মানুষ বহু যুগ ধরে গবেষণা ও অনুসন্ধান করে যাচ্ছে সাগরের নিচের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ নিয়ে। একটি অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে বিশ্বের বৃহত্তম ও দীর্ঘতম গুহার যার নাম সাক আতুন। স্প্যানিশ এবং ইউক্রেক ভাষায় এর অর্থ সাদা গুহা। এটি চুনা পাথরের তৈরি।
বিশ্বের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম সামুদ্রিক এই গুহাটি মেক্সিকোয় অবস্থিত। গুহাটির অবস্থান পূর্ব মেক্সিকোর কোয়ান্টানা রু রাজ্যের টুলুম শহরের কাছে। এটি ইউক্যাটান উপদ্বীপের ক্যারিবীয় উপকূলের কাছে অবস্থিত। গুহাটি ৩৪৭ কিলোমিটার লম্বা। প্রাগৈতিহাসিক কালের এ গুহাটি দোস ওহোস নামের ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অন্য একটি গুহার সঙ্গে যুক্ত। স্কুবা ডাইভাররা পানিভর্তি এই সুড়ঙ্গ গুহাটি আবিষ্কার করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুহা আবিষ্কারের ফলে ওই অঞ্চলে গড়ে ওঠা ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাচীন মায়া সভ্যতা বিষয়ে বহু রহস্যের সমাধান মিলবে।

অসংখ্য পার্শ্ব-সুড়ঙ্গ থাকায় এটি ডুবুরিদের কাছে গোলকধাঁধার চেয়ে কম নয়। প্রথমে এটিকে দু’টি আলাদা সুড়ঙ্গ হিসেবে মনে করা হয়েছিল। পরে সুদক্ষ ডুবুরি আর বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে প্রমাণ হয়, আসলে এটি একটি গুহারই অংশ।
অনেকে মনে করছেন, প্রাচীন মায়ান শহরগুলো মাটির তলার এ সুড়ঙ্গ দিয়ে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এর মাধ্যমে শহরের বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতেন। এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির সন্ধান ও সংরক্ষণ বিষয়ে গবেষণা করা হয়। ইউকাটান উপদ্বীপ অঞ্চলের পানির তলার জগৎ পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হয়।

কিছুদিন কাজ করার পর প্রথম দিকে অনুসন্ধান দল মাটির নিচে কয়েকটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পায়। এরপর অনেক গবেষণায় দেখা যায়, এগুলো ৩৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ-গুহার অংশ।
অনুসন্ধান দল যখন প্রথমে গুহাটি পরিমাপ করে তখন সাক আতুনের দৈর্ঘ্য ২৬২ কিলোমিটার বলে জানা যায়। ওই সময়ে ডুবুরিরা এর পাশেই আরেকটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পান যার দৈর্ঘ্য ছিল ৮৫ কিলোমিটার।
এ সুড়ঙ্গটি দোস ওজোস নামে পরিচিত। প্রকল্প পরিচালক ও আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজিস্ট জুয়েরিলামো ডি এন্ডা বলেন, দোস ওজোস আদতে সাক আতুনেরই অংশ। এ আবিষ্কার মায়া সভ্যতা থেকে স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের সময়ের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজিস্ট জুয়েরিলামো মতে এই আবিষ্কারটি স্পেনীয়দের আক্রমণ ও বিজয়ের আগের এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সুপ্রাচীন সভ্যতাসমূহের, বিশেষ করে অতি উন্নত মায়া সভ্যতা সম্বন্ধে নতুন অনেক কিছু জানতে সাহায্য করবে।
এই গুহায় প্রায় ১০০ প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন রয়েছে, যার মধ্যে আমেরিকার প্রথম আদিবাসীগণ কিছু বিলুপ্ত প্রাণিকুল এবং মায়ান সভ্যতার নিদর্শন বর্তমান।

এই দুই সুপ্রাচীন গুহার সংযুক্তি কী করে হলো এমন প্রশ্ন কাজ করছে পুরাতাত্ত্বিক ও সংশ্লিষ্টদের অনেকের মনে। তাই তারা আরোও গবেষণা করে যাচ্ছেন গুহাটি নিয়ে। আশা করা যায় প্রাচীন সভ্যতার অনেক নিদর্শন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে এই গুহার মাধ্যমে।

Share.

মন্তব্য করুন