ধপাস করে কর্দমাক্ত ধান ক্ষেতের মধ্যে পড়ে গেল অয়ন। সারা গায়ে কাদা-পানি, ভিজে একাকার। অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে হাসছে চাচাতো ভাই মারুফ, বোন আয়েশা ও দাদু আবুল কাশেম। তাদের উপহাসের হাসি দেখে অয়নের কান্না এসে গেলো। এভাবে নাজেহাল হবে সে ভাবতেও পারেনি। সবচেয়ে বেশী অভিমান হলো দাদুর প্রতি। কোথায় একটু সহানুভূতি দেখাবে, তা না করে উল্টো হাসছেন! অয়ন লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়ি এসেছে। সে গ্রামের সরু মেঠো পথে হাঁটতে ভয় পায়। আর ধান ক্ষেত্রের কর্দমাক্ত সরু আইলের মধ্য দিয়ে হাঁটা তো অসাধ্য সাধন করার মতো। দাদু অয়নকে কাছে টেনে নিলেন। পুকুর ঘাট থেকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে বাড়ি ফিরলো অয়ন। এই ব্যাপারটা নিয়ে বাড়ির সবাই হাসাহাসি করছে। দাদু সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন। শোনো, এই ঘটনা থেকেও আমাদের শিক্ষা নেয়ার মতো বিষয় আছে। অয়ন একটু বাঁকা চোখে তাকালো দাদুর দিকে। দাদু বললেন, ‘শোনো, অয়ন শহর থেকে এসেছে। ধান ক্ষেত্রের কর্দমাক্ত চিকন আইলে হাঁটার অভ্যাস তার নাই, সে জন্য পা পিছলে পড়ে গেছে। আবার মারুফ এবং আয়েশা গ্রামে থাকে, তাদের যদি বলা হয় ঢাকার রাজপথের জেব্রা ক্রসিং পার হতে তবে তারাও ভয় পাবে, কারো সাহায্য ছাড়া পার হতে পারবে না। অয়ন যেমন গ্রামে মেঠোপথে অভ্যস্ত নয় তেমনি মারুফ ও আয়েশা শহুরের রাস্তায় অভ্যস্থ নয়। আর এই অভ্যাস একদিনে গড়ে ওঠে না। সে জন্য মানতে হয় সঠিক নিয়ম এবং চলতে হয় খুব সর্তকতার সাথে। কেননা সতর্কতার অভাবে যেমন অয়ন পড়ে গিয়েছে তেমনি সতর্কতার অভাবে শহুরের রাস্তায় প্রতিদিন হয় এক্সিডেন্ট।’
দাদু আরো বললেন, ‘আমরাও কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই পৃথিবীতে এসেছি। সময় ফুরিয়ে গেলে আমাদের সবাইকে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই পার্থিব সময়ে যদি দুনিয়ার ক্ষতিকর দিক থেকে নিজেকে বাঁচাতে না পারি এবং পরকালের জন্য সঠিক আমল করতে না পারি তবে পা পিছলে পড়ে যেতে হবে জাহান্নামের গর্তে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। এবং তোমাদের খেয়াল রাখা উচিত পরকালের জন্য তোমরা কী ব্যবস্থা করেছ। তোমাদের তাকওয়া (জীবন চলার পথে সতর্কতা) অবলম্বন করা উচিত, কেননা জীবনের প্রতিটি কর্ম সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বাধিক খবর রাখেন। (সূরা আল হাশর, আয়াত নং ১৮)।”
সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে দাদুর কথা। তিনি বললেন, ‘পাপ-পঙ্কিল এই দুনিয়াতে সকল মন্দ থেকে বেঁচে সতর্কতার সাথে ভালো কর্ম করার যোগ্যতা অর্জনকে বলে তাকওয়া। যা সাবধানতা ও সতর্কতার সাথে আল্লাহকে ভয় করার মাধ্যমে অর্জিত হয়ে থাকে। যা একদিনে হবে না, তবে ধৈর্য ও সাহসের সাথে যদি সকল খারাপ ও মন্দ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে পারি তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের এই যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ দিবেন। আল্লাহ আমাদেরকে সেই সুযোগই দান করুন।’ সবাই সমস্বরে বলে উঠলো। আমিন!

Share.

মন্তব্য করুন