ফাহাদের দাদু বেড়াতে এসেছেন আজ সকালে। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। মাথার সব চুলে পাক ধরেছে। তিনি কলপও করেন না। ফলে কাঁচা চুলগুলোই আলাদা করে চেনা যায়। ফাহাদ তার দাদুকে খুব ভালোবাসে। দাদু যখন গ্রাম থেকে বেড়াতে আসে তখন আসার সময় সাথে নিয়ে আসে একগাদা দেশি ফল। দাদু বলেন, এসব দেশি ফলে প্রচুর ভিটামিন থাকে। ফাহাদ সেগুলো একা খায় না। তার স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে খায়। এবারও এনেছে। গ্রামের বাড়িতে প্রচুর গাছপালা আছে। আর শহরটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা। দাদুর সাথে তার অনেক গল্পও হয়। যে কয়দিন দাদু তাদের বাড়িতে থাকে ফাহাদ দাদুর সাথেই ঘুমায়। দাদুই তখন তার দিন রাত্রি হয়ে ওঠে। একদিন স্কুলে না গেলেও মা বাবা কিছুই বলেন না। বিষয়টা ফাহাদের বেশ লাগে। তবে তার দাদু নাকি ভালো শিকার করতে পারতেন। তার পাখি মারার একটা বিশাল বন্দুক সে গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখেছে। একবার সে দাদুকে বলেছিল, ‘এটা দিয়ে তুমি কী কর দাদু?’
দাদু শুধু উত্তরে বলেছিল, ‘কিছু না। একসময় করতাম।’
একসময় কী করতে দাদু?
পাখি শিকার করতাম।
তবে যে তুমি বল পাখি মারা ভালো কাজ না। তাহলে তুমি যে মারতে?
সে অনেক কথা দাদু। তোমাকে অন্য একদিন বলবো।
ফাহাদ মনে মনে ভেবে রেখেছিল এরপর যখন দাদু তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে তখন সে দাদুর কাছে পাখি মারার গল্প শুনবে। আজ তাই দাদুর কাছ থেকে এই গল্প শুনতেই হবে ফাহাদের। রাত্রে খাওয়ার পরই সাধারণত দাদুর কাছে গল্প শুনতে বসে সে। আজও রাতে খাওয়া শেষ করেই দাদুর ঘরে এসে হাজির হয়। ফাহাদকে দেখেই তার দাদু বুঝে যায় ফাহাদ কেন এসেছে।
এসো দাদু। তোমার জন্যই বসেছিলাম। আমার গল্প না শুনলে তো তোমার ঘুমই হবে না। তাই না?
হু। তবে আজ আমি তোমার পাখি শিকারের গল্প শুনতে চাই দাদু।
কিন্তু ওসব কাজ তো ভালো না দাদু। তুমি অন্য গল্প শোনো।
একদিনই তো শুনবো দাদু। তুমি নাকি খুব বড় পাখি শিকারি ছিলে দাদু?
তা ছিলাম। কিন্তু পরে তো ছেড়ে দিয়েছি। আর বন্দুকটাও আলমারিতে তোলা রয়েছে। তা তো তুমি নিজ চোখেই দেখেছো। তা ছাড়া শোনো দাদু পাখি মারা ভালো কাজ না। কখনো পাখি মারবে না।
কিন্তু তুমি পাখি শিকার বাদ দিলে কেন দাদু?
সে এক ঘটনা আছে। সেই ঘটনার পর থেকে আমি আর পাখি শিকার করি না।
সেই ঘটনাটাই না হয় বল আজকে।
ঠিক আছে শোনো তাহলে। আমি একদিন পাখি শিকার করার জন্য বন্দুক নিয়ে বের হয়েছি। জলার ধারে কয়েকটা পানকৌড়ি শিকার করেওছি। তারপর যখন বাড়ির দিকে ফিরছি তখন হঠাৎ এক ডালে জোড়া ঘুঘু দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। বন্দুকের নল তাক করলাম একটার দিকে। জানি বন্দুকের গুলি লেগে একটা ঘুঘু মারা যাবে। একটা যাবে উড়ে। গুলি লেগে একটা ঘুঘু ঠিকই পড়ে গেলো। কিন্তু?
কিন্তু কী দাদু?
কিন্তু আরেকটি ঘুঘু উড়ে না গিয়ে অদ্ভুত কা- করলো। সেই ঘুঘুটি পাশের ডালে তার মাথা ঠোকরাতে লাগলো। আমি তো দেখে অবাক। তার দিকে বন্দুক তাক করাও ভুলে গেছি। ডালে নিজের মাথা ঠুকতে ঠুকতে একসময় সেও তার সঙ্গী ঘুঘুর পাশে মরে পড়ে রইলো। আমি এই ঘটনায় খুবই কষ্ট পেলাম।
সেদিন থেকেই তুমি পাখি শিকার বন্ধ করলে, দাদু?
হু। সেদিন থেকেই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম এ জীবনে আর বন্দুক হাতে তুলবো না। তারপর থেকে আর কোনো দিন আমি বন্দুক হাতে নিইনি। কোনো দিন পাখিও শিকার করিনি। যাদের পাখি শিকার করতে দেখি তাদের নিষেধ করি। এই যেমন তোমাকেও নিষেধ করি। পাখিদেরও জীবন আছে। ভালোবাসা আছে। ওরা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। তাই পাখি শিকার মোটেই ভালো কাজ না। তুমি দাদু জীবনেও পাখি শিকার করবে না। তাদের গায়ে ঢিল ছুড়বে না। এমনকি তাদের খাঁচায় ভরেও রাখবে না। এসবই পাপের কাজ। বুঝলে?
বুঝলাম দাদু।
আজ ঘুমিয়ে পড়ো। কাল নতুন গল্প শোনাবো।
ফাহাদ দাদুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

Share.

মন্তব্য করুন