গুহা বলতে সাধারণত অন্ধকার গর্তের কথা মনে হয়। তবে এমন একটি ব্যতিক্রমী গুহা রয়েছে যেখানে আলোয় আলোয় মায়াবী এক পরিবেশ তৈরি হয়েছে গুহার ভেতরে। যেটা কোনো কৃত্রিম আলো নয়। এই আলোটা প্রাকৃতিক। জোনাকি পোকার আলো! এ জন্যই গুহাটার নাম গ্লো-ওয়ার্ম কেভ, অর্থাৎ জোনাকিগুহা।
এই গুহায় ঢুকলে এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে। গুহার ভেতরে হলুদ-নীল স্নিগ্ধ, মায়াবী আলো। সেই আলো এত চমৎকার মায়াবী পরিবেশ তৈরি করে যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই।
নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের ওয়াইটোমো শহরের ঠিক বাইরে অবস্থান ওয়াইটোমো গ্লো-ওয়ার্ম কেভের। এই গুহাটি অকল্যান্ড থেকে দুই ঘণ্টা, হ্যামিলটন থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। এর ভেতরে অসংখ্য জোনাকি পোকার বাসই এই গুহাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
গুহার ভেতরে চুনাপাথরের স্তর প্রাকৃতিকভাবেই সুন্দর গঠন তৈরি করেছে। আর সেই চুনাপাথরের গায়েই রয়েছে অসংখ্য জোনাকি। তাদের হলুদ-নীল আলো গুহাটিতে এক অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে।
গুহার ভেতরে রয়েছে হ্রদ। সেই হ্রদে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় পর্যটকরা জোনাকির আলোয় সাজানো প্রাকৃতিক ঝাড়বাতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
জোনাকিরা মৌমাছি থেকে বেশ ছোট, ডাঁশ মাছি থেকেও। আবার মেয়ে জোনাকি থেকে পুরুষটি আকারে ক্ষুদ্র।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, জোনাকিরা শিকারকে চেনার জন্য তাদের আলো ব্যবহার করে। খাদ্য খোঁজার সময়ও এরা এদের আলো ব্যবহার করে।
১৮৮৮ সালে ফ্রেড মেস এবং লোকাল মাওরি চিফ টেন এই গুহাগুলো আবিষ্কার করেন। মোমের আলোয় একটি ভেলার ওপরে একটি ছোট্ট নদীর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তারা ছোট্ট ছোট্ট তারার মত ঝিলমিলি আলোর দেখা পান। তাদের চোখে পড়ে বিভিন্ন আকারের জোনাকি। তারাই প্রথম খোঁজ পান এই চমৎকার গুহাটির।
ভৌগোলিক ও আগ্নেয়গিরির দ্বারা সৃষ্ট এই গুহাগুলো যখন সমুদ্রের নিচে ছিল তখন থেকেই চুনাপাথরগুলো কোরাল ফসিল, সিশেলস্, মৃত মাছের কঙ্কাল এবং সমুদ্র তলবর্তী বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি হয়েছে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই ফসিল জমে পাথর হয়েছে এবং স্তরীভূত হয়ে চুনা পাথরে রূপান্তরিত হয়েছে যা এই অঞ্চলে প্রায় ২০০ মিটার পুরু।
এই গুহাগুলি তখনই তৈরি হতে শুরু করে যখন সমুদ্র তলবর্তী চুনাপাথরগুলো অতিরিক্ত চাপে ও উষ্ণতায় বেঁকে যায় এবং আস্তে আস্তে সমুদ্রের উপরে উঠে আসে। তখন এগুলি আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করে, এই চুনাপাথরের মধ্য দিয়ে পানি বইতে থাকে এবং লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই গুহাগুলো তৈরি হতে থাকে।
স্ট্যালাকটাইটস্, স্ট্যালাগমাইটস্ এবং অন্যান্য বিভিন্ন আকার তৈরি হতে থাকে দেওয়ালের ওপর থেকে পানি পরে সেই পানি জমে জমে।
এই গুহার বৈচিত্র্য লক্ষ বছরের পুরানো কারণ এক কিউবিক সেন্টিমিটার স্ট্যালাকসাইট তৈরি হতে প্রায় একশো বছর সময় লাগে।
এখানে কিছু ছোট খাটো পোকামাকড়, আলবাইনো কেভ অ্যান্টস্, বিশালাকৃতি ঝিঁঝি পোকা পাওয়া যায়। কিন্তু সব থেকে বিখ্যাত হলো জোনাকি যারা অন্ধকারে নিজের আলো ছড়ায় এবং গুহার অন্ধকারে রাতের আকাশের তারার ঝিলমিল নজরে আসে।
এমন চমৎকার গুহা সাধারণত দেখা যায় না। তাই এই গুহাটি সংরক্ষণ প্রয়োজন। গুহার মধ্যকার পরিবেশ ও প্রাণিজগৎকে রক্ষা করার জন্য এখানকার তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা প্রভৃতি বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। এত সুন্দর জোনাক গুহা দেখলে মনে হয় গুহার ভেতর তারার মেলা।

Share.

মন্তব্য করুন