‘পাথরে পারদ জ্বলে জলে ভাঙে ঢেউ
ভাঙতে ভাঙতে জানি গড়ে যাবে কেউ।’

ভাঙার মাঝেই গড়ার স্বপ্ন দেখেন কবি মোশাররফ হোসেন খান। প্রচ- আশাবাদী এই কবি তোমাদের জন্য লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছড়া, গল্প ও কিশোর উপন্যাস। তাঁর কিশোর উপযোগী সৃষ্টির মাঝে লুকিয়ে আছে আশার বীজমন্ত্র। কবি মোশাররফ হোসেন খান বড়দের জন্য যেমন দুই হাতে লিখেছেন, পাশাপাশি ছোটদের জন্য মানে তোমাদের মতো কিশোরদের জন্যও লিখেছেন মন খুলে। ফলে তার কিশোর কবিতার মধ্যে দেখি প্রাণ প্রাচুর্যের ছোঁয়া।
রবীন্দ্রনাথ ‘সবুজের অভিযান’ কবিতায় আধমরাদের ঘাঁ মেরে বাঁচাতে কচি বা সবুজ, মানে কিশোরদের আহ্বান করেছিলেন। জং ধরা জীবনকে নতুন করে জাগানোর জন্য ধাক্কা দিয়েছিলেন। কবি মোশাররফ হোসেন খান ‘আশার চর’ কবিতায় তেমনি সবুজ ঘর গড়তে চান।
ঐ জেগেছে স্বপ্ন বুকে নতুন আশার চর
কে কে যাবি আয় ছুটে আয় গড়তে সবুজ ঘর।

তার সেই সবুজ চরের রূপ বৈচিত্র্য কেমন? তা জানতে নিশ্চয় তোমাদের মনের কোঠায় প্রশ্ন জাগছে। কবির সেই সবুজ চর অবশ্যই সবুজে পরিপাটি। তার সাথে রয়েছে ফুল ও ফসলের মৌ মৌ গন্ধ। সেই গন্ধে সবুজ চরের মাটিও সুগন্ধি হয়ে ওঠে। সেখানে পাখপাখালির গানের সাথে নদীর ঢেউ খেলে চলে। সে চরের নিটোল আকাশ হৃদয় ভরে তোলে। সেখানে দোয়েল কাকের সারি, রংধুন রঙ স্বপ্ন জাগায় মনে। আর কবি তখন আমাদের শোনান তার দেশ-মাতৃকার হৃদয়পটে বসে স্বপ্নের সাগরে দোল খাওয়ার কথা।
এই যে আমি
সবুজ মায়ের কোলে
স্বপ্ন সাগর
বুকের ভেতর দোলে

এইভাবে স্বপ্নের সাগরে দুলতে দুলতে কবি থাকতে চান স্বদেশের কাছাকাছি। তাঁর স্বদেশের সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে তিনি আহবান করেন।
ঘুম ভাঙিয়ে জগৎটাকে
আপন করে নাও।

এই ঘুম আমাদের চেতনার ঘুম। কারণ আমরা নিজের দেশের সব কিছুকে তুচ্ছ ভাবি। অন্য দেশের যেকোন কিছুই আমাদের সামনে বড় মনে হয় বা সাদরে গ্রহণ করি। কিন্তু দেশের বেলায় নাক সিটকানি। এই হীনমন্য ভাবটাকে আঙুল ঠেকিয়েছেন কবি।

শুধু যে আপন করে নিতে বলেই তিনি দায় এড়িছেন এমনটি কিন্তু নয়। তার সাথে সাথে নিজ দায়িত্বে বিশ্বের অধিকার বঞ্চিত শিশুদের পক্ষে কথা বলেছেন। যখন ফিলিস্তিনি শিশুদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করছে ইসরাইল ও তার মদদদাতা শক্তিগুলো কবি তার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন-
থামাও যত শিশুহত্যা থামাও রক্ত খেলা
ফিলিস্তিনে উঠুক ফের শান্তি সুখের বেলা॥
আর কত দেখতে হবে কচিশিশুর লাশ?
ওদের রক্তেই লেখা হবে তোদের সর্বনাশ॥
কিংবা আর নয় বুলেট বোমা বসুক ফুলের হাট
গাজার জন্য দাও খুলে দাও তেপান্তরের মাঠ॥
তোমরা যারা টেলিভিশনে খবর দেখে থাকো, তারা হয়তো ধরেই নিয়েছো শিশুদের জন্য কবিকল্পিত ফুল ফোটানো তেপান্তরের মাঠ: তা কখনোই আসবে না। তোমাদের মনের এই সংশয় দূর করতে কবি সাহস জুগিয়েছেন। সামনে এগিয়ে যেতে আহবান জানিয়েছেন-
চলার পথে জয়-পরাজয় থাকবে
তবু তুমি সামনে চলার সাহসটুকু রাখবে।

শুধু সাহস রাখলে তো আর হবে না, নিতে হবে
পদক্ষেপ তাই তিনি বলছেন-
তুমিও দাঁড়াও দেখি বুক টান করে
সাহসের নিঃশ্বাস নাও ফুসফুস ভরে।
ভয়কে পেছনে ফেলে সুদৃঢ় মনে
জয়ের নিশানা ওড়াও শয়ন স্বপনে॥

এখন প্রশ্ন হলো সেই জয়ের পথ ধরে চলতে হলে একজন সিপাহসালার তো লাগবেই, তাই না বল? তাহলে কে হবেন সাহসের সিপাহসালার? সেই সিপাহসালার প্রসঙ্গে কবি বলছেন-
সংগ্রাম ছিল তাঁর মানবতার মুক্তির
বিপ্লব ছিল তাঁর শান্তির ও সুস্থির,
সুগম পথ পাড়ি দিতে হবে আজও
কী আছে আর ভয়ের।
রাসূল আমার সিপাহসালার
যিনি পথ দেখালেন জীবন জয়ের॥

আর এই পথ ধরে তিনি তোমাদের মত তরুণের সাথে কণ্ঠে মিলিয়ে বলতে চান-
আমরা তরুণ…
বিশ্বসভায় দেশের সুনাম
আমরা তুলে ধরবো॥

লেখার শুরুতেই আমি তোমাদের বলেছিলাম এক সবুজ চরের কথা। যেখানে স্বপ্নের চারা রোপণ করতে চান কবি। যেই চরের সকল শিশু পাবে তার অধিকার। সেই সবুজ চরের বিস্তর বর্ণনা পেয়ে থাকি তার বিভিন্ন কবিতায়। সেই চরের নাম বাংলাদেশ। যার প্রতিটি শিশুকে ফুলের সাথে তুলনা করে কবি আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তোমরা যারা এই লেখাটি পড়ছো তারাই হবে আগামী দিনের নতুন চরের সিপাহসালার। যেই সিপাহসালারের জন্য কবি মোশাররফ হোসেন খান নতুন সবুজ চরের স্বপ্ন দেখেন, দেখান প্রতিনিয়ত।

তার সেই স্বপ্ন পথের সাহসী সহযাত্রী হতে হলে তার কবিতা অবশ্যই আমাদের পড়তে হবে।

Share.

মন্তব্য করুন