এবার তবে খাসি কিনে আনবো? রোহানের বাবা তার বাবাকে মানে রোহানের দাদুকে প্রশ্নটা করলেন। হ্যাঁ, যেহেতু এবার আমাদের গ্রামে যাওয়া হচ্ছে না সেহেতু একটা ভালো দেখে খাসি কিনে কোরবানি দিবো। গ্রামের বাড়িতে একটা গরু কিনে কোরবানির ব্যবস্থা করবে, যাতে গ্রামের গরিব মানুষদের কোরবানির গোশত দেয়া যায়। ঘুম ঘুম চোখে রোহান তার বাবা ও দাদুর কথা শুনছিল। বাবা চলে যাওয়ার পর রোহান ঘুম থেকে উঠে দাদুর কাছে গিয়ে জানতে চাইল যে, সত্যিই কি তারা এবার গ্রামের বাড়ি যাবে না? দাদু বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে না যাওয়াই ভালো। রোহানের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। প্রতি বছর গ্রামে গরু কোরবানি হয় অনেক ধুমধামে। সেখানে সবাই রোহানদের কত সম্মান করে! অনেকে বাহবা দেয়। এবার এসব কিছুই হবে না। রোহান ভাবলো, ‘এবারের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেল।’ দাদু রোহানকে আদর করে কাছে বসালেন। ‘দাদুভাই! মন খারাপ করো না। আমরা গ্রামে না গেলেও গ্রামের গরিব মানুষদের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও গরু কোরবানি করা হবে। তাদের ঘরে ঈদের আনন্দ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।’ রোহান বললো, তা না হয় হলো, কিন্তু সেখানে সশরীরে উপস্থিত থাকলে আনন্দটা বেশি হতো। দাদু বললেন, ‘তা ঠিক! তবে আল্লাহ কিন্তু বান্দার আন্তরিকতা ও নিয়ত দেখেন। তুমি কি জানো, মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করেছিলেন!’
‘হ্যাঁ, জানি দাদু। আমাদের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে পড়েছি।’ বললো রোহান।

দাদু হেসে বললেন, ‘তিনি কি তাকে কোরবানি করতে পেরেছিলেন? না! পারেননি। কিন্তু আল্লাহ কোরবানি কবুল করেছিলেন। শয়তানের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ইবরাহিম ও ইসমাইল (আ.) মহান আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে যখন তৎপর হলেন। ইসমাইল (আ.) নিজের জীবনকে এবং ইবরাহিম (আ.) স্বীয় পুত্রের জীবনকে আল্লাহর জন্য কোরবান করতে যখন বদ্ধপরিকর। তখন আল্লাহ ঘোষণা করলেন, ‘হে ইবরাহিম স্বপ্ন তুমি সত্যিই করলে!’ আল্লাহ তায়ালা সূরা সফ্ফাতে বলেছেন, “যখন তারা (ইবরাহিম ও ইসমাইল) পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করল। পুত্রকে কোরবানি করার জন্য কাত করে শায়িত করল। তখন আমি (আল্লাহ) তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমিতো স্বপ্নাদেশ সত্যিই পালন করলে! আর এভাবে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা।” (সূরা সফ্ফাত ১০৩-১০৬) দাদু বললেন, ‘শোনো রোহান! কোরবানির এই ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের রব আমাদের বাহ্যিক কাজ নয় বরং আমাদের অন্তরের অবস্থাকে মূল্যায়ন করেন। তিনি দেখতে চেয়েছেন যে, নবী ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে সত্যিই পুত্রকে কোরবানি করেন কি না? আর ইসমাইল (আ.) সব জেনে শুনে আল্লাহর ওয়াস্তে জীবন দিতে প্রস্তুত কি না? আল্লাহ যখন তাদের মানসিক ত্যাগের চূড়ান্ত সীমায় তাদের পেলেন তখন আর ইসমাইলকে জবেহ হতে হলো না। প্রতিদানে জান্নাতি দুম্বার ব্যবস্থা করে প্রতিদান দিলেন। মূলত তিনি দেখেন কার অন্তরে কী আছে। আমরা এ বছর গ্রামে না গেলেও কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সেখানে কোরবানি দেবো। আর কোরবানির গোশত কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেবো। কাউকে দেখানোর জন্য নয়। কারো বাহবা পাওয়ার জন্য নয়। রোহান মাথা নেড়ে বললো হুম! ঠিক আছে দাদু।

Share.

মন্তব্য করুন