“আমি কখনো তোমার এই অন্যায় আবদার রাখতে পারবো না”- বলতে বলতে সেলিমকে ধাক্কা দিয়ে বাসার দিকে হন হন করে হাঁটতে শুরু করলো ইকবাল। ইকবাল সেলিমের বন্ধু। ক্লাসে বরাবরের মতোই ইকবাল ফার্স্ট হয়। আবার খেলাধুলায়ও সবার থেকে এগিয়ে। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলায় অলরাউন্ডার। সেলিম একটু আলাদা। সে পড়ালেখার চেয়ে খেলাধুলায় বেশি মনোযোগী। তার বলিং অ্যাকশনের জন্য সবাই তাকে বাহবা দেয় কিন্তু ব্যাট হাতে কখনো সফল হতে পারে না।
সেলিম অনেক দিন ধরে ইকবালের পিছু নিয়েছে, মহল্লার ছেলেদের একটা টিমে ইকবালকে খেলাতে। ইকবাল রাজি হয় না কেননা মাঠে প্রায় সময় খেলা নিয়ে মারামারি হয়। ইকবাল এই সব পছন্দ করে না। সেলিম নাছোড়বান্দা তাই বন্ধুত্বের জন্য হলেও সে রাজি হলো, শুক্রবার একটা দলের হয়ে মাঠে খেলবে। খুব ভোরে সেলিম এসে হাজির তখন ইকবাল ফজরের নামাজ শেষ করে অর্থসহ কুরআন পড়ছিল। ইকবাল মাঠে এসে বুঝতে পারলো আসলে এটা একটা সাধারণ খেলা নয়। এখানে হার-জিতের বিপরীতে টাকার হিসাব করা হয়। প্রতিটা ইনিংসের বিপরীতে টাকার বাজি ধরা হয়। ‘এভাবে খেলা তো জুয়ার শামিল!’ সেলিমকে জিজ্ঞেস করতেই একটা হাসি দিয়ে বললো ‘আরে দোস্ত তোর কোনো টাকা লাগবে না বরং তোর দল জিতলে তুই কিছু পাবি।’ ইকবাল ছোট করে উত্তর দিল ‘নারে দোস্ত আমি খেলব না।’ কেন? কী হয়েছে? প্রশ্ন করলো সেলিম। ইকবালের সহজ সরল জবাব “ইসলামে বাজি ধরে যেকোনো খেলাই হারাম।”
শোন দোস্ত! স্বাভাবিকভাবে শারীরিক সুস্থতার জন্য খেলাধুলা ইসলামে বৈধ কিন্তু বাজি ধরে খেলাটা জুয়ার মতো। এটা ঠিক না। আল্লাহ তায়ালা মদ, নেশা ও জুয়া খেলাকে হারাম করেছেন সুতরাং আমাদের উচিত এই মন্দকাজ ও খেলা থেকে বেঁচে থাকা। পবিত্র আল-কুরআনের সূরা মায়েদার ৯০ ও ৯১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বাধা দিতে চায়। অতএব, তোমরা কি নিবৃত্ত হবে না?” দোস্ত! এই মাঠে প্রায়ই খেলা নিয়ে মারামারি হয়, এর মূল কারণ তো বাজিধরে খেলা। শয়তান অতি সূক্ষ্ম কৌশলে আমাদেরকে জুয়ায় জড়িয়ে নামাজ থেকে গাফেল করে, সেই সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়ে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব নষ্ট করে। ‘ঠিক আছে মানলাম’ আসছিস যখন অন্তত আজকের খেলাটা খেলে যা’ সেলিমে এই অন্যায় আবদারের জবাবে ইকবালে আবারো সহজ উত্তর “রাখতে পারলামনা দোস্ত তোর এই অন্যায় আবদার!” ইকবাল চলে আসে আর সেই দিন জুমার নামাজের সময় টাকার ভাগ নিয়ে মারামারি হয়। আহত সেলিম হাসপালের বেডে শুয়ে ভাবছে “ইকবাল ঠিকই বলেছিল বাজি ধরে এই খেলা নিশ্চয়ই শয়তানের কাজ।” সে সিদ্ধান্ত নিলো এ ধরনের খেলা ছেড়ে পড়াশুনায় এবার মন দিবে।

Share.

মন্তব্য করুন