মানুষ রহস ̈ ভালোবাসে। ফলে তারা ক্রমাগত ছুটে চলে অজানা রহসে ̈র সন্ধানে। পৃথিবীতে এখনো অনেক স্থান বা দ্বীপ আছে যা রহস্যঘেরা কিংবা অন্য দ্বীপ বা স্থান থেকে একেবারে আলাদা। আর এসব রহস্যঘেরা স্থান ̧লোর মধ্যে একটি হলো বাল্ট্রা দ্বীপ। ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এ দ্বীপটি মূলত মানব বসতিশূন্য। মানব বসতি নেই বলে মানুষ এই দ্বীপকে মৃত দ্বীপ বলেও ডাকে। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ম্যালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটি হচ্ছে বাল্ট্রা।অবাক ব্যাপার এই যে এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকে বাল্ট্রা একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবং রহস্যময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করে মার্কিন সরকার। এরপর থেকেই বিশ্ববাসী জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের এই অদ্ভুত রহস্যের কথা। এই সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একটি এয়ারবেসের একজন অফিসার ছিলেন ফ্রান্সিস ওয়াগনার নামে এক ব ̈ক্তি। তার মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের অদ্ভুত চরিত্রের কথা। এরপর অনেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথাস্বীকার করেন।বাল্ট্রা আর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রজের মাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে। ফ্রান্সিস ওয়াগনার ছিলেন এখানকারই একজন দায়িত্বরত অফিসার। এ দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন অদ্ভুত সব ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। যে গুলো পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে রীতিমতো বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনা ̧লোর মুখোমুখি হয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে। একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ব্যপার ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক আমি শুধু দৃষ্টি মেলে দেখেই গেছি এসব, কোনও যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছে দ্বীপটির ভেতর। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক এসব রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা।জানা যায় যে, বাল্ট্রা দ্বীপে এক সময় মানববসতি ছিলো। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে এই দ্বীপে কী এক অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষ মরতে শুরু করে এবং ভয় পেয়ে দ্বীপবাসীরা সবাই এই দ্বীপ ছেড়ে পালায়। তারা ফিরে গিয়ে সবাইকে জানায় এই দ্বীপটি অভিশপ্ত, কেউ যেন দ্বীপের আশে পাশে না যায়, একবার গেলে আর প্রাণ নিয়ে ফেরা যাবে না। তারপর থেকে দ্বীপটি অভিশপ্ত দ্বীপ নামে পরিচিতি পেয়েছে।বাল্ট্রা দ্বীপ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব ̈াপার হলো বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রাতে। কী এক রহস ̈জনক কারণে বাল্ট্রার অনেক উপর দিয়ে মেঘ ̧লো উড়ে যায় এবং অন ̈ান ̈ দ্বীপ ̧লোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম। বৃষ্টির প্রকোপ যত বেশি হোক না কেন, বাল্ট্রাতে তার ছোঁয়া কখনোই পায় না।অন ̈ দ্বীপ ̧লোতে আছে সিল মাছ, ই ̧য়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতির কিছু পাখি। কিন্তু বাল্ট্রার ব ̈াপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ দ্বীপে কোনও প্রাণী বা কীটপতঙ্গ নেই। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না।

জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। দ্বীপের রহস ̈ময়তার আবিষ্কারক ওয়েগনার একবার একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি জোর করে কিছু প্রাণীকে ধরে এনে বাল্ট্রা দ্বীপ এবং তার পাশের দ্বীপ সান্তাμুজের মধ ̈বর্তী খালে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেল বাল্ট্রাকে এড়িয়ে গিয়ে প্রাণী ̧লো সান্তাμুজ দ্বীপের দিকে এগিয়ে গেল। সব চেয়ে রহস ̈জনক ব ̈াপার হোল- উড়ন্ত পাখি ̧লোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যেতে থাকে। দেখে মনে হয় যেন অদৃশ ̈ কোন দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। ̄^াভাবিক অব ̄’ায় কম্পাসের কাঁটা সব সময় উত্তর দক্ষিণ দিক নির্দেশ করে। কিন্তু বাল্ট্রাতে এলেই অ ̄^াভাবিক আচরণ শুরু করে নাবিকদের কম্পাস। এখানে এলে কম্পাসের কাঁটা কখনও ি ̄’র হয়ে থাকে, কখনও ইচ্ছেমত ঘুরতে থাকে আবার কখনও উল্টোপাল্টা ভুল দিক নির্দেশ করে। তবে সবচেয়ে রহস ̈জনক ব ̈াপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের উপর প্লেনে থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক।বাল্ট্রা দ্বীপের আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো- এই দ্বীপে এলে অনেকের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই দ্বীপে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন মানুষের মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অনেকে দেখা যায় উলটা পালটা আচরণ শুরু করে। কারো কারো বিস্তৃতি লোপ পায়। কেউ কেউ আবার অজানা অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যেতে চায়। তবে বেশির ভাগ মানুষ বলেছেন এখানে গেলে আশ্চর্য রকম ভালো একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। দ্বীপটি যেন চুম্বকের মত টেনে রাখে, একবার গেলে আর ফিরতে ইচ্ছে করে না। দ্বীপ থেকে চলে আসার পরও কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য এরিক ফন দানিকেন ও তার অনুসারীরা যথারীতি তাদের স্বভাবসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে সেই পৃথিবীর বাইরের ভিন্ন গ্রহের তথাকথিত মানুষদের টেনে এনেছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আজো এ রহসে ̈র কোন কিছু উন্মোচন করতে পারেননি।

Share.

মন্তব্য করুন