বাবা কোথায়, তিনি খাবেন না? জবাবে মা বললেন, ‘তোর বাবা পরে খাবে, এখন তুই খেয়ে গিয়ে পড়তে বস।’ পাতে দু’টো রুটি আর সামান্য সবজি। এত সাধারণ খাবার বাসায় মারুফ কখনো খায়নি। বাবা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক, লকডাউনের কারণে স্কুল বন্ধ। বন্ধ রয়েছে বেতনভাতা। ধার-কর্জ করে বাসা ভাড়া দিয়েছেন। বাজার করার মতো টাকা হাতে নেই। মারুফ বুঝতে পারে, কেন বাবা পরে খাবেন। কারণ একমাত্র আদরের ছেলের পাতে সব তুলে দিয়েছেন মা। তারপর বাবা-মা হয়তো না খেয়েই দিন পার করে দিবেন। ইদানীং বাবা-মা একদিন পর পর রোজা রাখেন। শুধু নেকির আশায় না, সাথে অভাবের কারণটাও আছে। মারুফ সব বুঝতে পারে। বাবার অনেক বন্ধুরা আছেন। যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল কিন্তু বাবার বর্তমান অবস্থা কেউ তেমন জানে না। বাবা কাউকে বুঝতে দেননি সংসারের অভাবের কথা। মারুফ একটি রুটির বেশির ভাগ খেয়ে বাকি খাবার টেবিলে রেখে চলে আসছে। ছেলের মানসিক অবস্থা বাবা ও মা দু’জনেই বুঝতে পারেন। নীরবে চোখের পানি মোছা ছাড়া এই সময়ে কিছু করার কথা ভাবতে পারছেন না। একদিন বাবার মোবাইলটা মারুফের পড়ার টেবিলে ছিল। একটা ফোন এলো, বাবা গোসলখানায় থাকায় ফোনটা মারুফ রিসিভ করলো। অপর পাশ থেকে বাবার বন্ধু হাসান সাহেব সালাম দিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নিয়ে বললেন, ‘তোমার বাবাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটা চেক করতে বলিও।’ বাবা গোসল সেরে এলেন। আজ অনেকক্ষণ ধরে গোসল করলেন। হয়তো সবার সামনে চোখের জল ফেলতে পারেন না তাই গোসলের ফাঁকে মন হালকা করার জন্য কেঁদে নিলেন। দাদী মারা যাওয়ার পর বাবা এইভাবে কান্না করতেন। মারুফ বাবাকে ফোনের কথা বললো। তিনি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট অনলাইনে চেক করে হতবাক হয়ে গেলেন। সাথে সাথে ফোন করলেন সালাম বিনিময়ের পর ‘জানতে চাইলেন এতোগুলো টাকা কেন তার অ্যাকাউন্টে পাঠালেন।’ হাসান সাহেব বললেন, ভাই আমি আপনাকে ভালোবাসি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। সেই ভালোবাসার টানে সামান্য কিছু উপহার আমার পক্ষ থেকে। আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য। বাবার চোখের কোণ বেয়ে পানি পড়ছে। দুঃখের পানি নয় সুখের। বন্ধুত্ব ও পবিত্র ভালোবাসার জান্নাতি আকর্ষণের অনুভূতি থেকে এই কান্নার জন্ম। মারুফের সামনে একটি হাদিসের বাণী ভেসে উঠলো। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তোমরা যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালোবাসতে তারা আজ কোথায়? আজ তোমাদেরকে আমার (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবো। আজ আমার (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই। (সহিহ মুসলিম হাদিস নং ৪৬৫৫)। আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদিসটি বের করে আজ আবারও পড়লো মারুফ। তারও দু’চোখ বেয়ে পানি নেমে এলো। রক্তের সম্পর্কহীন দুইজন মানুষের ভালোবাসা দেখে যেন মনে হলো এটাই হাদিসে বর্ণিত ভালোবাসার উপমা।

Share.

মন্তব্য করুন