বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয় ঋতুর অন্যতম একটি হলো বর্ষাকাল। বাংলা ক্যালেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী আষাঢ়-শ্রাবণ এ দুই মাস বর্ষাকাল। বর্ষার আকাশ মানেই কালো মেঘের দাপট। এই ফর্সা আকাশ তো হঠাৎ করেই কালো মেঘ এবং ঝরঝর বৃষ্টি। এই হলো আমাদের বর্ষাকালের পরিচিত দৃশ্য। তবে বর্ষার সৌন্দর্য অন্যান্য ঋতুর চেয়ে বৈচিত্র্যময় এবং স্বতন্ত্র।
মহান আল্লাহর অশেষ রহমতের অনন্য নিদর্শন এই বর্ষাঋতু। বর্ষার নিজস্ব একটি সুর আছে। যে সুর আমাদের কিশোর মনকে উদাস করে তোলো, ভাবুক করে তোলে। আমাদের মনকে নিয়ে যায় অজানায়। তখন আমরা হয়ে উঠি সৃজনশীল। আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতা তখন প্রকাশ পেতে শুরু করে। এ জন্য হয়তো বর্ষাকে ঘিরে বিখ্যাত সব কবি দারুণ সব কবিতা লিখে গেছেন। এখন তো করোনাকাল চলছে। তোমাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ। তোমরাও বসে যাও কাগজ-কলম নিয়ে। ছুটির দিনগুলো কাজে লাগাও। লিখে ফেল মজার মজার সব লেখা। যারা ছবি আঁকতে পছন্দ কর, তারাও রঙতুলি নিয়ে এঁকে ফেলতে পার বৃষ্টির ছবি। তাহলে করোনাকালে ঘরবন্দী সময়টাও বেশ ভালোভাবে কেটে যাবে।
বর্ষা মানেই টাপুর টুপুর শব্দ। আর সেই শব্দে ভরে ওঠে খাল-বিল, নদী-নালা। শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলোও আবার জেগে ওঠে। নদীতে ভাসে পালতোলা নৌকা। আগেকার দিনে বৃষ্টির সময় তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েরা রাস্তার পাশে ডোবা নালার ঘোলা পানিতে ডুবসাঁতারে মেতে উঠতো। মাঠে চলত দুরন্ত কিশোর দলের ফুটবল খেলা। কেউ কেউ কলাগাছ কেটে তৈরি করতো কলার ভেলা। ভেলায় চড়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াত ডোবা-নালায়।
বর্ষাকালে গ্রামের পুকুরে সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ব্যাঙের ডাক। এ সময় মাটির গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে নানা জাতের ব্যাঙ। শুরু হয়ে যায় ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর গান আর লাফালাফি।
বিলে বিলে চড়ে বেড়ায় নানা রকমের মাছ। ঢাল বেয়ে নামা হালকা পানির ¯্রােতে কৈ, শিঙ এবং পুঁটির ঝাঁক চলে আসে ওপর দিকে। তোমরা কি জান কৈ মাছ কান দিয়ে হাঁটতে পারে। যারা জান না তারা এবার বর্ষায় এটা দেখে নিও। দেখবে কৈ মাছ কান দিয়ে হেঁটে বিল থেকে পুকুর বা জলাশয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখতে হলে তোমাকে অবশ্য গ্রামে থাকতে হবে। গ্রামের মানুষ এ সময় মাছ শিকারে বের হয়। তারা কোঁচ ও যুতি দিয়ে মাছ শিকার করে। বর্ষার আসল সৌন্দর্য গ্রামে গেলেই বোঝা যায়।
বর্ষা মানেই কদম ফুল। কদমের সঙ্গে বর্ষার নাম আসবেই। বর্ষা ঋতুতে যেসব ফুল ফোটে তার মধ্যে অন্যতম কদম। যা বর্ষার রূপকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এ সময় বিলে ঝিলে ফোটে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা। বর্ষার টাপুর টুপুর ছন্দের সঙ্গে কেয়া, কামিনী, কদম, জুঁই, টগর, বেলি, চাঁপা ফুলের সুগন্ধে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সুরভিত। এ সময় কৃষকের ঘরে শোভা পায় সোনালি আঁশ খ্যাত পাট। আর বর্ষা হলো আউশ ধানের মৌসুম। এ ছাড়াও, পেয়ারা, কলা, চালকুমড়া, ঝিঙা, করলা, ঢেঁড়স বরবটি ইত্যাদি ফল ও তরকারি বর্ষারই অবদান।
আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো কৃষি। আর কৃষিনির্ভর করে বর্ষার ওপরেই। পরিমিত বৃষ্টিপাতের কারণেই বাংলাদেশে ফসল ফলে।
বর্ষাকাল আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত। তবে এ সময় অনেক অসুখও হয়। তাই তোমাদের এসব ব্যাপারে অনেক সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের যতœ নিজেদের নিতে হবে। নিজের পরিবারকে টুকটাক কাজে সাহায্য করতে হবে। একটা বিষয় খুব ভালোভাবে মাথায় রাখতে হবে। বর্ষায় মানুষের কাজ কমে যায়। এ সময় অসহায় ও দুস্থ মানুষ অনেক কষ্টে দিন কাটায়। এমন মানুষ আমাদেন আশপাশেই থাকে। তারা আমাদের প্রতিবেশী। তোমাদের কোনো প্রতিবেশী যদি বর্ষার সময় অর্থাভাবে বা খাদ্যাভাবে কষ্টে থাকে, তাহলে তার পাশে দাঁড়াও। তাকে তোমার সামর্থ্য মতো সাহায্য করো। সবসময় মনে রাখবে প্রতিবেশীকে ভালো রাখা তোমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করতে পারলেই আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন।
এখন করোনাকাল চলছে। সারা পৃথিবী থেমে আছে, বন্দী হয়ে আছে। করোনার আপাতত কোনো চিকিৎসা নেই। করোনা থেকে সুস্থ থাকতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একদম বাইরে বের হবে না। তুমি সচেতন থাকলে তোমার পরিবারও সুস্থ থাকবে।

Share.

মন্তব্য করুন