আউট! আউট!! আউট!!! বলে শিহাব চিৎকার করে আম্পায়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু আম্পায়ারের তার ডাকে সাড়া না দেওয়ায় শিহাব ও তার দল হট্টগোল করতে থাকে। স্কুল ছুটির পর ক্লাসের ছেলেরা স্কুল মাঠেই ক্রিকেট খেলছিল। শিহাব একটি দলের অধিনায়ক আর রফিক অন্য দলের। আউট হওয়া না হওয়া নিয়ে দুই অধিনায়কের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।

এরই মধ্যে এই বিষয় নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যেও। বিষয়টা নিয়ে শিহাব আর রফিকের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। একই এলাকার দুই প্রভাবশালী বাপের সন্তান তাই কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। ক্লাস বা ক্লাসের বাইরে একজন অন্য জনকে সুযোগ পেলেই হেনস্তা করার চেষ্টা করে এবং সাধারণ ছাত্রদেরকে দলে ভেড়ানো নিয়েও চলে তাদের এই লড়াই। প্রায়ই একজন আরেকজনকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। দুয়েক জায়গায় এই নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ইতোমধ্যে শ্রেণী শিক্ষকের মাধ্যমে হেডস্যারও জেনেছেন।
হেডস্যার একদিন দুইজনকে ডেকে পাঠালেন। শিহাব ও রফিক হেডস্যারের কক্ষে গিয়ে দেখে আরো কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক ও আছেন সেখানে। দু’জনই বিষয়টা আঁচ করতে পারল। এই প্রথম দু’জন দু’জনের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। ‘আসতে পারি স্যার!’ বলে দু’জন দরজার সামনে অপেক্ষা করছিল। স্যার অনুমতি দিলে তারা দু’জন কক্ষে প্রবেশ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। নীরবতা ভাঙলেন হেডস্যার। কোনো ভূমিকা না করে তিনি বললেন, ‘আমরা সকল টিচার তোমাদের দুই জনের ব্যাপারে গ্রুপিং ও অস্থিতনডে কর্মকাণ্ডের তথ্য পেয়েছি এবং তা তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গিয়াছে।
এমতাবস্থায় তোমাদের সতর্ক করার জন্য এখানে ডাকা হলো এবং তোমাদের গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। তোমাদের আচরণগত পরিবর্তন না হলে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার স্বার্থে তোমাদের অবিভাবক তলব করা হবে। দুই দিন সময় দেয়া হলো তোমাদের। এর মধ্যে সকল রাগ অভিমান ভুলে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে না আসলে প্রয়োজনে টিসি দিয়ে বিদেয় করা হবে।’
এক সময়ের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজ দা-কুমড়া সম্পর্ক। স্যারের রুম থেকে বের হয়ে যে যার মত ক্লাসে চলে গেল। খুব করে চিন্তা করতে লাগল যে এই ধরনের কাজ কি ঠিক হয়েছে? যদি গার্ডিয়ান ডাকে তাহলে তো মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। স্কুলের সবার সামনে ছোট হতে হবে। বিশেষ করে বাবাকে সমাজের কাছে ছোট হতে হবে। আর বাবা কি স্বাভাবিকভাবে নিবেন, তিনি তো আমার ওপর আরো বেশী ক্ষেপে যাবেন।’ সুতরাং এর একটা সমাধান প্রয়োজন। টিসি দিয়ে বের করে দিলে তো বাবা বাড়ি থেকেই বের করে দিবেন। শিহাব রফিক একই মসজিদে নামাজ পড়ে, আজ মসজিদের গিয়ে জামিল ভাইকে পেল। জামিল ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। এলাকায় ভালো ছাত্র হিসেবে সবার প্রিয় ছিলেন। ছাত্রদের কাছে তিনি ছিলেন আদর্শ সবাই তাকে ভালোবাসেন। সালাম দিয়ে শিহাব জামিলের ডান পাশে গিয়ে বসল। একটু পর রফিকও এসে বাম পাশে বসল। নামাজ শুরু হলে সবাই নামাজ শেষ করে জামিল ভাইয়ের সাথে কুশল বিনিময় করল। শিহাব ও রফিক দুই বাহুতে ধরে বললো, ‘ভাইয়া আমাদের একটা সমস্যা হয়েছে তুমি একটু সমাধান করে দাও না’ ‘কি সমস্যা খুলে বলো তো!’ বললেন জামিল। একে একে সব কিছু তারা খুলে বললো।
সব শুনে জামিল বলল, ‘শোনো তোমাদের একটি হাদিস শোনাই! হাদিসটি আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি লোককে কুস্তিতে হারিয়ে দেয় সে বাহাদুর নয় বরং প্রকৃত বাহাদুর তো সেই ব্যক্তি যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
‘শোনো! এই হাদিস থেকে আমরা শিখলাম যে, কুস্তি করে বা লড়াই করে কাউকে হারিয়ে দেয়ার মধ্যে বীরত্ব বা বাহাদুরি নেই, বাহাদুরি বা বীরত্ব হলো নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা।
এই রাগকে যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে অনাকাক্সিক্ষত অনেক বিষয় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তোমাদের মধ্যে যদি রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি অর্জন করতে চাও তাহলে জিদ ধরা, অহঙ্কার করা ও প্রতিশোধপরায়ণতার মতো বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কাউকে গায়েল করা, হেয় প্রতিপন্ন করা, অপনামে বা কু-নামে ডাকাও হাদিসে নিষেধ আছে এতে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব নষ্ট হয়।’ শিহাব ও রফিক মনোযোগ দিয়ে শুনলো জামিলের কথাগুলো। সকল রাগ অভিমান ভুলে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরলো এবং সিদ্ধান্ত নিলো আগামীকাল স্কুলে হেডস্যারের সাথে দেখা করে ক্ষমা চেয়ে নিবে।

Share.

মন্তব্য করুন