সমুদ্রতটে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য রসগোল্লার মতো সাদা পদার্থ। এদের কোনোটা ডিমের মতো, কোনোটা অবিকল ফুটবলের মতো। সাদা ধবধবে, মসৃণ গোলক। অস্বাভাবিক এক আবহাওয়ার জেরে ফিনল্যান্ডের উপকূল বরাবর তৈরি হয়েছে ডিমের আকৃতির হাজার হাজার বরফপিণ্ড। ফিনল্যান্ড কয়েক হাজার বছর আগেও বরফে ঢাকা ছিল বলে ধারণা করা হয়। দেশটির হাজার হাজার হ্রদও নাকি সৃষ্টি হয়েছে বরফের চাপে মাটি দেবে যাওয়ার কারণে।
ফিনল্যান্ড-সুইডেনের মাঝে হাইলউটো দ্বীপে এভাবেই শোভা বর্ধন করেছে এই বরফ ডিম বা আইস এগ। গবেষকদের কথায়, এটা একেবারে বিরল এক প্রাকৃতিক ঘটনা। হাইলউটো দ্বীপে সমুদ্রের পাড়ে এই বরফডিমের সমাহার কোনও শিল্পীর কাজ নয়। বরং প্রকৃতি নিজেই বরফকে এমন ব্যতিক্রমী আকার দিয়েছে।
এ বছর এই অঞ্চলে সেই অনুকূল পরিবেশ তৈরি হওয়ায় এমন ব্যতিক্রমী দৃশ্য উপভোগ করতে পারছেন সকলে।
ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের মধ্যবর্তী সৈকতে এই দৃশ্য প্রথম চোখে পড়ে রিস্তো মাতিলা নামে এক চিত্রগ্রাহকের। তিনি এ দৃশ্য দেখে বিস্ময়াবিষ্ট হন।
সঙ্গে ক্যামেরা থাকায় প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে ছবি তোলেন। কিভাবে তৈরি হলো এই ডিম্বাকৃতি বরফ?
হিমাঙ্কের নিচে পানি বরফ হয়, বরফ জমতে জমতে হিমবাহ। আবার উষ্ণতা বাড়লে তা গলতে থাকে। কিন্তু পানি হিম হয়ে এমন সুন্দর আকার নিতে পারে, তা ধারণা করা যায় না। মনে হয় যেন কেউ বহু যত্ন করে বরফখণ্ডকে এমন গোল করে সাজিয়ে রেখেছেন! কিন্তু তাতেও বোধ হয় এই মসৃণতা আসে না। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঠাণ্ডার সঙ্গে হু হু করে বাতাস- এই দুটোই বরফকে এমন আকার দিতে সাহায্য করে। জর্জ গুডফেলো নামে এক বিজ্ঞানীর মতে একটা বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে বরফের চাদরের ওপর যখন সমুদ্রের শীতল পানি আর হিমেল হাওয়ার ঝাপটা দেয়, তখন ওই স্তর গুটিয়ে গোলাকৃতি হতে থাকে। সমুদ্রের পানিও জমতে জমতে হিম হয়ে গেলে, তা এই বরফগোলার ওপর পুরু আস্তরণ ফেলে তাকে নিটোল করে তোলে। তবে এমন নিটোল গোল হওয়ার জন্য উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ চাই, যা প্রায় কোথাও মেলে না।
আইস স্পেশালিস্ট জুনি ভাইনিও জানিয়েছেন, এমন বরফের ডিম হওয়ার পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ। তবে এই ডিমাকৃতি বরফ এক দিন বা এক বছরের আবহাওয়ার জন্য হয়নি।
সঠিক ঠাণ্ডা, সঠিক জলীয় বাষ্প, বালিকণা, পানির সঠিক তাপমাত্রা, ধীরগতিতে বয়ে চলা বাতাসের কারণে এমন অবস্থা হওয়া সম্ভব। তবে এটি সত্যিই বিরল ঘটনা। এর আগে রাশিয়া এবং শিকাগোর লেক মিশিগানেও এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। ২০১৬ সালে সাইবেরিয়ার বাসিন্দারা এমন বিশালাকার বরফের ডিম দেখতে পেয়েছিলেন প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতট জুড়ে।
তবে এবারের হাইলউটো দ্বীপের এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন ছাপিয়ে গিয়েছে সব কিছুকে।

Share.

মন্তব্য করুন