হঠাৎ গুলির আওয়াজে ভড়কে গেল সবাই। কেউ ভাবতেও পারেনি মুসলমানদের এই দেশে কেউ আল-কুরআনের পক্ষে কথা বলার অপরাধে নির্বিচারে এমনভাবে গুলি চালাতে পারে! কথাগুলো বলতেই
দাদুর চোখের পানি নেমে এলো। সাদিক, সাদিয়া ও মারিয়ার চোখেও তখন পানি টলমল করছে। বিকেল বেলা তারা দাদুর কাছে এসেছিল গল্প শোনতে। তিনি শুরুতেই জানতে চাইলেন এটা কী মাস? সাদিক বললো ‘দাদু! এটা মে মাস’ তাহলে আজ তোমাদের এমন একটা গল্প বলবো যা আমার নিজ চোখে দেখা তবে তোমাদের খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে কিন্তু! তিনি বলতে শুরু করলেন ‘তখন ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাস। মুসলমানদের পবিত্র আল-কুরআন বাজেয়াপ্ত করতে রুল জারি করছে কলকাতার একটি আদালত। তখন সেখানকার সকল মুসলমান এর প্রতিবাদ করতে থাকে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কিছুতেই এই রায় মেনে নিতে পারছে না। বাংলাদেশের মুসলমানরাও তা মেনে নিতে পারেনি। সারা পৃথিবীর মানুষের সাথে এ দেশের মুসলমানরাও প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। ১০ই মে ঢাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়, অতঃপর ১১ই মে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঈদগাহ ময়দানে প্রতিবাদ সমাবেশের আহ্বান করা হয়। কিন্তু প্রশাসন সেদিন প্রতিবাদ সভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু কুরআনকে আমাদের দেশের মানুষ এতো ভালোবাসে যে, সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ সে দিন জড়ো
হয়েছিল। বিশেষ করে তোমাদের মতো স্কুলপড়–য়া
ছেলেদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।’ সাদিক বললো ‘দাদু আমাদের মতো ছেলেরাও গিয়েছিল?’ হ্যাঁ দাদু ভাই! তুমি তো ক্লাস এইটে, তোমার থেকে
ছোটরাও গিয়েছিল’ বললেন দাদু। বাধা দেয়ার কোনো
চেষ্টাই যখন সফল হলো না তখন পুলিশ হঠাৎ গুলি করতে থাকে জড়ো হওয়া মানুষের উপর। নিমেষেই সেখানে যেন এক কারবালা হয়ে যায়, শতশত মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। সাকিবের দিকে লক্ষ করে দাদু বললেন ‘ঠিক তোমার মতোই ৮ম শ্রেণির ছাত্র
সেলিম, সাহাবুদ্দিন এবং ১০ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল মতিন শহীদ হয়ে আল কুরআনকে ভালোবাসার প্রমাণ দেয়।’ এই সব শোনে সাদিক, সাদিয়া ও মারিয়ার চোখও ভিজে গেল। কী নিষ্ঠুর আচরণ! সমস্বরে বললো সবাই। মারিয়া জানতে চাইলো ‘আচ্ছা দাদু! আল-কুরআন কি বাজেয়াপ্ত হয়েছিল?’ না দিদি ভাই! এই কুরআন মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী। পৃথিবীর কোনো শক্তি এই কুরআনকে ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা হিজরের ৯ নং আয়াতে বলেছেন “নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) এ কুরআন অবতীর্ণ করছি এবং অবশ্যই এর সংরক্ষণ আমি (আল্লাহ) নিজে করবো।” দাদু আরো বললেন ‘যুগে যুগে অনেক অপশক্তি আল-কুরআনকে ধ্বংস করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। কেননা আল-কুরআনকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা হিফাজত করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত হিফাজত করবেন। তবে আল-কুরআনের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ঈমানের দাবি। এ দাবি পূরণ করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যায় তবে সে হবে শহীদ। শহীদেরা প্রকৃত অর্থে মারা যায় না, তারা চিরঞ্জীব। আর যারা কুরআনের আলোকে জীবন গঠন করতে পারে তারা হয়ে ওঠে আল্লাহর প্রিয় বান্দা। সাদিক, সাদিয়া ও মারিয়া এক সাথে বলে উঠে ‘আমরাও আল-কুরআনকে ভালোবাসি! হে আল্লাহ তুমি আমাদের ভালোবাসাকে কবুল কর!! দাদু বললেন আমিন! ছুম্মা আমিন!!’

Share.

মন্তব্য করুন