দিল, তপন, তপন… তাড়াতাড়ি এদিকে আয়!
কালো পোশাক পরা লোকটাকে নিয়ে আমার ফ্রেন্ডরা ভেতরে ঢুকলো। পেছন পেছন ঢুকলেন পুলিশ অফিসার সুমন আঙ্কেল। নোভা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
আমার দেয়া ঠিকানাটা থেকে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এরা নাকি এখনও এই কাজে নতুন। মি. অনিক সেন ওরফে সমীর হোসেন বিভিন্ন বই থেকে ইএসপি বিষয়ে তথ্য নিয়ে নিজে একটা বই ছাপিয়েছিলেন। কেউ যখন এই ধরনের কৌতূহল নিয়ে ওনার কাছে যেত, উনি ওদেরকে হিপনোটিক সাজেশন দিয়ে রাতে ওনার কাছে চলে আসতে বলতেন। ঐ অবস্থাতেই পাশের দেশে পাচার করে দিতেন। পুরো গ্যাংটাই যেদিন ধরা পড়েছে সেদিন আমরাও থানায় গিয়েছিলাম। মি. সেন আমাদের দিকে চোখ কটমট করে তাকালেন। আমি হাসতে হাসতে উনাকে বললাম, ‘আঙ্কেল! কাউকে হিপনোটাইজ করার আগে এই ধারণাটা অন্তত রাখা প্রয়োজন, যাকে হিপনোটাইজ করছি সেও হিপনোটিজম জানে কিনা। আর এরকম তেলাপোকা পরিমাণ হিপনোটিজম কোথা থেকে শিখেছেন বলুন তো?’
আসার সময় নোভাকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, তোরা তপন নামের ঐ লোকটাকে ধরেছিস কিভাবে?
নোভা বলল, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখিসনি আমি দেরী করে বের হয়েছিলাম? সুমন আঙ্কেলকে ফোন করে অনিক সেনের বাসার ঠিকানাটা দিয়েছিলাম। ওখানে যাওয়ার পর তোকে হিপনোটাইজ করার চেষ্টা করছিল, আমি সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। বাইরের রুমে এসেই আঙ্কেলকে ফোন করেছি। আঙ্কেল বাইরেই ছিলেন। ভেতরে এসে লোকটাকে চেপে ধরতেই লোকটা রিভলবার বের করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের মারদাঙ্গা সুস্মিতা লোকটাকে ম্যানেজ করে ফেলল। তোর আর অনিক সেনের কথাগুলো শুনেই বুঝতে পারলাম যে এরা আসলেই ক্রিমিনাল।’
সেদিন ওখান থেকে আসার সময় রোয়াংছড়িতে নেমেছিলাম মংহ্লাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওদের বাসার ঠিকানাটা তো জানি না। একটা মুদির দোকানে ওর নাম বলতেই বাড়ি দেখিয়ে দিল। মংহ্লা নাকি ওখানকার নামকরা ফুটবল প্লেয়ার। সবাই ওকে চেনে। মংহ্লা তো আমাদের দেখে অবাক। ওর দিদির কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো, ওর দিদি নাকি তখন থেকে ঘুমাচ্ছেন। ভেতরে গিয়ে ওনাকে হিপনোটিক সাজেশন দিয়ে তুড়ি বাজাতেই ওনি চোখ খুলে তাকালেন। অনিক সেনের কাছে কী কী ঘটেছে তা নাকি ওনার একদম মনে নেই! মংহ্লা’র মা তো লাঞ্চ না করে আসতেই দিচ্ছিলেন না…।
কিরে, এত রাত পর্যন্ত জেগে কি করছিস? ঘুমাবি না?
হ্যাঁ মা, যাচ্ছি। তুমি ঘুমাওনি কেন?
আমারও ঘুম আসছে না। হাহ্, দেখেছিস, পৃথিবীটা কত বদলে গেছে? এই মহামারী করোনা যে আর কত জীবন ধ্বংস করবে কে জানে।
আমি কিছু বললাম না। মাকে এটাও জানাইনি যে, মংহ্লা’র মাও করোনাতে মারা গেছেন। আকাশের অপরূপ সুন্দর জ্যোৎস্নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম, পৃথিবী অবশ্যই আগের মতো সুন্দর হয়ে যাবে। আবারও আমরা সবাই এমন সময়ে মনের সুখে গেয়ে উঠব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান, ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে…।’

Share.

মন্তব্য করুন