‘ওরে হাঁর দিদিরে, ঐ সূরাটা বল্তো।’ শিশু নাতনীকে ঘাড়ে নিয়ে প্রৌঢ় দাদা মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন।
মা মরা এই শিশু আমেনাকে তিনি খুবই ভালোবাসেন। আমেনার পিতা তাকে শিশুকালেই প্রচুর দোয়া ও সূরা মুখস্থ করিয়েছেন। তাই দাদা এই নাতনীকে নিয়ে গ্রামের প্রত্যেক ওয়াজ মাহফিলের মাইকে কিছু বলিয়ে নেন।
আমেনা যখন মাত্র দুই-তিন মাসের তখন তার দাদী মারা যান। এর প্রায় আট-নয় মাস পরে এগারো মাসের বাচ্চা রেখে তার মা মারা যান। তখন তার আট ও পাঁচ বছর বয়সী দুই ভাই ছিল। এদিকে সে সময় গ্রামে গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চারিদিকে গোলাগুলি ও বোমার শব্দ। এমনই এক দিনে বোমার শব্দে আতঙ্কিত হয়ে আমেনার পাঁচ বছর বয়সী ভাই মারা যায়। দুই ভাই বোন বেঁচে থাকে। সময় গড়িয়ে বড় ভাই বিএসসি পাস করে স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসার হিসাবে চাকরিতে যোগ দেয়। অধ্যাপক বাবার স্বপ্ন আমেনাকেও বড় করে তোলা। মা-বিহীন সংসারে সৎ ভাইবোনদের লালন-পালন করে সৎ মা, চাচী ও ফুফুদের মন জুগিয়ে সেও অদম্য স্পৃহা নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। দাদা বরাবর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও পিতা ও বড় ভাইয়ের যত্ন ও উৎসাহে সে আস্তে আস্তে এমএ পাস করে। কিছু দিনের মধ্যেই তার কলেজে চাকরি হয়ে যায়। অধ্যাপক বাবার স্বপ্ন পূরণ করে সেও অধ্যাপিকা হয়।
আজ যৌবন পার করে এসে বারবার তার মনে অতীত স্মৃতি ভেসে ওঠে। আজ সেই বাবা, দাদা সবাই ইন্তেকাল করেছেন। আপন বলতে আছে শুধু বড় ভাই। কলেজ পড়–য়া তিন সন্তানের জননী আজ শুধু দোয়া করে- ‘আল্লাহ, আমার পিতা, মাতা, দাদা, দাদীকে জান্নাত দান করো। আমার সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার তাওফিক দাও।

Share.

মন্তব্য করুন