আমরা নানারকম ঝড়ের কথা জানি। কিন্তু ধুলোঝড়ের কথা অনেকেই জানি না। হ্যাঁ, ধুলোর ঝড়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় এই ঝড় দেখা যায়। যার কারণে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ শহরের কমলা রঙের এই ধুলোঝড়ের দৃশ্য দেখে।
ধুলোঝড় মূলত ধূলিকণা দ্বারা গঠিত বেষ্টন যা সাধারণত বজ্রপাতের তীব্র বাতাসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলে উড়ে যায়। এই ধুলার প্রাচীরটি কয়েক মাইল দীর্ঘ এবং কয়েক হাজার ফুট উঁচু হতে পারে। ধুলাঝড় তীব্র বাতাসের কারণে ঘটে। সাধারণত এটা ঝড়োহাওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। শুষ্ক অঞ্চলে, বাতাসগুলো মাটি থেকে ধূলিকণা বাতাসের দিকে টানার কারণে ধূলিঝড় তৈরি হয়।
কোনো কোনো অঞ্চলের উদ্ভিদ ধূলিকণার ঝড়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ধুলোঝড় এমন অঞ্চলগুলোতে সাধারণত বেশি হয় যেগুলো সমতল এবং খুব কম গাছ রয়েছে। এর কারণে বায়ুর গতি বেড়ে যায় যার ফলে বাতাসগুলি শক্তিশালী হয় এবং বায়ুমণ্ডলে আরও ধূলিকণা প্রবাহিত করে। প্রকৃতপক্ষে, বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে গড়ে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন পাউন্ড ধূলিকণা রয়েছে।
ধূলিঝড় বিশ্বজুড়ে অনেক জায়গায় ঘটে। বিশ্বের বেশির ভাগ ধুলোঝড় মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় দেখা দেয়। তবে এই ঝড় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কোনো জায়গায় ঘটতে পারে।
১৯৩৫ সালের এপ্রিলে টেক্সাসের স্ট্রাটফোর্ডের কাছে একটি ধূলিঝড় হয়। ১৯৩০-এর দশকে আমেরিকান প্রেরি রাজ্যগুলো ‘ডাস্ট বাটি’ নামে প্রচণ্ড খরার এবং ধূলিকণার ঝড়ের সৃষ্টি হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় ধুলোঝড়ে দেখা গেছে ভিন্নতা। অস্ট্রেলিয়ার এই শহরকে মনে হচ্ছিল যেন মঙ্গল গ্রহ। ধুলোর ঝড়ের কারণে শহরটির আকাশ কমলা রঙ ধারণ করে এবং দৃশ্যমান সবকিছু আড়াল করে ফেলে। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের শহরি মনে হচ্ছিল যেন লাল রঙের লেন্সে ঢাকা পড়েছে।
ধুলো আর রোদ মিলে তাতে লেগেছে রঙের ছোঁয়া। যেমনটি ফুটে ওঠে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো হেরি ক্লার্কের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা কুইন্সল্যান্ডের পশ্চিম অংশে আরও কিছু ধুলোঝড় দেখেছিলাম। কারণ, এ এলাকাটি শুষ্ক ও গরম।
কিন্তু আজকের এ ধুলোঝড় সত্যিই চিত্তাকর্ষক। কয়েক বছরের মধ্যে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি।’ তবে এ ঝড়ে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গাছপালার সামান্য ডালপালা ভেঙেছে মাত্র। কিছু কিছু ঘরবাড়ির সামান্য ক্ষতি হয়েছে। হেরি ক্লার্কের হিসাব মতে, এই ঝড়ের বিস্তৃতি ছিল ২০০ কিলোমিটার। আর এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়ার এই বিপর্যয়ের কারণে সেখানে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে ধুলোঝড়টি দুপুরে শহরে আঘাত হানে। আর তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভিক্টোরিয়ার আবহাওয়া ব্যুরো জানায়, জেলার উত্তরাংশে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ধুলোঝড়টি অকস্মাৎ কিছু ছিল না। বায়ুতে ধুলোর উপস্থিতির কারণে এই শহরের দৃশ্যমানতার অবনতি হয়। ছবিতে দেখা গেছে, রাস্তায় গাড়ি মেঘলা লাল কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে।
আবহাওয়া ব্যুরো জানায়, বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতা চার কিলোমিটার থেকে ৫০০ মিটারে নেমে এসেছে। অঞ্চলটিতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। আগুন ও ধুলোঝড়ে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। ব্যুরোর কেভিন পারকিন নামের এক কর্মকর্তা বলেন, ধুলোঝড় হলো মাটির উপরিভাগ। খরার কারণে সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য হয়ে পড়ায় বাতাসে তা উড়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটতে থাকবে।
যদিও ধুলোঝড় মাত্র কয়েক মিনিট পরে শেষ হতে পারে কিন্তু ধুলো বায়ুতে মিশে যায় এবং কয়েক দিন বা এমনকি কয়েক মাস পরে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ধূলিঝড় এবং তাদের দীর্ঘকালীন প্রভাব বিভিন্নভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। ধুলাবালির ঝড়ের সময় ধূলিকণাযুক্ত শ্বাস প্রশ্বাসের কারণে স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য।

Share.

মন্তব্য করুন