আমার আব্বু মনে করে মেয়েরা কোনো কাজ করে না। তারা সারাদিন বসে বসে রান্না করে, খায়, সিরিয়াল দেখে ইত্যাদি। আমারও একই ধারণা হতো (আব্বুকে দেখে)। কিন্তু এ নিয়ে এত বাড়াবাড়ি হবে আমি জানতাম না। আজ সকালে নাস্তা করে উঠছি এমন মুহূর্তে আম্মু বলল, ‘তোমার কাছে মেয়েদের কাজ সহজ মনে হয় তাই না?’
আব্বু আমতা আমতা করে বলল, ‘না মানে তোমরা তো তেমন কোনো কাজ করো না। তাই বললাম আরকি।’
আম্মু আমাকে বলল, ‘আজ কী বার?’
‘বৃহস্পতিবার।’

আম্মু এবার আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কাল তুমি ঘরের সব রান্না করবে। দেখি কেমন করো রান্না।’
আমি কথাগুলো শুনে হাঁ করে রইলাম। একি কা-! কিন্তু ভিতরে ভিতরে আমি একরকম আনন্দ পাচ্ছি এসব দেখার জন্য, কিন্তু সেটা আমার অজানা।
পরের দিন আমি ঘুম থেকে উঠি সকাল ৭টায়। ঘুম থেকে উঠে ইফাকে (আমার ছোট বোন) জিজ্ঞাসা করলাম আব্বু কোথায়? ইফা বলল, ‘আব্বু সকালের নাস্তা তৈরি করে।

ইফার কথা শুনে আমি অবাক। কী বলে ইফা! আমি তাড়াতাড়ি কিচেনে গেলাম। গিয়ে দেখি আব্বুর হাত পায়ে আটার মাখামাখি। আমি অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলাম। তারপরও ফিক করে একটা আওয়াজ বের হয়ে গেল। আব্বু আমার দিকে ফিরে তাকালো। না, শুধু আব্বুর হাতে পায়ে না, মুখেও আটার মাখামাখি। এবার হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলাম না। আব্বু ধমক না দিয়ে নিজেও হেসে ফেললেন। সকালের নাস্তা তৈরি হলো সকাল ৯টায়। আমরা খেলাম। আব্বু মনে হয় আজ তৃপ্তি করে খেল। খাওয়ার শেষে ‘ঢেকুর’ দিল।

আমি দুপুর ১২ টার দিকে নাহিনদের ঘরে যাই, তার সাথে ভিডিও গেম খেলার জন্য। ফিরে আসি ১টা ৩০ মিনিটে। আজও তাই। গোসল করে ভাত খাব এমন মুহূর্তে ইফা বলল, ‘আজ এখনো ভাত রান্না হয়নি। শুধু আলুভর্তা হয়েছে, আর মাংস এখনো রাঁধছে। আহা! কি অসহ্য জ্বালা। ভাত খেতে হবে কত পরে। ভাত খেলাম বিকেল ৩টায়। এভাবে রাতের ভাত পর্যন্ত চলল। রাতে আম্মু বলল, ‘কেমন গেল দিন?’ আমি বুঝলাম, আব্বুকে প্রশ্নটা করছে। আব্বু বলল, ‘ইয়ে মানে, তোমরা কাজ করো। কিরে ইনান তুই কেন বললি মেয়েরা কাজ করে না। মেয়েরা অনেক কাজ করে। আর কোনো দিন বলবি না। সাবধান।’
ইফা হাসতে হাসতে নাক দিয়ে পানি বের করে ফেলল। কী বিশ্রী কা-। কিন্তু আব্বুর অভিজ্ঞতা অনেক বাড়ল। এতে আমি খুশি।

Share.

মন্তব্য করুন