অনেক… অনেক কাল আগে বরফ ঢাকা এক দেশের এক ছোট মেয়ের মনে দারুন একটি ইচ্ছে জেগে উঠল। রাতের অসংখ্য তারাজ্বলা আকাশের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকত সেই মেয়েটি। আকাশ জুড়ে ঝিমিমিকি করছে তারাগুলো। মিটমিট করে জ্বলছে। সে ভারি সুন্দর এক দৃশ্য।
ছোট মেয়েটি তারাজ্বলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে, আহা, আমি যদি এখন উড়ে চলে যেতে পারতাম ঐ দূরের তারাদের অপূর্ব দেশে। তাহলে কী যে চমৎকারই না হতো। সেই অপরুপ দেশে গিয়ে তারাদের সাথে সে ভাব জমিয়ে ফেলত। তারাদের সাথে মিলেমিশে খেলত। মেয়েটির মনে এই ইচ্ছেগুলো আলোর ফুলের মত ফুটে ওঠে। ইচ্ছেগুলো কখনও আলোর ঢেউ হয়ে ছলকাতে থাকে মনের ভেতরে। মেয়েটির মন তখন হয়ে যায় পাখির ডানা। মন হয়ে যায় মেঘ।
কিন্তু এই ইচ্ছেগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। কেমন করে সে চলে যেতে পারবে তারাদের রাজ্যে। সে দেশে যাওয়ার পথটিতো তার কাছে একেবারেই অচেনা। মেয়েটি সেই অজানা পথের কথা ভেবে ভেবে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তার আকুলি বিকুলি কেবল বাড়তেই থাকে।

এক রাতে মেয়েটি হঠাৎ করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায় বাড়ির দরোজাটির কাছে। খোলা দরোজা দিয়েই পথে নামে সবাই। তারপর যার যার গন্তব্যে চলে যায়। কিন্তু এই মেয়েটির গন্তব্যস্থল কি? সে তো হল দূর আকাশের তারাদের রাজ্য। মেয়েটি শুধু যেতে চায় তারাদের রাজ্যে। দরোজা খোলা পেয়ে মেয়েটি সাবধানে পথে নেমে আসে। এবার সে তারাদের দেশে যাবার পথ খুঁজবে।
সেটা ছিল ভরা পূর্র্ণিমার এক টলটলে রাত। পূর্ণিমার চাঁদের রুপুলি আলোতে চারপাশ ঝকমক করছে। মেয়েটি সেই আলোকিত প্রান্তরে হেঁটে হেঁটে একটি বিশাল দিঘির কাছে এলো। দিঘির বুকে ফুলের মত ফুটে রয়েছে অসংখ্য তারকা। মেয়েটি দিঘির বুকে তারাদের এমন সমারোহ দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। ভাবে এই দিঘিটি নিশ্চয়ই তাকে হয়ত তারার দেশে যাবার পথের একটা সন্ধান দিতে পারবে। মেয়েটি তখন সেই দিঘির কাছে কাকুতি-মিনতি করে বলে, ‘ও দিঘি, তুমি আমাকে জানিয়ে দাও না যে আমি কেমন করে তারাদের দেশে চলে যেতে পারব।’ কীভাবে সেখানে পৌঁছাব?
ছোট সরল, নিষ্পাপ মেয়েটির এমনতর অনুরোধ শুনে দিঘি কলকলিয়ে বলে ওঠে, ‘আরে, এটাতো খুব একটা ব্যাপার। ওখানটায় যেতে তো কোনো রকমের অসুবিধে নেই। সারা রাত ধরে তারারা তো আমার বুকেই থাকবে। চিকচিক ঝিকমিক করে খেলবে। কতো আনন্দ করেই না খেলে। ওদের ঐ ঝিকিমিকি করে জ্বলতে থাকা চোখগুলো তো আমাকে আর ঘুমুতে দেয় না। তোমার যদি তারাদের সাথে খেলার জন্য সাধ জাগে তাহলে চলে এসো আমার বুকে।
ছোট মেয়েটি দিঘির সেই আহবানে সাড়া দেয়। উৎসাহের সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে টলটলে দিঘিতে। কিন্তু সে কোনমতেই তারাদের নাগাল আর পেলো না। ছুঁতে পারল না। ঐ দিঘিটির বুকে তারারা শুধুই কাঁপা কাঁপা ছায়া হয়ে রইল। ভাসমান ছায়া। ধরলেই মিলিয়ে যায়।
মেয়েটি বুঝতে পারল যে দিঘির তারাদের দেশে যেতে সে পারবে না। কোনোমতেই সেটা সম্ভবপর না। তার মনটি খারাপ হয়ে যায়। তার ইচ্ছেটা আর পূরণ হচ্ছে না।
মেয়েটি তখন নিরুপায় হয়ে দিঘি থেকে উঠে আসে। তার পোশাক থেকে পানির ফোটা টপটপিয়ে পড়ে তার হেঁটে যাওয়ার পথে। আর সেই ফোটাগুলো পথটিকে সিক্ত করে তুলল। মেয়েটি হাঁটতে হাঁটতে এক মাঠের কাছে আসে। তখন সন্ধ্যে নেমে এসেছে। খোলা মাঠের ওপরে মেয়েটি ঝিকিমিকি করে তারাদের জ্বলতে দেখে। অবাক হয়ে মেয়েটি সেখানে এক দৃশ্য দেখে। একদল পরি নেচে চলছিল সেই তারাদের মাঝে। নরম আলোর রোশনাই এর মত ছিল সেই অপূর্ব নাচ। পরিদের শরীরে জড়ানো রেশমি পোশাক ডানার সাথে আলতোভাবে কাঁপছিল। ছোট মেয়েটি পরিদের কাছে আকুল স্বরে তার মনের ইচ্ছের কথাটি জানায়।
বুঝলে আমার মনে যে খুব সাধ আকাশের ঐ তারাদের সাথে খেলতে। এই যেমন করে তোমরা হাসিমুখে খেলছো। আমি তো তারাদের সাথে খেলার জন্য অনেক দূর থেকে অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। তোমরা কি আমাকে এই খেলাতে সাথী করবে?
পরিরা তখন মায়াবি স্বরে বলল, ‘অবশ্যই করব। তোমাকে নাচের সাথী হিসেবে পেলে আমরা তো আনন্দিত হবো। তুমি হবে আমাদের বন্ধু। আমাদের মিতা।
পরিরা হাসিমুখে তাকিয়ে রয়েছে ছোট মেয়েটির দিকে। মেয়েটি তখন এগিয়ে এসে পরিদের দলে চলে আসে। সুরতরঙ্গ বেজে ওঠে। মেয়েটি পরিদের সাথে ঘুরে ঘুরে নাচতে থাকে। তাতা থৈ থে। তাতা থৈ থৈ।…
কিন্তু কোন তারাকে সে আর স্পর্শ করতে পারল না। তখন মেয়েটি ভালো করে বুঝতে পেরেছে যে মাঠের ওপরে চিকচিক করতে থাকা জিনিশগুলো আসলে তারা নয়। ওগুলো আসলে হচ্ছে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু। চাঁদের রুপুলি আলোতে ওগুলো যেন তারার মতই চিকচিক করছে। এটা জেনে মেয়েটি ভারি দুঃখ পায়। তার বুকে থিরথিরিয়ে কষ্টের কাঁপুনি জাগে। সে তখন দুহাতে মুখ ঢেকে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলে। তার বুক ঠেলে কান্না উঠে আসছে। পরিরা ক্রন্দনরত মেয়েটির দুঃখটাকে অনুভব করতে পারে। কষ্টটাকে বুঝতে পারে। পরিরা মেয়েটির প্রতি তখন সহানুভূতিশীল হয়।

পরিদের মনে ইচ্চে জাগে ঐ দুখি মেয়েটিকে সাহায্য করতে। পরিরা তখন চিন্তা-ভাবনা করে মেয়েটিকে একটি ধাঁধা বলে দেয়।
শোনো মেয়ে, তুমি যদি তারাদের দেশে চলে যেতে চাও তাহলে চারপেয়ে কে ডেকে বলো তোমাকে যেন নিয়ে যায় না পেয়েদের কাছে। আর না পেয়েকে বলবে, যে সিঁড়ির কোনো ধাপ নেই তার কাছে তোমাকে নিয়ে যেতে। আর সেখানে গেলেই তুমি তারাদের দেখা পেয়ে যাবে।
মেয়েটিকে এমন সব কথা জানিয়ে পরিরা আবার ডানা নাড়িয়ে নাচ শুরু করে দেয়। মেয়েটি তখন গেলো তারাদের খোঁজে। যেতে যেতে সে একটি ঘোড়ার দেখা পায়। মেয়েটি বলে, ওগো ঘোড়া, আমি যে তারাদের দেশে যেতে চাইছি। তুমি কি আমাকে এ জন্য কিছুটা পথ এগিয়ে দেবে? ঘোড়া জানায়, আমি তো হলাম গিয়ে পরিদের ঘোড়া। যে কারণে তোমাকে কোনোরকম সাহায্য করতে পারব না।
মেয়েটি তখন বললো, ও , তুমিই তাহলে সেই চারপেয়ে। পরিরা তো তোমার কথাই আমাকে বলেছে। জানিয়েছে যে তুমিই একমাত্র পৌঁছে দিতে পারবে না পেয়েদের কাছে।
ঘোড়া তখন বলে, তাহলে আর দেরি করছো কেন? তুমি এখুনি আমার পিঠে উঠে বসো। আমি দ্রুত তোমাকে সেখানে পৌঁছে দেব।
মেয়েটি তখন চট করে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে। অমনি তীরবেগে ঘোড়াটি ছুটতে থাকে।
মাঠঘাট-প্রান্তর-বন-বনানি পেরিয়ে যায়। বাতাসে মেয়েটির চুল উড়তে থাকে। একটানা পশ্চিম দিকে ছুটতে থাকে ঘোড়াটি। সেটা ছিল অপূর্ব একটি দৃশ্য। এভাবে ছুটে এক সময় সাগরতীরে পৌঁছায় ঘোড়াটি।
মেয়েটি সাগরের বুক থেকে ভেসে আসা কলোকলো বাতাসের স্পর্শ পায়। সাগর তীরে মেয়েটিকে নামিয়ে দিয়ে ঘোড়াটি জানায়, এটাই হলো গিয়ে আমার শেষ সীমানা। আমি আর এগিয়ে যেতে পারবো না। সামনে যাবার আমার আর অধিকার নেই।
মেয়েটি জিজ্ঞেস করে, আমি এখন তাহলে কী করবো?
ঘোড়া পা ঠুকে বলল, তুমি এখানটাতেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো, না পেয়ে, এখানে এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।
মেয়েটি তখন ভাবছে, এই না পেয়ে টা আবার না জানি দেখতে কীরকম। কেমন অদ্ভূত দেখতে। কোথায় জানি থাকে না পেয়েরা। কীভাবে সে এখানে আসবে?
এমনি নানান ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে মেয়েটির মনে।
তাকে পিঠে বসিয়ে নিয়ে আসার ঘোড়াটি উড়ে গিয়ে দূরে মিলিয়ে যায়। মেয়েটি কৌতূহল ভরা চোখে তাকায় আকাশের দিকে। আগের মতোই তারারা রয়ে গেছে অনেক…অনেক দূরে। হাতের নাগালের বাইরে। মেয়েটি সাগর তীরে একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছে।

হঠাৎ মেয়েটি ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শুনতে পায়। যেন পানির উথলে ওঠার শব্দ। মেয়েটি তখন অবাক হয়ে দেখতে পায় তার চোখের সামনে ধীরে ধীরে ভেসে উঠছে বিশাল আকারের একটি মাছ। সাগরের ঢেউ ভেঙে এগিয়ে আসছে মাছটি। বিচিত্র ধরনের মাছটির শরীরের আঁশগুলো ছিল হলুদে সবুজে মেশানো। মাছটির শরীর থেকে চাপা আভা বেরুচ্ছিল। মাছটি ঘন সবুজ রঙের চোখ দিয়ে মেয়েটিকে বুঝি ডাকছে। মেয়েটি বুঝতে পারল যে এটাই হচ্ছে গিয়ে সেই না পেয়ে। যার কথা শুনেছে অনেক বার। মাছটি ভেসে ভেসে এলো সাগর পাড়ে। মাছটি মেয়েটিকে বলে, বলো তো, তোমাকে আমি কোথায় নিয়ে যাবো?
মেয়েটি জানাল, আমাকে তুমি নিয়ে যাবে ধাপছাড়া সিঁড়ির কাছে।
তাহলে চলো, সেখানে যাই। মাছটি বলে।
মেয়েটি তখন সেই বিশাল মাছটির চকচকে শরীরে উঠে বসল। মাছের পিঠটি ছিল মসৃন। লেজ নাড়িয়ে মাছটি মেয়েটিকে নিয়ে ভেসে চলল। তরতরিয়ে ভেসে চলেছে মাছটি।
সাগরের বুকে এভাবে ভেসে যেতে মেয়েটির দারুণ উত্তেজনা হচ্ছে। বেশ কিছু দূর চলার পর পশ্চিমে বহু দূরে গিয়ে থামল মাছটি। তখন মাছটি জানালো, আমরা তাহলে ঠিক জায়গাটিতেই এসে পড়েছি।

আর এটাই হলো গিয়ে সেই আশ্চর্য সিঁড়ি, যার কোন ধাপ নেই। মেয়েটি জানতে চায়, কিন্তু সিঁড়ি কোথায়?
মাছ বলে, তুমি আগে আমার পিঠ থেকে নামো। তাহলেই সিঁড়ি দেখতে পাবে।
মেয়েটি নেমে এলো মাছের পিঠ থেকে। যেইমাত্র সাগরের পানি মেয়েটির কোমল পা স্পর্শ করেছে তখনই এক বিচিত্র ঘটনা ঘটল। মেয়েটির পায়ের সামনে দেখা গেল পড়ে আছে একটি গাঙচিল। মেয়েটি গাঙচিলের পিঠে পা রাখতেই কোথা থেকে আরেকটি গাঙচিল উড়ে আসে। সেই গাঙচিলটি এসে মেয়েটির অন্য পায়ের সামনে এসে থামল। এরপর মেয়েটি পা রাখল সেই গাঙচিলের পিঠে। এরপর সাঁই সাঁই করে ডানা মেলে উড়ে এলো আরেকটি গাঙচিল এভাবে নতুন নতুন গাঙচিল এসে ধাপে ধাপে মেয়েটিকে উঠিয়ে নিয়ে চলল আকাশে। মেয়েটি বুঝতে বুঝতে পারে পরিরা তাকে যে ধরনের সিঁড়ির কথা জানিয়ে ছিল এটাই তলো গিয়ে সেই সিঁড়ি। গাঙচিলের পিঠে পা রেখে রেখে মেয়েটি ওপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। মেঘের চাইতে উঁচুতে উঠে যায়। মেঘের পর মেঘ ছাড়িয়ে চলে যায় পর্যন্ত তারাদের দেশে পৌঁছাতে পারে। মেয়েটি সাদর অভ্যর্থনা পেলো তারাদের কাছ থেকে। সে যে তারাদের নিকটে এতটা সমাদর পাবে তা যেন ভাবতেই পারেনি।

মায়াবি তারারা তাদের দেশে পৃথিবী থেকে চলে আসা এই নতুন অতিথিটিকে বরণ করে নেয়। সারা রাত ধরে মেয়েটি মনের আনন্দে নাচল তারাদের সাথে। আর সেই নাচ ছিল সত্যি অপূর্ব সুন্দর। সেই নাচ চিল ঝিকিমিকি আলোর মালা দিয়ে গাথা।
সেই নাচ ছিল তারাদের মালার ঝিলিক তোলা কাঁপুনি। সেই নাচ ছিল আলোর ফুল ফোটানোর পালা। চারপাশকে আলোময় করে তোলা। এভাবে একটানা নাচতে নাচতে মেয়েটি একসময় ক্লান্তিতে নেতিয়ে পড়ে। তার পায়ে যেন আর কোন শক্তি নেই। সব শক্তি ফুরিয়ে গেছে। মেয়েটির পা দুটো তখন ভেঙে আসতে চাইছে। তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। ঘুমে তার চোখের পাতা বুঁজে আসতে চাইছে। ঘুম ঘুম চাঁদ, ঝিকিমিকি তারা। তারারা তখন সোহাগ করে মেয়েটিকে আলতো ভাবে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
তারারা তুলোর মত নরম মেঘরাশি দিয়ে মেয়েটির শরীরটিকে ঢেকে দেয়। ¯গ্ধ আলোর পরশে মেয়েটি ডুবে থাকে। মেয়েটির কানে তারারা ফিসফিসিয়ে বলে, আবার আসবে কিন্তু আমাদের দেশে। গভির কালো আকাশে তারাদের চোখ ঝিকমিক করে জ্বলে। মেয়েটি আবেশে ডুবে থাকে। সারা জীবনে এতটা আনন্দ যেন সে আর কোথাও পায়নি।
যখন মেয়েটির ঘুম ভাঙলো। তখন সে ভীষণ অবাক হয়ে দেখতে পেলো যে সে তার নিজের শোবার ঘরের বিছানায় লেপের ভেতরে শুয়ে রয়েছে। সে আকাশে তারার রাজ্যে আর নেই। এটা কী হলো? তাহলে এতক্ষণ সে কি স্বপ্ন দেখছিল। তারাদের দেশে সে যেতে পারেনি। তাদের সাথে তালে তালে নাচেনি। সবই ছিল ভুল। পুরোপুরি মিথ্যে।
মেয়েটি চমকে গলে যখন দেখল যে তার পোশাকটি ভেজা। আর তার মাথার চুল থেকে ছড়িয়ে পড়ছে নোনা পানির গন্ধ।

[আইসল্যান্ডের লোককাহিনী]

Share.

মন্তব্য করুন